Ajker Patrika

বাঘায় আওয়ামী লীগে সংঘর্ষে ২ মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে এলাকাছাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ১৪: ৫৮
বাঘায় আওয়ামী লীগে সংঘর্ষে ২ মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে এলাকাছাড়া

রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে দলের অনেক নেতা-কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। সংঘর্ষে আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের (৫০) মৃত্যুর পর তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। গত ২২ জুন উপজেলা সদরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ২৬ জুন হাসপাতালে বাবুল মারা যান।

বাবুল স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের অনুসারী ছিলেন। সেদিনের ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বাবুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া সংঘর্ষের স্থানে আসার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তিনিও শাহরিয়ার আলমের অনুসারী।

সংঘর্ষ যে কারণে: জমির ক্রেতা-বিক্রেতাকে জিম্মি করে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির অতিরিক্ত টাকা আদায়কে সমর্থন দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের গঠন করে দেওয়া ওই কমিটির এমন চাঁদাবাজির বিরোধিতা করে আসছিলেন পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলামের অনুসারী দলিল লেখকেরা।

এ নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত গত ১০ জুন। সেদিন দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজি বন্ধসহ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পক্ষ। তাতে বাঘার দলিল লেখকসহ হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অংশ নেন। পরে ২২ জুন তাঁরা বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেন। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন উপজেলা সদরে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেন শাহরিয়ারের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচিতে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বেগ পায় পুলিশ।

পাল্টাপাল্টি মামলা: ওই সংঘর্ষের পর রাতেই দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর ইসলাম পিন্টু থানায় মামলা করেন। মামলায় মেয়র আক্কাস আলী, ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেসসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আদালতে পাল্টা মামলা করেছে মেয়রপক্ষ। আবুল কালাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, ঘটনার দিনই তাঁরা থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা গ্রহণ করেননি। তিনি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আদালতে এ মামলা করা হয়।

এ মামলায় আসামি হিসেবে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান, সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম সমর্থিত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টুসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামান মামলার আবেদনটি গ্রহণ করে তা এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে বাঘা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

গ্রেপ্তার ১০, এলাকাছাড়া অনেকে: ২২ জুন মেয়রপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ সাতজনকে আটক করে। মামলা হওয়ার পর আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা সবাই মেয়রপক্ষের লোকজন। তাঁদের মধ্যে চকরাজাপুর ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর অভিযোগ ওঠে, সংঘর্ষের সময় ছিলেন না এমন মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জহুরুল ইসলাম এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে এজাহারভুক্ত আসামি নন এমন নেতা-কর্মীরাও ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। মামলার প্রধান আসামি পৌর মেয়র আক্কাস আলীরও নাগাল পায়নি পুলিশ।

মেয়রপক্ষের সাতজনকে পুলিশ এক দিন করে রিমান্ডেও নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শুক্রবার তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সাতজন হলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম (৩৪), জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন সম্পাদক মারুফ হাসান (৩২), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মতিউর রহমান (৩০), নাসির ইসলাম (২৮) ও মো. তরঙ্গ (২৩) এবং রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক শাহজামাল সরকার (৩৫)। 

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়রপক্ষ মামলা করার আগে এমপি পক্ষের লোকজন এলাকায়ই ছিলেন। তবে আদালতে মামলা করার কথা জানাজানি হলে তাঁরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে করা মামলার এজাহার তারা এখনো পায়নি।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলিল লেখক সমিতির সভাপতির করা মামলাটি আমি তদন্ত করছি। মেয়রপক্ষ আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি। তবে আদালত থেকে এখনো নথিপত্র আসেনি। সেটা এলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় যারা উপস্থিত ছিল, তারা সবাই এখন পলাতক। কোনো পক্ষের লোকজনই এলাকায় নেই। এ রকম ঘটনার পর এমনই হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতিতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাব দীর্ঘদিনের। নদী পারাপারে ভরসা ২৫০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। সেতুর অভাবে প্রতিদিনের যাতায়াতের মতো কৃষকের ন্যায্যমূল্যও আটকে আছে ইছামতীর তীরে। অন্যদিকে দীর্ঘ পথ ঘুরতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ।

জানা গেছে, এই সাঁকো দিয়েই উপজেলার সাতনালা ও আলোকডিহি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই তো স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে আজও বাঁশের সাঁকোর ভরসায় দুই ইউনিয়নের মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাঁকো ব্যবহার করে এলাকার মানুষ বেকিপুল বাজার, কিষ্টহরি বাজার, চাম্পাতলী বাজার, বিন্যাকুড়ির হাট, তারকশাহার হাট, ইছামতী ডিগ্রি কলেজ, ইছামতী ফাজিল মাদ্রাসা, মডেল স্কুল এবং রানীরবন্দর সুইয়ারী বাজারে যাতায়াত করেন। ব্যাংক লেনদেন, শিক্ষা কার্যক্রম, হাটবাজারে যাওয়াসহ প্রায় সব কাজে নদী পার হতে হয় এই সাঁকো দিয়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটি সবজি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। সাঁকোর ওপর দিয়ে ভ্যান বা অন্য কোনো যান চলাচল সম্ভব নয়। ফলে কৃষিপণ্য বহনের জন্য অনেককে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জোত সাতনালা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, নদীর ওপারে তাঁর বেশির ভাগ জমি। ধান কেটে সাঁকোর কারণে ভ্যানে করে বাড়ি আনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে দূরের পথ ঘুরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসে বলেন, ভোট দিলে এখানে সেতু হবে। কত নির্বাচন চলে গেল, কিন্তু আজও সেতু হলো না।’

জানতে চাইলে সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক শাহ বলেন, সাঁকোটির দুই পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার থাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইছামতী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসুন্দার তীর থেকে ৪ শতাধিক গ্রিল উধাও

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা চার শতাধিক রডের গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। এত গ্রিল উধাও হয়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাচারিবাজার ব্রিজ থেকে বড়বাজার মাছমহল ব্রিজ পর্যন্ত দেখা যায়, নদের দুই পাশের বাউন্ডারির চার শতাধিক গ্রিল উধাও হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ ছিল।

অন্যদিকে নরসুন্দা নদের পাড়ের ওয়াকওয়েতে অধিকাংশ সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে দেখা যায় ভুতুড়ে অন্ধকার। আলো না থাকার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাদকের আখড়া হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে স্থানটি। সন্ধ্যার পর লোকজন ভয়ে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পৌরবাসী আজিজুল রিয়াদ ও সাকিবসহ কয়েকজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পৌর কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সরকারি সম্পদ উধাও হয়ে গেছে।’ তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় একটি সিন্ডিকেট নির্ভয়ে এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এসব গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবগত করেনি।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কোনো কিছু জানি না।’

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।’

কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবির বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল বাস্তবায়ন করে দেওয়ার, আমরা তা করেছি। এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ, নিরাপত্তা জোরদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে রাত ৩টায় কোনো বিক্ষোভকারীর দেখা মেলেনি।

ভবনের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।

ধানমন্ডি মডেল থানার ডিউটি অফিসার মিঠুন সিংহ বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট ভবন ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন সেখানে আছেন।’

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দীর্ঘ সময় পরও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মী ও সমর্থকেরা। এই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এর আগে রাত থেকেই বিক্ষুব্ধরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে তারা রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।

রাত ১২টার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর ও নথিপত্রে অগ্নিসংযোগও করে তারা। একপর্যায়ে তারা ডেইলি স্টার কার্যালয়ের দিকেও অগ্রসর হয় এবং সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে দমকল কর্মীরা। সেখানে দমকল বাহিনীর অন্তত দুটি ইউনিট কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তালগাছ ন্যাড়া করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ নওগাঁবাসী

নওগাঁ সংবাদদাতা
সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে নেসকো। গতকাল নওগাঁয় বাইপাস সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে নেসকো। গতকাল নওগাঁয় বাইপাস সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁয় বাইপাস সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। এসব গাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের সুরক্ষা দিতে এই কাজ করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকার যখন বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে এভাবে পাতা কেটে গাছগুলো ন্যাড়া করা ঠিক হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল। এতে গাছ বাঁচত, পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পেত।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুই পাশে রোপণ করেছিলেন। এখন একেকটি গাছের বয়স ২০-৩০ বছর। এগুলোর কারণে সড়কটিও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। কিন্তু এখন পাতা ছেঁটে ফেলায় কিছু গাছ মারা যেতে পারে। এর আগেও সড়ক সংস্কারের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছিল।

এ বিষয়ে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কালাম বলেন, ‘বৈদুতিক লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ডাল ও মাথা কাটা হয়েছে। এটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার তালগাছ। এগুলোর উচ্চতা ১০-১২ ফুট। সামান্য দূরত্বে বিদ্যুতের খুঁটি। এর মধ্যে দুই পাশে থাকা প্রায় ৭৫০টি তালগাছ ন্যাড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এই গাছগুলো এক দিনে বড় হয়নি। বিদ্যুতের লাইন পরিষ্কারের নামে সমানে পাতা কাটা হয়েছে। তালগাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলো দু-তিন হাত সরিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে গাছের ক্ষতি করল।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, ‘নওগাঁয় প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। বজ্রপাতের ক্ষতি এড়াতে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকার যেখানে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে এগুলো ন্যাড়া করে দেওয়া পরিবেশবিধ্বংসী আচরণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত