Ajker Patrika

উপপরিচালক মুক্তির ‘ঘুষ-বাণিজ্য’ থেকে মুক্তি নেই বীজ ডিলারদের

  • চাহিদামতো ঘুষ পাওয়ার পর বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেন বীজের বরাদ্দ।
  • যেসব ডিলার বেশি ঘুষ দেন, তাঁরা বীজের বরাদ্দও পান তুলনামূলক বেশি।
  • দাম বেড়ে যাওয়ায় বিএডিসির বীজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি। ছবি: সংগৃহীত
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক (বীজ বিপণন) এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে বীজ বরাদ্দে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ডিলারদের দাবি, মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো ডিলারকে বীজ বরাদ্দ দেন না মুক্তি। চাহিদামতো ঘুষ পাওয়ার পর বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তিনি বীজের বরাদ্দ দেন। যেসব ডিলার বেশি ঘুষ দেন, তাঁরা বীজের বরাদ্দও পান বেশি। এতে বীজ বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ডিলাররা। ঘুষ দিয়েও বেশ কয়েকজন ডিলার বীজ না পাওয়ায় উপপরিচালক মুক্তির ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

ভুক্তভোগী ডিলারদের একজন অলিউল ইসলাম। তিনি জানান, গত ৪ নভেম্বর বীজ উত্তোলনের জন্য গুদামে যান তিনি। গুদামরক্ষক শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণবের কাছে গেলে হাতের ইশারায় অতিরিক্ত টাকা নিয়ে উপপরিচালকের (বীজ) কাছে যেতে বলেন। সেখানে গেলে উপপরিচালক জানান, বীজের বরাদ্দের সময় শেষ। এখন বীজ নিতে হলে প্রতি টনে দুই হাজার এবং মধুপুরের বীজ (টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় বিএডিসির খামারে উৎপাদিত) নিতে হলে প্রতি টনে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। ডিলারশিপ টিকিয়ে রাখতে মধুপুরের পাঁচ টন ব্রি-২৯ জাতের ধানের বীজ চান অলিউল। এ জন্য তাঁর কাছে ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হলেও পরে দর-কষাকষি করে ১২ হাজার টাকায় রাজি করান তিনি। পরদিন অলিউলের বাড়িতে মধুপুরের বীজ না পাঠিয়ে অন্য বীজ পাঠানো হয়।

অলিউল আরও জানান, মধুপুরের বীজের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত নিতে গত ১০ নভেম্বর উপপরিচালক মুক্তির কাছে যান তিনি। পরে গুদামরক্ষক শুভ্রানিয়ামের কাছে পাঠালে অলিউলকে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বাকি ৭ হাজার চাওয়ায় মুক্তি ও শুভ্রানিয়াম মিলে মারধর করেন অলিউলকে।

এ ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর বিএডিসির মহাব্যবস্থাপকের (বীজ) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী অলিউল।

একইভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিলার আখেরুল বাবু। বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তাঁকে ১০ টন ডায়মন্ড আলুর বীজের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁকে পাঁচ টন বীজ সরবরাহ করা হয়। বাকি পাঁচ টন বীজ না পেয়ে তিনি এ নিয়ে দেনদরবার করেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁকে ঘুষের এক লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয় এবং পাঁচ টন বোরোর বীজ সরবরাহ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিএডিসির ২৯৫ জন বীজ ডিলার রয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাইকে একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে মুক্তিকে কমবেশি ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে বীজের বরাদ্দ নিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের কাছ থেকে তিনি বেশি ঘুষ পেয়েছেন, তাঁদের বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। মুক্তির এ ঘুষ-বাণিজ্যের সহযোগী ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিউলী আক্তার এবং সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা গুদামরক্ষক শুভ্রানিয়াম বৈষ্ণব। ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুক্তি নিজের অপকর্ম ঢাকতে শুভ্রানিয়ামকে পাকুন্দিয়া উপজেলায় বদলি করে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ এই টোকেন হাতে থাকলে সিরিয়াল ছাড়া পছন্দমতো বীজ সংগ্রহ করা যায়। উপপরিচালক মুক্তির স্বাক্ষর করা একটি বিশেষ টোকেনের ছবিতে দেখা যায়, এক ডিলারকে ১০ টন ডায়মন্ড আলুবীজের একটি বিশেষ টোকেন দিয়েছেন তিনি। একসঙ্গে ১০ টন একজনকে দিলে সমালোচনায় পড়তে পারেন, তাই দুই ভাগে লিখে দিয়েছেন। এই বিশেষ টোকেনপ্রাপ্ত ডিলারের কাছ থেকেও ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব টোকেনের মাধ্যমে আলুবীজের কেজিপ্রতি ৩-১০ টাকাও নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার কেজিপ্রতি অতিরিক্ত টাকা নিয়েও বীজ কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুক্তির বিরুদ্ধে।

ডিলাররা বলছেন, বীজ বরাদ্দে বিভিন্ন উপজেলায় বৈষম্য করেছেন উপপরিচালক মুক্তি। ইটনার কোনো ডিলারকে আগাম জাতের ধান ব্রি-৮৮-এর এক গ্রাম বীজও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পাকুন্দিয়ার প্রত্যেক ডিলারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৭০০ কেজি। হাওরবেষ্টিত অষ্টগ্রামের প্রত্যেক ডিলারকে ব্রি-৮৮ ভিত্তি বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪০ কেজি। আর মান ঘোষিত ব্রি-৮৮ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ টন।

চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে মোট বরাদ্দ আসে ৩ হাজার ২০০ টন। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৫০ টনের মতো বীজ বিক্রি হলেও অবিক্রীত রয়ে গেছে ১ হাজার ৭৫০ টন। এতে চলতি মৌসুমে সরকারের লোকসান গোনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অবীজ (খাদ্য) হিসেবে বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে লোকসান হবে ১৫-১৭ টাকা।

ডিলাররা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ থাকা সত্ত্বেও প্রতি টনে ৩-৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত না দিলে বীজ পান না তাঁরা। এতে মাঠপর্যায়ে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিএডিসির বীজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার টন বীজ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এতে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, অবীজ বিক্রিতে মোটা অঙ্কের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার।

বিএডিসির কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক (বীজ বিপণন) এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির সঙ্গে গত মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটাতে রয়েছেন বলে জানান। পরে সরেজমিনে বিএডিসির (বীজ উৎপাদন) কার্যালয়ে গেলে একটি সূত্র জানায়, তিনি গেস্টহাউসে রয়েছেন। পরে ওই গেস্টহাউসে যেতে চাইলে নিরাপত্তাপ্রহরী বাবুল ও শ্রমিক মনসুর আলম তুষার বাধা দেন। এ সময় তাঁরা এই প্রতিনিধির সঙ্গে তর্কে জড়ালে মনিরুজ্জামান গেস্টহাউস থেকে বের হয়ে জানান, অসুস্থ থাকার কারণে ফোনে কটিয়াদীতে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে অনিয়মের বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার, সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে (২৫)। ‎বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় তাঁর নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।

‎জানা যায়, গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকার, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন। তাঁর এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

‎আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ারেন্ট জারি ছিল। একই সঙ্গে তাঁর অনলাইন কর্মকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।‎

‎টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানা-পুলিশের কাছে তাহরিমাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভোর থেকেই জেলার সড়ক ও জনপথ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোরে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

নাইট কোচের চালকেরা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। রফিকুল আলী নামের এক চালক বলেন, ‘এত কুয়াশায় সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কুয়াশায় সামনে কিছুই বোঝা যায় না।’

আরেকজন চালক জানান, কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

শীতের প্রভাবে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর ভিড়। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্রগুলো প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন। মোবাইলে আলাপকালে মাহমুদ হোসেন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদ হোসেন ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই মাহমুদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেও ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাকে ধারণ করে সব সময় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিরোজপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে এই আসনে নেতৃত্বে দেখতে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সেই গণমানুষের চাওয়াকেই গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

মাহমুদ হোসেন জানান, শিগগির তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত