Ajker Patrika

নিজের তৈরি ‘উড়োজাহাজে’ উড়লেন কৃষকের ছেলে জুলহাস

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ২১: ৩৫
নিজের তৈরি উড়োজাহাজে জুলহাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিজের তৈরি উড়োজাহাজে জুলহাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নিজের তৈরি ‘উড়োজাহাজ’ উড়িয়েছেন জুলহাস মোল্লা (২৮) নামের এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনার চরে উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ান। এ সময় মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ যমুনাপাড়ে উপস্থিত ছিলেন।

এদিন জুলহাস চার মিনিট উড়োজাহাজটি আকাশে উড্ডয়ন করে আবার নেমে আসেন। বাতাসের গতি বেশি থাকায় ঝুঁকি এড়াতে আর বেশিক্ষণ উড়োজাহাজটি আকাশে উড্ডয়ন করা সম্ভব হয়নি। জুলহাস তাঁর এ উড়োজাহাজের নাম দিয়েছেন ‘স্কাই বাইক থ্রি’।

জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় বাড়ি হলেও নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা (বিলপাড়া) গ্রামে বাড়ি করে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন জুলহাস। পিতা কৃষক জলিল মোল্লা। ছয় ভাই, দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি। বর্তমানে ঢাকায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।

জানা গেছে, শৈশব থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুলহাসের। পড়াশোনার ইতি টানলেও উদ্ভাবনী চিন্তা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। ২০২১ সালে যখন প্রথমবারের মতো আরসি (রিমোট কন্ট্রোল) প্লেন দেখেন, তখন ঠিক করেন, নিজে একটা প্লেন বানাবেন। এরপর শুরু হয় নিরলস গবেষণা। ইউটিউব, বইপত্র ঘেঁটে ধাপে ধাপে শিখতে থাকেন প্লেন তৈরির খুঁটিনাটি। যন্ত্রাংশ জোগাড় করা থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, কাঠামো সাজানো—সবকিছু করেছেন নিজেই। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টার পর অবশেষে সফলতা এল। নিজের হাতে তৈরি সেই প্লেনে চড়ে আকাশে ওড়েন তিনি।

জুলহাস মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসএসসির পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পেশায় ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি হিসেবে ঢাকায় কাজ করি। চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পরে আল্ট্রালাইট বিমান তৈরির কথা মাথায় আসে। কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি। পরে গত এক বছর চেষ্টা করে এই বিমানি তৈরি করতে সক্ষম হই।’

জুলহাস আরও বলেন, ‘মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন আর অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে মূলত এটি তৈরি করা হয়। ওজন হয়েছে ১০০ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়েছে। ইঞ্জিন চলবে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি হবে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার।’

কয়েক দিন আগে উড়োজাহাজটি পরীক্ষামূলক সফলভাবে আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে কোনো দিন বিমানের উঠিনি। বিমানটি তৈরি করে আকাশে উড্ডয়ন করতে পেরে নিজের স্বপ্নও পূরণ করেছি।’

আকাশে উড়ছে জুলহাসের তৈরি উড়োজাহাজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আকাশে উড়ছে জুলহাসের তৈরি উড়োজাহাজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

উদ্ভাবক জুলহাস আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে পরিবার ও এলাকাবাসী আমাকে পাগল মনে করেছে। তবে এখন সবাই উৎসাহ আর বাহবা দিচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে।’

ছেচনা মডেলের বিমানটি গত ডিসেম্বর থেকে তৈরির কাজ শুরু হয়। শেষ হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর বাড়ির পাশে নমুনা নদীর চরে পরীক্ষামূলকভাবে বিমানটি উড্ডয়ন করার একটি ভিডিও তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় ভিডিওটি এবং এলাকাজুড়ে হইচই পড়ে যায়।

জুলহাস জানান, ফায়ার অ্যালার্মের চাকরির পাশাপাশি চার বছর ধরে তিনি উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে ওড়ানোর চেষ্টা করছেন। শখের বশে তিনি প্রায় তিন বছর আগে একটি খেলনা বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছিলেন। তিনি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেই ড্রাইভ করে আকাশে উড়িয়েছেন উড়োজাহাজটি। এই উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন জুলহাস। তবে গত চার বছরে তাঁর এই কাজের পেছনে ৮-১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে একটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন।

জুলহাস মোল্লার বাবা জলিল মোল্লা বলেন, ‘জুলহাস ছোটবেলা থেকে প্লাস্টিকের জিনিস কাটাকাটি করে কিছু বানাতে চায়। জিজ্ঞেস করলে বলত, একদিন দেখবে আমি কী বানাইছি। সারা দেশের মানুষ দেখবে। চার বছর ধরে চেষ্টা করছে প্লেন ওড়ানোর। প্রতিবছরই যমুনার চরে ওড়ানোর চেষ্টা করে। এবার সফল হয়েছে। গতকাল ৫০ ফুট ওপরে উড়ছে।’

জুলহাসের ছোট ভাই নয়ন মোল্লা বলেন, ‘শুরু থেকে আমি ভাইয়ার সঙ্গে ছিলাম। সব কাজ আমি সঙ্গে থেকে করেছি। আমরা কোনো সময় দমে যাইনি। গত এক বছর দিনে আমরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা প্লেন তৈরি করতে গবেষণা ও কাজ চালিয়ে গেছি।’

তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জুলহাস এলাকার কৃতী সন্তান। তাঁর কাজ প্রশংসনীয়। স্বল্পশিক্ষিত একজন ছেলে টেকনিক্যালি কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং কখনো প্লেনে না উঠেও নিজে প্লেন তৈরি করে নিজেই অবতরণ করল। বর্তমান সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি জুলহাসকে সহযোগিতা করে, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে, তাহলে দেশীয় প্রযুক্তিতে এমন প্লেন তৈরি করে দেশ ও জাতিকে সম্মানের সাথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

উদ্ভাবনী এই কাজের প্রশংসা করে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রমে আমি অভিভূত। প্লেনটি অবতরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী কাছ থেকে মুঠোফোন মাধ্যমে জানতে পারি, মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার একজন ছেলের তৈরি এই প্লেন। তার সাথে যোগাযোগের পর আজ তার এলাকায় এসে তাকে প্রণোদনা এবং সরকারি সহায়তা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে চেষ্টা এবং এই প্রযুক্তি বিকাশে প্রশাসন তার পাশে থাকবে। প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করে তাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রংপুরে ঘরের ভেতর মিলল মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির রক্তাক্ত লাশ

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৬
খবর পেয়ে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনাব্বর হোসেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
খবর পেয়ে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনাব্বর হোসেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর এলাকায় এক মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬০)। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীরা মই বেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকেন। বাড়ির প্রধান ফটকের চাবি পেয়ে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে তাঁরা ডাইনিং রুমে যোগেশ চন্দ্র রায় এবং রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী দীপক চন্দ্র রায় জানান, তাঁর পরিবার ৪০-৫০ বছর ধরে যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি দেখাশোনা করেন। তিনি প্রতিদিন সকালে কাজ করতে সেখানে যান। আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত ঘর থেকে কেউ বের না হওয়ায় সন্দেহ হয়।

দীপক চন্দ্র রায় বলেন, ‘ডাকাডাকি করেও কোনো শব্দ না পেয়ে আশপাশের লোকজনকে ডাকি। এরপর মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি ঘরে কেউ নেই। পরে ডাইনিং রুমের দরজা খুলে দেখি দাদুর রক্তাক্ত লাশ আর রান্না ঘরে দিদার লাশ পড়ে আছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, যোগেশ চন্দ্র রায় শিক্ষক ছিলেন। ২০১৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসরে যান। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় জয়পুরহাটে এবং ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে শুধু স্বামী-স্ত্রী থাকতেন।

খবর পেয়ে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোনাব্বর হোসেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

তারাগঞ্জ থানার এসআই মো. আবু ছাইয়ুম বলেন, ‘দুজনের মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. মজনু (৪২)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে।

স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি পুরোপুরি থামার আগেই নামার চেষ্টা করলে মজনু পড়ে যান। এতে তাঁর মাথা ও দুই পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। পরে স্টেশনের কর্মচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে রাতেই সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার (ইনচার্জ) আবু হান্নান বলেন, ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর খবর পান একজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি হাসপাতালে পৌঁছার এক ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন বলেন, মরদেহ রোববার সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোটেনি বীর নিবাস, আশ্রয়ণের ঘরেই মুক্তিযোদ্ধার ঠাঁই

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী (৭৫) জীবনের শেষ বয়সে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ১৯৭১ সালে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে দেশ স্বাধীন করলেও তাঁর ভাগ্যে এখনো জোটেনি বীর নিবাসের ঘর।

মনিরামপুরে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩৪টি বীর নিবাস নির্মাণ করা হলেও তিনবার আবেদন করে সেই তালিকায় নাম ওঠেনি আরশাদ আলীর। বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোর মধ্যে একটির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আলাউদ্দিনের নামে, যিনি পৌর শহরে তিনতলা বাড়ি ও ঢাকায় ফ্ল্যাটের মালিক। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আলাউদ্দিন লিখিতভাবে ঘর না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।

মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী জানান, ১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খুলনার বটিয়াঘাটা ও বয়রা এলাকায় যুদ্ধ করেছেন তিনি। যুদ্ধের পর মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে পরিবার চালাতেন। মনিরামপুরের গোয়ালবাড়ি এলাকায় আট শতক জমি কিনে বসতঘর করেছিলেন। কিন্তু জমিটি খাস হয়ে গেলে ২০২৩ সালে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে। তাঁর দুই ছেলে ও এক ছেলের শাশুড়ি ওই ঘরগুলো বরাদ্দ পান। শাশুড়ি সেখানে না থাকায় সেই ঘরে উঠেছেন আরশাদ আলী।

আরশাদ আলী বলেন, ‘স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। ছয় ছেলেকে কষ্ট করে বড় করেছি। বসতভিটা দিতে পারিনি বলে সবাই আলাদা থাকে। ২০১৬ সালে ভাতার তালিকায় নাম ওঠে। এখন ২০ হাজার টাকা পাই। এক ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে ১০ লাখ টাকা ধার করেছিলাম। দালালের কাছে সেই টাকা খোয়া গেছে। কিস্তি দিয়ে হাতে ৬ হাজার টাকার মতো থাকে।’

আরশাদ আলী আরও বলেন, ‘গোয়ালবাড়ি মৌজায় আরও আট শতক জমি কিনেছি, কিন্তু ঘর তুলতে পারিনি। বীর নিবাসের জন্য দুবার আবেদন করেছি, লাভ হয়নি। আবার আবেদন দিয়েছি। সরকার যদি ঘর দেয়, শেষ বয়সে নিজের ঘরে একটু শান্তিতে থাকতে পারব।’

দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে মনিরামপুরে ৩৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন পাঁচটি ঘরের বরাদ্দ এসেছে, যার মধ্যে চারটির নির্মাণকাজ চলছে।

বীর নিবাস নির্মাণ কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আলাউদ্দিনের নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরটি তিনি না নেওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী নতুন আবেদন দিয়েছেন। সেই ঘরটি তাঁর নামে বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, যাচাই চলছে।’

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট হোসেন বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাঁর নামে বীর নিবাস বরাদ্দের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাংনীতে সারের সংকট: কাঁদছেন চাষি, হাসছে সিন্ডিকেট

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
খেতে সার ছিটাচ্ছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
খেতে সার ছিটাচ্ছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ডিএপি ও টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে চাষিদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেটের কারণে তাঁদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।

বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা জানান, প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যাচ্ছে না। অল্প সার পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, ডিলারের কাছে গিয়ে তাঁরা পর্যাপ্ত সার পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, ডিলারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সার না পাওয়ায় তাঁদেরও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। এতে চাষিদের ভোগান্তি বাড়ছে। প্রশাসনের তদারকি বাড়লে সংকট কমবে বলে তাঁরা মনে করেন।

কয়েকজন সাবডিলার জানান, চাহিদার তুলনায় ডিএপি ও টিএসপি সারের বরাদ্দ খুব কম। অনেক সময় বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

করমদী গ্রামের কৃষক লাভলু হোসেন বলেন, ‘ডিএপি-টিএসপি না পেয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যা দূর হবে না।’

তেরাইল মাঠের কৃষক উকিলুর রহমান জানান, ডিএপি-টিএসপি সাধারণত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে; তবু মিলছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে সার নিশ্চিত করা হোক।’

বামন্দী মাঠের মারফত আলী বলেন, গম-ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের মৌসুমে ডিএপি-টিএসপি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সংকটের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া যাবে না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারের দাম বেশি নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত