Ajker Patrika

রাজধানীর গণপরিবহন

বারবার রং বদলায়, সেবা মলিন

  • অনেক বাসের মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি যাত্রী পরিবহন।
  • সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া।
  • বারবার রং করে আবার রাস্তায় নামানো হচ্ছে ফিটনেসবিহীস বাস।
সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩: ০৫
বাসের হেডলাইট বিকল, চটে গেছে কাঠামোর রংও। তারপরও ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি দাপিয়ে চলছে রাজপথে। বাসের ভাঙাচোরা জানালায় অনেক সময় যাত্রীদের হাত কেটে ঘটে দুর্ঘটনাও। ভেঙে গেছে হেডলাইট, সব জানালায় নেই গ্লাসও। ছবিগুলো সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ওমর ফারুক
বাসের হেডলাইট বিকল, চটে গেছে কাঠামোর রংও। তারপরও ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি দাপিয়ে চলছে রাজপথে। বাসের ভাঙাচোরা জানালায় অনেক সময় যাত্রীদের হাত কেটে ঘটে দুর্ঘটনাও। ভেঙে গেছে হেডলাইট, সব জানালায় নেই গ্লাসও। ছবিগুলো সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ওমর ফারুক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী—এই বাস রুটের দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এই রুটে সব সময় স্থানভেদে যাত্রী থাকে। সকালে অফিস শুরুতে ও বিকেলে ছুটির পর এই রুটের বাসগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে।

গত ২৮ অক্টোবর মালিবাগ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত এই রুটে চলাচলকারী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন এই প্রতিবেদক। মালিবাগ মোড়ে ঢোকার আগের মোড়ে একটি বাস এসে দাঁড়ায়। এ সময় বেশ কিছু যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটির স্টিলের অবকাঠামোতে করা রং উঠে গেছে। পেছনের অংশে কোনো বাতি নেই। পেছনের দিকের ওপরের অংশে থাকা বাতির অংশ ভাঙা। হেডলাইটের অবস্থাও করুণ। নেই কোনো দিকনির্দেশক বাতি। চালকের পাশে একটি আয়না থাকলেও সেটির অর্ধেক ভাঙা।

বাসের ভেতরের অবস্থা আরও করুণ

তুরাগ পরিবহনের এই বাসের ভেতরে আয়তন প্রায় ২৫ ফুট। দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বাঁ পাশে তিনজনের বসার আসন। এক পাশে ইঞ্জিন বক্স এবং তার পাশেই চালকের আসন। চালকের মাথার ওপর ভাঙা ছোট একটা ফ্যান। সেটির কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। দুপাশে দুজন করে বসা যায় এমন আসন আছে ৪০টি। সিটগুলোর আয়তন খুবই ছোট। এই সিট নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। এই আসনে একজন মানুষ বসলে পা ঠিকমতো রাখা যায় না। আসনের কাপড়ের কভারগুলো তেল চিটচিটে হয়ে পড়েছে। দুপুরে যখন বাসটি মালিবাগ পার হয়, তখন যাত্রীভর্তি থাকলেও নতুন করে ওঠানোর জন্য মরিয়া হতে দেখা যায় চালক ও তাঁর সহকারীকে। হিসাব করে দেখা যায়, ১২ ফুট চওড়া আর ২৫ ফুট লম্বা বাসে যাত্রী প্রায় ৬০ জন।

বাসের সহকারী বললেন, ‘ভাই, আপনে দেখেন যাত্রী। আমরা দেখি টাকা। সামনে রামপুরা গেলেই বাস ফাঁকা হয়ে যাইবো। এক ট্রিপে হাজারের ওপরে জমা দিতে হয়। যাত্রী না হইলে আমি আর ওস্তাদের (চালক) টাকা আসবো না।’

বাসের যাত্রী ছায়েদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন তিনি প্রায় নিরুপায় হয়ে এই বাসে ওঠেন। সাদা জামা পরে এই বাসের আসনে বসলে সেটি আর সাদা থাকে না। বৃষ্টি এলে জানালার কাচ আটকানো যায় না।

মালিবাগ থেকে বাসটি ছাড়ার পর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় আসতে পাঁচ থেকে ছয় জায়গায় যাত্রী ওঠানো হয়। রামপুরা পর্যন্ত আসতে আরও পাঁচ জায়গায় বিরতি নেয় বাসটি। আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতেই পৃথক দুটি বাসের সঙ্গে কিছুটা ঘেঁষাঘেঁষিও হয় তুরাগ পরিবহনের বাসটির।

অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে বারবার রং করে এসব বাস পুনরায় রাস্তায় নামানো হচ্ছে। এসব বাস বন্ধে অভিযান পরিচালনা করলে রাজধানী গণপরিবহন শূন্য হয়ে পড়ে। সড়কসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব অভিযান নিয়ে তাঁদের অপারগতা স্বীকার করেছেন বারবার।

পরিবহন মালিক সমিতির হিসাবমতে, রাজধানীর ২৯০টির বেশি রুটে চলাচল করা প্রায় ৬ হাজার বাসের বেশির ভাগই রংচটা। অনেক বাসের মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি যাত্রী পরিবহন। এর মধ্যে সহস্রাধিক বাস ২০ বছরের পুরোনো।

চালক-সহকারীর অধিকাংশই ধূমপায়ী

রামপুরা ব্রিজের কাছে বাসের একটি চেকিং পয়েন্ট রয়েছে। একই দিন অছিম পরিবহনের একটি বাস এখানে এসে থামার পর চালকের সহকারী নেমে একটি সিগারেট কেনেন। এরপর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁকতে থাকেন। বাস চালু হলে সিগারেটটি চালককে দিয়ে দেন। আয়েশি ভঙ্গিতে চালক সিগারেট মুখে নিয়েই বাস আগাতে থাকেন।

লক্কড়ঝক্কড় বাসে ভরা ঢাকার গণপরিবহন

শুধু যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুট নয়, বরং ঢাকার সব কটি রুটেই যাত্রীসেবার নামে নৈরাজ্য চলছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে কেরানীগঞ্জ, নয়াবাজার-গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কাঁচপুর সেতুর ওপার পর্যন্ত রুটের বাসগুলোর বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন। রামপুরা থেকে গাজীপুরগামী অনাবিল, ছালছাবিল, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী রুটের তরঙ্গ পরিবহন, গাজীপুর থেকে গুলিস্তান রুটে বলাকা, গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতি বনশ্রী পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীতে চলাচলকারী রমজান পরিবহন, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী শিকড়, প্রজাপতি পরিবহনেরও একই অবস্থা। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলো থেকে আশপাশের জেলাগুলোতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের অধিকাংশই লক্কড়ঝক্কড়।

এদিকে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়েও এসব বাস থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাঙাচোরা বাস থাকলেও ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই; বরং সময়-সুযোগ বুঝেই আদায় করছে বাড়তি ভাড়া।

বিআরটিএর তথ্যে, দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি সার্ভিসের ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিকের মতে, তাঁদের কোম্পানির বাস নিয়ম অনুযায়ী বাসের টায়ার, ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক-সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে না। ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মীর মতে, মূল নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকার রাস্তায় ফিটনেস ও লক্কড়ঝক্কড় বাসের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ডিটিসিএর তথ্য বলছে, ঢাকার শাহবাগ, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, রামপুরা, ফার্মগেট, মিরপুর ও মতিঝিল দিয়ে চলাচলকারী ৪ হাজার ৬০৯টি বাসের মধ্যে ৩ হাজার ২৫০টিই অবৈধ। এদিকে ঢাকার বাসগুলোকে কোম্পানির আওতায় এনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কোম্পানি গঠন করার কাজ করছে ডিটিসিএ। এই প্রকল্পে ২০২১ সাল থেকে বাস চালু হলেও সেটি বেশি দূর এগোয়নি। প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, তাঁরা আবার ৪২টি রুট চালু করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে সভাও হচ্ছে।

কী বলছে মালিক সমিতি

বাসের এসব দুরবস্থার পরেও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম লোকাল সার্ভিসের দায় যাত্রীদের কাঁধেই দিলেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা সড়কে সিটিং, গেটলক সার্ভিস চান না। আর ঢাকার যাত্রীরা সর্বোচ্চ ৬-৭ কিলোমিটার দূরত্বে যাতায়াত করেন। তাঁরা লোকাল সার্ভিস রাখার পক্ষেই মত দেন।’

কোম্পানি করার মত বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারকে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। ঢাকা শহরে এই কোম্পানির বাইরে কোনো বাস চলতে পারবে না। এখন বেসরকারি যেসব বাস রয়েছে, তারা হয় এই কোম্পানির কাছে বাস দিয়ে অংশীজন হবে, নয়তো কোম্পানির কাছে বাস বিক্রি করে দেবে।

বিআরটিএর রোড সেফটি শাখার পরিচালক শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ঢাকার বায়ুমান উন্নত করতে সড়ক থেকে ২০ বছরের পুরোনো বাস তুলে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগ সম্মিলিতভাবে সক্রিয় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনায় অংশ নিতে ঢাকামুখী হয়েছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ অংশে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় এই যানজটের চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মদনপুর পর্যন্ত এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে রূপগঞ্জের তারাব পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন থেমে থেমে চলাচল করলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অনেক যানবাহন একই স্থানে দীর্ঘ সময় আটকে রয়েছে। এতে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

যানজটে আটকে পড়া রহমান রিপন বলেন, ‘মৌচাক থেকে মদনপুর যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। মাত্র ১০ মিনিটের পথ ৩০ মিনিটেও পাড়ি দিতে পারিনি।’

বিএনপির সমর্থক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমার নেতাকে একঝলক দেখার এবং তাঁর বক্তব্য শোনার আশায় কাজ রেখে পূর্বাচলের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু যানজটে আটকে আছি।’

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, মূলত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন ধীরে চলাচল করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গজারিয়ায় পুলিশের টহল গাড়িতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা, সার্জেন্টসহ আহত দুই

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় হাইওয়ে পুলিশ ও থানা-পুলিশের টহলরত দুটি গাড়িতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্টসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আহসান হাবিব ও কনস্টেবল নয়ন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালনকালে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা-পুলিশের দুটি টহল গাড়ি বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টহলরত গাড়ি দুটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে পুলিশের দুটি গাড়ি উল্টে যায় এবং দুজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে কাভার্ড ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কিছু সময়ের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়।

আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গজারিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল সিকদার বলেন, টহলরত দুটি গাড়ি মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিল। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান সজোরে ধাক্কা দিলে গাড়ি দুটি উল্টে যায়। এতে হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্ট ও এক কনস্টেবল আহত হন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শাহ কামাল আকন্দ বলেন, দুর্ঘটনার পর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন, ধানের শীষের প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি 
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত

সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আসনে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন।

এর আগে এই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরুজ্জামান লিটনের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর। একই সঙ্গে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নুরুজ্জামান লিটন নিজেও।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর বলেন, ‘দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি নুরুজ্জামান লিটনকে দেওয়া হয়েছে।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নুরুজ্জামান লিটনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এক মাস ধরে শার্শা উপজেলায় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন ও দলের প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধুর সমর্থকেরা একযোগে আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল রাজনীতিতে সক্রিয় ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা মফিকুল হাসান তৃপ্তির মনোনয়নের বিরোধিতা করেন।

শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে দল নুরুজ্জামান লিটনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়।

মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শার্শার গণমানুষের চাওয়ার কারণেই আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ায় দলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ একই সঙ্গে তিনি শার্শাবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নুরুজ্জামান লিটন বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করা এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় তাঁর রয়েছে। মনোনয়নের খবর পাওয়ার পর তিনি মফিকুল হাসান তৃপ্তির বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়েছেন বলেও জানান।

বর্তমানে নুরুজ্জামান লিটন ঢাকায় অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় অংশ নিতে। নির্বাচনী এলাকায় ফিরে তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানান।

এদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মফিকুল হাসান তৃপ্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান নিহত

রাজবাড়ী প্রতি‌নি‌ধি
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশায় চাঁদাবা‌জি করার সময় জনগ‌ণের পিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট নিহত হ‌য়েছেন। এ সময় দু‌টি অস্ত্রসহ তাঁর সহ‌যো‌গী সে‌লিম শেখ‌কে আটক ক‌রে পু‌লি‌শে দি‌য়েছে জনতা। বুধবার দিবাগত রাত পৌ‌নে ১১টার দি‌কে উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গা গ্রা‌মে এই ঘটনা ঘ‌টে। নিহত সম্রাট উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গার অক্ষয় মন্ড‌লের ছে‌লে। আটক সে‌লিম একই ইউনিয়‌নের বসাকু‌ষ্টিয়া গ্রা‌মের ইসলাম শে‌খের ছে‌লে।

সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরা‌ত দিয়ে পাংশা ম‌ডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, সম্রাট নিজের না‌মেই এক‌টি বা‌হিনী গড়ে তু‌লে মানুষ‌কে ভয়ভী‌তি দে‌খি‌য়ে চাঁদাবা‌জি কর‌তেন। দীর্ঘদিন ভার‌তে পা‌লি‌য়ে থাকার পর সম্প্রতি এলাকায়‌ ফি‌রে এসে এক‌টি বাড়িতে চাঁদা দা‌বি ক‌রেন। কিন্তু তারা চাঁদার টাকা দি‌তে অস্বীকৃতি জানা‌য়। গত রা‌তে সম্রাট তাঁর বা‌হিনীর সদস‌্যদের নি‌য়ে ওই বাড়িতে চাঁদার টাকা আন‌তে যান। এ সময় ওই বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত ব‌লে চিৎকার দি‌লে আশপা‌শের লোকজন এসে ধ‌রে তাঁকে গণ‌পিটু‌নি দেয়। এতে ঘটনাস্থ‌লেই তাঁর মৃত‌্যু হয়। এ সময় তাঁর অন‌্য সহ‌যো‌গীরা পালি‌য়ে গে‌লেও অস্ত্রসহ ধরা প‌ড়েন সে‌লিম না‌মের একজন।

ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম আরও জানান, সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সে‌লিম‌ের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করা হয়ে‌ছে। নিহত সম্রা‌টের না‌মে হত‌্যা, চাঁদাবা‌জিসহ একা‌ধিক মামলা র‌য়ে‌ছে। সম্রা‌টের মর‌দেহ ময়ন‌াতদন্তের জন‌্য ম‌র্গে পাঠা‌নোর প্রস্তু‌তি চল‌ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত