Ajker Patrika

কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, ১২: ৩৭
কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার সকালে ভাঙন শুরু হয়। দুপুরে জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চরম শঙ্কায় এলাকাবাসী। তলিয়ে যেতে পারে ১০ থেকে ১২টি গ্রাম।

সাবেক ইউপি সদস্য মাসুদ বলেন, নদীতে জোয়ার আসছে। তিন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে আমরা স্থানীয়রা বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি। 

স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার ওসমান গনি সরদার জানান, ভোর ৪টার দিকে চরামুখা খালের একপাশের (বেল্লালের ঘেরের পাশে) রাস্তা ভাটিতে ভেঙে নদীতে নেমে গেছে। রাস্তাটি দীর্ঘদিন নাজুক অবস্থায় ছিল। প্রায় দুই চেইন রাস্তা কপোতাক্ষ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। এখন ভাটা থাকায় ঘেরের পানি নদীতে নামছে। স্বেচ্ছাসেবায় বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মেরামত করতে না পারলে দুপুরের জোয়ারে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হতে পারে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. মশিউল বলেন, ওখানের বাঁধ দুর্বল ছিল। প্রায় দেড় শ মিটারের মতো ভেঙে ক্লোজার তৈরি হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে পানি আটকানোর মতো কিছু করা সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটপাত দখল, পথচারী রাস্তায়

  • ফুটপাতে অসংখ্য দোকান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে পথচারীরা
  • বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কাজ হচ্ছে না: সিটি করপোরেশন
  • চাঁদাবাজদের ধরতে না পারলে এর কোনো সমাধান নেই: সচেতন নাগরিক
জয়নাল আবেদীন, ঢাকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকান। ফলে প্রতিদিন পথচারীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে মূল রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তাতে কাজ হচ্ছে না। দু-এক দিন পরই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত দখল করছে।

এই অবৈধ দোকানের মূলে রয়েছে চাঁদাবাজি। তাই চাঁদাবাজদের না ধরতে পারলে এর কোনো সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর নতুন বাজার এলাকা, নিউমার্কেট, পল্টন, ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকা, গুলিস্তান, মতিঝিল, মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা মেডিকেল এলাকাসহ বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা নানান পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। অধিকাংশ ফুটপাতে জামাকাপড়ের দোকান, চাসহ খাবারের দোকান, জুতা, প্রসাধনী ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান দেখা গেছে। তবে জামাকাপড়ের দোকানই বেশি। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের পাশে পণ্য সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। এমনকি ওভারব্রিজে রয়েছে ভাসমান দোকান।

পল্টন এলাকায় সড়ক দিয়ে হাঁটছিলেন আবু উবাইদা নামের একজন। ফুটপাত রেখে মূল সড়কে কেন হাঁটছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জায়গাই তো নেই। সবই তো দোকান। ক্রেতা-বিক্রেতায় গাদাগাদি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।’

নতুন বাজার এলাকায় আরিফ শিকদার নামের এক পথচারী বলেন, ফুটপাত এখন পথচারীদের জন্য নয়, হকারদের জন্য। আর ফুটপাত দখল নেওয়ার জন্য তাদের তো বড় সিন্ডিকেট রয়েছে।

এদিকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে চান না দখলদার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাঁদের। কেউ কেউ দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দেন স্থানীয় নেতাদের। আর এর বিনিময়ে ফুটপাতে নির্ধারিত স্থানে ব্যবসা করার অনুমতি মেলে।

চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কে নেবে চাঁদা? আমরা বর্তমানে কাউকে চাঁদা দেই না। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী উত্তর সিটি এলাকায় চাঁদা দিতে পারে, সেটি আমার জানা নেই।’

সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদের উদাহরণ টেনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে আসেন, পরে দেখা যায় আবারও দোকান বসেছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এসব উচ্ছেদ করা সম্ভব না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফুটপাত দখল করা হচ্ছে। যেকোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও কার্যকর এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি উচ্ছেদের পর পুনরায় অবৈধ দখল বা স্থাপনা নির্মাণ রোধে আনসার সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিন উচ্ছেদ করলে, আবার দু-তিন দিন পর তারা হাজির হচ্ছে, এটাই বড় সমস্যা। মানুষেরও কোনো প্রতিবাদ নেই যে কেন ফুটপাতে অবৈধ দোকান দিয়েছে। মানুষও এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে চলাফেরা করছে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাস্তায় নামলেও বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এককভাবে এর সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। না হলে উচ্ছেদের পরে ব্যবসায়ীরা আবার বসবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ফুটপাত থেকে যারা মাসোহারা নেয়, তাদের যদি সরকার কঠোরভাবে ডিল করে, তাহলে এটা দখলমুক্ত রাখা খুবই সম্ভব। কিন্তু যারা মাসোয়ারা নেয়, রাষ্ট্র তাদের কখনো ধরে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌলভীবাজারের ৪টি আসন: নজরে চা-বাগান ও নতুন ভোটার

  • ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় বিএনপি
  • বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত
  • কুলাউড়ায় আলোচনায় জামায়াতের আমির
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
(ওপরে বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন মিঠু, শওকতুল ইসলাম শকু, এম নাসের রহমান, মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিচে বাঁ থেকে) আমিনুল ইসলাম, এম সায়েদ আলী, আব্দুল মান্নান ও মোহাম্মদ আব্দুর রব।
(ওপরে বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন মিঠু, শওকতুল ইসলাম শকু, এম নাসের রহমান, মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিচে বাঁ থেকে) আমিনুল ইসলাম, এম সায়েদ আলী, আব্দুল মান্নান ও মোহাম্মদ আব্দুর রব।

চা-বাগান ও প্রবাসী-অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। জেলার প্রায় ১৬ লাখ ভোটারকে কাছে টানতে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ভোটারদের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই ৯২টি চা-বাগানের। সাধারণত ভোটও সবচেয়ে বেশি পড়ে তাঁদের। এ ছাড়া রয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন ভোটার। তাই বিশেষ করে চা-বাগান এলাকা এবং নতুন ভোটারদের প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কেননা অনেক ক্ষেত্রে ভোটের ফল নির্ধারণে তাঁদের নির্ণায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক হবে। এরপর সবাই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে। দলের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ‘আমরা দলের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জোট হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে কোনো আপত্তি নেই।’

মৌলভীবাজার-১

জুড়ী ও বড়লেখা নিয়ে গঠিত আসনে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দীন মিঠু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন কাতারপ্রবাসী লুকমান আহমদ। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন জাকির চৌধুরী ও তামিম আহমেদ। জাতীয় পার্টির নেতা রিয়াজ উদ্দিনও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার।

মৌলভীবাজার-২

কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির প্রকৌশলী এম সায়েদ আলী। দীর্ঘদিন ধরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই আসনের বাসিন্দা হওয়ায় গুঞ্জন রয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে প্রার্থী হতে পারেন। কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও তাঁকে প্রত্যাশা করছেন। মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ডা. শফিকুর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এলাকাবাসী ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখানে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। আশা করি, কেন্দ্র এই দাবি পূরণ করবে।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক উপজেলা সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা। প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। আনজুমানে আল-ইসলাহ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ফজলুল হক খান সাহেদও প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাছ খান। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন সাইফুর রহমান। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।

মৌলভীবাজার-৩

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে এই আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক জেলা আমির আব্দুল মান্নান। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ বিলাল। এনসিপি থেকে এহসানুল হক জাকারিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। ভোটের মাঠে দৃশ্যত এম নাসের রহমানের পাল্লা ভারী। তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় জামায়াত। নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুল মান্নান।

মৌলভীবাজার-৪

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নিয়ে গঠিত আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব)। তবে তাঁর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন দলের আরেক নেতা মহসিন মিয়া মধু। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন আসনটি থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব। এনসিপি থেকে প্রীতম দাশ ও খেলাফত মজলিস থেকে নূরুল মোত্তাকিন জুনায়েদ মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন শেখ নুরে আলম হামিদি। এই আসনের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটারের মধ্যে শুধু চা-বাগানের ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ফলে ভোটের ফল নির্ধারণে এসব বাগানের ভোট বড় ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলা: তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে শরিফ ওসমান হাদির ওপর যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, এ দুর্ঘটনা আরও ঘটেছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে আমাদের এক এমপি প্রার্থীর ওপর যা হয়েছে, এটা ষড়যন্ত্র। এটার বিরুদ্ধে যদি আমাদের অবস্থান নিতে হয়, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি অবস্থান নিতে হয়, যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

হাদির ওপর হামলা ‘অশনিসংকেত’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি একটা অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন বানচাল করার জন্য সেই শক্তি আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে আমাদের একজন প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছিল। আজ আবার একজনকে গুলি করা হয়েছে।’

জামায়াতে ইসলামীর আমৎির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা মতভিন্নতার কারণে এ ধরনের সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন। জামায়াতের আমির ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার ‘দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ’ তদন্তও দাবি করেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্য আরেকটি পোস্টে জামায়াতের আমির লেখেন, ‘ওসমান হাদীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে প্রচুর অস্ত্র রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা নির্বাচন কমিশনের প্রধানতম দায়িত্ব। যদি এ কাজে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শিত হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বুলি একেবারেই ফাঁকা বলে প্রমাণিত হবে।’

ওসমান হাদির ওপর হামলা গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপর সরাসরি আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, ‘এই হামলা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নির্বাচনী পরিবেশের ভঙ্গুরতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, শরিফ ওসমান হাদি হামলার আগে হুমকির কথা প্রকাশ্যে জানানোর পরও তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ ঘটনাকে ‘নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত’ আখ্যা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। সন্ত্রাসীদের দমনে কঠোর হন। কারণ তারা আসন্ন নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চাইবে। পতিত ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় সরকারের দুর্বলতা সুস্পষ্ট।’

এনসিপি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিকে নিয়ে সম্প্রতি গঠিত তিন দলীয় মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই ফ্যাসিবাদের দোসরেরা নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে হামলা ও সন্ত্রাস কোনো সভ্য সমাজে বরদাশতযোগ্য নয়।

এ ছাড়াও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশ, বাংলাদেশ জাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।

হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়াও রাজপথে কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত, এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির পক্ষ থেকেও আজ শনিবার সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত মিছিল করে ইসলামী ছাত্রশিবির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবস্থা সংকটাপন্ন: জুলাইয়ের মুখ হাদি গুলিবিদ্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বন্দুকধারীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। রাজধানীর পল্টন এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রোপচারের পর গতকাল তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় লিফলেট বিতরণের সময় মোটরসাইকেলে আসা দুজন অস্ত্রধারী খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে। বিএনপি ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে আজ শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ধরনের সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত’ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। হামলার পর ঢাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল জুমার পর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট সড়কে বাইতুস সালাহ জামে মসজিদের উল্টো দিকের ‘ডক্টর টাওয়ার’-এর সামনে দিয়ে হাদি ব্যাটারিচালিত রিকশায় লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে মোটরসাইকেল এসে রিকশার একদম কাছে গিয়ে চলন্ত অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের পাশ দিয়ে মাথায় বিদ্ধ হয়। ঘটনার পর তাঁর সহকর্মীরা রিকশাতে করেই তাঁকে দ্রুত ঢামেকে নিয়ে যান।

গুলির সময় সাজ্জাদ খান নামের এক ব্যক্তি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী এই ব্যক্তি বলেন, ওসমান হাদি ফকিরাপুলের দিক থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে পশ্চিমে বিজয়নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। রিকশার পাশের আসনে আরেকজন ছিলেন। দুই ব্যক্তি একটি মোটরসাইকেলে করে অটোরিকশার পিছু নিয়ে তাঁদের অনুসরণ করছিল। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তির গায়ে কালো চাদর ছিল, যা দিয়ে তার হাত দুটি ঢাকা ছিল। অটোরিকশার পাশে এলে পেছনে বসা ব্যক্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে। মুহূর্তের মধ্যে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে বিজয়নগরের দিকে চলে যায়।

সাজ্জাদ খান বলেন, গুলির শব্দে রাস্তায় থাকা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রিকশা থামালে ভিড় জমে যায়। এই সময় হাদির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছিল।

হাদির একজন সহযোদ্ধা বলেন, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাঁদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল, লিফলেট বিলি শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়ে দুপুরের খাবার খাবেন, আলোচনা করবেন। এর মধ্যেই হাদির ওপর হামলার খবর আসে।

ঘটনার পর পুলিশ, র‍্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও যোগ দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডক্টর (ডিআর) টাওয়ারে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ব্যবহার করে হামলাকারীদের শনাক্তের কাজ শুরু করে।

গুলির একটি সিসিটিভির ভিডিওতে দেখা যায়, হাদির রিকশার খুব কাছে মোটরসাইকেলটি আসে, মুহূর্তেই আরোহী অস্ত্র বের করে গুলি করে এবং ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসাও উদ্ধার করে পুলিশ। জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।

তবে ইনকিলাব মঞ্চের একজন সদস্য গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, যারা ওসমান হাদির ওপর গুলি চালিয়েছে, তারা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তাঁর প্রচারণা টিমে যোগ দিয়েছিল। সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্যে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি ছোড়ে। মাঝখানে কয়েক দিন তাদের দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে তারা আবার এসে প্রচারণার কাজে যুক্ত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা ইতিমধ্যে ঘটনার ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।

বিদেশি ফোন নম্বর থেকে হত্যার হুমকি

হাদি আগে থেকেই জানিয়ে আসছিলেন, তাঁকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে ফোন ও বার্তার মাধ্যমে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া সেই পোস্টে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে হাদি লেখেন, ‘গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে; যার সারমর্ম হলো—আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে, আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে এবং আমাকে হত্যা করবে।’

ঢামেক ছেড়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাদির মাথার ভেতরে গুলি রয়েছে এবং তাঁর সার্জারি চলছিল। হাসপাতালে আনা স্বজনেরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা মাত্র একটি গুলিই ছোড়ে, সেটিই তাঁর মাথায় লাগে।

ওসমান হাদির সতীর্থরা ঢাকা মেডিকেলে ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত খুঁজছিলেন। তাঁরা বলছেন, ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে হাদির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকেরা রক্ত জোগাড় করতে বলেছেন। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।

সন্ধ্যার পর হাদির পরিবার তাঁকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক অস্ত্রোপচারের পর পরিবারের অনুরোধে তাঁকে এভারকেয়ারে পাঠানো হচ্ছে এবং সেখানে চিকিৎসার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

যেভাবে আলোচনায় আসেন ওসমান হাদি

জুলাই আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত ওসমান হাদি সম্প্রতি নজরকাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর তীব্র ভাষার বক্তব্যও আলোচনায় আসে। হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি খ্যাতি পান। হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। তাঁর পিতা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। হাদির শিক্ষাজীবন শুরু হয় নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায়, পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একসময় ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার ‘সাইফুরস’-এ শিক্ষকতা করেছেন।

সর্বশেষ তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন বলে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা জানিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির উদ্যোগে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। এবারের ডাকসু নির্বাচনে শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে ভোট করে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ওসমান হাদি পরিবার নিয়ে ঢাকার পশ্চিম রামপুরায় থাকেন। তার স্ত্রী রাবেয়া ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। তাদের একটি সন্তান রয়েছে।

ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পর ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তার ভগ্নিপতিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। হাদির বোন মাছুমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিন বছর আগে ওসমান হাদিকে বলেছিলাম, ‘তোকেও কিন্তু ভারতের ‘‘র’’ বাঁচাতে দেবে না। আবরারকে যেভাবে মেরে ফেলেছে, তোকে-ও সেভাবে মেরে ফেলবে। দেশপ্রেমিক মানুষকে তারা বাঁচতে দেয় না।’

রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা

হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় এই ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাদির ওপর হামলাকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন একজন প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছে। এটি স্পষ্ট একটি সংকেত, নির্বাচন বানচাল করার জন্য কোনো শক্তি আবার চক্রান্ত শুরু করেছে।

এর আগে হাদিকে দেখতে হাসপাতালে আসার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে নিরাপদে হাসপাতালে প্রবেশ করান।

সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি কেউ নতুন করে দেশে ফ্যাসিজম বা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, তাহলে জনগণ তা প্রতিহত করবে এবং যথাযথ জবাব দেবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলটি মনে করছে, এই হামলা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপরও সরাসরি আঘাত। হাদির প্রাণনাশের হুমকি থাকা সত্ত্বেও তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার উদাহরণ বলে এনসিপি মন্তব্য করেছে। ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেওয়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ ঘটনায় গতকাল ধানমন্ডি এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত