Ajker Patrika

‘আন্দোলনে গিয়ে গুলি খাইছি আমি এখন ঘরের বোঝা’

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ, (নারায়ণগঞ্জ)
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ৪৩
মো. নাদিম
মো. নাদিম

‘এখন হাত দিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। বর্তমানে আমার মেজ ভাইয়ের গার্মেন্টসে চাকরির ১২ হাজার টাকায় কোনো রকমে সংসার চলছে। এখন হাসপাতাল থেকে বাসায় আসি না। মা, ভাইবোনদের সঙ্গে কথাও বলি না। কীভাবে আসব? ঘরে কীভাবে মুখ দেখাব? আন্দোলনে গিয়ে গুলি খাইছি, আমি এখন ঘরের বোঝা।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়া ২০ বছর বয়সী অটোরিকশাচালক মো. নাদিম। জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই থেকে নাদিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। ২০ জুলাই বিজিবির গুলিতে আহত হন তিনি। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে মোট ৭টি গুলি লাগে।

ঝালকাঠির নলছিটি থানার মৃত খোকা হাওলাদারের ছেলে নাদিম। বাবার মৃত্যুর পর থেকে অভাবের সংসারের হাল ধরতে নিজের পড়াশোনাকে বিসর্জন দিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় ভাই ও দুই বোনের বিয়ে হওয়ায় তাঁরা আলাদা বাস করেন। মেজ ভাই আর নাদিম তাঁর মাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চান টাওয়ারের অন্য পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

২০ জুলাই ঘটনার বিবরণ দিয়ে নাদিম বলেন, ‘বিকেলে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য চিটাগাং রোডে যাচ্ছিলাম, তখন বিজিবি আমাদের উদ্দেশ্যে অতর্কিতে গুলি চালানো শুরু করে। আমি বাঁচার জন্য পালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল পর্যন্ত এসেছিলাম। বিজিবিও আমাদের গুলি করতে করতে পেছনে আসছিল। পুলের কবরস্থান মসজিদের সামনে আসার পরই আমি একের পর এক গুলি খাই। এরপর মাটিতে পড়ে যাই। মোট ৭টা গুলি আমার শরীরে লেগেছে।’

নাদিম বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতায় আমার চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছি না। আমার হাত দিয়ে কিছুই করতে পারি না, অচল হয়ে আছে।’

নাদিমের বড় বোন নাসরিন বলেন, ‘আমার ভাই গুলি খাওয়ার পর তার চিকিৎসার জন্য ওর রিকশা বিক্রি করি। এ ছাড়া ঋণ কইরা ওর চিকিৎসা করছি। এখন ঋণ টানতে কষ্ট হচ্ছে। আমার মায়ের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমার ভাইটাকে যেন উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। ওর ইনকাম ছাড়া আমার মায়ের সংসার চলবে না।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য কিছু খরচ দেওয়া হয়েছে। সে যদি না পায় তাহলে জেলা পরিষদে যেন যোগাযোগ করে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের বিষয়টি দেখছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামির জবানবন্দি: মাগুরার শিশুটির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধর্ষণ করা হয়

রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন একজন, কার কথা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে খাওয়ার খরচ চায় পুলিশ

ভারতে বসেছে বিশ্বের গোয়েন্দাপ্রধানদের আসর, কী হচ্ছে সেখানে

মামলা করতে যাওয়া নারীর কাছ থেকে টাকা ‘কেড়ে নিলেন’ এসআই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত