Ajker Patrika

ব্যাংক খাত পুনর্গঠন

৫ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কা

  • ৫ ব্যাংক এক করে আগামী অক্টোবরে ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আশা।
  • একীভূতকরণে সামগ্রিক ব্যয় হতে পারে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
  • প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১০: ০৮
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

শরিয়াহ পরিচালিত পাঁচ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিট শেষ হয়েছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরে চুক্তির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হয়ে যাবে ব্যাংকগুলো। তবে এ কাজটি করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক পাঁচটি হলো ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সংকটাপন্ন এ ব্যাংকগুলো একীভূতকরণে সামগ্রিক ব্যয় হতে পারে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই অর্থের ২০ হাজার কোটি সরকারের কাছ থেকে, ১০ হাজার কোটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে এবং বাকি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন বহিঃসংস্থান থেকে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিক ব্যয়ের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে চিঠি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ১০ হাজার কোটি টাকা আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতে পারে। বাকি অর্থ বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে ‘পুনরুদ্ধার তহবিল’ হিসেবে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অর্থ পাওয়া মোটেও সহজ নয়। আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার যে কথা ভাবা হচ্ছে, সেটি করার জন্য ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন’ সংশোধন জরুরি, যা এ সময়ের মধ্যে কতটুকু সম্ভব, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিদ্যমান ব্যাংক আমানত বিমা আইনে বলা আছে, ‘তহবিলের অর্থ ধারা ৭-এর বিধান মোতাবেক অবসায়িত ব্যাংকের আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ এবং এই তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাইবে না।’

জানা গেছে, আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলে বর্তমানে ১৬ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। তবে অর্থ সব ব্যাংকের জন্য রাখা। কেবল পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার পেছনে সেখান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ বিষয়টি নিয়ে এর মধ্যে তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে গভর্নরসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, আরও অন্তত ৮টি ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা চাহিদামতো ফেরত দিতে পারছে না। তাহলে এসব ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার ন্যূনতম অর্থ কোথা থেকে আসবে?

এদিকে ৫ ব্যাংক একীভূতকরণে সরকারের অর্থায়ন নিয়েও রীতিমতো শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পুরো ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে সরকারের কাছ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের জন্য রাখা সব অর্থ দিলেও আরও ৭ হাজার কোটি টাকা কমতি পড়বে। শুধু তা-ই নয়, শুধু ৫টি দুর্বল ব্যাংকের পেছনে পুরো ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের সব অর্থ খরচের জোর বিরোধিতা করছেন সরকারসংশ্লিষ্টরা।

৫ ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে বিদেশি সংস্থার উৎস থেকে টাকা পাওয়া নিয়ে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের মতো দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে অর্থায়নের পেছনে কড়া শর্ত জুড়ে দিতে পারে। একীভূত হওয়া ৫ ব্যাংক পরিচালনায় যে ব্রিজ ব্যাংক গঠিত হবে, তা ঠিকমতো কাজ করতে পারবে কি না এবং আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করবে কি না, তা নিশ্চিত হতে চাইবে তারা। এ বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেলে তারা ৫ ব্যাংক একীভূতকরণে টাকা ঢালবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংস্কার কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এসব ব্যাংকে বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি হয়েছে। একীভূত করার উদ্যোগ সফল করতে যেকোনো মূল্যে আমানতকারী এবং কর্মীদের স্বার্থ দেখতে হবে। আমানতকারীদের ইচ্ছামতো টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। সে জন্য পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থাপন করতে হবে। আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেলেই ব্রিজ ব্যাংকের ওপর আস্থা ফিরবে। তা না হলে আস্থা অর্জন করা বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, একীভূতকরণের জন্য তালিকাভুক্ত ৫ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক মিলে একটি ব্রিজ ব্যাংক গঠনে রূপরেখা ঠিক করা হয়েছে। সরকারের সম্মতি পেলে আগামী অক্টোবরে এটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা করবে। আর ব্রিজ ব্যাংকের জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের সম্মতি পাওয়ার পর ব্রিজ ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হবে। পরে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হবে ব্রিজ ব্যাংককে। নতুন ব্যাংকের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং, আর্থিক খাত, তথ্য প্রযুক্তি এবং আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র একটি পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ব্রিজ ব্যাংকটি সরকারি হিসেবে পরিচালিত হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে ব্যাংকটি মোটামুটি ৩-৫ বছর সরকারি মালিকানায় রাখার চিন্তা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে ব্যাংকটি দেখভাল করবে। ব্যাংকটির জন্য মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে আপাতত অফিস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ব্যাংকটি ভালো করলে, তখন বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য শেয়ারের মাধ্যমে মালিকানায় উন্মুক্ত রাখা হবে। একটা ভালো পর্যায়ে গেলে ব্যাংক সরকার ও অন্যদের অর্থ ফেরত দেবে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, এ মুহূর্তে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কোনো বিকল্প নেই। সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারলে এটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে অর্থায়ন এবং গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে না পারলে হোঁচট খাওয়ার একটা শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোই একীভূতকরণ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। ঠিক এ কারণে নতুন ব্যাংকটিকে (ব্রিজ ব্যাংক) নানাভাবে নীতি-সহায়তা এবং ছাড় দেওয়া হবে। বিদ্যমান নিয়মে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের মোট আমানতের ৪ শতাংশ বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) এবং সাড়ে ৫ শতাংশ বিধিবদ্ধ তারল্য (এসএলআর) হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখার ক্ষেত্রে নতুন ব্রিজ ব্যাংক ছাড় পাবে।

একীভূতকরণ নিয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আশার দিক হচ্ছে এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিট হয়ে গেছে। এখন কার্যক্রম শুরু হলে কত সময় লাগবে, তা বোঝা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক নেত্রী

আসনের বিনিময়ে এনসিপির কিছু মানুষ মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক নেত্রী

আসনের বিনিময়ে এনসিপির কিছু মানুষ মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক নেত্রী

আসনের বিনিময়ে এনসিপির কিছু মানুষ মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক নেত্রী

আসনের বিনিময়ে এনসিপির কিছু মানুষ মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল আরও ৫৭ হাজার টন গম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আজ রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নগদ ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এই গম আমদানি করা হয়েছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৩৪ টন চট্টগ্রাম বন্দরে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৫৬ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আরেক চুক্তিতে (জি-টু-জি) এরই মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক নেত্রী

আসনের বিনিময়ে এনসিপির কিছু মানুষ মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত