Ajker Patrika

যশোরে ফুটপাত দখলে নিয়ে ইউএনওর মিনি পার্ক, দুর্ঘটনার শঙ্কা

আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৫১
মনিরামপুরের মোহনপুর বটতলায় আঞ্চলিক সড়কের গা ঘেঁষে পৌর মিনি পার্ক করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মনিরামপুরের মোহনপুর বটতলায় আঞ্চলিক সড়কের গা ঘেঁষে পৌর মিনি পার্ক করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুরে সড়ক ও জনপদের (সওজ) জায়গায় পৌর মিনি পার্ক গড়ে তুলেছেন পৌরসভার প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না। যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের মোহনপুর বটতলা মোড়ে ফুটপাতের ওপর এই পার্ক নির্মাণে পৌরসভার ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সওজের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাদের অনুমতি ছাড়াই এই পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটপাতের ওপর বানানো এই পার্কের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে।

চলতি মাসের ১৬ তারিখ আনুষ্ঠানিক পার্কটি উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে মোহনপুর বটতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, যশোর-চুকনগর সড়কের পশ্চিম পাশে ফুটপাতের অংশে ড্রেন নির্মাণের জন্য মাটি তুলে রেখেছে পৌরসভা। ঠিক তার পূর্ব পাশে ফুটপাতের ওপর পিচের রাস্তা ঘেঁষে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করে জায়গাটি দখলে নিয়েছে পৌরসভা। ওই অংশে পুরোনো একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটিকে টাইলস দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এর পাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে শতাধিক ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। এর পাশে সড়ক ঘেঁষে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। একটা রড দিয়ে নির্মিত ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার পিলারগুলোর অবস্থা এরই মধ্যে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। একটিকে ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মোহনপুর বটতলা মোড়ের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মোড়টি দুর্ঘটনা প্রবণ। এর মধ্যে এভাবে ফুটপাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, ‘এখানে পার্কের কোনো উপকারিতা নেই। গত ১৫ দিনে কাউকে এখানে এসে সময় কাটাতে দেখিনি। বরং পার্কের নামে রাস্তার ওপর পিলার দেওয়া হয়েছে। বড় গাড়িগুলোকে সাইড দিতে ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল বা সাইকেলের সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।’

ওই দোকানি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে একটি ইঞ্জিন ভ্যান মাইক্রোবাসকে এগিয়ে দিতে সরে যাওয়ার কোনো জায়গা পায়নি। পরে মাইক্রোবাসটি পেছন থেকে এসে ভ্যানে ধাক্কা দিয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, মোহনপুর বটতলা মোড়ে যাত্রী ছাউনির সামনে বাস থামে না। যাত্রী ছাউনিটি অকেজো পড়ে আছে দীর্ঘদিন। আগে যাত্রী ছাউনিটা খোলা ছিল। তারপরও যাত্রীরা এখানে আসতেন না। এখন সেটাতে টাইলস বসিয়ে রং করে কয়েকটি ফুলের চারা লাগানো হয়েছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম পার্ক উদ্বোধন করছেন। পাশে ইউএনও নিশাত তামান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম পার্ক উদ্বোধন করছেন। পাশে ইউএনও নিশাত তামান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ব্যস্ততম এই সড়কের গা ঘেঁষে এখানে পার্কের কোনো কার্যকারিতা নেই। কিছু টাইলস আর ফুলের চারা লাগিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এতে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। মূলত পৌরসভার টাকা লোপাট করতে পার্কের নামে পথচারীদের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মনিরামপুর পৌরসভার কার্যসহকারী আব্দুর রাশিদ তপু বলেন, ‘সওজের ৩ থেকে ৪ শতক জমির ওপর মিনি পার্ক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। সওজ চাইলে পার্ক ভেঙে যে কোনো সময় তাদের জমি দখলে নিতে পারবে।’

সওজের জায়গায় পার্কের নামে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সওজের জায়গায় পার্কের নামে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার বলেন, ‘ইউএনও জায়গাটি পছন্দ করেছেন। ওই স্থানে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। স্থানীয়রা ওই জায়গা দখলে নিয়ে ব্যবসা করতেন। যাত্রী ছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্ক গড়লে জনসাধারণের ভালো হবে ভেবে ইউএনও এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

উত্তম মজুমদার আরও বলেন, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে পার্কের কাজ করা হয়েছে। পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। জরুরি হওয়ায় আমাদের পৌরসভার এক ঠিকাদারকে দিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে মিনি পার্ক করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে যাত্রী ছাউনি টাইলস বসিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। পার্কে টাইলস বসানো হয়েছে। বালু ফেলে ফ্লোর ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ইটের গাঁথুনি দিয়ে ফুল বাগিচা করা হয়েছে। একটা ছাতা স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো রক্ষায় রাস্তার পাশ দিয়ে পিলার পুঁতে পার্ক ঘিরে দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর-চুকনগর সড়কের পিচের অংশ বাদে দুই সাইডে যতটুকু জায়গায় মাটি ভরাট করা আছে তার পুরোটাই সওজের। সেই জায়গায় পার্ক করার সুযোগ নেই। পার্কের জন্য পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি।

ভেঙে পড়েছে পার্কের প্রাচীরের কংক্রিটের পিলার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেঙে পড়েছে পার্কের প্রাচীরের কংক্রিটের পিলার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের জায়গায় পার্ক গড়তে পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সওজের জায়গায় পার্ক করার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মনিরামপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ‘আমাদের পৌরসভায় পার্ক করার মতো জায়গা নেই। মোহনপুর বটতলা মোড়ে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেখানে যাত্রীরা বসে বিশ্রাম নেবেন। এ ছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকে ওই পথ দিয়ে মনিরামপুরে আসেন। এ জন্য জায়গাটার শোভা বাড়াতে মিনি পার্ক করা হয়েছে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘সওজ যদি মনে করে কখনো রাস্তা বাড়াবে, তখন সেটা দেখা যাবে। জায়গাটি পড়ে ছিল। আমরা সেটাকে দখলমুক্ত রাখতে পার্ক গড়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, আটক ১০

কর্ণফুলী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার মইজ্জ্যেরটেক এলাকায় সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযানে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার।

আবু সাঈদ জানান, রোববার সকাল থেকে সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এই ঘটনার জের ধরে অটোরিকশাচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। চালকদের এলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইমতিয়াজসহ দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলরা আহত হন। পরে থানা-পুলিশের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করা হয় এবং ১০ হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি সহায়তা নয়, গণচাঁদাতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার করবে উদীচী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে এবং গণচাঁদা সংগ্রহ করে সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কার্যালয় সংস্কারের জন্য তারা সরকার বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবে না।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদীচী কখনোই সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গণচাঁদাই সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়টিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদীচীর দেশ-বিদেশের হাজারো শিল্পী ও কর্মী তাদের পরিশ্রমের উপার্জনের টাকা দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।

বিবৃতিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, উদীচীর নাম করে অন্য কেউ যদি আর্থিক সহায়তা চায় এবং এর ফলে কেউ প্রতারিত হন, তবে তার দায়ভার কেন্দ্রীয় সংসদ নেবে না।

উদীচী নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলার পর থেকেই উদীচীর ওপর হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা প্রশাসন নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মৌলবাদী অপশক্তি বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সংগঠনের ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দুষ্প্রাপ্য বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলা ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচীর এখন একটাই প্রত্যাশা—এই ন্যক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিচারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ চায়, এ দেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যে ত্যাগের ইতিহাস, তা কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে দেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় উদীচী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ করপোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫১
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা করপোরাল মাসুদ রানাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত বীর সেনানীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ রানার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার তাঁর গ্রামের বাড়ি-সংলগ্ন উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে মাসুদ রানাসহ শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহীদ মাসুদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকার লোকজন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে শহীদ মাসুদ রানার মরদেহ আনা হবে তাঁর নিজ গ্রামে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

মাসুদ রানা উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে। ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাসুদ রানার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম এবং ছোট ভাই রনি আলমও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য।

স্বজনেরা জানান, গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান মাসুদ রানা। মিশন শুরুর মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় তিনি শহীদ হন। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও কফিনে মুড়িয়ে ফিরছেন এই বীর।

নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, ‘শহীদ মাসুদের দাফন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ওই হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। তাদেরই একজন নাটোরের লালপুরের কৃতী সন্তান করপোরাল মাসুদ রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনা-৩: স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুলের

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৮
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর–ভাঙ্গুড়া–ফরিদপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মতবিনিময় সভায় চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুলের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুত্তালিব প্রামানিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস আলো মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজির সরকার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলজার হোসেন প্রমুখ।

এ ছাড়া ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলামকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

কে এম আনোরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দুবার এমপি এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন জনগণ চাইছে আমি নির্বাচনে অংশ নিই। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। সাধারণ জনগণ বহিরাগত কোনো প্রার্থী চায় না। নির্বাচনী অনুকূল পরিবেশ থাকলে আমার জয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ। আমার শেষনিশ্বাস পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’

চাটমোহর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পাবনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এর আগে কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত