Ajker Patrika

৩ সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ: খোঁজ মেলেনি গৃহবধূর, ২ শিশু নিয়ে বিপাকে বাবা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ২০: ৪০
৩ সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ: খোঁজ মেলেনি গৃহবধূর, ২ শিশু নিয়ে বিপাকে বাবা

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় তিন শিশুসন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আট দিন পার হলেও গৃহবধূ সালমা বেগমের (২৬) খোঁজ মেলেনি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাদের বাবা আজবাহার মাদবর।

৫ নভেম্বর সকালে উপজেলার ভোজেশ্বর বাজার ব্রিজের কাছ থেকে তিন সন্তান নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দেন সালমা বেগম। এরপর এক মেয়ে ও এক ছেলেকে জীবিত এবং আরেক ছেলের লাশ উদ্ধার করা হলেও খোঁজ মেলেনি সালমার। নিখোঁজ সালমা বেগম উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী আজবাহার ভোজেশ্বর বাজারে পাটের ব্যবসা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজবাহারের সঙ্গে নড়িয়া উপজেলার পাচক গ্রামের রিকশাচালক লোকমান ছৈয়ালের মেয়ে সালমার আট বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাঁদের সাহাবীর ওরফে জাফর (৭), আনিকা (৩) ও সলেমান (১) নামে তিন সন্তান ছিল। ৫ নভেম্বর সকালে টিকা দেওয়ার কথা বলে এই তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সালমা নদীতে ঝাঁপ দেন। ডায়াপার পরানো থাকায় শিশু আনিকা ও সলেমান নদীতে ভাসতে থাকে।  টের পেয়ে তাদের জীবিত উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরদিন সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ ফুট দূরে বড় ছেলে জাফরের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনার পর থেকে নড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ও মাদারীপুর থেকে আসা একটি ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখনো সালমার খোঁজ মেলেনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি পানিতে তলিয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেসে উঠবে। তাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপর পানির নিচে তল্লাশি চালিয়ে কোনো লাভ নেই। পরে কোথাও লাশ পাওয়া গেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে আজবাহার ও তাঁর মা মিলিয়া বেগম শিশু দুটির দেখাশোনা করছেন। কিন্তু মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা শিশু আনিকা ও সলেমান মাকে হারিয়ে কেঁদেই চলেছে। তাদের কান্না থামানো যাচ্ছে না।

ঘটনার আকস্মিকতায় দিশেহারা ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুটি পরিবার ও তাদের স্বজনেরা। ঘটনার পর থেকে টানা দুই দিন নদীর পাড়ে আহাজারি ও বিলাপ করতে দেখা গেছে সালমার মা সেলিনা বেগম, বাবা লোকমান ছৈয়াল, বোন শারমিন আক্তার, স্বামী আজবাহারসহ স্বজনদের। তাঁদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে নদীর দুই পাড়। তখন আশপাশের বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ নদীর পাড়ে ভিড় জমায়। তাদের মাঝেও নেমে আসে শোকের ছায়া।

স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গৃহবধূ সালমা তিন সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে অভিযোগ সালমার বাবার পরিবারের। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বামী আজবাহার ও শাশুড়ি মিলিয়া বেগম।

আজ রোববার সকালে পাচক গ্রামে সালমার বাবা লোকমান ছৈয়ালের বাড়ি গিয়ে কথা হয় সালমার ভাই কাইয়ুম ছৈয়ালের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ির লোকজনের যন্ত্রণা আর অত্যাচার সইতে না পেরে আমার বোন তাঁর তিন সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। দুজন জীবিত ও একজনকে মৃত উদ্ধার করা গেলেও আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা মামলা করতে থানায় গিয়েছিলাম। ওসি স্যার বলেছেন, বোনকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত মামলা নেওয়া যাবে না।’

এদিকে আজবাহারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি তাঁর বেঁচে যাওয়া দুই শিশুর জন্য ঘরে গ্যাসের চুলায় রান্না করছেন। তাঁর মা মিলিয়া বেগম খাটের ওপর তাঁর ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। পাশেই ঘুমিয়ে আছে বেঁচে যাওয়া মেয়ে আনিকা।

জানতে চাইলে মিলিয়া বেগম বলেন, ‘ছোট দুটি দুধের শিশু নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। আমি ও শিশুর বাবা ছাড়া তাদের দেখার আর কেউ নেই। আমরাই শিশু দুটির দেখাশোনা করছি। মাকে হারিয়ে শিশু দুটি কিছুক্ষণ পরপর কান্না করছে। সারাক্ষণ তাদের নিয়েই থাকতে হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে মিলিয়া বেগম বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কেউ তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করিনি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন। তার মধ্যে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ থাকতে পারে। তাই বলে কি তিন সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে হবে?’

দুই নাতি-নাতনির সঙ্গে তাদের দাদিসালমার স্বামী আজবাহার কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোট দুটি বাচ্চা আমারই লালন-পালন করতে হচ্ছে। ওদের রেখে আমি কিছুই করতে পারছি না। ও (স্ত্রী) আমার সংসারটা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ও মানুষ না, ও একটা ডাইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সালমার পরিবারের লোকজন অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে পাওয়া না গেলে তো কোনো অভিযোগ নিতে পারি না। কারণ, তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মরে গেছেন, নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন কেউ বলতে পারে না। তাঁকে পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

নড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কোনো লোক পানিতে ডুবে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ভেসে উঠবে। কোনো কিছুতে আটকে না থাকলে ২৪ ঘণ্টা পর পানির নিচে খুঁজে তাঁকে আর পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খুঁজতে হবে এবং ওই সময়ের পর উদ্ধার অভিযান শেষ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণমাধ্যমে হামলা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হয়েছে: ছাত্রদল সম্পাদক নাছির

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি 
গতকাল সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর সৈকত সরকারি কলেজ মাঠে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর সৈকত সরকারি কলেজ মাঠে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণমাধ্যমে হামলা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাছির উদ্দিন বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যার পর একটি শ্রেণির রাজনৈতিক কর্মীরা দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন যাতে না হয়, সে উদ্দেশ্যেও তারা তৎপর ছিল। তবে গণমাধ্যমে হামলা করে কখনো কণ্ঠরোধ করা যাবে না।

নাছির উদ্দিন আরও বলেন, অতীতেও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো গণমাধ্যম হামলার শিকার হয়েছে। তখনো ওসমান হাদি বলেছিলেন, গণমাধ্যমে হামলা কোনো সমাধান নয়।

এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকেও পদত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন ছাত্রদল সম্পাদক।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে নেতা-কর্মীদের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি নেতা এনায়েত উল্যাহ বাবুলসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। খেলায় সদর উপজেলা দলকে হারিয়ে সুবর্ণচর উপজেলা দল জয়লাভ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্গাপুরে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
গতকাল রাতে বিরিশিরি ওয়াইএমসিএ চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও সংকীর্তন পরিবেশিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে বিরিশিরি ওয়াইএমসিএ চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও সংকীর্তন পরিবেশিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরিতে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরিশিরি যুব সদস্যদের আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিরিশিরি ওয়াইএমসিএ চত্বরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও সংকীর্তন পরিবেশিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন নেত্রকোনা-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিরিশিরি ওয়াইডব্লিউসিএর সম্পাদিকা লুদিয়া রুমা সাংমা, দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান ও অ্যাডভোকেট সোহেল খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি পরাগ রিছিল বলেন, বড়দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যিশুখ্রিষ্ট মানবজাতিকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন—এটাই এই উৎসবের মূল বার্তা। বড়দিনে সব অশুভশক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয় হবে, এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষা, জীবনমান ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করবেন।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ব্রসলী রিছিল বলেন, বড়দিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনেক কৃষ্টি ও সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। সেগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পীরা নিজ নিজ সংস্কৃতি তুলে ধরে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ঢাকা থেকে আগত শিল্পীরা কনসার্ট পরিবেশন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে তালা লাগিয়ে অগ্নিসংযোগ: চার দিন পর হত্যা মামলা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতার ঘরে তালা লাগিয়ে অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনার চার দিন পর থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দগ্ধ বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

তবে এই ঘটনার চার দিন পার হলেও এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এদিকে দগ্ধ বেলাল হোসেনের দুই কন্যা এখনো ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ চলছে। কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা বের করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এই ঘটনার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত শুক্রবার গভীর রাতে সদর উপজেলার চরমনসা এলাকায় ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাত বছরের শিশু আয়েশা বেগম অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। গুরুতর দগ্ধ হন বেলাল হোসেন ও তাঁর দুই কন্যা। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে বেলাল হোসেনের দুই কন্যা বিথী আক্তার ও স্মৃতি আক্তারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের দুজনের শরীরের বেশির ভাগ পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ১

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৫
ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আজমির হোসেন আকাশ। ছবি: র‍্যাব
ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আজমির হোসেন আকাশ। ছবি: র‍্যাব

ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় আজমির হোসেন আকাশ (২৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, স্টিলের গেইট ও কাঁচের দরজা ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের আজমির হোসেন আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বাবার নাম আলমগীর হোসেন। তিনি ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজতুরি বাজার এলাকার বাসিন্দা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী দেশি অস্ত্র-শস্ত্র, লাঠিসোঁটা, দাহ্য পদার্থসহ সজ্জিত হয়ে মিছিল নিয়ে জনরোষ, দাঙ্গা ও অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে বেআইনিভাবে সমবেত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে।

দুষ্কৃতিকারীরা পরস্পরের যোগসাজশে ওইদিন রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে দ্য ডেইলি স্টার ভবনের স্টিলের গেইট ও কাঁচের দরজা ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরত কর্মীদের মারধর করার চেষ্টা করে এবং কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিভিন্ন মালামাল লুণ্ঠন করে।

আসামিরা ভবনের সামনের কাচ ভেঙে সোফা, টেবিল ও চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, সরঞ্জাম ও নথিপত্রে অনিষ্ট করে নিচে ফেলে দেয় এবং সেগুলো একটি জায়গায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আসামিরা দ্য ডেইলি স্টার ভবনের বিভিন্ন তলায় রাখা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ক্যামেরা, লেন্স, টিভি, স্ক্যানার, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও ইকুইপমেন্টসসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যার মূল্য অনুমান ৫ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন তলায় থাকা একাধিক লকারে রক্ষিত প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা ভবনের বিভিন্ন তলায় অবস্থান করা দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মীদের অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা ও ভবন ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ করে।

ওই ঘটনায় পরবর্তীতে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর ধারা ৬ (১), তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) এবং তৎসহ সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ২৬ (১) ধারায় গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে একটি মামলা দায়ের রুজু হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু করে র‍্যাব। এরই অংশ হিসেবে গতকাল আজমির হোসেন আকাশকে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার আকাশের কাছ থেকে ২টি মনিটর,১টি সিপিইউ,১টি হার্ডডিক্স,৩টি ক্যাবল,১টি সুইচ অ্যাডাপটার ও ১টি মাউস উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত