Ajker Patrika

যদি টাহা দিত তাইলে গুলি কইর‌্যা বাবারে মারত না

  • সব বেচে ১৬ লাখ টাকায় ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ।
  • মুক্তিপণ না পেয়ে লিবিয়ায় ফরিদপুরের আকাশকে গুলি করে হত্যা।
  • আকাশের বাবা মজিবুরের প্রশ্ন, ‘আমরা কি বিচার পাব?’
ফরিদপুর প্রতিনিধি
লিবিয়ায় নিহত আকাশ হাওলাদারের মায়ের আহাজারি। গতকাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের বাড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
লিবিয়ায় নিহত আকাশ হাওলাদারের মায়ের আহাজারি। গতকাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের বাড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘যদি টাহা দিত তাইলে আমার বাবারে গুলি কইর‍্যা মারত না। আমার ছাওয়ালরে আইন্না দে রে... আমি টাহা চাই না রে...।’ এসব বলতে বলতে বিলাপ করছেন লিবিয়ায় নিহত আকাশ হাওলাদার ওরফে রাসেলের মা লিপিয়া বেগম।

আকাশ হাওলাদার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের মজিবুর হাওলাদারের ছেলে। ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ২৩ জানুয়ারি বাড়ি ছাড়েন তিনি। পরে লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার মৃত্যুর সংবাদ পায় পরিবার। একই সঙ্গে ওই গ্রামের মিজানুর রহমান মিন্টু হাওলাদারের ছেলে হৃদয় হাওলাদারও মারা যান। তাঁদের পরিবারের দাবি, দালাল চক্র মাফিয়াদের টাকা না দেওয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত আকাশ হাওলাদারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মা লিপিয়া বেগমের আহাজারি। শোকে পাগলপ্রায় তিনি। ছেলের সঙ্গে গত ২৪ জানুয়ারি শেষ কথা হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘রাসেল আমারে বলছে, মা আমার জন্য দোয়া করো। আমি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে কথা বলতে পারব না। মৌলভির (দালাল আনোয়ার মাতুব্বর) কাছে আমার খবর শুনবা। আমার ফোন নিয়ে গ্যাছে। ইয়্যা কইয়্যা আমার বাজান আটকে গেছেরে। ওই মৌলভি ব্যাটা যদি টাহা দিত, তাইলে আমার ছাওয়ালরে জীবনে গুলি করে মারত না।’

একমাত্র বসবাসের ভিটেমাটি, মাঠের জমিসহ গয়না বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১৬ লাখ টাকায় ছেলেকে ইতালি পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন আকাশের বাবা মজিবুর হাওলাদার। মজিবুর হাওলাদার বলেন, ‘আমরা কী বিচার পাব?’ তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেকেই লিবিয়ায় গেছে। এসব দেখে আমার ছেলে বায়না ধরে, সে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাবে। পরে স্থানীয় পরিচিত আনোয়ার মাতুব্বরের মাধ্যমে সহায়-সম্বল বিক্রি করে ১৬ লাখ দিয়ে পাঠিয়ে দেই। পরে গত ২৪ জানুয়ারি দালালেরা ফোন করে বলে, ওদের বোট ছাড়া হয়েছে, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ইতালি পৌঁছাবে। কিন্তু দুদিন পার হয়ে গেলেও ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি। পরে দালাল বলে, ২-৩ ঘণ্টা নৌকা চলার পর বিস্ফোরণ হয়ে গেছে। তাদের কোস্ট গার্ড উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে, অনেকে আবার সাঁতরে পাড়ে এসেছে। তখন আমি বলি, হাসপাতালে গিয়ে আমার ছেলেকে দেখান। কিন্তু ৫ দিন পার হয়ে গেলেও খোঁজ দিতে পারেনি। এরপর মারা গেছে বলে জানতে পারছি।’

নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছান আকাশ ও হৃদয়। প্রথমে একই এলাকার আনোয়ার মাতুব্বরের মাধ্যমে পাঠানো হয় তাঁদের। পরে আনোয়ার মাতুব্বর তাঁর শ্বশুর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাদি গ্রামের শহিদ শেখের হাতে তাঁদের তুলে দেন। সেখান থেকে লিবিয়ার বাসিন্দা হামেদ আল গাম্বী নামের এক দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এভাবে তারা লিবিয়ায় পৌঁছান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত