Ajker Patrika

৮ মাস পর বুকের ধন ফিরে পাওয়ার আনন্দ বিষাদে রূপ নেয় জরিনার

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২০: ২৬
নিখোঁজের আট মাস পর মায়ের কোলে শিশু হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিখোঁজের আট মাস পর মায়ের কোলে শিশু হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ বাড়িতে স্ত্রী-­সন্তানের খরচের টাকা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আলমগীর হোসেন। নিরুপায় হয়ে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে অপহরণকারীদের কবলে পড়ে কোলের সন্তান হোসাইনকে হারিয়ে ফেলেন জরিনা বেগম। আট মাস ধরে সন্তানকে খোঁজাখুঁজি করে পাগলপ্রায় দশা তাঁর। এদিকে স্বামীরও সন্ধান নেই। হঠাৎ শিশুটির সন্ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন জরিনা। মা ও এক মামাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে রওনা দেন কুমিল্লার উদ্দেশে। পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হন তিনজন। এর মধ্যে নিজে সুস্থ হয়ে উঠলেও জরিনার মাকে নিতে হয়েছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। বুকের ধন কোলে ফিরে পেলেও একের পর এক ঝড়ে তাঁর সেই আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে।

আট মাস পর গতকাল বুধবার মায়ের কোলে ফেরে চার বছরের শিশু হোসাইন। তবে তার নানি মনোয়ারা বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুশয্যায় লড়ছেন। স্বামী-সন্তানকে ফিরে পেতে একের পর ঝড় পারি দেওয়া জরিনার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে।

জানা গেছে, হোসাইনের মা জরিনা বেগম মামার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী আলমীর হোসেন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। কাজ করেন একটি দোকানে। কিন্তু হঠাৎ করেই মা ও ছেলের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেন আলমগীর। পরিবার জানতে পারে, তিনি আরও একটি বিয়ে করে সংসার পেতেছেন।

নিরুপায় হয়ে আট মাস আগে কোলের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুঁজতে চট্টগ্রামে যান জরিনা। সেখানে তাঁকে খুঁজে না পেয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে রওনা হন। সেদিন ভুল করে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়েন তিনি।

কুমিল্লার লাকসামে এসে তিন অপহরণকারী হোসাইনকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। জরিনা ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যান ঢাকায়। পরে হোসাইনের মা জরিনা বেগম বাড়ি ফিরলেও স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। পরিবারের আত্মীয়স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও হোসাইনের কোনো সন্ধান পাননি।

এদিকে কুমিল্লার লাকসাম স্টেশনে হোসাইন কান্নাকাটি শুরু করলে অপহরণকারীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের আশ্রয়ে দিয়ে আসে। সেখানে ছোট সোনামণিদের সঙ্গে কাটে হোসাইনের আট মাস।

১ আগস্ট স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় হোসাইনের সন্ধান পান তার মা। ২ আগস্ট হোসাইনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় মায়ের। পরদিন ৩ আগস্ট জরিনা, নানি মনোয়ারা ও অলিউল্লাহ নামের সম্পর্কে এক মামা মিলে হোসাইনকে নিতে দেবিদ্বারের উদ্দেশে নোয়াখালী থেকে রওনা হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা তাঁদের পিছু ছাড়েনি। পথে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পারোয়ারা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনজন। তাঁদের সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকা এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দেবিদ্বার থেকে স্থানীয় সাংবাদিকেরা গিয়ে জরিনাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই রাতে মনোয়ারার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পথে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে মাতুয়াইলের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন অচেতন থাকার পর গতকাল বুধবার সকালে তাঁর জ্ঞান ফেরে।

এদিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জরিনা সুস্থ হয়ে গতকাল ছাড়া পান। সেখান থেকে তিনি দেবিদ্বার শিশু পরিবারে এসে হোসাইনকে নিতে আবেদন করেন। দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান শিশু হোসাইনকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। এর আগে সকালে দেবিদ্বার শিশু পরিবারে সন্তানের সঙ্গে প্রথম দেখার সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এই নারী।

হোসাইনের মা জরিনা বেগম সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আজ আমার বুকের ধন খুঁজে পেয়েছি। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছি এবং আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক বরুণ চন্দ্র দে বলেন, ‘হোসাইন খুবই শান্ত প্রকৃতির একটি ছেলে। সে আমাদের শিশু পরিবারে প্রায় আট মাস ছিল। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হোসাইনকে লাকসাম পুলিশ এখানে দিয়ে যায়। সাংবাদিক আক্তার ভাইসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সন্ধান মেলে হোসাইনের পরিবারের। শিশু হোসাইনের পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে দেবিদ্বারের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয়ে থাকা শিশু হোসাইনের মা ও তার নানা এসে আবেদন করলে আমরা তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দিই।’

আবুল হাসনাত খান আরও বলেন, ‘এর আগে গত রোববার (৩ আগস্ট) হোসাইনের মা, নানিসহ তিনজন দেবিদ্বারে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁদের উদ্ধার করে যেভাবে পাশে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, এটি আমাদের সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা হোসাইনের ব্যাপারে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। তারা যদি দেবিদ্বার বা নিকটস্থ শিশু পরিবারে বাচ্চাটিকে রাখতে চান, আমরা সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত