Ajker Patrika

ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক নারীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ০০: ২০
ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক নারীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মাতৃত্বকালীনসহ বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক নারীর কাছ থেকে সাত লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অনেক দিন পার হলে প্রতিশ্রুত টাকা না পেয়ে ভাতা প্রত্যাশীরা আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাফিজুরের বাড়ি ঘেরাও করলে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। 

ভাতা প্রত্যাশী নারীরা ফুলবাড়ী থানা চত্বর ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা টাকা ফেরতসহ হাফিজুরকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেন। পরে তাঁরা ফুলবাড়ী থানা ও ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বালাতারি গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান (৪০) একটি অজ্ঞাত সমিতির নামে দেড় বছর ধরে স্থানীয় শতাধিক নারীকে শিশুশিক্ষার্থী ও প্রসূতি মায়েদের উপবৃত্তি, পুষ্টি ও প্রসূতি ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তাঁকে বিশ্বাস করে গ্রামের নারীরা প্রথমে ব্যাংক হিসাব খোলার কথা বলে খরচ বাবদ প্রত্যেকের কাছে ১ হাজার করে টাকা নেন। পরবর্তীতে দেড় বছরে কিস্তি বাবদ বিভিন্ন অজুহাতে অনেক নারীর কাছ থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। 

দুই মাসের মধ্যে ভাতার টাকা হিসেবে প্রথমে ১২ হাজার এবং পরে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা পাবেন বলে ভাতা প্রত্যাশীদের জানান হাফিজুর। ওই নারীরা জানান, দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ভাতার সুবিধা না পাওয়ায় তাঁরা হাফিজুরের বাড়িতে ধরনা দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে তিনি নানা টালবাহানা শুরু করেন। 

এদিকে ভাতা প্রত্যাশীরা বুঝতে পারেন হাফিজুর টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন। তাঁরা এক জোট হয়ে আজ দুপুরে হাফিজুরের বাড়ি ঘেরাও করেন। হাফিজুর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পালিয়ে যান। তাঁর বিচারের দাবিতে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদ, ফুলবাড়ী থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করেন ভাতা প্রত্যাশীরা। 

প্রতারণার শিকার সোহাগী নামের এক নারী বলেন, ‘আমার মেয়ের পুষ্টি ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে হাফিজুর তিন দফায় তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন লাপাত্তা। তাঁকে টাকা দেওয়ায় আমার পরিবারে অশান্তি শুরু হয়েছে। আমি এই প্রতারকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’ 

বিশ্বাস করে এলাকার ৬০ জনের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা আদায় করে হাফিজুরের হাতে তুলে দেন বলে জানান আনোয়ারা নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাঁরা ভাতা না পেয়ে এখন আমার বাড়িতে টাকার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। আমি গরিব বিধবা। কোত্থেকে টাকা ফেরত দেব? হাফিজুরকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে বাড়িতে এখন অশান্তি।’ 

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টির সত্যতা আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হারুন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও হাফিজুরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। আমি নিজে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। এবারের ঘটনায় প্রতারণার শিকার নারীরা ফুলবাড়ী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি আশা করি তাঁকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’ 

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামেকে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ভর্তি রাখার প্রয়োজন থাকলেও সেটি সম্ভব হতো না। কিছু কিছু রোগী রাখা হতো মেডিসিন বিভাগেই।

এবার প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। এ ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যা আছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য সাতটি, শিশু-কিশোরদের জন্য পাঁচটি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য তিনটি শয্যা সংরক্ষিত। এ ছাড়া রোগীদের থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা হয়েছে এ ওয়ার্ডে।

রামেক হাসপাতালের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদের উদ্যোগে হাসপাতালের পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই ওয়ার্ড করা হয়েছে। গত বুধবার তিনি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। তারা মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমবে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের অ্যাক্রেডিটেশনেও সমস্যা হতে পারে। তখন এ কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ কমবে। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এই ওয়ার্ডটি জরুরি ছিল।

তাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ড চালু করার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। সবকিছু শুনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন। ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটিই অবাক করার বিষয়। প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও চিকিৎসা নিতে পারবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। এরপর তিনি হাসপাতাল ও রোগীদের কল্যাণে নতুন অনেক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। হাসপাতালকে করে তুলেছেন রোগীবান্ধব। বাড়িয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান। বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

মানসিক রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড চালুর আগে গেল ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেন শামীম আহাম্মদ। এরপর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে একজন সাপে কাটা রোগীরও মৃত্যু হয়নি। আগে প্রায় প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হতো এ হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মান্নাকে ৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২০
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, বগুড়া শাখা। গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করা হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। নোটিশে বলা হয়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি তিনি।

গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শাখাপ্রধান তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশে আরও বলা হয়, ‘মঞ্জুরিপত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ডিলে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আপনাকে/আপনাদেরকে মৌখিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও মোবাইল ফোনে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপনি/আপনারা তা পরিশোধ করেননি। ইতিপূর্বে আপনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, তবুও বিনিয়োগের দায় পরিশোধ করেননি। আপনার/আপনাদের লেনদেনের পরিস্থিতি দেখে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে যে, আপনার/আপনাদের সঙ্গে আমাদের আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতএব, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের সমুদয় দায় ৩৮৪.৭৬ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করে হিসাবসমূহ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে।’

এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) তৃতীয় অধ্যায় (নির্বাচন) ১২(১)(ঠ) ধারা অনুসারে কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে, এটা সঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়ল পাশের ভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ভবনটিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনে অবস্থিত আরএফএল কোম্পানির বেস্ট বাই শোরুম। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন সেখানে কর্মরতরা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনমালিকের অভিযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের বলা হলেও কর্ণপাত না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলি স্বর্ণকারপট্টির মুজিব সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণাধীন এই ভবনের মালিক স্থানীয় সঞ্জয় কর্মকার, অজয় কর্মকার ও সেলিম নামে আরেক ব্যক্তি। পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী ভবনসংলগ্ন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্যারাসাইলিং ব্যবস্থা ছিল না। এই অবস্থায় পাইলিংয়ের (নিচের অংশ) কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিকেরা। হঠাৎ করেই ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে দৌড়ে সরে পড়েন নির্মাণশ্রমিক ও শোরুমটির কর্মচারীরা।

বেস্ট বাইয়ের কর্মীরা জানান, তারা সকালে এসে ফ্লোরের টাইলসে ফাটল দেখতে পান। ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে ক্যাশ কাউন্টার টেবিলটা সরিয়ে ফেলেন, এর মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনের এক পাশ।

ধসে পড়া ভবন ও বেস্ট বাই ফ্রাঞ্চাইজের মালিক মনিরা খাতুনের দাবি, এ ঘটনায় তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে আমার ভবনের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলেছে, যার কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট দূরত্ব রেখে কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ সকালে উল্টো আমার কর্মচারীদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।’

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা শহরের বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাফফর আলী মুসা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং তা সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব তাদের। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভবনমালিকদের একজন সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ আলম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভার প্রশাসক ও ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত