Ajker Patrika

ধর্ষণবিরোধী মশাল মিছিলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি, গণমিছিলের ডাক

ঢাবি সংবাদদাতা
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ২২: ১৮
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশজুড়ে অব্যাহত নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলো। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করেছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর শাহবাগ থেকে এ মিছিল শুরু হয়। শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে যায় এ মিছিল। শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

মিছিলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মহিলা ফোরাম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ, বিসিএল ছাত্রলীগ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর ইত্যাদি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মিছিলে অংশ নেয়।

শহীদ মিনারের সমাবেশে ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদ, বিচার দাবি এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সরকারকে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান তারা। এ ইস্যুগুলোতে আগামী ১৫ মার্চ (শনিবার) বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে গণমিছিলের ডাক দেন তারা।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং গণজাগরণ মঞ্চের পরিচিত মুখ লাকি আক্তার বলেন, ‘দেশজুড়ে মানুষ ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে এ সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’

তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরসনের দাবিতে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১১টায় শাহবাগে গণমিছিল আয়োজন করা হবে।’ সাধারণ মানুষকে মিছিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহিন শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘অব্যাহত খুন ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা এ মশাল মিছিল করেছি। দুপুরে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশ নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চরিত্র পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ সরকার একদিকে মব উসকে দিচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মারছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক না হলে এবং ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলে আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই গণ আন্দোলন গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে জুলাইয়ের মতো গণ-আন্দোলনে নামুন। নিরাপত্তা দিতে না পারলে হাসিনার মতো এ সরকারকেও উৎখাত করুন।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাইহান উদ্দিন বলেন, ‘এ অথর্ব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কেবল মব তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো বিচার করতে পারেনি। আমরা নিপীড়কদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছি।’

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘সারা দেশে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। আজকে এ মশাল মিছিলে মশালের মধ্য দিয়ে আমরা যে আগুন জ্বালিয়েছি, নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তা প্রজ্বলিত থাকবে।’

মঙ্গলবার দুপুরে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থী সানাম খান বলেন, ‘বেআইনিভাবে আইনের রক্ষ করা আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুরুষ পুলিশ নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। আমাকে চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইন্টেরিম কি আসমান থেকে পতিত হয়েছে! আমাদের রক্তের ওপর বসা ইন্টেরিমকে কেন একটা স্মারকলিপি দেওয়া যাবে না? একটা কাগজকে কিসের এত ভয়? ক্ষমতায় বসলেই কেন সবার রূপ বদলে যায়! নিরাপত্তা দিতে না পারলে, দেশ চালাতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মহিলা ফোরামের নেত্রী রোকসানা আক্তার আশা বলেন, ‘যখনই কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তার ভুক্তভোগী হয় নারীরা। দেশে নারীদের নিরাপদে বসবাস করার অধিকার নেই। ইন্টেরিম ‘তৌহিদি জনতার’ কাছে মাথা নিচু করে রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের রক্তের ওপর ভর করে ক্ষমতায় এসেছে তাদের দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হয়তো দায়িত্ব পালন করুন নাহয় পদত্যাগ করুন।’

মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘নির্বাচিত সরকার, এই মুহূর্তে দরকার’; ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, ইন্টেরিম সরকার’; ‘বাঁশের লাঠি তৈরি কর, ধর্ষকদের ধোলাই কর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত