Ajker Patrika

যশোর, শরীয়তপুর ও মেহেরপুরে এখনো জমা পড়েনি ১২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র

যশোর, শরিয়তপুর ও মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ৫৩
যশোর, শরীয়তপুর ও মেহেরপুরে এখনো জমা পড়েনি ১২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে যশোরে ৩৬৫টি অস্ত্রের মধ্যে ২৭০টি অস্ত্র জমা পড়েছে। সে হিসাবে এখনো ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। একই সঙ্গে প্রায় ১ হাজারটি গুলিও জমা পড়েনি। 

এ ছাড়া শরীয়তপুরে লাইসেন্সকৃত ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জেলার বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে। আটজন লাইসেন্সধারী অন্য জেলায় অবস্থান করায় সেখানেই নিকটস্থ থানায় জমা দিয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিশেষ শাখায় নথিপত্র জমা দিয়েছে। আর লাইসেন্সধারী আট সেনাসদস্য চাকরিরত থাকায় তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি। 

অপর দিকে মেহেরপুর জেলায় লাইসেন্সকৃত ৯৩টি অস্ত্রের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭৩টি অস্ত্র। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন। 

যশোরে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া ও কিছু নেতা আত্মগোপনে থাকায় তাঁরা অস্ত্র জমা দিতে পারেননি। 

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে যশোরের জেলা প্রশাসন।

অবৈধ অস্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে আজ বুধবার জরুরি বৈঠক করেছেন জেলার যৌথ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিকেলে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভায় যৌথ অভিযান চালানোর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। 

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যশোরে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ 

প্রতিটি অভিযানেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন বলে জানান কমলেশ মজুমদার। 

যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখার তথ্যমতে, জেলায় লাইসেন্স ইস্যুকৃত অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৫টি। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে ৩৬৫টি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেওয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৩৬৫ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। বেশির ভাগই পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। 

শরীয়তপুরে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সকৃত ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৯৪টি বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিএসবি শাখার ডিআইও–১ মো. কামরুল হোসেন তালুকদার আজ বিকেল ৫টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেন। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজন অস্ত্র কেনেননি। এর মধ্যে ১৯টি লাইসেন্স পান সেনাসদস্যরা। বাকি মোট ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে বেসামরিক আটজন অন্য জেলায় অবস্থান করায় তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন। আটজন সেনাসদস্য কর্মরত থাকায় তাঁদের অস্ত্র জমা দিতে হয়নি। 

মেহেরপুর জেলায় লাইসেন্সকৃত ৯৩টি অস্ত্রের মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭৩টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন।
 
মেহেরপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন ৯৩ জন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ছাড়াও বিএনপি নেতা, সামরিক বাহিনীর সদস্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক এবং আমলারা এর মধ্যে রয়েছেন। 

গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত ৭৩টি অস্ত্র ও লাইসেন্স তিনটি থানায় জমা পড়েছে। অস্ত্র দাখিলের আওতার বাইরে থাকা বাকি ২০টি অস্ত্র সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে। 

মেহেরপুর সদর উপজেলার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীনের ছেলে তানভির আহম্মেদ খান রানা, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র মাহফিজুর রহমান রিটন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ–বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস শুকুর ইমন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান মুকুল অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। 

মুজিবনগর থানায় অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দেওয়া হয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু এনপিবি পিস্তল ২৩টি গুলিসহ জমা দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা মিলু অস্ত্র জমা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে। এ থানায় জমা দেওয়া বাকি পাঁচটি অস্ত্রের মধ্যে সাবেক সেনাসদস্যর একটি শটগান এবং ৪টি দোনলা বন্দুক রয়েছে। 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গাংনী উপজেলায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ৩৬টি। গতকাল রাত পর্যন্ত সব অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে। অবশ্য এর মধ্যে দুজন লাইসেন্সের বিপরীতে অস্ত্র কেনেনি। 

সাবেক মেয়র আশরাফুল ইসলামের ভাই আনারুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত শটগান ২০২২ সালে জব্দ করেছিল গাংনী থানা। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূবালী ব্যাংক গাংনী শাখায় একটি শটগান এবং সেনাবাহিনীর একজন মেজর ও সার্জেন্টের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তাঁদের নিজ নিজ হেফাজতে রয়েছে। 

এ সময়ের মধ্যে অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাবেক এমপি ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, সাবেক মেয়র ও যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম ভেন্ডার, আওয়ামী লীগ নেতা ও কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানার অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। 

এ ছাড়া গাংনী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনের অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দেওয়া হয়েছে বলে গাংনী থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় যমুনায় আটকা বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীর নৌকা, ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার

জামালপুর প্রতিনিধি 
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ঘন কুয়াশার কারণে যমুনা নদীতে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে বগুড়া থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাদারগঞ্জে ফেরার পথে যমুনা নদীর মাঝখানে নৌকাটি দিক হারিয়ে আটকে পড়ে। শনিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নৌকাটি নিরাপদে ঘাটে পৌঁছায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের ছেলে নিলয় হাসানের (২০) সঙ্গে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ঘাট থেকে একটি বড় নৌকা মাদারগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়।

রাত ৯টার দিকে যমুনা নদীর মাঝখানে ঘন কুয়াশার কারণে নৌকার চালক দিক হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে নৌকাটি মাঝনদীতে নোঙর করে অবস্থান নেয়। পরে রাত ১১টার দিকে যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান।

বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

খবর পেয়ে মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও কুয়াশার তীব্রতার কারণে রাতে নদীতে নামা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলে ফায়ার সার্ভিস স্থানীয় মাঝিদের সহযোগিতায় উদ্ধারকারী নৌকা পাঠায়। সকাল ৯টার দিকে আটকে পড়া নৌকার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে যাত্রীদের নিয়ে নৌকাটি দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়।

উদ্ধার হওয়া বর নিলয় হাসান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে মাঝি কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। নারী ও শিশুসহ সবাই আতঙ্কে ছিল। সারা রাত তীব্র শীতের মধ্যে নদীর মাঝে কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বহিরাগতদের হামলায় পণ্ড হয়েছে। সেখানে দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী নগরবাউল জেমসের গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেমস মঞ্চে পৌঁছার আগেই বহিরাগতদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে শেষ পর্যন্ত কনসার্টটি বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থী ও আয়োজকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সাজসাজ রব ছিল ফরিদপুর শহরে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নগরবাউল জেমস তাঁর দল নিয়ে ফরিদপুর পৌঁছান এবং স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে বিশ্রাম নেন।

রাত ৯টায় অনুষ্ঠানের র‍্যাফল ড্র চলাকালে জিলা স্কুলের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।

রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ভেতরে ঢুকতে না পেরে একদল যুবক সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকেরা বাধা দেন। এর পরপরই মুজিব সড়ক ও স্কুলের চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

রাত ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হামলাকারীরা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং অনবরত ইট মারতে থাকে। এতে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা শিক্ষার্থী ও দর্শকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আনিসুর রহমান সজল নামে একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন নিবন্ধিত সদস্য ভেতরে উৎসব করছিলাম। কিন্তু জেমস আসার খবরে বাইরে ২০-২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়। হঠাৎ বৃষ্টির মতো বড় বড় ইট এসে আমাদের ওপর পড়তে থাকে। সাউন্ড সিস্টেমের মনিটর ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অদ্ভুত বিষয় হলো, পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখনো পুলিশ নীরব ছিল।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে এমন সহিংসতা এড়ানো যেত। তাঁরা অভিযোগ করেন, বড় কোনো আয়োজনে যে ধরনের নিরাপত্তা বলয় থাকা প্রয়োজন ছিল, এখানে তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।

এদিকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আয়োজক কমিটির অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করেছেন জেমস। নগরবাউলের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন গণমাধ্যমকে বলেন, " ‘আমরা কনসার্ট করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আয়োজকেরা আমাদের ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এটি আয়োজকদের স্পষ্ট অব্যবস্থাপনা।’ জেমস নিজেও ব্যক্তিগতভাবে একে আয়োজকদের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাইরে অন্তত দশগুণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। জিলা স্কুলের ভেতরের প্রাঙ্গণে এত বিশাল জনসমুদ্র সামলানো অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের বাধা দিতে গেলেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরেই আমরা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। আমাদের অনেক ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবীণ সদস্যরা আহত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে, জেমসের মতো শিল্পীর অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে শহরের প্রাণকেন্দ্রে জিলা স্কুলের মতো ছোট জায়গা বেছে নেওয়াটাই ছিল আয়োজকদের প্রথম ভুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা: কুড়িগ্রাম থেকে অভিযুক্ত স্বামী গ্রেপ্তার

গাজীপুর প্রতিনিধি
অভিযুক্ত স্বামী জালাল ওরফে দুলু। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত স্বামী জালাল ওরফে দুলু। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরে যৌতুকের দাবিতে মাস্তুরা আক্তার সুমা (২৮) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া অভিযুক্ত স্বামী জালাল ওরফে দুলুকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-১৩-এর একটি যৌথ দল কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকা থেকে তাঁকে গতকাল দিবাগত গভীর রাতে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব-১-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাকিব হাসান জানান, ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। যৌতুক ও পারিবারিক কলহের জেরে জালাল তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। জালাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মাস্তুরা আক্তার ওই ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে বসবাস করতেন।

হত্যাকাণ্ডের পর জালাল মরদেহ ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে পালিয়ে যান। পলায়নরত অবস্থায় তিনি তাঁর শ্বশুরকে (ভুক্তভোগীর বাবা) ফোন করে জানান, ‘আপনার মেয়েকে মেরে ফেলেছি। এসে লাশ নিয়ে যান।’ খবর পেয়ে বাসন থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর বাবা মিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে জিএমপির বাসন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানাধীন নাজিমখান ইউপির রামকৃষ্ণ মন্ডলপাড়া এলাকা থেকে জালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১-এর কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তার আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজে আগুন, এক কর্মচারী নিহত; ১৫ জন জীবিত উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যাত্রী ওঠানোর আগমুহূর্তে সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ ‘দ্য আটলান্টিক ক্রুজ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাজের এক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহাজের ক্রুসহ ১৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কর্মচারীর নাম নূর কামাল (২৫)। তিনি টেকনাফের বাসিন্দা। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মোরশেদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটসংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা অবস্থায় জাহাজটিতে আগুন লাগে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সি ক্রুজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

জানা গেছে, সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকদের তুলতে জাহাজটি বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ভেড়ার ঠিক আগমুহূর্তে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে জাহাজটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় স্থানীয় লোকজন ট্রলার ও স্পিডবোটের সহায়তায় জাহাজের ক্রুসহ ১৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে।

স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকাল ৭টার দিকে পর্যটক তুলতে ঘাটে আসছিল দ্য আটলান্টিক ক্রুজ। হঠাৎ জাহাজের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে।’

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তবে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জাহাজটিতে প্রায় ২০০ জন যাত্রী ওঠার কথা থাকলেও তাঁদের মধ্যে ১২০ জনকে তিনটি বিকল্প জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে। অন্য যাত্রীরা রোববার সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণে দুটি জাহাজ ছাড়তে দেরি হওয়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, জাহাজে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিকেলে জাহাজের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে প্রতিদিন ছয়টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত