Ajker Patrika

১৭ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
১৭ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও কারাগারে থাকা আসামির আপিল শুনানি হয়নি। তবে দ্রুত শুনানি শুরুর আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। 

১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় বিচারিক ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। ওই রায়ে ১৯ জনকে ফাঁসি, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগারে থাকা আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য বিচারিক ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টে নথি পাঠান। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও শুনানি শুরু হয়নি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ হচ্ছিল। সমাবেশের প্রায় শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী আরও দুটি মামলা করেছিলেন। 

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই বিদেশি শক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। এর পর এই মামলার তদন্তে জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে নতুন নাটক সাজান তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু গণমাধ্যমে এই আষাঢ়ে গল্প ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে তখনকার চারদলীয় জোট সরকার। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।

ওই বছরই জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। এর পর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করে। আদালত মঞ্জুর করলে তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির নেতা তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

২১ আগস্টের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাই জনস্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হবে, এটাই আশা করেছিল সবাই। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা ইতিমধ্যে দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হয়েছে হাইকোর্টে।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে সময় লাগছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি একটি বড় মামলা এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই পেপারবুক যাচাই-বাছাই শেষ হলে চূড়ান্ত করে শুনানির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঘটনার ১৪ বছর পর নৃশংস গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা-কর্মীদের ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এই রায় দেন।

হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক দুই আইজি মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ায় দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় দুই বছর করে এবং কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় দণ্ডবিধির ২১৭ ধারায় আবার দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আবার অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক (খালেদা জিয়ার ভাগনে), লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মাওলানা তাজউদ্দীনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় এঁদের প্রত্যেককে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খানকেও অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার দায়ে দুই বছর এবং অপরাধীকে রক্ষার ব্যবস্থা করায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে এই দুজনকে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার প্রথম দিকের (বিএনপি আমলে) তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক আইজিপি খোদা বখ্শ চৌধুরী, সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে দণ্ডবিধির ২১৮ ধারায় (অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর অপরাধ) দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় (কারও মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে বাধ্য করা) তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই মামলায় তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ আসামি পলাতক ছিলেন রায়ের সময়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামি মো. ইকবাল গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন পলাতক রয়েছেন ১৭ আসামি। তাঁরা আপিল করার সুযোগ পাননি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন মো. হানিফ ও মাওলানা তাজউদ্দীন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, রাতুল বাবু, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক। এ ছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, এ টি এম আমিন, সাবেক ডিআইজি খান হাসান সাঈদ, সাবেক এসপি মো. ওবায়দুর রহমান পলাতক রয়েছেন। 

মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকি ৩২ আসামি কারাগারে ছিলেন। এঁদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ৩১ জনের পক্ষে করা আপিল ও ১৯ জনের ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে।

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন) এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুস সালাম, তাজউদ্দীন (উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিনেতা ইউসুফ ভাট ওরফে আবদুল মাজেদ ভাট (পাকিস্তানি), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার নেতা আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জি এম, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি (মুফতি হান্নানের ভাই), আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের (তাজউদ্দীনের ভায়রা), হুসাইন আহম্মেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। উভয় মামলাতেই এই ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, হুজি নেতা শাহাদত উল্লাহ জুয়েল, আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর হুমায়রা ওরফে পীর সাহেব, সাব্বির আহমেদ ওরফে হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার), মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, মো. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু ওরফে রাতুল (পিন্টুর ভাই)। দুই মামলাতেই এই ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অভিযোগের পাহাড় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থ কেলেঙ্কারি, প্রশাসনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দাস মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী তাঁর অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে।

একই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বানিয়াজুরী-ঘিওর সড়কের কলেজ গেটে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে শিক্ষকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অভিভাবকেরা আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, আর্থিক অনিয়ম, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি আদায় এবং প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতার অভাবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকার অনুমোদিত ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কোনো কাজেই ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭০০ টাকা অধ্যক্ষ নিজের নামে উত্তোলন করেছেন, যা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সরকারি পোশাকের জন্য ভাতার টাকা দীর্ঘ সময় আটকে রেখে পরে চাপের মুখে আংশিক টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট বিল, কম্পিউটার খরচ, ভূমি উন্নয়ন কর, রাসায়নিক দ্রব্য, আসবাব, ক্রীড়াসামগ্রীসহ মোট ২১টি খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি বরাদ্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জন শিক্ষক এসব অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, লাইব্রেরির বই কেনার জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বই না কেনা, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি ফি নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় না করে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা, সরকারি শিক্ষকদের এসিআর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখা, এসব অভিযোগও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস নিজেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে তদন্ত শুরু হতেই টানা তিন দিন প্রতিষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে রহস্যজনকভাবে কমিটি বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করেন, যা নিয়ে শিক্ষকেরা আরও সন্দিহান হয়ে পড়েন।

শিক্ষক মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, নীরব থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি মানসিকভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন এবং অভিযোগ করার পর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, যা মানহানিকর ও লজ্জাজনক ব্যাপার।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘আমি অনেক অভিযোগ সম্পর্কে জানি না, কোথাও ভুল হয়ে থাকতে পারে। আর অধিকাংশ অভিযোগ সত্য নয়। শাস্তিযোগ্য কিছু প্রমাণিত হলে তা মেনে নেব।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে, শিক্ষা বোর্ডেও অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যুবকের

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার একটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামির নাম দুলাল মিয়া (২৮)। তিনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক আশরাফুল আলম আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদ আহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়া আট বছরের ওই শিশুকে ঘর থেকে ডেকে নেন। এরপর তাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করেন দুলাল।

মাকছুদ আহাম্মদ জানান, এদিকে ওই রাতেই শিশুকে না পেয়ে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সে সময় সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচারও করা হয়। তখন দুলাল মিয়াও শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেন। পরদিন গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দুলাল মিয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় দুলাল মিয়ার আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আল সরকারের সঙ্গে কথা হয়। পরে বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। মামলার পরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে ঘটনাস্থলসংলগ্ন বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা শেষে ওই রাতেই দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও অভিযুক্তদের খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে চাটমোহর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামলার ১ নম্বর বিবাদী, ছাইকোলা ইউনিয়নের কুবড়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে কুবড়াগাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম (৬৫) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। এতে তিনি দগ্ধ হন। প্রথমে তাঁকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রহিমের ভাই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে প্রতিবেশী সাতজনকে বিবাদী করে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। মামলার ছয়জন জামিন পেলেও ১ নম্বর বিবাদী শফিকুল ইসলাম এখনো কারাগারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুমাইয়া খাতুন দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই সময়ে তাঁর স্বামী চাটমোহরে ছিলেন না। তাঁরা দুজনই সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীকে মামলার ১ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুলের পিতা শহিদ সরদারসহ আরও দুই ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সুমাইয়ার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী গ্রামে থাকেন না। আমরা তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারীতেই থাকি। প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। আমরা অন্যায়ের শিকার।’ তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি থাকায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার। তিন সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে শফিকুল ইসলামের পিতা শহিদ সরদার, তাঁর মা ও অন্যান্য স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত