Ajker Patrika

বিআরটি লেনের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বাস সার্ভিস চালু

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটি লেনের বাস সার্ভিস উদ্বোধন করছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটি লেনের বাস সার্ভিস উদ্বোধন করছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জন ভোগান্তিতে কমাতে বহুল প্রত্যাশিত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না করে এবং কাজ অসমাপ্ত রেখে বাস চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম এই লেন নির্মাণকাজ শুরুর এক যুগ পর আজ রোববার সকালে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে উপস্থিত হয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাস চলাচল সেবার উদ্বোধন করেন। বিআরটির এই বিশেষ লেনে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে।

এদিকে বিআরটি প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ২৭ মার্চ গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন অভিযোগ ও অসংগতি তুলে ধরেন। সমস্যা সমাধান না করে বিআরটি প্রকল্প চালু করায় এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বক্তব্যের সময় প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটির কাজ শুরুর পরে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এটি একটি রুগ্ণ প্রকল্প সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। অনেকবার সময় বাড়ানো হয়েছে, এরপরও কাজ শেষ করতে পারেনি। এই প্রকল্প মানুষের কোনো উপকারে আসছিল না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটি লেনে ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ সার্ভিস চলার সময়ে যে সব সমস্যা দেখা যাবে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাধান করা হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক। বক্তব্য দেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ইব্রাহিম খানসহ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ইতিপূর্বে বিআরটি প্রকল্প নিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয় সেসব কবে নাগাদ সমাধান করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি গণশুনানির বিষয় নিয়ে কিছুই জানি না।’ পরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে গণশুনানির বিষয়ে অবগত হয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো দেখব। গণ শুনানিতে যেসব সমস্যা উঠে এসেছিল সেগুলো দেখে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী জুনে এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

উদ্বোধন হওয়া ব্যস্ততম মহাসড়কের দুপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক কীভাবে মহাসড়ক পারাপার হবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করায় মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিমান বন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা অংশে ১০টি নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটি লেনে বিশেষ বাস আমদানির জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেগুলো এলে আরও বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে।’

ফাওজুল কবির খান বলেন, ভবিষ্যতে বিআরটি লেনের বাস এবং জয়দেবপুর থেকে ঢাকা রুটের ট্রেন চট্টগ্রামের মতো ইলেকট্রিক লাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করব। বর্তমানে বাসগুলো শিববাড়ী থেকে বিআরটি লেন দিয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত যাবে। তারপর বাসগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ফার্মগেট নেমে সেখান থেকে বিভিন্ন বাসের ন্যায় এসব বাস গুলিস্তান পর্যন্ত যাতায়াত করবে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১০ এসি বাস চালু করেছি। প্রয়োজনে বা চাহিদা বাড়লে আরও বাড়ানো হবে। বিআরটিসির এসি বাসগুলো শিববাড়ী টার্মিনাল থেকে বিআরটি লেনে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথে চলাচল করবে। শিববাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১৪০ টাকা। তারমধ্যে শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়াও ৭০ টাকা। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে চার জোড়া কমিউটার ট্রেনও চালু করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিআরটি লেন দিয়ে শুধু বাসই চলাচল করার কথা। কিন্তু শুরুতে বিআরটিসির ১০টি বাস দিয়ে পুরো বিআরটি লেন আটকে রাখা ঠিক হবে না। এ জন্য ব্যক্তিগত গড়ি ও মাইক্রোবাস বিআরটি লেন দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে। এর ফলে সাধারণ লেনগুলোতে চাপ কমে যাবে।

বিআরটি প্রকল্পের ব্যয় ও ঠিকাদার

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের চারটি বিভাগ। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এডিবি, এএফডি ও ডিইএফ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চায়না গেজহুবা গ্রুপ, জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ।

প্রকল্পে সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে বাড়ানো হয় প্রকল্প ব্যয়, বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটিসির বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপোতে বিআরটিসির বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বাস সেবা চালু হয়েছে কিন্তু নির্মাণ করা ২০টা স্টেশনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এখনো স্থাপন করা হয়নি। ১০ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সড়ক বিভাজক, পদচারী-সেতু নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার বাস চলাচলের ফাঁকে ফাঁকে বাকি কাজ শেষ করতে চায়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণশুনানি

গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এলাকাবাসী বলেন, প্রকল্পের শুরুতে কথা ছিল মহাসড়কের দুই পাশের হকারদের জন্য ১০টি হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হবে, দুই পাশে ড্রেনের পানি অপসারণের জন্য মহাসড়কের দুই পাশের পাঁচটি খাল খনন করা হবে। কিন্তু এর কিছুই করা হয়নি। ভোগড়া এলাকার ফ্লাইওভারের উচ্চতা কম থাকায়, পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হবে। ড্রেন অত্যন্ত সরু হওয়ায় মহাসড়কের পানি অপসারিত হবে না। বিআরটি স্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য ৭২ ফুট উঁচু সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, ফলে বয়স্ক মানুষ, মহিলা ও শিশুরা এই সিঁড়ি অতিক্রম করে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়বেন। আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ১০০ ফুট চওড়া মহাসড়ক ছিল। অথচ অনেক স্থানে বিআরটি সড়কের বাইরে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার যানবাহন চলাচলের মহাসড়ক অত্যন্ত সরু হয়ে পড়েছে।

প্রকল্পটির চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের কোথাও এক ইঞ্চিও ফুটপাত রাখা হয়নি। এমনকি এই দীর্ঘ পথের কোথাও কোনো ইউ টার্ন নেই। দীর্ঘ মহাসড়কে বিআরটি লেনের বাইরে অনেক জায়গায় বিআরটি স্টেশনে যাত্রী আসা যাওয়ার জন্য ফুটপাত বন্ধ করে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ ছাড়া গাজীপুরের লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক পারাপারের জন্য কোনো ফুটওভার ব্রিজ অথবা একপাশের যানবাহন অন্যপাশে যাওয়ার জন্য কোনো ইউ টার্ন রাখা হয়নি। যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি অপ্রশস্ত হওয়ায় এবং এসব ড্রেনের পানি নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়নি বলে গণশুনানিতে উঠে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১২
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে পঞ্চগড়ে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। ওই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাত—দুই সময়েই শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সমানভাবে।

ঘন কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেলচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যা হয়; ঘন কুয়াশায় সামনে কিছু বোঝা যায় না।’

আরেক মোটরসাইকেলচালক আব্দুল মালেক জানান, কুয়াশা এত বেশি যে হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সামান্য অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে লোকজন বাইরে বের হয় না। যাত্রী নাই, ভাড়াও নাই। খুব কষ্টে আছি, কিন্তু বের না হয়েও পারি না; সংসার চালাতে হবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব শীতবস্ত্র প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বনজীবী-রক্ষীরা চিকিৎসাবঞ্চিত

  • গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা লাগে
  • জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার সন্ধানে বনে যান
  • চিকিৎসাসেবা ও জীবনরক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।

সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’

সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ

করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী: পানিনিষ্কাশন সংকট, চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা

  • ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে
  • কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন, কোথাও দূষিত পানিতে ভোগান্তি
মো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৮
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।

কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’

টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৯
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত