Ajker Patrika

১০ টাকায় ইলিশ বিক্রির মাইকিং শুনে মানুষের হিড়িক, দ্রুত ফুরিয়ে গেলে ব্যবসায়ীকে ঘেরাও

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ৩২
ব্যবসায়ী মুফতি রায়হান জামিল। ছবি: সংগৃহীত
ব্যবসায়ী মুফতি রায়হান জামিল। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সদরপুরে দুস্থদের মধ্যে ১০ টাকায় একটি করে ইলিশ বিতরণের সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মাছ না পেয়ে হতদরিদ্র অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘেরাও করে রাখেন বিতরণকারীকে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

আজ বেলা ১১টার দিকে ওই স্কুলমাঠে উপজেলার ৬০০টি দুস্থ পরিবারের মাঝে নামমাত্র ১০ টাকায় প্রতি পিস ইলিশ বিতরণের আয়োজন করেন পার্শ্ববর্তী চরভদ্রাসন উপজেলার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মুফতি রায়হান জামিল।

বর্তমানে তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী দোলাইরপাড়ে একটি কোচিংয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ফ্ল্যাট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হতে চান বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

আয়োজক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০০ দুস্থ পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা মূল্যে প্রতি পিস ইলিশ বিতরণের জন্য চার মণ মাছের ব্যবস্থা করেন রায়হান জামিল। প্রতিটি মাছের ওজন ২৫০ গ্রামের মধ্যে। বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি পিস মাছের মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

বিতরণকারীকে ঘেরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিতরণকারীকে ঘেরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনার পর কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ১০ টাকায় ইলিশ বিক্রির বিষয়ে আগের দিন মাইকিং করা হয়। এমন খবরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা। তখনই লুটপাট শুরু হয়। এ সময় পদদলিত হয়ে আহত হন অন্তত ছয়জন।

একপর্যায়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন রায়হান জামিল। পরে তিনি পার্শ্ববর্তী ভাষণচর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় পৌঁছালে মাছ না পাওয়া ক্ষুব্ধ জনতা তাঁর গাড়ি ঘেরাও করেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় কোনোমতে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান।

ইলিশ নিতে আসা বৃদ্ধ জোহুরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ১০ টাকায় ইলিশ দেওয়ার খবর মাইকে শুনে সকালে স্কুলমাঠে আসি। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কিন্তু মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়।’

ইলিশ নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা নুরু শেখ বলেন, ‘মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ইলিশ দেওয়া হবে—এ খবর শুনে সকাল থেকে স্কুলমাঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু মাছের চেয়ে মানুষ বেশি। তাই মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হলো। এ সময় মানুষের ধাক্কাধাক্কি, মারামারি লেগে যায়। পরে দেখি এমপি প্রার্থী নিজেই পালিয়ে যাচ্ছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. টিটু ইসলাম বলেন, তিনি কত মানুষকে ইলিশ মাছ দেবেন, এর কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা দেননি। তবে তিনি ৬০০ পিস ইলিশ মাছ (সাড়ে চার মণ) দেওয়ার জন্য আনেন। কিন্তু মানুষের সংখ্যা ছিল কমপক্ষে দুই হাজার। মানুষ ইলিশ না পেয়ে হট্টগোল শুরু করেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি রায়হান জামিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁদের ইলিশ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বিপুল লোকের সমাগম ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং লুটপাট করে আয়োজন ভন্ডুল করে দেয়। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাকে দ্রুত সেখান থেকে সরে আসতে হয়।’

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, ‘আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম। আমাদের কোনো কথা না শুনে নিজের ইচ্ছেমতো এই ইলিশ বিতরণ কার্যক্রম চালান। পরে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত