Ajker Patrika

সংকটের মধ্যেই জুতার বিশ্বযাত্রা

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৩
সংকটের মধ্যেই জুতার বিশ্বযাত্রা
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি জুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে রপ্তানির পরিমাণও বাড়ছে। চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়াজাত জুতার রপ্তানি প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মুহূর্তে এটি এই শিল্পের জন্য আশাপ্রদ সাফল্য বটে। কেননা এই জুতা রপ্তানির ওপর ভর করে আগের বছরের প্রায় ১২ শতাংশ তলানি প্রবৃদ্ধি থেকে উন্নতির মাধ্যমে সার্বিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে।

এই সাফল্যের পরও রপ্তানির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এখনো বিশ্ববাজারে জুতা রপ্তানিতে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর প্রভাব পড়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মাসে। অর্থাৎ সাত মাসের প্রবৃদ্ধির বিচারে জুতা রপ্তানি বাড়লেও শুধু একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমেছে ৯ শতাংশ। এতে চামড়া খাতের সার্বিক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

একক মাস হিসেবে রপ্তানি আগের তুলনায় সামান্য হ্রাস পাওয়ার পর খাতটির উদ্যোক্তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জুতার জনপ্রিয়তা যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন দেশে বিদ্যমান বাস্তবতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এলডব্লিউজি সনদের সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এ খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকেরা।

দেশে প্রচুর চামড়া উৎপাদিত হয়, যার ২৫ শতাংশ স্থানীয় বাজারে ব্যবহৃত হয়, বাকি ৭৫ শতাংশ রপ্তানি করা সম্ভব। তাই সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলে আগামী চার-পাঁচ বছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় ৫-৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে দাবি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি প্রক্রিয়াজাত চামড়া, চামড়াজাত পণ্য (যেমন বেল্ট, ব্যাগ, হেড গিয়ার) ও চামড়ার তৈরি জুতা—এ তিন ক্যাটাগরিতে চামড়া খাতের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত চামড়ার বড় রপ্তানি বাজার চীন। এসব চামড়া আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় রপ্তানি হয়। এ ছাড়া দেশে তৈরি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বেশি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয় ইতালিতে। এ ছাড়া জাপান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, হংকং, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় উল্লেখযোগ্য চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়।

বিটিএ ও ইপিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে এসেছে। এ ছাড়া ৩৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার চামড়াজাত পণ্য, বাকি ১৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ফিনিশড ও ক্রাস্ট চামড়া রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরে যে পরিমাণ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তা ছিল আগের ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ১১৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগের বছর চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি হয়েছিল ৬৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। সে হিসেবে আগের বছরের তুলনায় গত বছর চামড়ার জুতা রপ্তানি ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ কম হয়েছিল।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে চামড়া খাতের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়। জানুয়ারি পর্যন্ত ফিনিশড চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি। গত বছর জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়া খাতের রপ্তানি ছিল ৬১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময় চামড়ার জুতা ছাড়া চামড়া খাতের বাকি দুই শাখায় রপ্তানি কমেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে ৪০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। গত বছর জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছিল ৩২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর সরাসরি চামড়া রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।

অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ১৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ কম, গত বছর এই সময়ে চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ২১ কোটি ১৫ লাখ ডলারের।

একক মাস হিসেবে জানুয়ারি মাসে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছর জানুয়ারি মাসে চামড়া খাতে রপ্তানি হয়েছিল ৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এ সময় সবচেয়ে বেশি কমেছে চামড়ার জুতা রপ্তানি। জানুয়ারি মাসে চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৭ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

জানুয়ারি মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রক্রিয়াজাত চামড়ার রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ, রপ্তানি হয় ১ কোটি ১২ লাখ ডলার। তবে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে, রপ্তানি হয়েছে ২ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং লেদারেক্স ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার চামড়া খাতের প্রণোদনা তুলে নিয়েছে, এ জন্য হঠাৎ চামড়ার রপ্তানিও কমেছে। এখন সার্বিকভাবে সাত মাসের হিসাবে প্রবৃদ্ধি থাকলেও তা বছর শেষে ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সংশয় তৈরি হয়েছে।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে বর্তমানে যে নগদ সহায়তার সুবিধা রয়েছে, তা অনেক বেশি। কিছু খাতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই সহায়তার বিকল্প কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকলে ২০২৬ সালে এলডিসি (নিম্ন আয়ের দেশ) থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর এসব খাতের রপ্তানি আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত