Ajker Patrika

ভাসানচর থেকে দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

মো. আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২১, ১০: ৫৩
ভাসানচর থেকে  দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্প থেকে দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার  আশায় রোহিঙ্গারা পালিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গত এক মাসে সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, মীরসরাই ও রামু থেকে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। চার দফায় মীরসরাই থেকে ৬২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। কয়েক দফায় সন্ধীপে আটক করা হয় ৪০ জন রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে কতজন সারা দেশে পালিয়ে গেছে তার হিসাব নাই। 

শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ভাসানচর থেকে কী  পরিমাণ রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে, তা আমাদের জানা নাই। তবে পত্রপত্রিকায় দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গারা আটক হচ্ছে।

ভাসানচরের ক্লাস্টার-৫০-এর রোহিঙ্গা বাসিন্দা মঞ্জুর আলম মাঝি আজকের পত্রিকাকে জানান, ৫০০ থেকে ৭০০ রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, `আমরা এখানে ভালো নাই। এখানে কোনো  কাজকাম নাই। এখানে আমাদের কোনো  আত্মীয়-স্বজন নাই। আমাদের সঙ্গে কথা ছিল ছয় মাস পর পর কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া  হবে, কিন্তু এখন আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে আরও অনেকে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'

ভাসানচরের ক্লাস্টার-৫০-এর আরেক রোহিঙ্গা বাসিন্দা আমেনা বেগম (ছদ্ম নাম) আজকের পত্রিকাকে বলেন, `এখানে আমার আত্মীয়স্বজন কেউ নাই। আমি আট বছরের এক মেয়েকে নিয়ে থাকি। এখান থেকে ২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে।' 

ভাসানচরের ক্লাস্টার-৫০-এর রোহিঙ্গা বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, `ভাসানচরে আমরা ভালো নাই। এখান থেকে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে।'

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে কথাটি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশেষ করে ভাসানচরের রোহিঙ্গারা সেখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। তারা বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ওখান থেকে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের অনেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ভাসানচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, `ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের দীর্ঘ পথে তারকাঁটা নেই। অনেক জায়গায় জঙ্গল এলাকা। অনেক সময় রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ পাহারা দিয়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া রোধ করতে চেষ্টা করছি।' তবে থানার লোকবল কম থাকায় সব সময় রোহিঙ্গাদের নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ বসির আহাম্মদ খান জানান, গত এক মাসে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এরা সবাই ভাসানচরের রোহিঙ্গা। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চার দফায় ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ৬২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ১৭ জুলাই ২০ জন, ১১ জুলাই ১৮ জন, ২২ জুন ১৪ জন এবং ৩০ মে ৩ দালালসহ ১০ জন, ১৭ জুলাই ১১টি শিশুসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।  তাদের বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা  দায়ের করা হয়েছে। তারা ভাসানচর থেকে কুতুপালংয়ে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছিল বলে জানা গেছে।

শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনের ভাসানচরের স্থানীয় প্রতিনিধি শংকর বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, `এখানে অনেক ঘটনা আছে, আপনারা এখানে আসেন। মোবাইলে এসব কথা বলা যাবে না।' 

এদিকে গত ২ জুলাই মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। জানা যায়, ২৭ জুন চট্টগ্রাম থেকে এই ১৪ জন রোহিঙ্গা কাজের খোঁজে মৌলভীবাজারে যায়। কাজ না পেয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করলে তাদের  আটক করা হয়। এদিকে গত ১১ জুন ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা নারী, পুরুষ, শিশুসহ ১২ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। এদিন ভোরে উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘাট থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। 

 জানা যায়, ১০ জুন দিবাগত রাতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভাড়া করে কক্সবাজারে তাদের পুরাতন ক্যাম্পের উদ্দেশে  ভাসানচর থেকে রওনা দেয়। নৌকার মাঝি রাতের বেলা তাদের চরএলাহী ঘাটে নামিয়ে চলে যান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তাদের আটক করে। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, `রোহিঙ্গারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ জন্য আমরা পুলিশ কোস্টগার্ড ও এপিবিএন নিয়ে কঠোর নজরদারি রাখছি।'

গত ১৮ জুন চট্টগ্রামের সন্ধীপ উপজেলার পশ্চিম মুছাপুর স্লুইসগেইট থেকে ৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। এদিন সকালে স্থানীয় লোকজন রোহিঙ্গাদের আটক করে সন্ধীপ থানার পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে রোহিঙ্গাদের থানায় নিয়ে যায়।আটক ৯ রোহিঙ্গার মধ্যে দুজন পুরুষ, চারজন নারী, তিনজন শিশু রয়েছে। এ নিয়ে পঞ্চম ধাপে মোট ৩৯ জন রোহিঙ্গা সন্ধীপের স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হয়। এ ছাড়া গত ১৮ মে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ১১ জন রোহিঙ্গাকে সন্দ্বীপ উপকূলে আটক করেছে স্থানীয় জনগণ। ওই দিন ভোর ৫টার দিকে সন্দ্বীপের পশ্চিমে মেঘনা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপের রহমতপুর উপকূলে পৌঁছালে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় পুলিশ তাদের আটক করে । আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজন দালাল ছাড়াও এক পরিবারেরই ৯ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি শিশু ও ছয় নারী রয়েছেন। এ ছাড়া দলে আছেন আরও একজন যুবক। আটক ইয়াছিন আরাফাত (২৫) নামের দালালের সঙ্গে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের কক্সবাজারে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। এক বছর আগে কুতুপালং থেকে ভাসানচর ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছিল এই শরণার্থীদের। 

প্রসঙ্গত,  গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় ১৮ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা ঘিরে যেসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ ও ডাইভারশন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
খালেদা জিয়ার জানাজা ঘিরে যেসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ ও ডাইভারশন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। বিশাল জনসমাগম বিবেচনায় এ সময় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল রাখতে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর বেশ কিছু সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আজ সকাল ৭টা থেকে জানাজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকাগুলোতে ডাইভারশন কার্যকর থাকবে।

যান চলাচল সংক্রান্ত প্রধান বিধিনিষেধ ও বিকল্প পথ—

জানাজাস্থল ও এর চারপাশ খালি রাখার জন্য যেসব ক্রসিংয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে—ফার্মগেট পুলিশ বক্স ও ইন্দিরা রোড ক্রসিং, বিজয় সরণি ও উড়োজাহাজ ক্রসিং, আসাদগেট ও রাপা প্লাজা ক্রসিং এবং গণভবন ক্রসিং। অর্থাৎ, রাপা প্লাজা থেকে গণভবন, ফার্মগেট থেকে আড়ং ক্রসিং এবং বিজয় সরণি থেকে লেক রোড হয়ে গণভবন ক্রসিং এবং উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে খেজুরবাগান ক্রসিং হয়ে ফার্মগেট পুলিশ বক্স পর্যন্ত রাস্তাগুলো সাধারণ যানবাহনের জন্য বন্ধ থাকবে।

যেসব সড়কে যানচলাচল সীমিত ও ডাইভারশন—

১. এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইন্দিরা রোড র্যাম্প দিয়ে যানবাহন নামা বন্ধ থাকবে; এর পরিবর্তে এফডিসি র্যাম্প ব্যবহার করতে হবে।

২. সোনারগাঁও মোড় থেকে ফার্মগেট বা বিজয় সরণি অভিমুখে যান চলাচল সীমিত থাকবে।

৩. কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ সড়কটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হয়েছে।

৪. প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ক্রসিং থেকে দক্ষিণ বিজয় সরণি ও ফার্মগেট অভিমুখে সীমিতভাবে যানবাহন চলবে।

৫. বনানী-মহাখালী-গুলশান বা এয়ারপোর্ট রোড থেকে রমনা-শাহবাগ-মতিঝিল-পল্টন-গুলিস্তানগামী গাড়িগুলোকে মহাখালী-জাহাঙ্গীরগেট-কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ সড়ক এড়িয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তা ও মগবাজার ফ্লাইওভার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৬. মিরপুর থেকে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরগামী যানবাহনগুলোকে মানিক মিয়া এভিনিউ এড়িয়ে টেকনিক্যাল-শ্যামলী হয়ে চলাচলের অনুরোধ করা হয়েছে।

৭. মিরপুর থেকে রমনা-মতিঝিলগামী যানবাহনগুলো মিরপুর রোডের শ্যামলী থেকে বামে টার্ন নিয়ে আগারগাঁও ক্রসিং হয়ে ফকরুদ্দিন রোড বা লিংক রোড হয়ে জাহাঙ্গীরগেট-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে চলাচল করবে।

৮. পান্থপথ ক্রসিং থেকে সোনারগাঁও হোটেল ক্রসিংয়ের দিকে গাড়ি চলাচল সীমিত করা হবে।

৯. ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ক্রসিং ও প্রয়োজনে সায়েন্সল্যাব ক্রসিং থেকে গাড়ি ডাইভারশন হবে।

১০. প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ক্রসিং থেকে দক্ষিণ দিকে সীমিত গাড়ি চলবে।

পার্কিং ব্যবস্থা—

১. ঢাকা মহানগরের যানবাহনগুলো শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে পার্কিং করতে হবে।

২. ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাস ও অন্যান্য বড় যানবাহন মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, শাহবাগ থানা এলাকা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৌবাজার বা গরুর হাট এলাকা এবং পূর্বাচল ৩০০ ফিট সার্ভিস রোডে পার্কিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই বিশেষ পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে নির্ধারিত গন্তব্যে যাতায়াতের এবং ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

সূত্র: বাসস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চার দিন পর দেখা মিলল সূর্যের, ঠাকুরগাঁওয়ে কিছুটা স্বস্তি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ে আজ সকাল ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার পর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উষ্ণতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁওয়ে আজ সকাল ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার পর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উষ্ণতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিনের ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের পর অবশেষে ঠাকুরগাঁওয়ে সূর্যের আলো দেখা গেছে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার পর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উষ্ণতা। এতে কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সকালে কাজে বের হতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সূর্যের দেখা পাওয়ায় শ্রমজীবী মানুষের কাজে নামা এখন কিছুটা সহজ হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর এলাকার কৃষক আবদুল কাদের জানান, টানা কয়েক দিন সূর্য না থাকায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আজ রোদ ওঠায় অনেকটা ভরসা পাচ্ছেন তাঁরা।

একই কথা জানান সদর উপজেলার আরেক কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শীত বেশি পড়লে বোরো ধানের বীজতলা পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সূর্যের আলো পাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে গেছে।

ঠাকুরগাঁও ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুল আলম বলেন, টানা শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। সূর্যের আলো ও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ায় এখন ক্ষতির ঝুঁকি কমেছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে জীবননগর, এক দিনেই তাপমাত্রা কমল ৪ ডিগ্রি

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা জীবননগর। সূর্যের দেখা নেই। শীতের দাপট তীব্র। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় পুরো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ। আর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে এবং আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।

অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। সকাল ৯টায়ও তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থেকে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, তবে আর্দ্রতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশে।

এই হিসাবে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।

আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভ্যানচালক রনি আহমেদ বলেন, ‘ভোরে রাস্তায় নামতেই গা জমে যায়। কাজ না করলে খাওন জোটে না, আবার এই শীতে শরীরও সয় না।’

দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শীত বাড়লে কাজ কমে যায়। কাজ না থাকলে খাওন জোটে না। গরিব মানুষের শীতটা সবচেয়ে বেশি কষ্টের।’

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতে শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শীত আরও তীব্র হওয়ার আগেই ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণ প্রয়োজন।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমীন বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল ইতিমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। ছিন্নমূল, গরিব ও অসহায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কম্বল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ফুলের চারা উৎপাদনে ব্যস্ত নেছারাবাদের নদীতীরের গ্রামগুলো

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী অলংকারকাঠি গ্রামে শীতের আগমন মানেই ভিন্ন এক কর্মচাঞ্চল্য। ভোরের ঘন কুয়াশার মধ্যেই নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নার্সারির কাজে। কারও হাতে কাস্তে, কারও হাতে পানির পাইপ, কেউ আবার মাথায় তুলে নেন বড় ঝুড়ি। এভাবেই ফুলের চারা উৎপাদনের কর্মকাণ্ড জমে ওঠে অলংকারকাঠি, পানাউল্লাহপুর, আকলম, মাহমুদকাঠিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে।

উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় নার্সারি। বিশেষ করে স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের অলংকারকাঠি এলাকায় সড়কের দুই পাশে সারি সারি নার্সারি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমকে ঘিরে এসব নার্সারিতে শুরু হয়েছে ফুলের চারা উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি। উপজেলা কৃষি অফিস ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, চলতি মৌসুমে ফুলের চারা বিক্রিতে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

নার্সারিগুলোতে ইতিমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে বাহারি ফুল। অল্প সময়ের মধ্যেই লাল, নীল, হলুদ, গোলাপি ও বেগুনি রঙের ফুলে মাঠ ঢেকে যাবে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ফুলের গালিচা। এই চারা উৎপাদন শুধু সৌন্দর্যই ছড়াচ্ছে না, নীরবে সৃষ্টি করছে এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। পাশাপাশি দরিদ্র নারী-পুরুষের জন্য তৈরি হচ্ছে টেকসই কর্মসংস্থান।

নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ফুলের চারা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। নার্সারির মালিকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যদিও সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অলংকারকাঠি, কুনিয়ারী, মাহমুদকাঠি, সুলতানপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রামে ফুলের চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, টিউলিপ, কসমস, বেলি, সূর্যমুখী, অর্কিড, সিলভিয়া, মর্নিং ফ্লাওয়ার, ক্যালেন্ডুলাসসহ শতাধিক প্রজাতির দেশি ও বিদেশি ফুলের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নার্সারির মালিক মো. আদনান শেখ বলেন, নেছারাবাদে বর্তমানে ২ হাজারের বেশি নার্সারি রয়েছে। মালিক ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে জড়িত। শীত মৌসুমে এই নার্সারিগুলো ফুলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। উৎপাদন খরচ বাড়লেও চলতি মৌসুম নিয়ে তিনি আশাবাদী।

নার্সারির নারী শ্রমিক ঝুমা আক্তার বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর একার আয়ে কষ্ট করে চলতে হতো। এখন নার্সারিতে কাজ করে সংসারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটেছে। তিনি জানান, ফুলের চারার দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বনসাই ও বিদেশি জাতের চারার দাম সবচেয়ে বেশি।

দেখা গেছে, এসব নার্সারিতে শ্রমিকদের বড় অংশই নারী। পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকেরাও কাজ করছেন। নার্সারির কাজে তুলনামূলক কম মজুরির কারণে নারী শ্রমিক সহজলভ্য বলে জানান উদ্যোক্তারা। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পেয়ে তাঁরা সংসারের খরচ সামাল দিচ্ছেন।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান জানান, নেছারাবাদে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দেড় থেকে দুই কোটি টাকার বেচাকেনা করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ফুলের চারা উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নেছারাবাদের নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো আগামী দিনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত