Ajker Patrika

টিসিবির পণ্য কিনতেও ভিআইপি লাইন

সৈকত সোবহান, বদলগাছী (নওগাঁ) 
টিসিবির পণ্য কিনতেও ভিআইপি লাইন

বাংলাদেশে প্রভাবশালীরা সব ক্ষেত্রেই সুবিধা নিতে অভ্যস্ত। আবার দেশের ব্যবস্থাটাই এমন যে, প্রভাবশালীদের জন্য বরাবরই একটা না একটা আলাদা ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু ন্যায্য দামে সাধারণ মানুষের নিত্যপণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেলের মাধ্যমে যে পণ্য বিক্রি, সেখানেও ভিআইপি লাইন তৈরি হওয়াটা বিস্ময়করই বটে। কিন্তু হয়েছে তাই। নওগাঁর বদলগাছিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই টিসিবির গাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা পণ্য দিতে ব্যস্ত থাকেন। 

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল কার্যক্রমের টিসিবি ক্যাম্প অফিস বগুড়া থেকে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল বুধবার বেলা ১টায় টিসিবির গাড়ি উপজেলা পরিষদের সামনে এসে থামে। টিসিবির গাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার সরকার এন্টারপ্রাইজের রুকুনুদ্দৌলা নামের এক ব্যক্তি পণ্য বিক্রির অনুমতির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে যান। অনুমতি নিয়ে তিনি ইউএনও কার্যালয়ের সহকারীর রুমে বসে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে বাজারের ফর্দ নেন। পরে তিনি অফিস থেকে নিচে নেমে এসেই উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদার অনুযায়ী তেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন পণ্য বস্তায় ভরে দেন। 

টিসিবির পণ্য নিতে আসা উপস্থিত ব্যক্তিরা এর প্রতিবাদ করলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি টিসিবির ট্রাকসেলের দায়িত্বে থাকা রুকুনুদ্দৌলা বা পণ্য নিতে আসা ইউএনও কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

সাধারণ মানুষ যেন ন্যায্য দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারেন, সে জন্যই খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির এই কার্যক্রম। এতে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে পণ্য বিক্রিই নিয়ম। এর অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সাধারণ মানুষকে দাঁড় করিয়ে রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেককেই দিন শেষে পণ্য না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে। টিসিবির পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও এই ভিআইপি লাইন ক্ষুব্ধ করছে পণ্য কিনতে আসা ব্যক্তিদের। 

বুধবার পণ্য কিনতে এসেছিলেন স্থানীয় রুপক, জুয়েল, রহমান, রেজা, মহুরীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। তাঁরা বলেন, টিসিবির গাড়ি আসার পর উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পণ্য দিতে ব্যস্ত থাকেন টিসিবির গাড়ির লোকজন। তাঁদের কোনো লাইনে দাঁড়াতে হয় না। তাঁরা ভিআইপি। আর আমরা সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। আমাদের বেলায় পণ্য থাকে না। সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যদি এভাবে সাধারণ জনগণের জন্য সরকারের দেওয়া টিসিবির বেশির ভাগ পণ্য নিয়ে যায়, তাহলে লোক দেখানোর জন্য এসব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। 

এ বিষয়ে টিসিবির পণ্য বিতরণের দায়িত্বে থাকা সরকার এন্টারপ্রাইজের রুকুনুদ্দেউলা বলেন, ‘আমাকে এর মধ্যে জড়ায়েন না।’ 

এ বিষয়ে টিসিবির বগুড়া ক্যাম্প অফিসের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (অফিস প্রধান) মো. শফিকুল ইসলামের বলেন, ‘আমি ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত