Ajker Patrika

নবাবগঞ্জে টিএসপি সারের বিবর্ণ রং, দুশ্চিন্তায় কৃষক

 নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
নবাবগঞ্জে কৃষকের কেনা টিএসপি সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
নবাবগঞ্জে কৃষকের কেনা টিএসপি সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

চলতি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য কেনা টিএসপি সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার রামপুর বাজারে সরকারের অনুমোদিত ডিলার মণ্ডল ট্রেডার্স থেকে সার কিনে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া না পাওয়ারও অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিএসপি সার নিয়ে কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ডিলারের গুদাম পরিদর্শন করেছি, দিনাজপুর গুদামেও খোঁজ নিয়েছি, তাতে সেখানে ভেজাল সার বিক্রির বিষয়ে কোনো সত্যতা পাইনি।’ তবে সারের রং কালচে হলেও গুণগত মান অটুট রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার (১৪ জুলাই) ১২ জন ভুক্তভোগী কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আজ মঙ্গলবার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএনও মো. আশরাফুল হক। অভিযোগে বলা হয়, উপজেলা রামপুর বাজারে সরকার অনুমোদিত মণ্ডল ট্রেডার্সে টিএসপি সারের বস্তায় অন্য সার দিয়ে বিক্রয় করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে কথা বললে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জীবন মণ্ডল কৃষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও খারাপ আচরণ করছেন।

উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিএসপি সারের দানাগুলো সব ধূসর ও একই আকৃতির হয়। কিন্তু গতকাল সার কিনে বাসায় নিয়ে দেখি, কিছু দানা কালচে ও কিছু সাদা, আকৃতিও কতগুলো ছোট, আবার কতগুলো বড়। এই সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। এই সার ফসলে দিলে কোনো ক্ষতি আবার হয় কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছি। প্রতিকারের জন্য ইউএনও স্যারের নিকট আসছি।’

একই ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের পানচাষি মো. আক্তারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিলারের কাজ থেকে অন্যান্য সারের সঙ্গে দুই বস্তা টিএসপি (দেশীয় পতেঙ্গা) নিয়েছি সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে অতিরিক্ত দেড় শ টাকা বেশি দিয়ে। কিন্তু বাসায় নিয়ে দেখি, সারের রং বিবর্ণ হয়ে গেছে। এ নিয়ে ওই ডিলারের সঙ্গে কথা বললে উনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এর কোনো সমাধান হবে না বলে জানিয়ে দেন।’ সার নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পানের বরজ খুব স্পর্শকাতর ফসল। সেখানে এই সার ব্যবহারে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছি।’ একই অভিযোগ করেন চাকপাড়া গ্রামের হলুদচাষি মো. নুরে আলম মিয়া, খামারপাড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন কৃষক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল হক জানান, ভেজাল সারের বিষয়ে কয়েকজন কৃষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি কৃষি কর্মকর্তাকে ফরোয়ার্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘আসলে সারের রং বিবর্ণ হলেই যে নকল সার বা ভেজাল সার, তা বলা যাবে না। ভেজাল কি না, তা নিশ্চিত হতে গেলে সারের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়ে রিপোর্ট নিতে হবে। তবে সারের বর্ণনা শুনে মনে হয়েছে, সারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে।’ বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মণ্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জীবন মণ্ডল বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তাই ভেজাল সার বলতেছে, আমি ভেজাল সার কই পাব? যা গোডাউন থেকে আসে, তা-ই কৃষকদের দেই।’ সারের দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গুদাম থেকে সার নিয়ে বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, সেই জন্য আমিও কৃষকের কাছ থেকে নেই। এতে দোষের কিছু দেখি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত