Ajker Patrika

রাজধানীর গণপরিবহন

বারবার রং বদলায়, সেবা মলিন

  • অনেক বাসের মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি যাত্রী পরিবহন।
  • সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া।
  • বারবার রং করে আবার রাস্তায় নামানো হচ্ছে ফিটনেসবিহীস বাস।
সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩: ০৫
বাসের হেডলাইট বিকল, চটে গেছে কাঠামোর রংও। তারপরও ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি দাপিয়ে চলছে রাজপথে। বাসের ভাঙাচোরা জানালায় অনেক সময় যাত্রীদের হাত কেটে ঘটে দুর্ঘটনাও। ভেঙে গেছে হেডলাইট, সব জানালায় নেই গ্লাসও। ছবিগুলো সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ওমর ফারুক
বাসের হেডলাইট বিকল, চটে গেছে কাঠামোর রংও। তারপরও ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি দাপিয়ে চলছে রাজপথে। বাসের ভাঙাচোরা জানালায় অনেক সময় যাত্রীদের হাত কেটে ঘটে দুর্ঘটনাও। ভেঙে গেছে হেডলাইট, সব জানালায় নেই গ্লাসও। ছবিগুলো সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ওমর ফারুক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী—এই বাস রুটের দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এই রুটে সব সময় স্থানভেদে যাত্রী থাকে। সকালে অফিস শুরুতে ও বিকেলে ছুটির পর এই রুটের বাসগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে।

গত ২৮ অক্টোবর মালিবাগ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত এই রুটে চলাচলকারী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন এই প্রতিবেদক। মালিবাগ মোড়ে ঢোকার আগের মোড়ে একটি বাস এসে দাঁড়ায়। এ সময় বেশ কিছু যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটির স্টিলের অবকাঠামোতে করা রং উঠে গেছে। পেছনের অংশে কোনো বাতি নেই। পেছনের দিকের ওপরের অংশে থাকা বাতির অংশ ভাঙা। হেডলাইটের অবস্থাও করুণ। নেই কোনো দিকনির্দেশক বাতি। চালকের পাশে একটি আয়না থাকলেও সেটির অর্ধেক ভাঙা।

বাসের ভেতরের অবস্থা আরও করুণ

তুরাগ পরিবহনের এই বাসের ভেতরে আয়তন প্রায় ২৫ ফুট। দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বাঁ পাশে তিনজনের বসার আসন। এক পাশে ইঞ্জিন বক্স এবং তার পাশেই চালকের আসন। চালকের মাথার ওপর ভাঙা ছোট একটা ফ্যান। সেটির কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। দুপাশে দুজন করে বসা যায় এমন আসন আছে ৪০টি। সিটগুলোর আয়তন খুবই ছোট। এই সিট নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। এই আসনে একজন মানুষ বসলে পা ঠিকমতো রাখা যায় না। আসনের কাপড়ের কভারগুলো তেল চিটচিটে হয়ে পড়েছে। দুপুরে যখন বাসটি মালিবাগ পার হয়, তখন যাত্রীভর্তি থাকলেও নতুন করে ওঠানোর জন্য মরিয়া হতে দেখা যায় চালক ও তাঁর সহকারীকে। হিসাব করে দেখা যায়, ১২ ফুট চওড়া আর ২৫ ফুট লম্বা বাসে যাত্রী প্রায় ৬০ জন।

বাসের সহকারী বললেন, ‘ভাই, আপনে দেখেন যাত্রী। আমরা দেখি টাকা। সামনে রামপুরা গেলেই বাস ফাঁকা হয়ে যাইবো। এক ট্রিপে হাজারের ওপরে জমা দিতে হয়। যাত্রী না হইলে আমি আর ওস্তাদের (চালক) টাকা আসবো না।’

বাসের যাত্রী ছায়েদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন তিনি প্রায় নিরুপায় হয়ে এই বাসে ওঠেন। সাদা জামা পরে এই বাসের আসনে বসলে সেটি আর সাদা থাকে না। বৃষ্টি এলে জানালার কাচ আটকানো যায় না।

মালিবাগ থেকে বাসটি ছাড়ার পর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় আসতে পাঁচ থেকে ছয় জায়গায় যাত্রী ওঠানো হয়। রামপুরা পর্যন্ত আসতে আরও পাঁচ জায়গায় বিরতি নেয় বাসটি। আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতেই পৃথক দুটি বাসের সঙ্গে কিছুটা ঘেঁষাঘেঁষিও হয় তুরাগ পরিবহনের বাসটির।

অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে বারবার রং করে এসব বাস পুনরায় রাস্তায় নামানো হচ্ছে। এসব বাস বন্ধে অভিযান পরিচালনা করলে রাজধানী গণপরিবহন শূন্য হয়ে পড়ে। সড়কসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব অভিযান নিয়ে তাঁদের অপারগতা স্বীকার করেছেন বারবার।

পরিবহন মালিক সমিতির হিসাবমতে, রাজধানীর ২৯০টির বেশি রুটে চলাচল করা প্রায় ৬ হাজার বাসের বেশির ভাগই রংচটা। অনেক বাসের মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি যাত্রী পরিবহন। এর মধ্যে সহস্রাধিক বাস ২০ বছরের পুরোনো।

চালক-সহকারীর অধিকাংশই ধূমপায়ী

রামপুরা ব্রিজের কাছে বাসের একটি চেকিং পয়েন্ট রয়েছে। একই দিন অছিম পরিবহনের একটি বাস এখানে এসে থামার পর চালকের সহকারী নেমে একটি সিগারেট কেনেন। এরপর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁকতে থাকেন। বাস চালু হলে সিগারেটটি চালককে দিয়ে দেন। আয়েশি ভঙ্গিতে চালক সিগারেট মুখে নিয়েই বাস আগাতে থাকেন।

লক্কড়ঝক্কড় বাসে ভরা ঢাকার গণপরিবহন

শুধু যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুট নয়, বরং ঢাকার সব কটি রুটেই যাত্রীসেবার নামে নৈরাজ্য চলছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে কেরানীগঞ্জ, নয়াবাজার-গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কাঁচপুর সেতুর ওপার পর্যন্ত রুটের বাসগুলোর বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন। রামপুরা থেকে গাজীপুরগামী অনাবিল, ছালছাবিল, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী রুটের তরঙ্গ পরিবহন, গাজীপুর থেকে গুলিস্তান রুটে বলাকা, গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতি বনশ্রী পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীতে চলাচলকারী রমজান পরিবহন, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী শিকড়, প্রজাপতি পরিবহনেরও একই অবস্থা। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলো থেকে আশপাশের জেলাগুলোতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের অধিকাংশই লক্কড়ঝক্কড়।

এদিকে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়েও এসব বাস থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাঙাচোরা বাস থাকলেও ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই; বরং সময়-সুযোগ বুঝেই আদায় করছে বাড়তি ভাড়া।

বিআরটিএর তথ্যে, দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি সার্ভিসের ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিকের মতে, তাঁদের কোম্পানির বাস নিয়ম অনুযায়ী বাসের টায়ার, ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক-সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে না। ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মীর মতে, মূল নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকার রাস্তায় ফিটনেস ও লক্কড়ঝক্কড় বাসের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ডিটিসিএর তথ্য বলছে, ঢাকার শাহবাগ, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, রামপুরা, ফার্মগেট, মিরপুর ও মতিঝিল দিয়ে চলাচলকারী ৪ হাজার ৬০৯টি বাসের মধ্যে ৩ হাজার ২৫০টিই অবৈধ। এদিকে ঢাকার বাসগুলোকে কোম্পানির আওতায় এনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কোম্পানি গঠন করার কাজ করছে ডিটিসিএ। এই প্রকল্পে ২০২১ সাল থেকে বাস চালু হলেও সেটি বেশি দূর এগোয়নি। প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, তাঁরা আবার ৪২টি রুট চালু করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে সভাও হচ্ছে।

কী বলছে মালিক সমিতি

বাসের এসব দুরবস্থার পরেও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম লোকাল সার্ভিসের দায় যাত্রীদের কাঁধেই দিলেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা সড়কে সিটিং, গেটলক সার্ভিস চান না। আর ঢাকার যাত্রীরা সর্বোচ্চ ৬-৭ কিলোমিটার দূরত্বে যাতায়াত করেন। তাঁরা লোকাল সার্ভিস রাখার পক্ষেই মত দেন।’

কোম্পানি করার মত বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারকে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। ঢাকা শহরে এই কোম্পানির বাইরে কোনো বাস চলতে পারবে না। এখন বেসরকারি যেসব বাস রয়েছে, তারা হয় এই কোম্পানির কাছে বাস দিয়ে অংশীজন হবে, নয়তো কোম্পানির কাছে বাস বিক্রি করে দেবে।

বিআরটিএর রোড সেফটি শাখার পরিচালক শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ঢাকার বায়ুমান উন্নত করতে সড়ক থেকে ২০ বছরের পুরোনো বাস তুলে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগ সম্মিলিতভাবে সক্রিয় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত