Ajker Patrika

বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ: খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন ৭ পরিবারের

­­শাহীন রহমান, পাবনা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১৯: ২৪
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নৈশপ্রহরী হত্যায় জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। খেয়ে না-খেয়ে কাটছে তাদের দিন। এরই মধ্যে হত্যায় জড়িত দুই আসামি ও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, শুধু সন্দেহের জেরে সাতটি পরিবারকে নিঃস্ব করার দায় কে নেবে?

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরগুলো পড়ে রয়েছে ভাঙচুর অবস্থায়। মাঝে কিছু সিমেন্ট ও বাঁশের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে যাওয়ার ক্ষতচিহ্ন ভাঙা ঘরের বারান্দাজুড়ে। ধ্বংসস্তূপ দেখে মনে হবে যেন বসতবাড়িগুলোর ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের ওপর চালানো হয়েছে এমন বর্বরতা। সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এমন চিত্র পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ১০ জুন সকাল ৯টা। সকালের রান্না করে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সবাই। এমন সময় স্থানীয় ১০-১২ জন বিভিন্ন বয়সী লোক এসে কোনো কথা না বলে অতর্কিত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। মারধর করে নারীদের বের করে দিয়ে একে একে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। শেষে আগুন দিয়ে চলে যায়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। ততক্ষণে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

ভুক্তভোগী পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৯ জুন রাতে চণ্ডীপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ওসমান গণি মোল্লাকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি কাজীপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিহত ওসমান গণি উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। ওই রাতে বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের মৃত বদরুজ্জামানের ছেলে শাহাদত হোসেন ভালোবাসার সম্পর্কে এক মেয়েকে নিয়ে ওসমান গণি মোল্লার কাছে গিয়ে তাঁদের বিয়ে পড়াতে বলেন। কিন্তু শাহাদতের স্ত্রী-সন্তান থাকায় বিয়ে পড়াতে রাজি হননি তিনি। পরে ওই রাতেই খুন হন ওসমান গণি।

১০ জুন সকালে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শাহাদতকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় গ্রামপ্রধানেরা। এরপর মসজিদে মাইকিং করে তাঁর বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর শাহাদতের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে উত্তেজিত এলাকাবাসী। শাহাদতসহ তাঁর ছয় ভাই এবং এক বোনের মোট সাতটি পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে ঘরে থাকা সব আসবাব, টাকা, চাল, ফসল, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু লুট করে নেওয়া হয়।

ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আব্দুল বারিক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ১০ জুন ভাঙ্গুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ১১ জুন ওসমান গণি হত্যায় জড়িত মূল দুই অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয় যে মাদকের টাকার জন্য তারা বৃদ্ধকে খুন করেছে। তারা হলো বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের জেলহক প্রামাণিকের ছেলে হাবিব (১৪) ও চণ্ডীপুর গ্রামের আসমত আলীর ছেলে আহমদ উল্লাহ (১৫)। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের মৃত বদিউজ্জামান সরকারের ছেলে রবিউল করিম, আব্দুর রহিম, নুরুল ইসলাম, আব্দুস সোবাহান, সাদ্দাম হোসেন, শাহাদত হোসেন ও লাইলী খাতুন। তাঁদের মধ্যে নুরুল, সোবাহান ও সাদ্দাম মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে বড় ভাই রবিউল করিম বাদী হয়ে ১৮ জুন মামলা করেন। মামলায় ১৩ জনের নামে ও ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার পর পুলিশ ১৯ জুন তিন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। তাঁরা হলেন চণ্ডীপুর গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে সাইদুর রহমান, বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলামের ছেলে শাহীন হোসেন।

ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নৈশপ্রহরী ওসমান গণি হত্যার মূল দুই আসামি হাবিব ও আহমদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মাদকের টাকার জন্য মূলত ওসমান গণিকে খুন করেছে বলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। আর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মামলায় সাইদুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, ‘হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার, এক বান্ডিল করে টিন, ৬ হাজার করে টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থবছর যেহেতু শেষ, তাই সামনের অর্থবছরে আবারও তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চৌদ্দগ্রামে ঘন কুয়াশায় দুই লরির সংঘর্ষ, চালক ও সহযোগী নিহত

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪২
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া একটি লরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া একটি লরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আজ ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে দুই লরির সংঘর্ষে চালক ও তাঁর সহযোগী (হেলপার) নিহত হয়েছেন। নিহত চালক আব্দুল জব্বার (৩১) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার চরকমলা গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে এবং হেলপার শাকিল (২২) নোয়াখালীর চরজব্বার থানার চর মহিউদ্দিন গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে।

চৌদ্দগ্রাম মিয়া বাজার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন জানান, ঘন কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামমুখী একটি লরিকে পেছনে থাকা আরেকটি লরি ধাক্কা দেয়। এতে পেছনের লরির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক আব্দুল জব্বার মারা যান। গুরুতর আহত হেলপার শাকিলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁরও মৃত্যু হয়।

চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন জানান, আহত হেলপারকে আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এসআই ফারুক হোসেন জানান, লাশ উদ্ধার করে থানার ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্ব

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশাজনিত কারণে আজ রোববার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমনকারী একাধিক ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের তুলনায় বিলম্বে অবতরণ ও উড্ডয়ন করেছে। তবে এদিন কোনো ফ্লাইট ডাইভার্ট (অন্য স্থানে অবতরণ) করা হয়নি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বলেন, আজ ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত রানওয়ের দৃশ্যমান অবস্থা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হয়। বর্তমানে দৃশ্যমান অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় ফ্লাইট পরিচালনা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় সব ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

বিলম্বিত ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করছে বলে জানানো হয়েছে। যাত্রীদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভোগান্তির জন্য এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ভ্রমণের আগে নিজ নিজ ফ্লাইটের সর্বশেষ অবস্থা জেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদা না দেওয়ায় হাতিয়ায় ব্যবসায়ীর ওপর হামলার অভিযোগ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
আহত ব্যবসায়ী মেহরাজ উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যবসায়ী মেহরাজ উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় মেহরাজ উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতের এই ঘটনায় হাতিয়া থানায় চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টা ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় স্থানীয় ইউনুছ মাঝিসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর অভিযুক্ত ইউনুছ মাঝি ও তাঁর সহযোগীরা মেহরাজ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ২৪ ডিসেম্বর সকালে মেহরাজ উদ্দিন তাঁর চাল ভাঙার মেশিনে কাজ করার সময় সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

হামলার সময় সন্ত্রাসীরা ধারালো কিরিচ দিয়ে মেহরাজ উদ্দিনের মাথায় এলোপাতাড়ি কোপ দেয়। এতে মাথার হাড় ও খুলি মারাত্মকভাবে জখম হয়। এ ছাড়া লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়।

পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এ এস এম আরিফ বলেন, মেহরাজ উদ্দিনের মাথার আঘাত খুবই গুরুতর। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মেহরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, কয়েক দিন ধরে ইউনুছ মাঝি, তাঁর ছেলে হাসান ও রাজু এবং পাশের এলাকার আয়াত হোসেন তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। এর আগেও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, মেহরাজ উদ্দিনের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় নাজমুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নাজমুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রতিবেশী ও ভাতিজা সাকিব আলম জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ওলিপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুরনবী। বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গীতে থাকতেন নাজমুল। তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি সুপারভাইজার ছিলেন তিনি।

সাকিব আলম আরও জানান, রাতে গ্রাম থেকে তাঁকে ফোনে জানানো হয়, নাজমুল উত্তরার হাউস বিল্ডিংয়ের জয়নাল মার্কেট নতুন গেট এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়েছেন। পরে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দেখতে পান। আহত অবস্থায় নাজমুলকে পথচারীরা সেখানে নিয়ে এসেছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।

পথচারীদের বরাতে সাকিব আরও বলেন, হাউস বিল্ডিং এলাকার জয়নাল মার্কেটে নতুন গেট এলাকার রেললাইনে দুই দিক থেকে দুটি ট্রেন আসায় ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নাজমুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি সেখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন, কেউ তা বলতে পারেননি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত