Ajker Patrika

পাটকেলঘাটায় সমন্বিত চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে শত শত পরিবার

মুজিবুর রহমান, পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) 
পুকুরে চাষ করা হয়েছে মাছ। ওপরে মাচায় ঝুলছে তরমুজ। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার একটি ঘের থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুকুরে চাষ করা হয়েছে মাছ। ওপরে মাচায় ঝুলছে তরমুজ। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার একটি ঘের থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটায় মৎস্য ঘেরের আইলে সবজি এবং নিচে মাছের সমন্বিত চাষাবাদ পদ্ধতি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ‘মাছ ও সবজিতে একাকার’ হয়ে যাওয়া এই নতুন কৌশল শত শত পরিবারকে স্বাবলম্বী হওয়ার হাতছানি দিচ্ছে। এই সমন্বিত চাষ পদ্ধতি কৃষিতে বিপ্লব এনেছে।

পাটকেলঘাটার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দুই পাশে এখন চোখে পড়ে এমন নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ। একই জমির বহুমুখী ব্যবহারে কৃষকদের আয় যেমন কয়েক গুণ বেড়েছে, তেমনি দেশের সবজির চাহিদা মেটাতে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে তালা উপজেলার কৃষকেরা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

তালা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নসমূহে এই চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে ২৭৬ হেক্টর জমিতে এমন সমন্বিত চাষাবাদ চলছে। কৃষি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এই সবজি সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত এবং মৎস্য ঘেরের আইলের ওপর সবজি চাষ খুব লাভজনক।

সরেজমিন দেখা গেছে, তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি, নগরঘাটা, শাকদাহ, ধানদিয়া, চোমরখালী বিলসহ শত শত হেক্টর মৎস্য ঘেরের আইলের চারপাশে মাচা পদ্ধতিতে সবজি ও মাছের চাষ করা হচ্ছে।

প্রতিটি ঘেরের আইলের ওপর মাচায় ঝুলছে লাউ, কুমড়া, করলা (উচ্ছে), কুশি, খিরাই, বেগুন, পুঁইশাক, বরবটি, তরমুজ, ধুন্দুল, ঝিঙে ও লালশাক। অনেক ঘেরের বেড়িবাঁধেও পুঁইশাক ও ঢ্যাঁড়স লাগানো হয়েছে। বিশেষভাবে, কিছু মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধের ওপর তরমুজ চাষেও সফলতা এসেছে।

পাটকেলঘাটা এলাকার সফল কৃষক রোস্তম আলী জানান, তিনি তাঁর ২০ বিঘা মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া ও করলা চাষ করেছেন। মাঘ মাস পর্যন্ত মাছের পাশাপাশি সবজি উৎপাদন চলবে। পানি শুকিয়ে গেলে ধান রোপণ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘২০ বিঘা জমির ঘেরে নেট, বাঁশ ও কট সুতা দিয়ে মাচা তৈরিতে মাত্র ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় ছাড়িয়ে যাবে।’

কয়েক বছর ধরে মাচা পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনকারী প্রতাপ কুমার জানান, মাচা তৈরির খরচ প্রতি বছর হয় না, দু-তিন বছর পরপর তৈরি করতে হয়। এতে লাভের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ে।

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, সমন্বিত পদ্ধতিতে ঘেরের আইলে সবজি ও নিচে মাছ চাষের জন্য মৎস্যচাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তালা উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় সমন্বিত এ চাষ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে চাষাবাদ তদারকি করছেন এবং চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চকরিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক ৪

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
মাইক্রোবাসসহ আটক চার ডাকাত। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাইক্রোবাসসহ আটক চার ডাকাত। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুটি মাইক্রোবাসসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদেরকে আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের চোয়ারফাঁড়ি গ্রামের মৃত কালু মিয়ার ছেলে সেলিম (৩৫), পশ্চিম বড় ভেওলার ইলিশিয়া গ্রামের মৃত আলী আহম্মদের ছেলে নাছির উদ্দিন (৪৫), পূর্ব বড় ভেওলার ইদমনি গ্রামের আকতার আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (২৪) ও সাহারবিলের কোরালখালী গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১)। পুলিশের দাবি, তাঁরা সবাই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, চকরিয়া পৌর শহরের সাবরেজিস্ট্রার অফিসের পেছনে ডাকাত দলের সদস্যরা অবস্থান করছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা পালানোর সময় চারজনকে আটক করা হয়।

চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, আটক ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ডাকাতি ও চুরিতে ব্যবহৃত দুটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। আটক চারজনের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র, ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুই দিনের সফরে নিজ জেলা পাবনায় পৌঁছেছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন

পাবনা প্রতিনিধি
আজ সকালে পাবনা সার্কিট হাউসে পৌঁছার পর গার্ড অব অনার গ্রহণ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে পাবনা সার্কিট হাউসে পৌঁছার পর গার্ড অব অনার গ্রহণ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দুই দিনের সরকারি সফরে নিজ জেলা পাবনায় পৌঁছেছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে পাবনা স্টেডিয়ামে পৌঁছান। এ সময় পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান তাঁকে স্বাগত জানান। পরে ৯টা ৪৫ মিনিটে সার্কিট হাউসে উপস্থিত হয়ে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। বেলা ১১টায় পাবনা সদরের আরিফপুর কবরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারত করবেন রাষ্ট্র্রপতি।

এরপর বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার জুবলী ট্যাংক এলাকার নিজ বাড়িতে যাবেন। সেখানে বেলা ১টায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সময় কাটাবেন। এ ছাড়া সার্কিট হাউসে রাত যাপন করবেন।

সফরের শেষ দিন রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার গ্রহণ করবেন। বেলা ১১টায় পাবনা স্টেডিয়ামের হেলিপ্যাডে উপস্থিত হবেন এবং বঙ্গভবনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতির সফরকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্টেডিয়াম, সার্কিট হাউস, আরিফপুর কবরস্থান ও তাঁর নিজ বাসভবন এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে প্রায় ১৫ মাস পর নিজ জেলায় এলেন রাষ্ট্র্রপতি সাহাবুদ্দিন। এর আগে পতিত সরকারের সময় রাষ্ট্র্রপতি পাবনা সফরে এলে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। ব্যানার, শুভেচ্ছা ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে যেত পুরো এলাকা। কিন্তু এবার তাঁর সফর ঘিরে জেলায় নেই কোনো উচ্ছ্বাস। অনেকটা নীরবতা বিরাজ করছে তাঁর সফর ঘিরে।

২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই বছরের ১৫ মে পাবনায় প্রথম সফরে যান তিনি। সব মিলিয়ে তিনি চারবার পাবনা সফর করেছেন। এটি তাঁর পঞ্চম সফর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ৪ মামলার আসামি কানকাটা কাদেরকে পিটিয়ে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌর এলাকায় আব্দুল কাদের জিলানীকে (কানকাটা কাদের) পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে চৌমুহনী পৌরসভার হাজীপুরের ছেরাং বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল কাদের জিলানী হাজীপুর এলাকার মৃত গোফরান মিয়ার ছেলে।

এলাকাবাসী জানান, আব্দুল কাদের খারাপ প্রকৃতির লোক। তিনি মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মাদকসহ বিভিন্ন ঘটনায় চারটি মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, মাদক কারবার নিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিরোধের জেরে রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। স্থানীয় লোকজন তাঁর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

বেগমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কুতুব উদ্দিন জানান, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেলের হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে ১৭.১ ডিগ্রি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। ফাইল ছবি
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। ফাইল ছবি

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় শীতের পরশ লাগতে শুরু করেছে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলেই ঠান্ডা বাড়ে, আর সকাল পর্যন্ত এই শীতের অনুভূতি স্পষ্ট থাকে। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ইতিমধ্যে গরম কাপড় ব্যবহার শুরু করেছেন।

আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৭৩ শতাংশ।

আগের দিন শুক্রবার এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে শীত মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়াতেই রেকর্ড করা হয় এবং নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে উত্তরাঞ্চলে শীত আরও বাড়তে পারে।

সন্ধ্যার পর থেকে স্থানীয় বাজারে গরম চা, ভাজাপোড়া এবং ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠার দোকানে মানুষের ভিড় বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই ঠান্ডা লাগে। রাতে ও ভোরে চাদর ছাড়া থাকা যায় না।’

তেঁতুলিয়া ঘুরতে আসা পর্যটক ফিরোজ আলী তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, ‘এখানকার বাতাস ঢাকার তুলনায় অনেক ঠান্ডা। এখানে এসে শীতটা স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে।’

আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। সামনে আরও কয়েক দিন তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত