Ajker Patrika

রাজশাহীর ৬টি আসন: বিএনপির কাঁটা বঞ্চিতরা, ঐক্যবদ্ধ জামায়াত

  • তিন আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন।
  • ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন জামায়াতের নেতারা।
  • তিনটি আসনে প্রার্থী দিতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬: ৫৬
শরীফ উদ্দিন, মিজানুর রহমান মিনু, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, শফিকুল হক মিলন, আবু সাঈদ চাঁদ, জিয়াউর রহমান, আব্দুল বারী ও নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত
শরীফ উদ্দিন, মিজানুর রহমান মিনু, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, শফিকুল হক মিলন, আবু সাঈদ চাঁদ, জিয়াউর রহমান, আব্দুল বারী ও নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে রাজশাহীর তিনটি সংসদীয় আসনে। ছয়টি আসনের মধ্যে এই তিন আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপিতে এমন সংকট দেখা দিলেও ভিন্ন চিত্র তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী। সব আসনে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন দলটির নেতারা।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছয়টি, খেলাফত মজলিস পাঁচটি, বাসদ তিনটি, গণসংহতি আন্দোলন দুটি, গণঅধিকার পরিষদ একটি, এবি পার্টি তিনটি, বিজেপি একটিসহ কয়েকটি দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) অন্তত তিনটি আসনে প্রার্থী দিতে চায়। সব মিলিয়ে নির্বাচনমুখী এসব দলের কার্যক্রমে এলাকায় ভোটের আবহ তৈরি হয়েছে।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। তাঁর ভাই ব্যারিস্টার আমিনুল হক এই আসনের তিনবারের এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। আরেক ভাই এম এনামুল হকও একবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় দল বেছে নিয়েছে শরীফকে। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাঁচবার করে, জামায়াতে ইসলামী একবার ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের পাঁচবারের মধ্যে ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত এই আসন পুনরুদ্ধারে প্রার্থী করা হয়েছে শরীফ উদ্দিনকে।

তবে তাঁর বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারীরা। তাঁরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছেন। তারেক অনুসারীদের আশা, শেষ পর্যন্ত এখানে প্রার্থী বদল করা হবে।

রাজশাহী-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের মীর মো. শাহজাহান, এবি পার্টির মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান মুহসেনী, বাসদের আফজাল হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আরিফুল ইসলাম এই আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী। এনসিপির মহানগরের সদস্যসচিব আতিকুর রহমানও এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ (সদর) আসন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্গঠিত হয় এই আসনে। আসনটিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। মনোনয়ন ঘোষণার আগে নগর বিএনপির একটি অংশ তাঁর বিরোধিতা করে আসছিল। তাঁরা এখানে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে প্রার্থী চাচ্ছিলেন। মনোনয়ন ঘোষণার পর রিজভী এসে সবাইকে এক কাতারে এনেছেন। তাই এই আসনে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব-বিভেদ নেই। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর এনসিপির আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলীও।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেরও সীমানা পুনর্গঠন করা হয় ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে। এরপর বিএনপি তিনবার, আওয়ামী লীগ চারবার, জাতীয় পার্টি দুবার ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ একবার জয়ী হয়েছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তাঁকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে প্রার্থী বদলের দাবিতে মাঠে আছেন দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী রায়হানুল আলম রায়হান ও নাসির হোসেনের অনুসারীরা। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ভোটের মাঠে আছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ফজলুর রহমান, এবি পার্টি থেকে আফজাল হোসেন, খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম মোস্তফা, গণসংহতি আন্দোলন থেকে জুয়েল রানা ও গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে শফিকুর রহমান বাবর মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তাঁদের ভোটের মাঠে দেখা যায় না।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সীমানা পুনর্গঠনের পর বিএনপি তিনবার, আওয়ামী লীগ পাঁচবার ও জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ একবার করে জয় পেয়েছে। এই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। তাঁকে নিয়ে নেতা-কর্মীদের চরম অসন্তোষ। এখানে বিক্ষোভ-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালিত না হলেও মনোনয়ন ঘোষণার পরও নেতা-কর্মীদের বড় অংশই জিয়ার কাছে যাচ্ছে না। অনেকটা কর্মী সংকটে পড়েছেন জিয়া। সম্প্রতি প্রার্থী বদলের দাবিতে উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৭ জন নেতা লিখিতভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন।

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ডা. আবদুল বারী সরদার। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আবু মুসা, বাসদ থেকে ফিরোজ আলম, খেলাফত মজলিস থেকে ফেরদাউসুর রহমান ও গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে ভাসানী জনশক্তি পার্টির আবু ইউসুফ সেলিম মনোনয়ন পেয়েছেন। এনসিপি থেকে মীর ফারুক হোসেন, জাতীয় পার্টির ফারুক হোসেন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন পুনর্গঠনের পর জাতীয় পার্টি একবার, বিএনপি চারবার এবং আওয়ামী লীগ ছয়বার জয় পেয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পান। এই আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম মণ্ডল। তাঁকেও বদলের জন্য দুই উপজেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধ হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক, ইশফা খায়রুল হক ও নাঈম মোস্তফার সমর্থকেরা এসব কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রুহুল আমিন, খেলাফত মজলিসের মুফতি আব্দুল হামিদ ও এলডিপির জহুরা শারমিন মাঠে আছেন।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে স্বাধীনতার পর জাতীয় পার্টি দুবার, বিএনপি চারবার ও আওয়ামী লীগ পাঁচবার জয় পায়। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের জেলা আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী নাজমুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের তোফায়েল আহমেদ ভোটের মাঠে আছেন। এ ছাড়া আসনটিতে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এনসিপির বিভাগীয় সংগঠক ইমরান ইমন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ