Ajker Patrika

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: রাজশাহী বিএনপির কতিপয় নেতা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয় দিচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আজ রোববার সকালে রাজশাহী নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ রোববার সকালে রাজশাহী নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এমনকি জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের জন্য সরাসরি মদদ দিচ্ছেন। ফলে রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে এখন ‘হাইব্রিডের বাম্পার ফলন’ হচ্ছে। আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন রাজশাহী বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সকালে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগরের বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু। সংবাদ সম্মেলনে নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে এসব বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। সংবাদ সম্মেলনে কয়েক নেতার দখলদারির অভিযোগও তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্যে সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে থানা ও ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বিগত দিনে যেসব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা, মামলা, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরই নগর বিএনপির কিছু নেতা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন, শিষ্য বানাচ্ছেন।’ তিনি দাবি করেন, নগরের রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সদস্যসচিব ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ, মাহমুদুল হক রুবেল, হারুনুর আব্দুর রাজ্জাক, কমিটির সাবেক সদস্য বদরুদ্দোজা বদর বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা।

সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিজান ও আমিনুল ইসলাম বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন নির্বাচনে সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোসহ দলীয় ভূমিকা পালন করেছেন।’ বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, আমিনুল ইসলাম রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণ করা সন্ত্রাসী রনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক। রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও তাঁকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামানের ভাই নুরুজ্জামান টুকুর (রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর) নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দেখা গেছে। আর গত ৫ আগস্টের পর রাজশাহী পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়া অধ্যক্ষ গোলাম মাওলাকে তাঁর চেয়ারে বসাতে সেখানে পেশিশক্তি দেখাতে গিয়েছিলেন মিজান। তাঁদের ইন্ধনে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলুর বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ২২ জুলাই বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলুর বাসায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মমিনের নেতৃত্বে হামলা হয়। পরে তাঁকে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। মিলুর বাসায় হামলাকারী যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বর্তমানে ভোল পরিবর্তন করে নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনের সঙ্গে চলাফেরা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘মহানগর বিএনপিতে একটি অনুপ্রবেশকারী সক্রিয় সন্ত্রাসী বলয়ের কারণে তিনটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সন্ত্রাসী বলয় নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনের সরাসরি নেতৃত্ব-আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বহাল তবিয়তে আছে। কিছুদিন আগে নগরের উপকণ্ঠে ভুগরইলে নওহাটা যুবদলের সাবেক সদস্য সালাহউদ্দিন মিন্টুর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে তাঁর বাবা আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হামলার নেপথ্যে সাঈদ, শিপলু, সোহাগ, আব্দুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ, শান্ত, শিমুল, ইমনের নাম উঠে এসেছে। কয়েক বছর আগেও রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড যুবদল কর্মী রিয়াজকে চাঁদা না দেওয়ার কারণে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে তৎকালীন মহানগর তাঁতী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নাঈম, রানা, রনি, অভির সম্পৃক্ততা উঠে আসে। সম্প্রতি কাদিরগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে জিম্মি করে টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে নিরীহ রিকশাচালক গোলাম হোসেনকে খুন করা হয়। এ খুনে নাঈম, সোহেল রানা, তারেক, ফাইজুল হক ফাহি, সুমন সরদার, রনির নাম আলোচিত হয়েছে। এই তিনটি খুনের অধিকাংশ প্রধান অভিযুক্ত বিগত সময়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাঁতী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তাঁরা নগর বিএনপির একটি শক্তিশালী বলয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিত-পালিত হয়ে একের পর এক অপকর্ম ও বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী সড়ক পরিবহন সমিতি দখলের অভিযোগও করা হয়। এতে বলা হয়, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন ও বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে রাজশাহী সড়ক পরিবহন সমিতি ৯ আগস্ট বলপূর্বক দখল নেওয়া হয়। এর আগে বিনা নির্বাচনে অবৈধভাবে নজরুল ইসলাম হেলালকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটিও ঘোষণা দেওয়া হয়। মামুন এর আগে নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে বাস মালিক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মরহুম আনোয়ার হোসেন আনুকে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে তাড়িয়ে দিয়ে নিজের ভাই শহিদুর রশিদ মন্টুকে বাস মালিক সমিতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই একই সড়ক পরিবহন মালিক কমিটির তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মামুনের আজ্ঞাবহ নজরুল ইসলাম হেলাল। এসব কারণে তিনি র্যাবের এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সাইদুর রহমান পিন্টু দাবি করেন, নগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল অফিসের জায়গাটি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি মামলাও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ মামলা হওয়ায় আদালত এই সম্পত্তিতে “স্থিতাবস্থা” জারি করলেও নজরুল হুদা কিসের বলে কিসের জোরে, কোন আইনে এখন পর্যন্ত ওই জমির ভবনটি ব্যবহার করছেন ও ভাড়া দিয়েছেন, আমরা জানতে চাই।’

সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেনের বিনিময়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন রাজশাহীতে জুলাই বিপ্লবে হামলা, খুন এবং বিএনপি অফিস ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িত এজাহারভুক্ত বিভিন্ন আসামিকে আটক না করতে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন। আবার মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের নেতৃত্বে অনেক অরাজনৈতিক নিরপরাধ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে।’

বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও লেনদেন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, রাজপাড়া থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও মাহমুদুল হক রুবেল অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁদের না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাই কমিটি গঠনের পরপরই তাঁরা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে রাসেল হোসেন নামের এক যুবলীগ নেতাকে। ওই যুবলীগ নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে তাঁকে বিএনপিতে নেওয়া হয়।

নেতাদের অভিযোগ, নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নগরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মমিনকে প্রত্যক্ষভাবে শুধু সহযোগিতাই করেননি বরং সরাসরি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচন-পরবর্তী ফলাফল ঘোষণার পরে ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে বরণ করেছেন। মামুন ও ঈসা এত দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছিলেন। তাই আওয়ামী আমলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি বলে তাঁরা মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা ও সদস্যসচিব মামুন-অর-রশিদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। সেটি পড়ে দেখার পর মামুন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, তারা যেন নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দল, দেশ এবং জনগণের জন্য কাজ করে। এই বিষয়ে এটাই আমার বক্তব্য।’

এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘সাবেক যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট তাঁর ব্যক্তিস্বার্থে ৫ আগস্টের পর মাউশির একজন কর্মকর্তাকে চেয়ার থেকে টেনে বের করে দেন। এ কারণে তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরে সাবেক একজন ছাত্রনেতা হিসেবে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করি। কিন্তু তারপর থেকে তিনি আবার খেয়ালখুশি মতো যা খুশি করছেন। কখনো বিক্ষোভ করছেন, কখনো সংবাদ সম্মেলন করছেন। সবই মিথ্যা অভিযোগ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত