Ajker Patrika

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম হোসেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে এই অভিযোগ তোলেন তিনি।

এদিকে ওই অভিযোগের পর সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান। সেখানে সেলিম হোসেন বাদে প্রায় ১০ জন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ওই সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে কাশিড়া বাজারে সেলিম হোসেনের অফিসঘরে বেলা ২টায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সেলিম হোসেন।

‘সেলিম মেম্বার কাশিড়া’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ২৫ মিনিট ধরে লাইভে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন সেলিম হোসেন।

এদিকে আজ সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিড়ার দীঘিরপাড় গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সেই কাজে বাধা দেন ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন। বিগত পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিলেন সেলিম। পরিষদের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে অপপ্রচার করেন। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। এ ঘটনায় আমি পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বসে আলোচনা করে সেলিমের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

অপরদিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন আবার চেয়ারম্যানের ঘুষ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে ভুক্তভোগী দাবি করা দুই ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

সেলিম হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম উঠাতে ৮-১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন চেয়ারম্যান। ভাতাভোগীর পর সেই কার্ড আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে ফের অন্যজনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাঁর নাম তালিকায় তুলে দেন। অনেকের কাছ থেকে তালিকায় নাম তুলে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নিলেও তালিকায় তাঁদের নাম ওঠাননি তিনি, পরে সেই ঘুষের টাকা ফেরতও দেননি।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ইউপি মেম্বার সেলিম হোসেনের। ছবি: আজকের পত্রিকা
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ইউপি মেম্বার সেলিম হোসেনের। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেলিম হোসেন বলেন, ‘কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দীঘিরপাড় গ্রামে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছিল। এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সেটি আমরা কেউ জানতাম না। মিস্ত্রিরা রাস্তার কাজ করছিলেন। এ রাস্তার কাজে ভাঙাচোরা ইট ব্যবহার করা হচ্ছিল। লোকজন নিম্নমানের ইট সোলিং রাস্তার কাজের কথা আমাকে জানান। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙাচোরা ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দেখে ছবি তুলেছি। ভালো ইট দিয়ে কাজ করার কথা বলেছি। এতে ইউপি চেয়ারম্যান আমার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি আমার বিরুদ্ধে প্রকল্পে কাজ বন্ধ করার অভিযোগ তুলে আমাকে সময় বেঁধে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আমি বৃহস্পতিবারে নোটিশের জবাব দিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান তা গ্রহণ করেননি। ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না। তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধাভোগীর তালিতায় নাম উঠাতে ৮-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অনেকের এখনো মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম ওঠেনি। তিনি তাঁদের টাকাও ফেরত দেননি। আমার ওয়ার্ডে ছয়জন মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতেন। তাঁদের মোবাইল ফোন নম্বর পরির্বতন করা হয়েছে। কেউ এক বছর, আবার কেউ দশ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না। ভাতাভোগীদের ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী এক নারী কাশিড়া খলিফাপাড়ার আক্কেলপুরের ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ভাতাভোগীরা বাকি টাকা এখনো ফেরত পাননি।’

ইউপি সদস্য সেলিম বলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত। গ্রাম আদালতের ফৌজদারি ফিস ২০ আর দেওয়ানি ১০ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ফৌজদারি ও দেওয়ানির ফিস ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। মোটা অঙ্কের টাকা হলে বয়স কমবেশি করে জন্ম নিবন্ধনও মেলে। ওয়ারিশান সনদ পেতে ৫০ টাকা নেওয়া নিয়ম। কিন্তু ২০০ টাকা করে ফিস নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী দাবি করা তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ের মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের হাতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম। মেয়ে আমার কয়েক মাস টাকা পেয়েছিল। তারপর হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে আবার একজনকে দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী ব্যালট ছাপাতে ৫৩১ টন কাগজ সরবরাহ কেপিএমের

কাপ্তাই ( রাঙামাটি) প্রতিনিধি
কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ উৎপাদনের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ উৎপাদনের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে এ পর্যন্ত ৫৩১ টন কাগজ সরবরাহ করেছে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম)। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ৩৮৪ টন কাগজ সরবরাহ করা হবে। কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ গতকাল রোববার এ তথ্য জানান।  

নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কেপিএমের কাছ থেকে ৯১৫ কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস  (বিএসও)। এই কাগজের বর্তমান বাজারমূল্য ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮১  টাকা। আবার বিএসও থেকে  নির্বাচন কমিশন এই কাগজ কিনে নিয়ে ব্যালট পেপার ছাপাবে।  

গতকাল বেলা ১১টায় কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কেপিএম মিলে ব্রাউন, সবুজ ও গোলাপি কালার কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাগজ সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সিংহভাগ কাগজ সরবরাহ  করেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাগজ সরবরাহ করব। তবে কাপ্তাই লেকের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় কাগজ উৎপাদন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। কাগজ উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন; যা লেক থেকে ব্যবহার করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটি মেশিন। এখন শুধু একটি মেশিন চালু আছে। একটি মেশিনে দিনে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিষমুক্ত বেগুন চাষে মুরাদের বাজিমাত

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কৃষক মুরাদ হালদার। এই বছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে অরগানিক বেগুন চাষ করেছেন তিনি। আর প্রথমবার বেগুন চাষ করেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

মুরাদ উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের মৌভোগ গ্রামের একজন যুবক। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনটি প্লটের ৫৫ কাঠা জমিতে চার জাতের বেগুন চাষ করেছেন তিনি। এতে মোট উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ১৮ কাঠার খেত থেকে তিনি ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে গেলে তিনটি প্লট থেকে সাত-আট লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

মুরাদ হালদার বলেন, ‘বেগুন চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি। আগামীতে দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করব। সবচেয়ে বড় কথা, এই বেগুন অরগানিক ও বিষমুক্ত। কারণ, বেগুনের জমিতে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি।’

গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মৌভোগ গ্রামে মুরাদের একটি ১৮ কাঠার বেগুন খেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন খেত থেকে তোলা হয়েছে। ৯ জন শ্রমিক বেগুনগুলো আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করে বস্তায় ভরছেন। ঢাকা ও মাদারীপুর থেকে ট্রাকে পাইকারেরা এসেছেন বেগুন কিনতে। আশপাশের খেতে প্রতি কেজি বেগুনের পাইকারি দাম ৫০ টাকা হলেও মুরাদের খেতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। বিষমুক্ত অর্গানিক ফসল হওয়ায় এই বেগুন সুস্বাদু এবং এর চাহিদা ও দাম বেশি বলে জানান পাইকার ইব্রাহীম শেখ। প্রতি পাঁচ থেকে সাত দিন পর এই খেত থেকে ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন তোলেন মুরাদ। বাকি দুটি খেতের উৎপাদন শুরু হলে সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ মণ বেগুণ পাবেন বলে জানান তিনি।

মুরাদের চাষকৃত বেগুন খেতগুলো পাশে ও ওপর থেকে জাল দিয়ে ঘেরা রয়েছে, যাতে সহজে পোকামাকড় ঢুকতে না পারে। তা ছাড়া পোকামাকড়ের প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসেবে কিউট্রাক ফাঁদ, ট্রাইকোডার্মা, স্টিকি ইয়োলো কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। রাসায়নিক সারের বদলে জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে ও আগাছার প্রকোপ কমাতে মাটিতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন। ফলে সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান মুরাদ।

মুরাদ তার তিনটি খেতে ভারতের উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘চক্র বিএন ৪২২’ জাত, হায়দরাবাদের ‘নবকিরণ’ জাত, উচ্চ মূল্যের ‘ভিএনআর ২১২’ জাত এবং গ্রিনবল জাতের বেগুন চাষ করেছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এই জাতের বেগুন চারা রোপণ করেছিলেন। এসব জাতের বেগুন আগাম ফসল ফলে এবং প্রতিটি গাছে দীর্ঘদিন বেগুন হয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব জাত নির্বাচন করেছেন।

মুরাদের সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষক তাঁর বেগুনখেত দেখতে আসছেন এবং তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আগামী মৌসুমে একই পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় চাষি রবিন হালদার, শাহজাহান শেখসহ অনেকে।

উপজেলার নলধা-মৌভোগ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, ‘প্রথমবার মুরাদ হালদার বেগুন চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক ও আর্গানিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করায় এ সাফল্য পেয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহযোগিতা ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা সবচেয়ে বেশি বিষ প্রয়োগ করে, যা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মুরাদ রাসায়নিক বিষ ছাড়া বেগুন উৎপাদন করেছেন। চাষি মুরাদ হালদারের সাফল্য দেখে অনেকেই বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কালীগঞ্জে চুরির হিড়িক: খোয়া যাচ্ছে কৃষকের সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুতের তার, জনমনে আতঙ্ক

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি 
কালীগঞ্জে চুরির হিড়িক: খোয়া যাচ্ছে কৃষকের সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুতের তার, জনমনে আতঙ্ক

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে চুরির ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো চুরির ঘটনা ঘটছে। চোর চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কৃষকের জমিতে সেচ দেওয়ার সাবমারসিবল মেশিন, মসজিদের মাইকের অ্যামপ্লিফায়ার, বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের তার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, এমনকি গৃহস্থালির হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগলও। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অবনতি এবং এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের কারণেই চুরির ঘটনা এমন মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কৃষকেরা পড়েছেন সবচেয়ে বড় বিপাকে। বোরো মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে জমিতে পানি দেওয়ার পাম্প চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ভুক্তভোগী স্থানীয় কৃষক মেজবাহ উদ্দীন আকন্দ বলেন, ‘আমি সরকারি স্কিমের আওতায় আর্থিক সহযোগিতায় জমিতে সেচ দিয়ে থাকি। কিন্তু কয়েক দিন আগে আমার সেচ পাম্পটি চুরি হয়ে যায়। নতুন করে পাম্প বসানো অনেক ব্যয়সাপেক্ষ, যা আমার পক্ষে বহন করা কঠিন। বাধ্য হয়ে এ বছর সেচ দেওয়া বন্ধ রাখার চিন্তা করছি।’

আরও অনেক কৃষক জানান, সেচ যন্ত্র চুরির কারণে যদি পানি দেওয়া বন্ধ থাকে, তবে ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং কৃষকেরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এই আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশি টহল ও নজরদারির অভাবে চোর চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রশাসন যদি কঠোর হাতে অপরাধীদের দমন না করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। স্থানীয়রা উপজেলায় অবিলম্বে রাত্রিকালীন পুলিশি টহল জোরদার এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ সাধারণত প্রধান সড়কগুলোতে নিয়মিত টহল দেয়। কিন্তু উপজেলার এমন অনেক বাড়ি বা এলাকা রয়েছে, যেখানে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সেসব স্থানে চুরির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক প্রতিহত করা পুলিশের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এলাকাভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করলে এবং সবাই সতর্ক থাকলে এই চুরি রোধ করা সম্ভব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় ডিলারকে জরিমানা, ১০৭ বস্তা সার জব্দ

রংপুর প্রতিনিধি
ডাংগীরহাট বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডাংগীরহাট বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় নিয়মবহির্ভূতভাবে সার মজুত করার দায়ে মো. আশরাফুজ্জামান নামে এক ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে ডিলারের গুদাম থেকে ১০৭ বস্তা টিএসপি সার জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ডাংগীরহাট বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোনাব্বর হোসেন। প্রসিকিউটর হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসার ধীবা রানী রায় উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএডিসি ডিলার আশরাফুজ্জামান তাঁর গোডাউনে টিএসপি সার থাকার পরও কৃষকদের দিচ্ছিলেন না। সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন তিনি। ইউএনও মোনাব্বর হোসেন কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায়কে সঙ্গে নিয়ে গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ১০৭ বস্তা টিএসপি সার মজুত পাওয়া যায়। সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় আশরাফুজ্জামানের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পরে জব্দ করা সার উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হয়। এসব সার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া একই দিন কৃত্রিমভাবে সারের সংকট সৃষ্টি করায় একই ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলার মো. শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ইউএনও মোনাব্বর হোসেন বলেন, ‘কৃষকের হয়রানি ও বিপাকে ফেলার মতো কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। সার বাণিজ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত