Ajker Patrika

দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে রেমিট্যান্স ও বৈষম্যের প্রভাব, যেখানে এগিয়ে বাংলাদেশ

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫৮
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের স্বরূপ বদলে দিচ্ছেন রেমিট্যান্স ও বৈষম্য। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের স্বরূপ বদলে দিচ্ছেন রেমিট্যান্স ও বৈষম্য। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন। বৈদেশিক সহায়তার বন্ধেরও ঘোষণা দিয়েছেন। বৈদেশিক সহায়তা উন্নয়ন, বৈশ্বিক বৈষম্য, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং চীনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে এখন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ।

এতদিন এসব উন্নয়ন সহায়তা সুবিধাভোগী দেশগুলোর কতটা উপকারে এসেছে, বিশেষত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উন্নয়নে এই সহায়তার অবদান কেমন, তা খতিয়ে দেখেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, উন্নয়নের উৎস অনেক। সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) এতে একটি ভূমিকা রাখলেও কার্যকর শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) অবশ্যই অপরিহার্য, তবে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ এখন ওডিএ ও এফডিএ—এর সম্মিলিত পরিমাণের চেয়েও বেশি!

রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষে। ২০২৪ সালে দেশটি ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। যেখানে পাকিস্তান ৩৬ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। তবে জিডিপির অনুপাতে হিসাব করলে, রেমিট্যান্স প্রবাহে নেপাল বিশ্বে ষষ্ঠ। কারণ, দেশটির রেমিট্যান্সের পরিমাণ মোট জিডিপির ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রেমিট্যান্স থেকে যে বিপুল অর্থ পায়, তা তাদের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনে এবং দাতাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রভাব থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়। আসলে অর্থনীতিবিদেরা সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি এক উল্টো সম্পর্ক চিহ্নিত করেছেন, তাঁরা দেখেছেন, বিদেশি সাহায্য ও রেমিট্যান্স একে অপরের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, একটির প্রবৃদ্ধি আরেকটির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়।

তবে রেমিট্যান্স সব সমস্যার সমাধান নয়। নেপালের তথ্য–উপাত্ত দেখায়, রেমিট্যান্সের অর্থ সামঞ্জস্যহীনভাবে ছেলেদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হয়, মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং লিঙ্গবৈষম্যের ধারা আরও দৃঢ় করে। প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর ব্যয় নিয়েও সমালোচনা আছে। বিশ্বব্যাংক ও অভিবাসী অধিকার সংরক্ষণকারী সংগঠনগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের মতো বৈশ্বিক অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে রেমিট্যান্সের মোট অর্থের ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ কেটে নিয়েছে।

এ পর্যন্ত অর্থনীতিবিদেরা মূলত স্থূল অর্থনৈতিক সূচকের ওপর গুরুত্ব দিলেও, এসব সূচক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় মানব অভিজ্ঞতার পূর্ণাঙ্গ পরিধি তুলে ধরা সম্ভব নয়। ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রতি বছর ‘মানব উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এই প্রতিবেদন তাদের নির্ধারিত ‘মানব উন্নয়ন সূচক’ (এইচডিআই) অনুযায়ী পরিমাপ করা হয়।

নিচের গ্রাফটিতে ১৯৯০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাঁচটি প্রধান দক্ষিণ এশীয় দেশের মানব উন্নয়নের প্রবণতা অস্ট্রেলিয়া এবং বৈশ্বিক গড়ের সঙ্গে তুলনা করে দেখানো হয়েছে:

Pic-1

এই গ্রাফ থেকে স্পষ্ট যে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মানব উন্নয়নের স্তর একরকম নয়। এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশটি ১৯২টি দেশের মধ্যে ৭৮ তম অবস্থানে আছে। যেখানে দেশটির এইচডিআই স্কোর শূন্য দশমিক ৭৮, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি এবং জাতিসংঘের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এটি ‘উচ্চ মানব উন্নয়ন’ স্তরে পড়ে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হলেও বাংলাদেশ এই সূচকে ভারতের চেয়ে বেশ এগিয়ে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল—এই তিনটি দেশ জাতিসংঘের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ‘মাঝারি মানব উন্নয়ন’ স্তরে। এ অঞ্চলে পাকিস্তান সবচেয়ে পিছিয়ে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বে ১৬৪ তম অবস্থানে রয়েছে এবং জাতিসংঘের মতে, ‘নিম্ন মানব উন্নয়ন’ স্তরে পড়েছে। পাকিস্তানের এ দুর্বল অবস্থান আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, গত বিশ বছরে দেশটি মার্কিন সরকারের কাছ থেকে সরাসরি ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে। এটি আরও নিশ্চিত করে যে, বৈদেশিক সহায়তা ও উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল।

বিদেশি সাহায্য ও উন্নয়নের বহুমুখী সম্পর্ককে তুলে ধরার জন্য নিচের গ্রাফটিতে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি প্রধান দেশের প্রধান সূচকগুলো তুলে ধরা হয়েছে:

table

জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) এবং মাথাপিছু সরকারি উন্নয়ন সহায়তা উভয়ই ‘সহায়তা নির্ভরতা’ পরিমাপের সূচক। এই নির্ভরতা সুশাসনকে দুর্বল করতে পারে এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এই ছকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ও নেপাল সহায়তা নির্ভরতার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তবে সহায়তা নির্ভরতাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়—দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির পরও উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

এ ছাড়া, ছকটি দেখায় যে—ভারত খুবই সামান্য সরকারি উন্নয়ন সহায়তা গ্রহণ করে, যা দেশটির শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন। বাস্তবিক অর্থে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত নিজেই সরকারি উন্নয়ন সহায়তার দাতা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়। ২০০০ সাল থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, শ্রীলঙ্কায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং নেপালে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পাঠিয়েছে।

ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বড় হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৭ সালে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং জাপান ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে এই সমৃদ্ধি সাধারণ মানুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হচ্ছে না।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ার গিনি সহগ (শূন্য দশমিক ৩৪৩) ভারতের চেয়ে বেশি (শূন্য দশমিক ৩২৮)। গিনি সহগ হলো অসমতার একটি পরিমাপক, যা ০ থেকে ১—এর মধ্যে পরিমাপ করা হয়। এখানে ০ সম্পূর্ণ সমতা নির্দেশ করে, আর ১ চরম বৈষম্য বোঝায়। তবে এই সূচক বাস্তব অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরে না।

ইউরোপীয় গবেষণা কাউন্সিল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দাতব্য সংস্থাগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে। নিচের সারণিতে ১৯৫০ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মোট আয়ের মধ্যে শীর্ষ ১০ শতাংশ এবং নিম্ন ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অংশীদারত্বের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে:

Pic-2

ভারতে শীর্ষ আয়ের ১০ শতাংশ মানুষ (সবুজ রেখায় চিত্রিত) ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছে। আয়ের এই কেন্দ্রীভবন অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় বেশ স্পষ্ট। ২০২১ সালে, অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ১০ শতাংশ আয়কারীরা মোট আয়ের ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ অর্জন করেছে, যেখানে ভারতে এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ।

লিঙ্গবৈষম্যের ক্ষেত্রে, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব গড়ের ওপরে অবস্থান করছে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড়ের সমান। এরপর নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের অবস্থান। এসব দেশ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড়ের সমান পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বৈশ্বিক গড়ের নিচে এসব দেশ। আঞ্চলিকভাবে ভারত পঞ্চম স্থানে এবং বৈশ্বিকভাবে ১৪২টি দেশের মধ্যে ১২৯তম স্থানে।

এই ধরনের সূচক সামগ্রিক চিত্র বোঝার জন্য সহায়ক হলেও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ। স্বাতি নারায়ণের বই ‘আন–ইকুয়াল’–এ উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের দরিদ্রতম রাজ্য বিহারের নারীরা প্রতি বেলার খাবারের সময় সবার শেষে খেতে বসেন এবং সাধারণত সবচেয়ে কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন। এর ফলে বিহারের ৪০ শতাংশ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং ৬০ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলের ৪০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার নেই, ফলে খোলা স্থানে মলত্যাগ সাধারণ ঘটনা, যা নারীদের জন্য বিশেষভাবে সমস্যাজনক। অথচ বাংলাদেশে, এমনকি সবচেয়ে প্রত্যন্ত এলাকাতেও, এমন অমর্যাদাকর টয়লেট ব্যবস্থার কোনো অস্তিত্ব নেই।

দক্ষিণ এশিয়ার এই বৈচিত্র্যপূর্ণ উন্নয়নধারার ব্যাখ্যা কী? স্বাতি নারায়ণের মতে, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে এমন ‘অসমতার ফাঁদ’ তৈরি হয়েছে। জাত, ধর্ম ও লিঙ্গবৈষম্য এই ফাঁদকে শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা ও তামিলনাড়ুতে ব্যাপক ভূমি সংস্কার, সমন্বিত সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি, নারীবাদী সংগঠন এবং প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলন সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক হয়েছে।

বাংলাদেশ ও নেপালের ক্ষেত্রে, আশ্চর্যজনকভাবে, গৃহযুদ্ধ ও মানুষের বাস্তুচ্যুতি শ্রেণিভিত্তিক বাধাগুলো ভেঙে দিয়েছে, যার ফলে সামাজিক গতিশীলতা বেড়েছে এবং তুলনামূলকভাবে সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নারীদের উন্নতির প্রধান কারণ হলো ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ এবং তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান।

ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, কেবল দক্ষিণের রাজ্যগুলো ব্যতিক্রম। স্বাতি নারায়ণের মতে, এর জন্য দায়ী হলো ‘রাষ্ট্র ধারণার অনুপস্থিতি’, জনসেবার প্রতি অবহেলা, অপর্যাপ্ত ভূমি সংস্কার এবং ব্যাপক জাতিভিত্তিক ও ধর্মীয় বৈষম্য। ২০২৩ সালে নরেন্দ্র মোদি ‘বিকশিত ভারত–২০৪৭’ পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। যার লক্ষ্য হলো ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তির সময় দেশটিকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি, সুশাসন ও স্থায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে ‘বহুগুণ অগ্রগতি’ প্রয়োজন বলে মোদি স্বীকার করেছেন। তবে এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অনুপস্থিত—ভারতে বিদ্যমান বিশাল সামাজিক বৈষম্যের স্বীকৃতি এবং তা দূর করার প্রতিশ্রুতি।

দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের অনেক সফল উদাহরণ রয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের কেরালায় উন্নয়নের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অথচ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল বিপুল হারে জিডিপি বৃদ্ধির পরও পিছিয়ে আছে। অপরদিকে, পাকিস্তানের উন্নয়ন এখনো স্থবির।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য ম্যান্ডারিন থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত