Ajker Patrika

যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

জাহিদ হাসান, যশোর
যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

দেশের অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে শিক্ষকতা করছেন হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীর। হামিদুল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর শাহজাহান ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার গণ্ডির বাইরে তরুণ এই দুই শিক্ষক নিজ গুণে হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন।

হামিদুল হক শাহীন ১৯৯৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণি ও সম্মিলিত মেধাতালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান স্নাতক (প্রথম শ্রেণি) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করেন। এমএ ইন এডুকেশন উইথ মেরিট (ইউনিভার্সিটি অন নটিংহ্যাম, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস); বাংলাদেশ ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারে (বিডিপিসি) ট্রেনিং অফিসার হিসেবে যোগদান; এরপর গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার পর ৩১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

তরুণ এই শিক্ষক ২০১৩ সালে যশোর এমএম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। যে সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন, হামিদুল হক শাহীনের সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার কারণে আবারও ক্লাসমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষকের ভাষ্য, ‘একজন শিক্ষকের কাজ যতটুকু না পড়ানো, তার চেয়ে বেশি হলো কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানো। যতটা না পিটিয়ে মানুষ করা, তার চেয়ে মানুষ কীভাবে হতে হয় সেই মূল্যবোধ জাগ্রত করা। পাঠদান প্রক্রিয়াকে আনন্দদান করে তুলতে পারা। পাঠদানকে গল্পের ভেতরে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো। আর এই তিনটা শিখন প্রক্রিয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।

শ্রেণিকক্ষে একাডেমিক পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান হামিদুল হক শাহীন। শুধু শ্রেণিকক্ষে অনুপ্রেরণা নয়, তাঁর কল্যাণে তরুণেরা গড়ে তুলেছেন ‘আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংস্থার মাধ্যমে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তাঁরা। তাতে নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নেও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হামিদুল হক শাহীন শিক্ষকতা জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কিছু করার অনুমতি পাননি। পরে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ২০১৩ সালে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইডিয়া নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গত এক দশকে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মধ্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া রোজার মাসে তাঁরা শীতল পানি সরবরাহ, মসজিদে অজুখানা বানিয়ে দেওয়াসহ নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ করেন।

হামিদুল হক শাহিনের বিনামূল্যে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস। ছবি: সংগৃহীতএ ছাড়া প্রতি শুক্রবার অসহায় ভবঘুরেদের জন্য মিডডে মিলের ব্যবস্থা করছেন। প্রকল্পটি সম্প্রতি এই কাজের শততম পর্ব পার করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পিঠার কারখানা স্থাপন ও কাজের জন্য শিক্ষক শাহীন যশোর শহরের খড়কী শাহ আব্দুল করিম রোডে নিজের একটি জায়গা (৫ দশমিক ৮ শতাংশ) ছেলেমেয়েদের দিয়ে দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর ওই বাড়িতেই পিঠা পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। পিঠা পার্কে পাটিসাপটা, পাকান, পুলি, ভাপা, চিতইসহ দেশীয় দেড় শতাধিক রকমের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, পিঠা পার্ক থেকে অর্জিত লভ্যাংশ শুধু সদস্যরাই নেন না, এর একটা অংশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা, বিসিএস শিক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নামমাত্র টাকা নেওয়া হয়, সেটাও নেন না হামিদুল। এসব টাকা ব্যয় করা হয় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে।

মল্লিকা আফরোজ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক শিক্ষাই দেন না, কর্মমুখী শিক্ষাও দেন।’

হামিদুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার শিক্ষকেরাই জুগিয়েছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন কয়েকজন শিক্ষককে আমি পেয়েছি, যাঁরা আমাকে সব সময় সমৃদ্ধির পথে, ভালো একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহী করেছেন। সেসব শিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই আমি আজ শিক্ষক। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বাস করি বলেই পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিই।’

অপর শিক্ষক শাহজাহান কবীর ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস থেকে মাস্টার্স ইন এডুকেশন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের তিনি আনন্দ দেন সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঠদানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করতে তিনি বিভিন্ন কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। ইতিহাস বিষয়টি সবার কাছে পৌঁছে দিতে কলেজে গড়ে তুলেছেন ‘ইতিহাস ক্লাব’। গ্রুপভিত্তিক গল্পের মধ্য দিয়ে পাঠদানকে শিক্ষার্থীদের উপভোগ করান তিনি।

শাহজাহান কবীরের পাঠচক্র। ছবি: সংগৃহীততথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশমান এই যুগে বই পড়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে কমে আসছে। কিশোর ও তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা ও পাসনির্ভর হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন কোনো বই পড়ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে শাহজাহান শিক্ষকতার পাশাপাশি বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নিজ কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই সংগঠনের সদস্য।

‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ কার্যক্রমের সদস্যরা নিজেরা বই পড়ার পাশাপাশি মূলত এখানে নিখাদ বন্ধুত্ব, নির্মল আনন্দ, সৌন্দর্য সৃজনের চর্চা করে থাকেন। এ ছাড়া নিজেদের পাশাপাশি অন্যকে বই পড়ানোর জন্য ‘বইয়ের বন্ধু’ নামে ‘ফ্রি বুক হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ চালু করেছেন শাহজাহান। নিয়মিত পাঠচক্রে বই আলোচনার পাশাপাশি থাকে গান, কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত সবাই পাঠচক্রে পূর্বনির্ধারিত বইয়ের ওপর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পান। কোনো কোনো বইয়ের জন্য প্রধান আলোচকও রাখা হয়। বইটির ওপর বিশদ আলোচনার পাশাপাশি প্রধান আলোচক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

পাঠচক্রের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন, জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী উদ্‌যাপনের মতো নানা আয়োজন করে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’। প্রতি আসরে চা-নাশতার ব্যবস্থা রাখা হয়। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। চাকরির বেতনের টাকা বাঁচিয়েই বই কেনা ও নাশতার খরচ জোগান শাহজাহান কবীর। সদস্যরা এক বছরে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বই থেকে নির্বাচিত ৪৮ থেকে ৫২টি বই পড়ার সুযোগ পান। শুরু থেকেই পাঠচক্রের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন শাহজাহান কবীর।

পারিবারিকভাবে শিক্ষক পরিবারে বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণাতেই তিনি শিক্ষক পেশায় এসেছেন। ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। পাঠচক্রটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার একটি সুস্থ-সুন্দর পাঠকসমাজ গড়ে তোলা। একটা সুস্থ, মানবিক ও মননশীল সমাজ গঠনের জন্য বই পড়ার অভ্যাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গনেও সমান পরিচিত এই দুই শিক্ষক। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগানোর সব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন তাঁরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁদের কথা শোনেন।

এই দুই গুণী শিক্ষকের বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীরের কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত। তাঁরা দুজনই শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় তাদের কর্মপরিধির কারণে। তাঁরা দুজনই শিক্ষকদের মডেল।

এ বিষয়ে যশোরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পাঠক কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে শাহজাহান কবীর মানুষকে বই পড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্লাসেও পড়ার বাইরে নতুন নতুন বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে হামিদুল হক ছেলেমেয়েদের আত্মনির্ভর করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাঁরা আধুনিক শিক্ষকদের মডেল। তাঁরা কোচিংয়ের দিকে অগ্রসর হননি। তাঁরা মানুষকে আলোকিত করা, ভালো পথের দিশা দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন। তাঁরা অর্থের পেছনে ঘোরেন না। তাঁদের কারণে শিক্ষার্থীরা আলোকিত হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকের ঘরে ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ, আটক

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দিনাজপুরের বিরামপুরে গাঁজার গাছসহ আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের বিরামপুরে গাঁজার গাছসহ আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ১২ ফুট উচ্চতার একটি গাঁজার গাছসহ এক কৃষককে আটক করেছে পুলিশ। পরে আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বিরামপুর থানার জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক (এসআই) সাজিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জোতবাণী ইউনিয়নের চাকুল গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মৃত দছির উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমানের (৪৫) বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে গাঁজার গাছটি জব্দ করা হয়।

পরে আজিজার রহমানকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, গাছটির উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট, ওজন ১০ কেজি এবং আনুমানিক মূল্য এক লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। আজ আসামিকে দিনাজপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জেলে

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহরে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে চাটমোহর থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ও রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা (৭০) এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর সদরের মধ্য শালিখা মহল্লার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন (৫৪)।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বামনগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নবীর উদ্দিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া একই দিন রাতে মধ্য শালিখা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনের বিরুদ্ধে চাটমোহর থানায় বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। আজ সকালে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামেকে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ভর্তি রাখার প্রয়োজন থাকলেও সেটি সম্ভব হতো না। কিছু কিছু রোগী রাখা হতো মেডিসিন বিভাগেই।

এবার প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। এ ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যা আছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য সাতটি, শিশু-কিশোরদের জন্য পাঁচটি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য তিনটি শয্যা সংরক্ষিত। এ ছাড়া রোগীদের থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা হয়েছে এ ওয়ার্ডে।

রামেক হাসপাতালের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদের উদ্যোগে হাসপাতালের পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই ওয়ার্ড করা হয়েছে। গত বুধবার তিনি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। তারা মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমবে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের অ্যাক্রেডিটেশনেও সমস্যা হতে পারে। তখন এ কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ কমবে। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এই ওয়ার্ডটি জরুরি ছিল।

তাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ড চালু করার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। সবকিছু শুনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন। ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটিই অবাক করার বিষয়। প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও চিকিৎসা নিতে পারবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। এরপর তিনি হাসপাতাল ও রোগীদের কল্যাণে নতুন অনেক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। হাসপাতালকে করে তুলেছেন রোগীবান্ধব। বাড়িয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান। বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

মানসিক রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড চালুর আগে গেল ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেন শামীম আহাম্মদ। এরপর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে একজন সাপে কাটা রোগীরও মৃত্যু হয়নি। আগে প্রায় প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হতো এ হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মান্নাকে ৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২০
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, বগুড়া শাখা। গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করা হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। নোটিশে বলা হয়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি তিনি।

গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শাখাপ্রধান তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশে আরও বলা হয়, ‘মঞ্জুরিপত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ডিলে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আপনাকে/আপনাদেরকে মৌখিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও মোবাইল ফোনে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপনি/আপনারা তা পরিশোধ করেননি। ইতিপূর্বে আপনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, তবুও বিনিয়োগের দায় পরিশোধ করেননি। আপনার/আপনাদের লেনদেনের পরিস্থিতি দেখে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে যে, আপনার/আপনাদের সঙ্গে আমাদের আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতএব, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের সমুদয় দায় ৩৮৪.৭৬ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করে হিসাবসমূহ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে।’

এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) তৃতীয় অধ্যায় (নির্বাচন) ১২(১)(ঠ) ধারা অনুসারে কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে, এটা সঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত