Ajker Patrika

শ্রীপুরে শিল্পায়নের আগ্রাসনে কমছে কৃষিজমি

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
শ্রীপুরে শিল্পায়নের আগ্রাসনে কমছে কৃষিজমি

গাজীপুরের শ্রীপুরে শিল্পায়নের আগ্রাসনে দিন দিন কমছে কৃষিজমি। রাতারাতি কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। শিল্পমালিকেরা সাধারণ কৃষকদের জমি উচ্চমূল্যে নিয়ে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। আবার কোনো কোনো শিল্পমালিক সুকৌশলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অসহায় কৃষকের ফসলি জমি। শিল্পায়নের ফলে প্রতিবছর কমছে কৃষি উৎপাদন। যত্রতত্র শিল্পায়নের ফলে বন্ধ হচ্ছে জলধারা তাতে করে পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মধ্যে কৃষিজমিতে বেশি শিল্পায়ন হয়েছে মাওনা, গাজীপুর ও তেলিহাটি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায়। এই তিনটি ইউনিয়ন ও পৌর এলায় গত কয়েক বছরে অর্ধশতাধিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। মাওনা ইউনিয়নের মাথারপাড়া গ্রামের লবলঙ্গ নদীঘেঁষা পাথারের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব জমিতে কৃষকেরা ধান, সরিষা, শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করতেন।

স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রথমে কিছু জমি উচ্চমূল্যে কিনে সীমানা প্রাচীর দিয়ে পাশের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করা হয়। পরে সাধারণ কৃষক শিল্পমালিকদের সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে সেই জলাবদ্ধ জমি কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ ছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণেও অনেক কৃষিজমি কৃষকের হাতছাড়া হয়। মাওনা গাজীপুর ইউনিয়ন পাথারে গড়ে তোলা হয়েছে মেঘনা ও ডিবিএল গ্রুপের বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গিলারচালা এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইকো কটন মিলস। এ ছাড়া মাওনা শ্রীপুর পৌরসভা এলাকায় নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি কারখানার সাইনবোর্ড না থাকায় তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মাওনা ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামে ডেকো নামক একটি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল করে বালু ভরাট করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে নোমান গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি জমির ওপর। তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি এলাকায় বিভিন্ন শিল্পমালিকের বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুর ইউনিয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের মালিকানাধীন একটি কারখানা কৃষিজমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দখলে নেওয়া হয়েছে লবলঙ্গ নদী।

ধনুয়া গ্রামের ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডেকো নামক পোশাক কারখানা রাতারাতি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে আমাদের ধানের জমি দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। পরে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সমাধান পাইনি। কিছু করতে না পেরে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে বসে আছি।’

ধনুয়া গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আলাল মিয়া বলেন, ‘শিল্পমালিকেরা প্রথমে অল্প জমি কেনে। এরপর সেখানে বিশাল সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এরপর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে জমি হাতিয়ে নেয়। এ রকম ভুক্তভোগী কৃষক শত শত, শুধু আমি একা নই।’

স্থানীয় সমাজকর্মী মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাতারাতি আমাদের চোখের সামনে সবুজ ফসলের মাঠে গড়ে উঠেছে ইট পাথরের উঁচু দালান। বিভিন্ন ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কৌশলে চালা জমি বানিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। দখল করা হচ্ছে জলাধার, ছোট ছোট খাল। তাতে দিন দিন কমছে ফসলি জমি। পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব।’

ইকো কটন মিলস লিমিটেডের দায়িত্বে থাকা মো. তাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জমি কেনার বিষয়ে আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না। আপনি হেড অফিসে যোগাযোগ করেন।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘লবলঙ্গ নদীর উৎপত্তিস্থল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম দখলে নিয়েছেন। এটা নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বর্না বলেন, কৃষি জমিতে শিল্পায়ন হওয়ার ফলে উপজেলায় প্রতিবছর কমছে কৃষি উৎপাদন। এটি বন্ধ না করতে পারলে শিল্পায়নের আগ্রাসনে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল মামুন বলেন, কৃষিজমি রক্ষায় শিল্পকারখানার নামজারির জন্য জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তারপর কনফার্ম করা হয়। এ বিষয়ে ইউনিয়ন তহসিল অফিসগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।

শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষিজমিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য শিল্পমালিকদের অনুমতিপত্র দেওয়া হয় না। কৃষিজমি রক্ষা করতে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বর্তমানে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০১৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিন ফসলি ও দুই ফসলি জমিতে শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, বাড়িঘরও করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কৃষিজমিতে গড়ে তোলা নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নয়ন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। আমরা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। কিছু কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ফাঁকি দিয়ে যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

  • বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
  • বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে গত বছরের আগস্টে আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করেন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দুটিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপি বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অপর দিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। ‘দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে’ কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন।’ পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন।’

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্য দলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে বলেন। তাঁরা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন।’

তবে বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’ আর বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যাঁরা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে, তাঁদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁরা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত: মেধাবী ছাত্রী আসফির বাঁচার আকুতি

খুলনা প্রতিনিধি
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি পিইসি পরীক্ষায় বৃত্তিসহ এ+ এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী গত চার বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।

চিকিৎসকের পরামর্শে এর আগে পরপর দুবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে এখনো শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আসফির পরিবার জানায়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে তারা চরম সংকটে পড়েছে। ভারতে গিয়ে পুনরায় চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় ‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি নিজের জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। সামান্য সহযোগিতাই হয়তো তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে এবং একটি সম্ভাবনাময় জীবন রক্ষা করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নকলায় ৭ অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সাতটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় ভাটামালিকদের মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ইটভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মালিকপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশের ক্ষতি রোধ ও সরকারি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত