Ajker Patrika

শ্রীপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার, মুক্তির দাবিতে পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৩
শ্রীপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার, মুক্তির দাবিতে পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকনকে অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে শ্রীপুর থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। 

এদিকে রাত সাড়ে ১১টা দিকে তাঁর গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাওনা ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোর কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা জাহাঙ্গীর আলম খোকনের মুক্তির দাবি জানিয়ে মাওনা ফ্লাইওভারের উত্তর পাশের এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ মোড় পর্যন্ত টায়ার জ্বালিয়ে, কাঠ ও বাঁশ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। তাতে মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। 

শ্রীপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া (মেডিকেল মোড়) এলাকায় ফরচুন ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উত্তর-পশ্চিম পাশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজে বাধা দেওয়াসহ ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীর আলম খোকনের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকালে চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকন, মো. বায়েজিদ, তাজউদ্দিনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জন সেখানে গিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ওই কারখানার ব্যবস্থাপক মো. জহিরুল ইসলামকে মারধর করেন তাঁরা। পরে প্রাইভেট কারযোগে তাঁকে তুলে নিয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। ঘটনা জেনে পুলিশ ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জহিরুলকে উদ্ধার করে। 

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকনের ছেলে মিজানুর রহমান রায়হান অভিযোগ করে বলেন, ফরচুন গ্রুপের নির্মাণাধীন একটি কারখানা এক অসহায় নারীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে নির্মাণকাজ করছিল। ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি সেখানে গিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ সাজিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। 

মিজানুর রহমান রায়হান বলেন, শ্রীপুর থানার ওসি চেয়ারম্যানকে ফোন করে থানায় চায়ের নিমন্ত্রণ দেন। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানায় গেলে তাঁকে বসিয়ে রেখে নানান কৌশলে সময়ক্ষেপণ করে মিথ্যা চাঁদাবাজি ও অপহরণের মামলা রুজু করেন। খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকেরা এসে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। সাড়ে চার ঘণ্টা পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে মহাসড়কের অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হয়। আগামীকাল দুপুরের মধ্যে চেয়ারম্যানের মুক্তি না মিললে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।

সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। 

শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ওই মামলায় জাহাঙ্গীর আলম খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। 

এদিকে জাহাঙ্গীর আলম খোকনকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাওনা ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা মাওনা ফ্লাইওভারের উত্তর পাশের এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ মোড় পর্যন্ত ও জৈনাবাজার এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে, কাঠ ও বাঁশ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তাতে মহাসড়কের উভয় পাশে ৬০ কিলোমিটারের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী, ব্যক্তিগত পরিবহনসহ হাজার হাজার গাড়ি। 

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. সাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১১টার পর থেকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলে ভোর ৫টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত ১২টার পর থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আমি মহাসড়ক থেকে দফায় দফায় অবরোধকারীদের সরাতে চেষ্টা করি। মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর ভোর ৫টার দিকে চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকেরা সড়ক থেকে চলে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

  • বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ।
  • তৃণমূলকে উপেক্ষা করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বলছেন বঞ্চিতদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াত।
মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট 
জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

জয়পুরহাটের দুটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর দলটির তীব্র অন্তঃকোন্দল সামনে আসে। দুই আসনেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সড়ক অবরোধ, রাস্তায় শুয়ে পড়া, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কিংবা মশাল মিছিল—কিছুই বাদ যায়নি। বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তৎপর এনসিপি ও এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

জয়পুরহাট-১ (জেলা সদর ও পাঁচবিবি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীম এবং কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মণ্ডলের অনুসারীরা। তাঁরা বলছেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী নির্ধারণ করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফয়সাল আলীম বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক আমার। অবহেলিত এ এলাকার উন্নয়ন এবং দলে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্যতা আমি রাখি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সব দিক বিশ্লেষণ করে দল আমাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মো. ফজলুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভোটের মাঠে আমাদের জন্য ইতিবাচক।’ এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া।

জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সচিব আবদুল বারী। তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা এবং সাবেক ছাত্রনেতা আব্বাস আলীর অনুসারীরা। আবদুল বারী বলেন, ‘সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার আগে-পরে এলাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। নির্বাচিত হলে কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে তুলব। কৃষিসংশ্লিষ্ট উপাদানের দাম সহনশীল রাখতে কাজ করব। এলাকা আলুপ্রধান। তাই আলুভিত্তিক চিপস ইন্ডাস্ট্রি করে তোলা হবে।’ প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিত গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘যাঁকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নাই। সাধারণ ভোটাররা তাঁকে অতিথি পাখি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি নেতা-কর্মীদের কোনো খোঁজ রাখেননি। এখন পর্যন্ত দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য। তৃণমূলের ৩ লাখ ৫১ হাজার নেতা-কর্মী ও ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। তাঁদের বিশ্বাস, জামায়াতে ইসলামীর দ্বারাই এর বাস্তবায়ন সম্ভব। নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন, মাদক, বৈষম্য ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য কাজ করব। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।’ এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব দেওয়ান কাজল। এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী এস এম জাহিদ সরকার। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আরও বলেন, কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার: বিএনপিএস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বসবাস করা ৫৫ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু প্রতিনিয়ত সুরক্ষা, শিক্ষা, পুষ্টি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

বিএনপিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে বসবাস করছে, যা বিশ্বে বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয়স্থলগুলোর একটি। এই জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশের বেশি নারী ও কন্যা।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আট বছরেরও বেশি সময়ে কক্সবাজারের প্রায় ৫ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের প্রভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা, মজুরি, বন ও জলসম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংহতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে। ফলে এটি শুধু শরণার্থী সংকট নয়; এটি মানবিকতা, উন্নয়ন এবং শান্তির এক যৌথ চ্যালেঞ্জ।

‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক নাসরিন বেগম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা নয়ন। এ ছাড়া শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম এ সানোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়রা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কমে এসেছে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অধীনে নিশ্চিত করা নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। একইভাবে, আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়েরও টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, সম্মানজনক কাজ এবং জনসেবায় ন্যায্য প্রবেশাধিকারের জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন

­যশোর প্রতিনিধি
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার মারা গেছেন (ইন্না...রাজিউন)। আজ বুধবার সকালে ঢাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার যবিপ্রবি স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেখানে তিনি কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া তিনি একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসেবে দেশের কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রেখেছেন।

এদিকে, ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, রিজেন্টবোর্ড সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

এক শোক বার্তায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, রফিকুল ইসলাম সরকার ছিলেন একজন সৎ, মানবিক, ধর্মভীরু ও দায়িত্বশীল মানুষ। যবিপ্রবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক এবং বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী। যবিপ্রবির সূচনালগ্নে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে ভিত গড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে তিনি শূন্য থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, তা যবিপ্রবি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত