Ajker Patrika

রাজশাহী

২০০ ভাটার ১৯২টিই অবৈধ, নীরব প্রশাসন

  • কাগজ-কলমে ১৩০টি হলেও ইটভাটা চালু আছে ২০০টি।
  • জনবল সংকটে ঠিকমতো হয় না অভিযান।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আইন না মেনে বিভিন্ন স্থানে চালু রয়েছে ইটভাটা। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শুলিতলা গ্রামে। ছবি: মিলন শেখ
আইন না মেনে বিভিন্ন স্থানে চালু রয়েছে ইটভাটা। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শুলিতলা গ্রামে। ছবি: মিলন শেখ

বিদ্যালয়ের দুই পাশে দুটি ইটভাটা। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে চলাচলকারী যেকোনো মানুষের চোখেই পড়বে দুই পাশের দুটি ইটভাটার ধোঁয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গ্রাস করার চিত্র। কিন্তু তা নজরে আসে না উপজেলা প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।

ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, খেলাধুলা—সবকিছুই করতে হয় ইটভাটার ধোঁয়ার ভেতরে। এ বিদ্যালয়ের পেছনে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে পশ্চিম পাশে মেসার্স এমএস ব্রিকস নামের একটি ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ইট। আবার প্রায় সমান দূরত্বে উত্তর পাশেও রয়েছে মুন হাওয়া ব্রিকস নামের আরেকটি ভাটা। সব মিলিয়ে এ বিদ্যালয়কে মাঝখানে রেখে দুটি ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ইট।

শুধু গোদাগাড়ীতেই নয়, রাজশাহী জেলাজুড়ে প্রায় ২০০টি ইটভাটা থাকলেও বৈধ মাত্র ৮টি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের পাশে, লোকালয় ও ফসলি জমিতে এসব দূষণকারী ইটভাটা গড়ে উঠেছে। কিছু ভাটায় করাতকল বসিয়ে প্রকাশ্যে কাঠও পোড়ানো হচ্ছে। বরেন্দ্র ভূমির টিলা ও কৃষিজমির উপরি ভাগ কেটে ইট তৈরি করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে।

পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এসব ভাটা পরিচালনার ক্ষেত্রে মালিকেরা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে থাকেন। কোনো কোনো এলাকায় তো মানি রিসিপ্ট দিয়ে ইটভাটা থেকে টাকা আদায় করা হয়। ফলে কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না।

এ বিষয়ে মুন হাওয়া ব্রিকস নামের ভাটার মালিক আফজাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসার্স এমএস ব্রিকসের মালিক ওবাইদুল্লাহ বলেন, ‘ভাটা স্থাপনের পর স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে।’ তারপর ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সংযোগবিচ্ছিন্ন করে দেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর জামতলা বাজারসংলগ্ন কেএআর ইটভাটার ভেতরেই বসানো হয়েছে করাতকল, যেখানে কাঠ কেটে পোড়ানো হচ্ছে। চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু ও পরিবেশ দূষিত করছে।

দুর্গাপুর উপজেলার গগণবাড়িয়া গ্রামে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসএমআই ব্রিকস নামের একটি ভাটা করা হয়েছে। জেলার পবা উপজেলার হাটচন্দ্রপুরে তিন ফসলি কৃষিজমিতে পাশাপাশি চারটি ভাটা তৈরি হয়েছে। এসএমআই ব্রিকসের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, তাঁদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তবে ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাটের কাগজপত্র রয়েছে। স্টার ব্রিকস নামের আরেকটি ভাটার ব্যবস্থাপক এমদাদুদুল হক দাবি করেন, অনুমতি নিয়ে তাঁরা ভাটা পরিচালনা করছেন। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ। কৃষিজমিতেও এটি অবৈধ। অথচ রাজশাহীর বেশির ভাগ ইটভাটা এই আইন মানছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, অধিকাংশ ভাটা দুই বা তিন ফসলি জমিতে করা হয়েছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বিশেষ করে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। বরেন্দ্রভূমির উঁচু-নিচু টিলা ও কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে ইট তৈরি করায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন জানান, রাজশাহীতে কাগজ-কলমে ১৩০টি ইটভাটা থাকলেও বাস্তবে প্রায় ২০০টি চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টির বৈধ লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে তাঁরা সব সময় অভিযান চালাতে পারেন না। তারপরও এটি নিয়মিত করার চেষ্টা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চূড়ান্ত হচ্ছে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, শিগগির ঘোষণা

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া সেই নেতাকে বহিষ্কার করল ছাত্রশিবির

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ফ্রিতে নৌকা না পেয়ে ভূমি অফিস সহকারীকে মারধর এসপির

এশিয়ার ১০টিসহ ৪৩ দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত