Ajker Patrika

বিআরটি লেনের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বাস সার্ভিস চালু

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটি লেনের বাস সার্ভিস উদ্বোধন করছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটি লেনের বাস সার্ভিস উদ্বোধন করছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জন ভোগান্তিতে কমাতে বহুল প্রত্যাশিত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না করে এবং কাজ অসমাপ্ত রেখে বাস চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম এই লেন নির্মাণকাজ শুরুর এক যুগ পর আজ রোববার সকালে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে উপস্থিত হয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাস চলাচল সেবার উদ্বোধন করেন। বিআরটির এই বিশেষ লেনে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে।

এদিকে বিআরটি প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ২৭ মার্চ গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন অভিযোগ ও অসংগতি তুলে ধরেন। সমস্যা সমাধান না করে বিআরটি প্রকল্প চালু করায় এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বক্তব্যের সময় প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটির কাজ শুরুর পরে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এটি একটি রুগ্ণ প্রকল্প সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। অনেকবার সময় বাড়ানো হয়েছে, এরপরও কাজ শেষ করতে পারেনি। এই প্রকল্প মানুষের কোনো উপকারে আসছিল না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটি লেনে ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ সার্ভিস চলার সময়ে যে সব সমস্যা দেখা যাবে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাধান করা হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক। বক্তব্য দেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ইব্রাহিম খানসহ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ইতিপূর্বে বিআরটি প্রকল্প নিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয় সেসব কবে নাগাদ সমাধান করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি গণশুনানির বিষয় নিয়ে কিছুই জানি না।’ পরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে গণশুনানির বিষয়ে অবগত হয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো দেখব। গণ শুনানিতে যেসব সমস্যা উঠে এসেছিল সেগুলো দেখে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী জুনে এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

উদ্বোধন হওয়া ব্যস্ততম মহাসড়কের দুপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক কীভাবে মহাসড়ক পারাপার হবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করায় মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিমান বন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা অংশে ১০টি নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটি লেনে বিশেষ বাস আমদানির জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেগুলো এলে আরও বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে।’

ফাওজুল কবির খান বলেন, ভবিষ্যতে বিআরটি লেনের বাস এবং জয়দেবপুর থেকে ঢাকা রুটের ট্রেন চট্টগ্রামের মতো ইলেকট্রিক লাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করব। বর্তমানে বাসগুলো শিববাড়ী থেকে বিআরটি লেন দিয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত যাবে। তারপর বাসগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ফার্মগেট নেমে সেখান থেকে বিভিন্ন বাসের ন্যায় এসব বাস গুলিস্তান পর্যন্ত যাতায়াত করবে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১০ এসি বাস চালু করেছি। প্রয়োজনে বা চাহিদা বাড়লে আরও বাড়ানো হবে। বিআরটিসির এসি বাসগুলো শিববাড়ী টার্মিনাল থেকে বিআরটি লেনে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথে চলাচল করবে। শিববাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১৪০ টাকা। তারমধ্যে শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়াও ৭০ টাকা। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে চার জোড়া কমিউটার ট্রেনও চালু করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিআরটি লেন দিয়ে শুধু বাসই চলাচল করার কথা। কিন্তু শুরুতে বিআরটিসির ১০টি বাস দিয়ে পুরো বিআরটি লেন আটকে রাখা ঠিক হবে না। এ জন্য ব্যক্তিগত গড়ি ও মাইক্রোবাস বিআরটি লেন দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে। এর ফলে সাধারণ লেনগুলোতে চাপ কমে যাবে।

বিআরটি প্রকল্পের ব্যয় ও ঠিকাদার

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের চারটি বিভাগ। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এডিবি, এএফডি ও ডিইএফ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চায়না গেজহুবা গ্রুপ, জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ।

প্রকল্পে সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে বাড়ানো হয় প্রকল্প ব্যয়, বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটিসির বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটিসির বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বাস সেবা চালু হয়েছে কিন্তু নির্মাণ করা ২০টা স্টেশনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এখনো স্থাপন করা হয়নি। ১০ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সড়ক বিভাজক, পদচারী-সেতু নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার বাস চলাচলের ফাঁকে ফাঁকে বাকি কাজ শেষ করতে চায়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণশুনানি

গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এলাকাবাসী বলেন, প্রকল্পের শুরুতে কথা ছিল মহাসড়কের দুই পাশের হকারদের জন্য ১০টি হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হবে, দুই পাশে ড্রেনের পানি অপসারণের জন্য মহাসড়কের দুই পাশের পাঁচটি খাল খনন করা হবে। কিন্তু এর কিছুই করা হয়নি। ভোগড়া এলাকার ফ্লাইওভারের উচ্চতা কম থাকায়, পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হবে। ড্রেন অত্যন্ত সরু হওয়ায় মহাসড়কের পানি অপসারিত হবে না। বিআরটি স্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য ৭২ ফুট উঁচু সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, ফলে বয়স্ক মানুষ, মহিলা ও শিশুরা এই সিঁড়ি অতিক্রম করে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়বেন। আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ১০০ ফুট চওড়া মহাসড়ক ছিল। অথচ অনেক স্থানে বিআরটি সড়কের বাইরে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার যানবাহন চলাচলের মহাসড়ক অত্যন্ত সরু হয়ে পড়েছে।

প্রকল্পটির চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের কোথাও এক ইঞ্চিও ফুটপাত রাখা হয়নি। এমনকি এই দীর্ঘ পথের কোথাও কোনো ইউ টার্ন নেই। দীর্ঘ মহাসড়কে বিআরটি লেনের বাইরে অনেক জায়গায় বিআরটি স্টেশনে যাত্রী আসা যাওয়ার জন্য ফুটপাত বন্ধ করে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ ছাড়া গাজীপুরের লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক পারাপারের জন্য কোনো ফুটওভার ব্রিজ অথবা একপাশের যানবাহন অন্যপাশে যাওয়ার জন্য কোনো ইউ টার্ন রাখা হয়নি। যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি অপ্রশস্ত হওয়ায় এবং এসব ড্রেনের পানি নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়নি বলে গণশুনানিতে উঠে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত