Ajker Patrika

‘হামরা দিবস দিয়ে কী করমো, কাম করে ভাত খাই’

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় ইট ভাঙার কাজ করছেন এক নারী শ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাইবান্ধায় ইট ভাঙার কাজ করছেন এক নারী শ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মে দিবস এলে দিনটিতে শুধু দিবসই পালন হয়, মজুরি বাড়ে না। এমন অভিযোগ দিনমজুরদের। তাঁরা বলছেন, দিন–রাত সমানতালে কাজ করে যেমন ফুরসত মেলে না, ঠিক তেমনি বাড়ে না তাঁদের মজুরি। দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি না পেয়ে তাঁদের সংসারে টানাটানি। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন আয়োজনে পালন করছেন। তবে শ্রমিকদের গা থেকে ছোড়া ঘামের ন্যায্যমূল্য দিতে কেউ রাজি নন। সভা-সেমিনারে বক্তব্যে ন্যায্য মজুরির কথা গলা ফেঁটে বললেও কোনো দিন বাস্তবায়ন হয়নি। ন্যায্য মজুরি মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নারী-পুরুষ উভয়। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের শ্রমের মূল্য আরও অনেক কম।

আজ মে দিবসেও ইট ভাঙা কাজ করছেন ৫০ বছর বয়সী খুশি বেওয়া। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন সদস্যের সংসার। ২০ বছর ধরে তিনি নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কাজ করলে দিনে তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা আয় করেন। তাঁর আয়ের টাকা দিয়েই সংসার চলে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা শহরের গোডাউন এলাকায় ইট ভাঙার কাজ করতে দেখা গেছে তাঁকে। মে দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘হামরা দিবস দিয়ে কী করমো। কাম করলে ভাত জোটে, না করলে উপোস থাকতে হয়।’

শ্রমিক শামসুল (৫৫) বলেন, ‘গরিব মানুষের আবার শ্রমিক দিবস। এক দিন কাম না করলে পেটে ভাত যায় না। শুধু দিবসই পালন হয়, আমাদের ন্যায্য মজুরি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নাই। কাকে বলব দুঃখের কথা, প্রতিবছর এভাবেই যায় মজুরি বাড়ে না। এক দিন কাজ না করলে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের। তারা বোঝে না শ্রমিক দিবস।’

অন্যদিকে ১৫ বছরের খায়রুল ইসলাম রিকশা চালাচ্ছেন। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার অদূরে প্রধানের বাজার এলাকার হাজারি গ্রামে। বাবা আয়নাল হক একজন কৃষিশ্রমিক। ছোট দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। বাবার সামন্য আয়ে সংসার চলে না। সংসারের বড় ছেলে সে। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে খায়রুল ইসলাম রিকশা চালায়। জেলা শহরেই রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে। মাসের ৩০ দিনই রিকশা চালাতে হয় তাকে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপাড়া করছে সে। খায়রুল বলে, ‘ছোট ভাই–বোন আছে, বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে না। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতাম। কিন্তু টাকার অভাবে বাকি লেখাপড়া করতে পারি নাই। পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে। দায়িত্ব আমার বেশি। ছোট ভাইরা তো আর কাজ করতে পারে না। কিস্তির ওপর টাকা নিয়ে রিকশা কিনেছি। প্রায় এক বছর থেকে রিকশা চালাই।’

এই উপজেলার ফারাজিপাড়ার রিফাদ মিয়া (১৪)। চার বছর ধরে ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করে। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পরিবারে অভাবে পরে আর স্কুলে ভর্তি হয়নি। ঝালাইসহ রডের যাবতীয় কাজ করে সে। রিফাদ জানায়, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে সে।

খায়রুল ও রিফাদের মতো গাইবান্ধায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার বলে বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। তবে গাইবান্ধা জেলায় কী পরিমাণ শিশু শ্রমিক রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নেই।

গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিশু শ্রমিকদের কাজের দৃশ্য দেখা গেছে, শহরের সার্কুলার রোডে আসাদুজ্জামান মার্কেট এলাকায় ফুলের দোকানে কাজ করছে নিরব মিয়া (১৫)। বাড়ি সদর উপজলার সরকারপাড়া এলাকায়। নিরব বলে, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। টাকার অভাবে আর লেখাপড়া করতে পারিনি। প্রায় পাঁচ বছর আগে চায়ের দোকানে কাজ করেছিলাম। এখন ফুলের দোকানে কাজ করি। দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরা পাই। এ দিয়েই চলে।’

একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কী আর করি। বেশি লেখাপড়া করানো আমাদের পক্ষে সম্ভাব না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ছেলেটাকে পাঠিয়েছি। বড় হয়ে কিছু একটা করে খেতে পারবে।’

শহরের গোরস্তান মোড়ে এলাকায় মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করে কবির হাসান (১৩)। বাড়ি শহরের পুলিশ লাইনস এলাকায়। কবির জানায়, ‘এক বছর লেখাপড়া করছি। পরে আর স্কুলে যাই নাই। পাঁচ বছর ধরে গ্যারেজে কাজ করছি। মোটরসাইকেলের অনেক কাজ শিখেছি। গ্যারেজে দৈনিক ২০০ টাকা পাই। এটি পরিবারের কাজে দেই।’

একই মার্কেটের ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করছে রাজিব মিয়া (১৬)। বাড়ি পুটিমারি এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করে সে। তার কাজটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মেশিন দিয়ে ঝালাইয়ের স্থানে পরিষ্কার করতে হয় তাকে। সে জন্যে সে অন্য শ্রমিকের চেয়ে বেশি টাকা পায়। তাই সে খোলা হাতে এ কাজ করে।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা মো. মেহেদী বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে জেলায় কোনো প্রতিষ্ঠানেরই তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। পারিবারিক অস্বছলতায় অল্পবয়সী এসব শিশু অমানবিক পরিশ্রম করছে। এতে জেলায় ক্রমেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব শিশু বিভিন্ন গ্যারেজ, ওয়েল্ডিং মেশিন, লেদ মেশিন ও ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করছে। ফলে শিক্ষার আলো থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে এবং ঝুকিপূর্ণ পেশায় যুক্ত হচ্ছে। একটি শিশু শ্রমিক গড়ে ১০-১১ ঘণ্টা কাজ করছে। শিশুশ্রম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। শিশুশ্রম কমানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব দলের জন্য সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সভানেত্রী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিম।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ, চাই সুষ্ঠু নির্বাচন, চাই যোগ্য নেতৃত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

সরকারের কাছে দাবি তুলে শামীমা তাসনিম বলেন, ‘সব দলের রাজনৈতিক সুযোগ রেখে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেটাকে আমরা বলছি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সেটি ভয়ভীতি যেন না দেখানো হয়। মানে ভোট দিতে যে আমি যাব, যেন সুস্থ অবস্থায় ফেরত আসতে পারি।’

অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে আমলা নিয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অতীতে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

কথায় ও কাজে সৎ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, যিনি দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় দেবেন না, যিনি বাংলাদেশকে একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা মনে করবেন এবং বিদেশে কোনো ‘সেকেন্ড হোম’ রাখবেন না, আধিপত্যবিরোধী হবেন—এমন নেতৃত্ব আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম, সহকারী সম্পাদক মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, লেকচারার ড. জেবুন্নেসা, ড. মেহের আফরোজ লুৎফা, জান্নাতুন নাইম প্রমি প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি: রাকসু জিএস আম্মার

রাবি প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) শিক্ষক নেটওয়ার্কের ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধ হোক’ শিরোনামে দেওয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই বিবৃতির মন্তব্যে আম্মার লেখেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কমেন্ট করেছি, ডিলিট করি নাই। তাঁরা (শিক্ষক নেটওয়ার্ক) আমার কাজকে যদি অপতৎপরতা হিসেবে দেখের, তাহলে আমিও তাঁদের বিবৃতি সন্দেহের চোখে দেখি। তাঁরা আমাকে একটি আহ্বান জানিয়েছেন, আমিও তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি। তাঁরা এটাকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখলে, আমিও আমার স্বাধীনতা প্রকাশ করছি।’

শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ছয়জন ডিনের পদত্যাগ দাবি করেন। কেবল তা-ই নয়, নিজেই যেন “প্রশাসন” হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন, এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে। মোট ১২ জন ডিনের প্রত্যেকেই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত হলেও, বাকি ছয়জন হয়তো রাকসু জিএসের বিবেচনায় “রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ”, ফলে তাঁদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাঁদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে “প্রগতিশীল শিক্ষক” হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থী শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন, তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাঁদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা, রাকসুর নেতৃবৃন্দের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি; এটা সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর “স্পাইরাল ইফেক্ট” পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।’

সার্বিক বিষয়ে রাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সৌভিক রেজা বলেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। যদি ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ার কারণে চাকরি চলে যেত বা পদচ্যুত করানো হতো তাহলে তো শিক্ষক নেটওয়ার্কের অনেকেরই আওয়ামী আমলে চাকরি চলে যেত। ৭৩-এর অধ্যাদেশ আমাদেরকে একটা রক্ষাকবজ দিয়েছে, যে কারণে আমরা শিক্ষকেরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পরও আমাদের চাকরি চলে যায়নি।’

সৌভিক রেজা আরও বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাছে বেঁধে রাখা, চাকরিচ্যুত কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো একজন শিক্ষার্থীর এখতিয়ারের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ক্ষমতা রাখেন না। তবে শিক্ষকেরা কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইনানুযায়ী তাঁদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, তবে মব সৃষ্টি করে নয়। কেউ যদি সরাসরি হামলা বা দালালি করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি এভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাতক্ষীরায় জেলা আ.লীগ নেতার মনোনয়নপত্র জমা, সমর্থক আটক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাসহ ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁরা।

সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতের মো. ইজ্জতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির জিয়াউর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের শেখ মো. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ইয়ারুল ইসলাম।

আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এস এম মুজিবর রহমান ওরফে সরদার মুজিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহাম্মদ আব্দুল খালেক, বিএনপির মো. আব্দুর রউফ, জাতীয় পার্টির মো. আশরাফুজ্জামান ও মাতলুব হোসেন।

এ ছাড়া এলডিপির শফিকুল ইসলাম শাহেদ, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের মো. ইদ্রিস আলী ও এবি পার্টির জিএম সালাউদ্দীন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহা. রবিউল ইসলাম, বিএনপির কাজী আলাউদ্দীন ও জাতীয় পার্টির মো. আলিপ হোসেন।

এ ছাড়া মাইনরিটি জনতা পার্টির রুবেল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়েজ কুরনী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ আসফউদ্দৌলা খান, আসলাম আল মেহেদী ও ডা. শহিদুল আলম (বিএনপির বিদ্রোহী) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, বিএনপির মো. মনিরুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির হুসেইন মো. মায়াজ, গণঅধিকার পরিষদের এইচ এম গোলাম রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা আল মামুন ও আব্দুল ওয়াহেদ (বিএনপির বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সোমবার বিকেলে ভোলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায় জেলা বিজেপি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ছাত্রদলের নেতা সিফাত হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিন অভিযোগ করেন, মিছিলটি নতুন বাজার এলাকায় বিজেপি অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখান থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি অফিসে হামলা চালায়।

বিজেপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুল আলম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের দলীয় অফিস বন্ধ ছিল। বিজেপির জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে।

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিজেপি অফিসে হামলা কিংবা কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’ তিনি আরও জানান, কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।

ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত