Ajker Patrika

এসি-ফ্রিজ লাগিয়ে আশ্রয়ণের ৬ ঘরে বিলাসী জীবন

­যশোর প্রতিনিধি
মনিরামপুরের মধুপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে জমির দলিল হাতে আলতাফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মনিরামপুরের মধুপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে জমির দলিল হাতে আলতাফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভূমিহীন পরিচয়ে একজন বাগিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘর। আরেকজন বাগিয়েছেন চারটি। আবার কেউ কেউ ঘর নিলেও থাকেন না সেখানে। এর মধ্যে একজন তো ঘটিয়েছেন অবাক কাণ্ড! নিজ কব্জায় রাখা ৬টি ঘরের তিনটিতে লাগিয়েছেন এসি। মেঝেতে করেছেন টাইলস। তাঁর দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে করছেন বিলাসী জীবনযাপন। ভূমিহীনদের ঘর বিতরণে এমন নজিরবিহীন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে যশোরের মনিরামপুরের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে। অথচ গ্রামটিতে অনেকেই রয়েছেন গৃহহীন-ভূমিহীন।

জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে, সত্যতা পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২২টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাদা রঙের ঘরগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর। দুই বছর আগে গোলাপি রঙের ঘরগুলোর বারান্দা ঘেরা হয়েছে গ্রিল দিয়ে, মেঝে মোড়ানো হয়েছে টাইলসে, তিনটি ঘরে লাগানো হয়েছে দেড় টনের তিনটি এসি। ঘরে রয়েছে মূল্যবান আসবাবপত্র, টেলিভিশন ও ফ্রিজ। এমনকি উঠানটিও করা হয়েছে পাকা ঢালাই।

দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকাসহ ১২ সদস্যে নিয়ে এই ৬ ঘরে বসবাস করছেন আলতাফ হোসেন। অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন। কথিত ভূমিহীন এ পরিবারে বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে।

আলতাফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে জমিতে এই এই আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হয়েছে, সেই জমিতেই ২০০৮ সাল থেকে এই জমিতে দুই স্ত্রীসহ ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনি দুটি বাড়ি বানিয়ে থাকছিলেন। হঠাৎ ২০২১ সালে সরকার যখন উদ্যোগ নিল গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণের। তখন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই জমিতে এসে বলেন, এই খাস জমিতে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করা হবে। আমাকে এই বাড়ি ভাঙার নির্দেশনা দেন। তখন আমাকে ইউএনও স্যার বলেন আপনার যতগুলো পরিবার ততগুলো ঘর দেওয়া হবে। ইউএনও স্যার আমাকে ৬টি ঘরই দিয়েছে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি।’

মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে ২২টি ঘরের আশ্রয়ণ প্রকল্প। ছবি: আজকের পত্রিকা
মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে ২২টি ঘরের আশ্রয়ণ প্রকল্প। ছবি: আজকের পত্রিকা

দাবি প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবেই তারা ঘর পেয়েছেন; স্বচ্ছতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন মাত্র দাবি করে বলেন, ‘আমরা দুই ছেলে ঢাকাতে চাকরি করেন। তারাই আমার ঘরগুলো সংস্কার করেছে। ঘরে টাইলস, ফ্রিজ, এসি লাগিয়েছে। এটা তো দোষের কিছু না।’

আলতাফের মতো স্থানীয় হরিহর নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের আত্মীয় এজাজুল হক মধুও বাগিয়েছেন চারটি ঘর। এজাজুল চারটি ঘর নিলেও থাকেন না একটিতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধা কিলোমিটার দূরে তার নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, চারটি ঘরের মধ্যে একটি ঘরে মাঝে মধ্যে আসেন তিনি। বাকিগুলো তালাবদ্ধ থাকে। জমির দলির ও বাড়ির কাগজপত্র বুঝিয়ে নিয়ে তাঁরা থাকেন অন্যত্র।

বিষয়টি স্বীকারও করেছেন এজাজুলও। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মাঝে মধ্যে থাকি। বাকি তিনটির মধ্যে একটি মেয়ে, ভাগনি ও ভাইপোকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কেউ থাকেন না এখানে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময়ে প্রভাব খাঁটিয়ে যে যার মতো ঘর বাগিয়ে নিয়েছে। ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তারা কারও কথা শোনেনি। তাঁরা যথেচ্ছাচার করেছেন।

হরিহরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পূর্বের চেয়ারম্যান এই ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অনিয়ম করেছেন। তাঁরা স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন।’

আশ্রয়ণের ঘরে এসি লাগিয়েছেন আলতাফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আশ্রয়ণের ঘরে এসি লাগিয়েছেন আলতাফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে, সত্যতা পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বরাদ্দ দেওয়া দুই শতক জমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণের প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। একটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

এলাকায় অনেকেই গৃহহীন-ভূমিহীন
মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এমন নজিরবিহীন অনিয়ম ঘটলেও এলাকায় রয়েছে ভিন্ন চিত্র। দেড় কিলোমিটার দূরে খাটুয়া গ্রাম। এই গ্রামের চার সদস্যে নিয়ে ডলি খাতুনের সংসার। তবে তাঁর একটুকু জমি নেই। পরের জায়গায় টিনের ছাউনি আর মাটির দেয়ালের দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘরেই বসবাস করেন তিনি। সেটিও ভঙ্গুর দশা। মাটির দেয়ালও পড়েছে ভেঙে। স্বামী সন্তান, শাশুড়ির মতো নিজেও প্রতিবন্ধী। তারপরেও ঘুরেছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে, তবুও মেলেনি একটি ঘর।

কাঁদো গলায় ডলি খাতুন বলেন, ‘আমরা সবাই অসহায়। সবাই প্রতিবন্ধী। লোকজন আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করলে খেয়ে পরে বেঁচে থাকি। সবাই প্রতিবন্ধী, তেমন কোনো কাজ পারে না। চার বছর বয়সী ছেলেটাও প্রতিবন্ধী; তারে সব সময় কোলে রাখতে হয়। ফলে আমিও সেভাবে কাজ করতে পারি না। কেউ যদি আমাদের একটা ঘর দিত; তাহলে খুব উপকৃত হতাম।’

স্থানীয় মজিবর রহমান নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, ‘ইউনিয়নের মধুপুর ও খাটুরি গ্রাম মিলে একই ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের ভূমিহীনদের মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি ও বাড়ি দেওয়া কথা থাকলেও পায়নি অনেক ভূমিহীন পরিবার। নেতাদের প্রভাব খাঁটিয়ে যে যা পেরেছে; তাই করেছে। অথচ প্রতিবন্ধী ডলি খাতুন, গৃহহীন মফিজুররা ঘর পায়নি। পেয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর লোকজন বা নেতাদের আত্মীয়স্বজনরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত