Ajker Patrika

চাঁদাবাজদের কথিত তালিকা নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড়, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম

 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৪১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে ‘চাঁদাবাজদের’ কথিত একটি তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। এই তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদেরই নাম রয়েছে। কারা এই তালিকা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে বিএনপির এক নেতা দাবি করছেন, তালিকাটি পুলিশের। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত করা হয়নি।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তালিকাটি হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। হাতে এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদেরও। এটি নিয়ে ভেতরে-ভেতরে আলোচনা চললেও নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই মামলায় আসামি হিসেবে ৩৬ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জনেরই নাম দেখা গেছে ওই তালিকায়। এই মামলা হওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজিতে জড়িত অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।

তালিকায় রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম রয়েছে। এতে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে। বাকিগুলোর নাম ঠিকানা দেওয়া আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের সুবিধাবাদী বলা হয়েছে।

তালিকাটিতে আরও দেখা গেছে, সেখানে থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে।

এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানা এলাকার ২২ জন, রাজপাড়া এলাকার ১৬, চন্দ্রিমার ১৪, মতিহারের ৭, শাহমখদুমের ১৬, এয়ারপোর্ট এলাকার ১৪, পবার ৮, কর্ণহার এলাকার ১০, দামকুড়ার ৮ জন এবং কাশিয়াডাঙ্গার আটজনের নাম আছে। তবে তালিকার কোনো স্থানে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই।

এই তালিকার ১ নম্বরে নাম রয়েছে পটু বাবু। তিনি ৭ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২ নম্বরে নাম আছে ককটেল মুরাদ। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জুলাই। পটু বাবুর ব্যাপারে লেখা রয়েছে, ‘তিনি গাঁজা ফেন্সি বিক্রেতা ও ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। জিরো পয়েন্ট বড় মসজিদের দক্ষিণ পাশে মসজিদ মিশন স্কুলের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহকারী কাভার্ড ভ্যান গাড়ি থেকে তিনি চাঁদাবাজি করেন। তিনি ভুয়া সাংবাদিকের কার্ড করে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। বর্তমানে সক্রিয়।’

গ্রেপ্তার ককটেল মুরাদের ব্যাপারে লেখা হয়, ‘তিনি গাঁজা বিক্রেতা ও ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি করেন। তাঁর বিভিন্ন অপকর্মে ও অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠিত বলে জানা যায়।’

গত বুধবার (২৩ জুলাই) মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ডেভেলপার ব্যবসায়ী দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জনেরই নাম রয়েছে ছড়িয়ে পড়া ‘চাঁদাবাজদের’ কথিত ওই তালিকায়। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া পটু বাবু ও ককটেল মুরাদও এ মামলার আসামি।

এ ছাড়া এ মামলার আসামি এমদাদুল হক লিমন, আমিনুল ইসলাম রিগেন, এস এম সুলতান, আরিফুল শেখ বনি, মমিনুল ইসলাম মিলু, জীম, ডালিম, টিপু, লিটন, তুহিন, নাসির, মিজান, জাফর ইমান দীপ্ত, শামছুল হোসেন মিলু, সানোয়ার হোসেন এবং শাওনের নাম কথিত ওই তালিকায় দেখা গেছে। এই ১৮ জন বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। তালিকায় নাম এবং মামলা হওয়ায় ভীষণ চটেছেন তারা।

চাঁদাবাজির মামলাটি হওয়ার পর এর প্রতিবাদে গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে চাঁদাবাজির মামলার আসামি নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা বিএনপির সভাপতি শামছুল হোসেন মিলু দাবি করেন, এই তালিকা পুলিশের।

তিনি বলেন, ‘১২৩ জনের যে তালিকাটার কথা আসছে, সেটা আমি যা দেখলাম সেটাতে ওসি সাহেবের স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে। বোয়ালিয়ার ওসির স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে এইটা আছে, কপি আছে। আমার কাছে আছে। ওসি সাহেব ষড়যন্ত্র করে করেছে।’ ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশনে’ মামলাটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তালিকার ৮ নম্বরে নাম আছে মামলার ২ নম্বর আসামি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমনের। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা (তালিকা) কারা করেছে আমরা বলতে পারব না। যেভাবে তালিকা করা হয়েছে, মানে যারা করেছে (চাঁদাবাজি) তাদের নামের তালিকা এসেছে, যারা করেনি তাদেরও নাম ওখানে চলে এসেছে।’

তালিকায় নামের প্রতিবাদ করেছেন জানিয়ে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘এইটা আমি নিজেই সিটিএসবির ডিসির (নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার) কাছে গিয়ে বলে এসেছি, এ রকম কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে (তালিকা যদি করা হয়) পুনরায় তদন্ত করে আপনারা এটার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা না।’

এই তালিকা কার, এমন প্রশ্নে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে তালিকার কথা বলছেন, সেটা আমি জানি না। তবে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা করা হয়। এটা শুধু পুলিশ করে না, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা এই তালিকা করে পুলিশকে দেয়। পুলিশ ভেরিফাই করে। কারণ, অ্যাকশন নেওয়ার দায়িত্ব তো পুলিশের। বিভিন্ন হাত ঘুরেই তালিকাগুলো করা হয়। পুলিশ ভেরিফাই করে এটা সঠিক আছে কি না। এইটা সেই রকম তালিকা কি না সেটা আমার জানা নাই।’

তিনি বলেন, ‘যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী—তাদের তো অ্যারেস্ট করতে হবে। মানুষকে তো স্বস্তিতে রাখতে হবে। মানুষ বিগত দিনগুলোতে সাফার করেছে, যার জন্য মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এখন আমরা যদি এই ক্ষোভের জায়গাগুলো না কমাতে পারি, যদি এখনো স্বস্তিতে না রাখতে পারি, তাহলে তো ভবিষ্যতে আবার মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। একটা রাষ্ট্রে মানুষ স্বস্তিতে থাকার জন্য কতবার রাস্তায় নামতে হবে? আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে যাতে আর রাস্তায় নামতে না হয়। চাঁদাবাজেরা সে যেই দলেরই হোক, দলীয় পরিচয় যা-ই হোক, তার পরিচয় মানুষের কাছে চাঁদাবাজ। যারা চিহ্নিত চাঁদাবাজ তারা ছাড় পাবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত