Ajker Patrika

বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না: শফিকুর রহমান

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ২১: ২৮
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আজ শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আজ শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও ইনশা আল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন। মহানগরী ও জেলা জামায়াত এ জনসভার আয়োজন করে।

জনসভায় রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন জামায়াতের আমির। ১৭ বছর পর রংপুরে বড় পরিসরে জামায়াত এই সমাবেশ করে।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না। কালোটাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি—এই শেখ হাসিনা, তাঁর হাতে সব বাহিনী ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল, জায়গায় জায়গায় নিজের লোক বসিয়েছিলেন। মাস্তানদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু যখন জনগণের জাগরণ, জনগণের বিস্ফোরণ হয়েছে, তখন কি তাঁকে আর কেউ রক্ষা করতে পেরেছেন? তাহলে যেই জনগণ এত মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না ইনশা আল্লাহ।’

শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী এই লড়াই তত দিন চলবে, যত দিন দেশে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্নও থাকবে। ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই কেউ থামাতে পারবে না।’

জনসভায় সদ্য কারামুক্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মুক্তির প্রথম সোপান হচ্ছেন আবু সাঈদ। যাঁর বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল, যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ৫ আগস্ট না হলে আপনারা আমার জানাজা পড়তেন। আমার মুক্তির জন্য আবু সাঈদ আমার পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যুই আমাকে মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আমি তাঁর হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।’

কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই জানিয়ে আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রংপুরের জনগণ কেউ বলতে পারবে না, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে অপরাধী বানানো হলো। রংপুরের জনগণ সাক্ষী, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে তারাও কিন্তু পরবর্তীতে বলেছেন, আমাদের জোর-জুলুম করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’

আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারব, এটা কোনো সময় চিন্তায় আসেনি। আমি কারাগারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবেন, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতেন না। আজ আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লক্ষ জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি, রহমত। যে গলায় আমার রশি পরানোর কথা ছিল, সেই গলায় ফুলের মালা পরানো হলো। আমার ফাঁসি দেওয়ার জন্য যে সমস্ত সাক্ষী জোগাড় করা হয়েছিল, তাদের মাধ্যমেই তো সাক্ষী দিয়ে আমাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। আল্লাহ আমাকে মুক্ত করেছেন।’

জনসভায় অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ না হলেও তারা জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও দুর্বলতার কারণে তারা এ বিপ্লবের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হননি। শত শত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আপনারা আজকের অবস্থানে। সেই কারণে আপনাদের উচিত হবে, বিপ্লবী চেতনা ধারণ করে শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধদের হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা। এক বছর পার হয়ে গেছে, এখনো জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়নি। আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রংপুর সাহসিকতার এক প্রতীক অঞ্চল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবু সাঈদ, তাহিরসহ ২২ জন জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই রংপুরকে অবহেলা না করে সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অগ্রগতিকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, রংপুরের দীর্ঘদিনের দাবি—তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে এ অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।’

রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আজ শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আজ শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কেউ কেউ নিজেদের ক্ষমতাসীন বা প্রধান দলের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি তাঁদের বলতে চাই, আগামী দিনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে কারা ক্ষমতাসীন দল হবে, কারা হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। তাই এই ধরনের পরিচয় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।’

চার দফা দাবি সামনে রেখে আয়োজিত এই বিভাগীয় জনসভাকে কেন্দ্র করে রংপুর নগরীসহ আশপাশের জেলায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ ও আলোচনা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ নিহত ব্যক্তিদের হত্যার বিচার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও রাজনৈতিক সংস্কার, উত্তরাঞ্চলের বহু দিনের দাবি ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার।

জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দূরদূরান্ত থেকে আসেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস, ট্রাকগুলো রংপুর মেডিকেল মাঠ, সিও বাজার, মডার্ন মোড়, মাহিগঞ্জ, কামাল কাছনায় রেখে হেঁটে জিলা স্কুল মাঠে যান।

দুপুর থেকে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। আশপাশের দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানুষের অবস্থান নেন। নানা বয়সী নারী-পুরুষ, ছাত্র, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের পদচারণে জমে ওঠে জনসমাবেশ।

বেলা ৩টায় স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান অতিথি জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জনসভা শেষ হয়। সভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ। জনসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের ওসমান হাদির কবর জিয়ারতকে ঘিরে শাহবাগ এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

জুলাইয়ের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে যাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের সামনেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

hadi-grave 2

আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে যাবেন তারেক রহমান।

তাঁর আগমন উপলক্ষে শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে ছাত্রদল। অন্যদিকে ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে শাহবাগ অবরোধ করে রাখা ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা অবস্থান পরিবর্তন করে শাহবাগের পশ্চিম দিকে অবস্থান নিয়েছেন।

hadi-grave 1

তাঁরা জানান, ১১টায় তারেক রহমান শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারতে আসবেন তাই ইনকিলাব মঞ্চ অবস্থান পরিবর্তন করেছে। আবার দুপুর ১২টায় তাঁরা শাহবাগে অবস্থান নেবেন।

ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রচার চালাচ্ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। ওসমান হাদির মাথায় গুলি করার পর তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
চলছে টাকা গননা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলছে টাকা গননা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে, যেগুলোর গণনা চলছে। জেলা শহরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে ১৩টি দানবাক্স আছে, যেগুলো সাধারণত তিন মাস পরপর খোলা হয়। এবার খোলা হয়েছে ৩ মাস ২৭ দিন পর। ধারণা করা হচ্ছে, অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবার।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল আহমেদের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট মসজিদের ১৩টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ৩২ বস্তা টাকা। তখন ৪ মাস ১৮ দিনে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল দানবাক্সগুলোতে।

দিনভর গুনে দেখা গেছে, সেখানে জমা পড়েছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।

পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, টাকা গণনায় অংশ নেন পাগলা মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার ১১০ জন ও আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার ২৫০ জন ছাত্র, পাগলা মসজিদের ৩৩ জন স্টাফ, রূপালী ব্যাংকের ১০০ জন কর্মকর্তা। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্য গণনায় অংশ নিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানান, পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলে এবার ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এখন চলছে গণনার কাজ। তিনি আরও জানান, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদকেন্দ্রিক একটি ইসলামি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। ভবনটি হবে ১০ তলাবিশিষ্ট এবং এখানে বহুমুখী কাজ করা হবে। এখানে অনাথ-এতিমদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, ক্যাফেটেরিয়া ও আইটি সেকশনও থাকবে।

তিনি বলেন, এই মসজিদের বর্তমান আয়তন ৫ দশমিক ৫ একর। ১০ তলাবিশিষ্ট আধুনিক ভবনের জন্য আরও কিছু জায়গা কেনা হবে। এই মুহূর্তে পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে মানুষের দানের ১০৪ কোটি টাকা জমা আছে।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্সের জন্য নকশা জমা দিয়েছে ১২টি প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা করে একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দিয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মসজিদ কমিটি দ্রুত কার্যাদেশ দেবে এবং কাজ শুরু হয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, দানবাক্স খোলা থেকে শুরু করে বস্তায় ভরা এবং গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত সব টাকা নিরাপদে পৌঁছাতে সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ তাঁর পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন।

দানবাক্স খোলার পর গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করে উৎসুক জনতা। মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলের পাশাপাশি নানা ধরনের জিনিস দান করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দানের সিন্দুক থেকে টাকা প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর টাকা গণনার জন্য বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বস্তা থেকে টাকা মেঝেতে ঢেলে দেওয়ার পর শুরু হয় গণনার কাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির কবর জিয়ারতে আসবেন তারেক রহমান, শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেল ইনকিলাব মঞ্চ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৭
শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে আজ শনিবার বেলা ১১টায় আসবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এদিকে তারেক রহমানের কবর জিয়ারতের কর্মসূচির কারণে শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইনকিলাব মঞ্চের প্রকাশনা সম্পাদক ফাহিম আবদুল্লাহ জানান, হাদি হত্যার বিচার চেয়ে দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেবে ইনকিলাব মঞ্চ।

শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সারা রাত জেগে হাদি হত্যার বিচার চেয়ে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছি। তারেক রহমান বেলা ১১টায় হাদির কবর জিয়ারত করতে আসবেন, সে জন্য আমরা ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেব।’

শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ইনকিলাব মঞ্চ তাদের অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবস্থানকারীরা জানান, হাদি হত্যার বিচার চেয়ে শাহবাগ মোড়ের পশ্চিম দিকে তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের হাদির কবর জিয়ারত শেষ হলে তাঁরা আবারও আজ দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নারীসহ আহত ৬

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৫
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা লেগে বাসটির নারী যাত্রীসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ি এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের মাওয়ামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার গাউস শিকদারের ছেলে নিয়ামত, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রম্বু খলিফার ছেলে ইয়াছিন, বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার আবেদ আলীর ছেলে হায়দার আলী, একই উপজেলার সোনা মিয়ার ছেলে আমেদ মিয়া, আসাদুজ্জামানের স্ত্রী জুলেখা আক্তার ও মাসুদ মিয়ার ছেলে রিজভী মিয়া।

শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীনগরে গতকাল রাতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের সামনের অংশ মুচড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে কয়েকজনের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

দুর্ঘটনাকবলিত ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ বাসটি হাসাড়া হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত