Ajker Patrika

মাতারবাড়ী প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ৫ লাখ লোক সমাগম করতে চায় আ.লীগ

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ০৪
মাতারবাড়ী প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ৫ লাখ লোক সমাগম করতে চায় আ.লীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ মাসের ব্যবধানে আবারও কক্সবাজার আসছেন। তিনি আগামী শনিবার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন ও মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার এসেছিলেন। এদিন তিনি কক্সবাজার শহরে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। 

কক্সবাজার শহরের অদূরে সদর উপজেলার চান্দেরপাড়ায় দেশের প্রথম আইকনিক ঝিনুক আকৃতির গড়ে তোলা রেলস্টেশন। এই স্টেশনের পাশেই রেলপথ উদ্বোধনের জন্য সুধীসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন। এদিন দুপুরে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি। 

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনসভায় পাঁচ লাখ জনসমাগমের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় উৎসব শুরু হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জনসভায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর জনসভায় জেলার ৯ উপজেলার নেতা-কর্মীদের ওয়ার্ড পর্যায়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন উপজেলার নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। 

মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান। প্রধানমন্ত্রী দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়ন করছেন। এ জন্য মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ।’ 

তিনি বলেন, এ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দুই দ্বীপ উপজেলার অন্তত তিন লাখ মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেবেন। 

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘মাতারবাড়ী প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ যোগ দেবেন বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সংগঠনের বর্ধিত সভা ডেকে প্রস্তুতি নিয়েছে।’ 

প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফর উপলক্ষে চলছে প্রশাসনের প্রস্তুতিও। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা টিমের সদস্যরা কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছেন। 

এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী সাতটি বড় প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন আরও চারটি প্রকল্পের। 

এর আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সেটি ছিল তাঁর প্রথম কক্সবাজার সফর। 

এর আগে ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনকালে তিনি সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করেছিলেন। এ ছাড়া গত বছর ১৮ মে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ভবন উদ্বোধন করেন। তা ছাড়া গত বছর ৩১ মার্চ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার’—প্রতিপাদ্য নিয়ে কক্সবাজারে আয়োজিত একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকসু ভিপির দিকে তেড়ে গেলেন ছাত্রদল সভাপতি

চবি প্রতিনিধি 
বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় হট্টগোল বাধে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় হট্টগোল বাধে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর দিকে তেড়ে যান শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সংগঠনটির কয়েকজন নেতা-কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত আলোচনা সভায় এই ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘যাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে আসার সংস্কৃতি আছে, তারা হট্টগোল করবেই। তবে আমরা সকল ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনকে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।

এর আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্য ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে আটকা পড়েন উপাচার্য (ভিসি), সহ-উপাচার্যসহ (প্রোভিসি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। এ সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দেখা যায়। দীর্ঘ প্রায় ৮ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় চবির সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যে ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর’ বলে মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক শামীম খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল। সে সময় তারা জীবিত থাকবে না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবস পালন করতে হচ্ছে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করে: প্রিন্স

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘আমি ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি, পঁচিশের বিজয় দিবসের আগেই আমাদের একাত্তরের ঘাতক চক্র, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তাদের অপতৎপরতা সূচনা করেছে। সেই কারণে আমাদের এবারের বিজয় উৎসব পালন করতে হচ্ছে এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের অবিরাম সংগ্রামের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবি নেতা এসব কথা বলেন।

এ সময় রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এই দেশটাকে গড়তে পারে নাই বলেই আজকে একাত্তরের ঘাতকসহ অন্যরা এখন সুযোগ পাচ্ছে। আমরা তাই মনে করি, এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অবিরাম চলবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় দিবসে এসে আমরা সাধারণভাবে বলি, আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হলেই সব কাজ করা যাবে। আমার বিবেচনায় এই কথাটা যথাযথ না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে আমরা যখন একসাথে হই, আমাদের যার যার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে। প্রকৃতপক্ষে জনস্বার্থের উদ্দেশ্য যাদের আছে তারা এক না হয়ে, যারা জনবিরোধী শক্তি আছে তারাই ঐক্যবদ্ধ হয়। তখন কিন্তু জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানই তারা ঘোষণা করতে পারে। সুতরাং আজকে সময় এসেছে জনস্বার্থের পক্ষের রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিবর্গকে এক হওয়া। সেই কাজটি আমরা বামপন্থীরা প্রচেষ্টা নিয়ে চলেছি। সেই লক্ষ্য নিয়েই এবারে আমরা বিজয় দিবস পালন করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কা, হেলপার নিহত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কায় তোফায়েল মিয়া (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েক যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অধীন পদ্মা সেতুর ২৯ নম্বর পিলারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তোফায়েল বসুমতি পরিবহন বাসের চালকের সহকারী (হেলপার)।

পুলিশ জানায়, রাত আনুমানিক পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী বসুমতি পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে পেছন দিক থেকে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী পদ্মা স্পেশাল পরিবহনের একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বসুমতি পরিবহনের সহকারী তোফায়েল নিহত হন।

দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পদ্মা সেতু এলাকায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চবির বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক বিবৃতিতে এবার মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য সেই সঙ্গে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি ওসমানীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যাসহ বিবৃতিতে এসব বলা হয়েছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর কাজ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেছেন। এই নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানাতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা ১১টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি; সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরই সমালোচনা হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠন তাঁর পদত্যাগের দাবি করে। এ দাবিতে তাঁরা গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে রাখেন। ফলে রাত প্রায় পৌনে ৯টা পর্যন্ত ভবনটিতে আটকা ছিলেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২৪’র জুলাই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি ওসমানীসহ সকল শহীদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

ড. শামীম উদ্দিন খান একাডেমিক আলোচনার অংশ হিসেবে তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বেশ কয়েকটি রেফারেন্স টেনে আনেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদিরের লেখা ‘দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীন’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘৬ ডিসেম্বর থেকে দৌঁড়ের উপর থাকা পাকিস্তানি বাহিনী ১৪ তারিখ এতগুলো লোকের বাসায় গিয়ে গিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনিরের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা আমার বাবাকে হত্যা করেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, বক্তব্য পেশ করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে উপ-উপাচার্য ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র পরিবর্তে ‘পাকিস্তানি যোদ্ধা’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলতে গিয়ে ‘অবান্তর’ শব্দ ব্যবহার করেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং তাৎক্ষণিক আলোচনার অংশ।

উল্লেখ্য, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র খ্যাত উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক নেতা। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের বৈরুতের এক হোটেলকক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান তিনি। অন্যদিকে জাতীয় নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রথিতযশা বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে শেরেবাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মহান এ দুই নেতার একজনের মৃত্যুর নয় বছর ও অন্যজনের আট বছর পর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ফলে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন এ প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাস বিকৃতি করছে। এক বিকৃতির ব্যাখ্যায় আরেক বিকৃতি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত