Ajker Patrika

বাজারে নীতির দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে: নীতিসংলাপে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক নীতিসংলাপে বক্তব্য দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক নীতিসংলাপে বক্তব্য দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজার তদারকিতে আগের সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, বর্তমান সরকারও একই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এর ফলে আমরা নীতির দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়েছি, এটা অবশ্যই ভাঙতে হবে। বিশেষ করে, নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার ক্ষেত্রে। বাজার বর্তমানে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেখানে প্রতিযোগিতার অভাব সুস্পষ্ট। আগের মতোই বাজারে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বণিক বার্তা’ আয়োজিত ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক এক নীতিসংলাপে বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেখানে একে অপরের প্রতিযোগী হওয়ার কথা, সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বাজারের সীমানা নির্ধারণ করে নিয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আমদানি বাণিজ্যের একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তদুপরি, নীতিগুলো মূলত ধনিকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর হচ্ছে, সাধারণ ভোক্তার কল্যাণে নয়।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বক্তারা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের অভাবকে চিহ্নিত করেন। তাঁরা বলেন, বাজারের সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য সরকারের হাতে না থাকায় কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না, যা সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই নীতিসংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করে দিতে চাই। বাজারে যাতে প্রতিযোগিতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না ঘটে। মন্ত্রণালয়ের সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ যেন না থাকে, সেদিকে আগাতে চাই।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের নীতিগুলো ধনিকশ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য হয়েছে। ভোক্তা বা সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব নীতি গ্রহণ হয় না। বিগত ১৫ বছর দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি। যদি সেটি না হয় তাহলে কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? আমরা কার কাছ থেকে কর আদায় করব?’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বাজার তদারকিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। কারণ, মানুষের আয় বাড়ছে। এতে বাজার তদারকি দুর্বল হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘বাজার তদারকিতে আগের সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, বর্তমান সরকারও একই উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে আমি মর্মাহত। আসলে আমরা নীতির দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়েছি। এটা ভাঙতে হবে, অন্তত নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার ক্ষেত্রে।’

টিআইএন থাকার পরও যাঁরা দীর্ঘদিন রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাঁরা শিগগিরই নোটিশ পাবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘যাঁরা রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাঁদের কোনো সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে না। তাই আমরা এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্টে যাচ্ছি। অনেক ব্যবসায়ীই ভ্যাট চালান দিতে চান না। আমাদের নাগরিকেরা বিদেশে গিয়ে আইন ভঙ্গ করছেন না। কিন্তু, দেশে আমরা আইন মানি না।’

বাজারে মুক্ত অর্থনীতির মূলনীতির কোনো অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বাস্তবে মুক্তবাজার অর্থনীতি বলতে কিছু নেই, যা আছে তা অলিগোপলি। বেশির ভাগ বাজার ও পণ্য উৎপাদন কতিপয় গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।

আসন্ন রমজানে তেলের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা—এমনটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, রমজানে তেলের দাম বাড়বে না। বর্তমানে যে দাম আছে, তা-ই বজায় থাকবে।’

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এ এইচ এম আহসান বলেছেন, ‘বাজারের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে, প্রতিযোগিতার অপব্যবহার হচ্ছে কি না। প্রতিযোগিতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করাই আমাদের কাজ। কেউ অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাজার প্রভাবিত করছে কি না, সেদিকে দৃষ্টি রাখাও আমাদের কাজ। তবে সমন্বয়ের অভাবে আমাদের হাতে তথ্য নেই। নতুনভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ইমপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, ‘বাজারে বড় বড় খেলোয়াড়ের (ব্যবসায়ী) পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ী, যাঁরা ছোট ব্যবসা করেন তাঁদের যদি সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় করা যেতে পারে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি ইমপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করতে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত