Ajker Patrika

জুরাছড়িতে ফসলি জমি দখল করে অবাধে চলছে তামাক চাষ    

জুরাছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫০
জুরাছড়িতে ফসলি জমি দখল করে অবাধে চলছে তামাক চাষ    

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় আবাদি জমির ওপর অবাধে চলছে তামাকের চাষ। অন্যদিকে তামাক চুল্লিতে পোড়াতে পাহাড়ে নির্বিচারে চলছে প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটার হিড়িক।

নির্বিচারে গাছ কাটায় প্রাকৃতিক বনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া তামাক চাষে ফসলি জমির উর্ব্বরাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও জ্বালানি কাঠ ব্যবহারে জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়ছে। প্রতিবছর এই উপজেলায় তামাকের চাষ বেড়ে রবি ফসলের জমিগুলো দখল করছে বলে দাবি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জুরাছড়ি ইউনিয়নের ঘিলাতলী ও শীলছড়ি, মৈদং ইউনিয়নের বারাবান্যা, হাজাছড়ি, জামেরছড়ি, ফকিরাছড়ি ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে বস্তিপাড়া ও বরকলক এলাকায় তামাকের বীজতলা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় আবাদি জমিতে তামাকের চারা রোপণ করা হচ্ছে। আবার কোথাও তামাকের পাতা গজিয়ে সবুজ হয়েছে বিল। তামাক চুল্লিতে পোরোনোর জন্য অনেক জঙ্গলে কিংবা রাস্তার পাশে কাঠ কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল্লিতে তামাক শুকানো হয়। চুল্লি তৈরিতে অনেককেই ব্যস্ত দেখা যায়।

শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে তামাক চাষ করা হয়েছে। প্রতিবছর তামাক পরিপক্ব হলে গন্ধে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে।

শীলছড়ি ক্যাম্পের পূর্বে ২০ গজ দূরে প্রতিবছর চুল্লি স্থাপন করা হয়। জনচলাচলের পথে বাজারজাত করতে প্রস্তুত করা হয়। প্রশাসন এতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ছাত্রসমাজের।

মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, ‘তামাক কোম্পানি কম শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদান এবং প্রত্যক্ষভাবে কারিগরি সহায়তা প্রদানের কারণে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। রবি ফসল চাষাবাদে সার ওো কীটনাশকের অভাব এবং উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করার অসুবিধার কারণে তামাকের চাষ বাড়ছে।’

মৈদং ইউনিয়নের মদন চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘মৌসুমি শাকসবজি চাষ করলে যেখানে সার আর কীটনাশকের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়, সেখানে তামাক চাষে এসব না চাইতেই এসে যায়। এ ছাড়া মৌসুমি শাকসবজি বাজারজাতকরণ ও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।’

ঘিলাতলীর রিটনে চাকমা বলেন, ‘গেল বছর তামাক চাষে ভালো দাম পাইনি। তাতে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণ কমাতে এ বছর আবার তামাক চাষ করছি।’

বারাবান্যা শ্যামলী চাকমা, জামেরছড়ির কল্প চাকমা বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কোম্পানি থেকে অগ্রিম ঋণ পাওয়া যায়।’

তাঁরা জানান, এক হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করে উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে ২-৩ লাখ টাকা আয় হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ‘তামাকের গন্ধে তাৎক্ষণিকভাবে রোগ দেখা না দিলেও পরে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এতে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে তামাক চাষের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে তিনটি ইউনিয়নে চাষি ও তামাক কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাছড়িতে ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে রবি ফসলের চাষ হয়। কিন্তু তামাক চাষের প্রভাবে এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তামাক চাষ বন্ধ না হলে রবি ফসল চাষের পরিমাণ কমতে থাকবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল আহম্মেদ সরকার বলেন, ‘তামাক চাষ বন্ধে কৃষি বিভাগ থেকে বাদাম, ডাল, সরিষা, ভুট্টা ও উচ্চফলনশীল ধানের বীজ হতদরিদ্র কৃষকদের বিনা মূলে প্রদান করা হচ্ছে। তামাক বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে প্রচার অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাফলংয়ে বালুচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় পাড় ধসে পড়ে এক বালুশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে জাফলং চা-বাগানসংলগ্ন নদীর পাড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু মিয়া (৫০) গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়াবস্তি গ্রামের মৃত হাবিব মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একদল শ্রমিক নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলনের কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ বালুর একটি বড় অংশ ধসে পড়ে শ্রমিকদের ওপর। অন্য শ্রমিকেরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও বাচ্চু মিয়া বালুর নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, বালু উত্তোলনের সময় মাটি ধসে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চকরিয়ায় যুবকের লাশ মিলল বিলে, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিল থেকে সাইফুল ইসলাম (৩৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের দরগা রাস্তার মাথায় সড়কের পাশের বিল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

সাইফুল ইসলাম কাকারা ইউনিয়নের মাইজ কাকারার শাইরাবরপাড়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।

সাইফুলের স্বজনদের অভিযোগ, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে প্রতিপক্ষ একটি মামলায় আসামি করে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। সাইফুলকে বাড়িতে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়। এরপর হেলমেট পরিহিত একদল যুবক সাইফুলকে খুঁজতে শুরু করে। মূলত প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কাকারা দরগা রাস্তার মাথা এলাকায় প্রবাসী নুরুল ইসলাম সাড়ে ৭ শতক জমি কেনেন। ওই জমিতে সংস্কারকাজ চলছিল। গত শনিবার দুপুরে ফরিদুল ইসলাম, আমজাদ, সাদ্দামের নেতৃত্বে ২০-২১ জন নুরুল ইসলামের জমি দখল করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে বাধা দিলে নুরুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন আক্তারসহ পাঁচজন আহত হন।

সাইফুলের স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় নুরুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় মামলা করেন। ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়ায় সাইফুলকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়। সাইফুল ইসলামের বাড়ি বিরোধপূর্ণ জমির পাশে। সোমবার রাতে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সাইফুল বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে রাতেই বাড়ির পাশে বিলে তাঁর লাশ দেখতে পাওয়া যায়।

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, বাড়িতে পুলিশ আসার খবর পেয়ে আমার স্বামী বাড়ির পেছন দিয়ে দৌড়ে চলে যান। এ ছাড়া হেলমেট পরিহিত একদল যুবক আমার স্বামীকে খোঁজাখুঁজি করে। পুলিশ বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে ফিরে যাওয়ায় সাইফুল বাড়িতে ফেরেনি। পরে সকালে বাড়ির কাছে বিলে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। নুরুল ইসলামের লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।

এ মামলার বাদী জেসমিন আক্তারের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত শনিবার জমি নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি হয়। এ ঘটনায় জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় সাইফুল ৪ নম্বর আসামি। সাইফুল বাড়িতে অবস্থান করার খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যায়। তাঁকে না পেয়ে পুলিশ থানায় ফিরে আসে। পরে সাইফুলের পরিবার থেকে তাঁর লাশ পাওয়ার খবর জানালে লাশ উদ্ধার করা হয়।’

ওসি আরও বলেন, সাইফুলের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে থার্টি ফার্স্ট নিয়ে ৬ নির্দেশনা সিএমপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে থার্টি ফার্স্ট নিয়ে ৬ নির্দেশনা সিএমপির

চট্টগ্রামে থার্টি ফার্স্ট নাইটে (ইংরেজি বর্ষবরণ) সৈকতে যাওয়া নিরুৎসাহ ও অনুমতি ছাড়া সড়ক কিংবা উন্মুক্ত জায়গা বা ছাদে ডিজে পার্টি, নাচ-গানসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান-সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এ ছাড়া আতশবাজি, পটকা, ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধসহ আরও একাধিক নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে সিএমপির অফিশিয়াল ফেসবুকে পেজে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে নগরীর শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, জনস্বার্থ এবং জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৮-এর ২৮, ২৯ ও ৩০ ধারার ক্ষমতাবলে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনার মধ্যে আরও রয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর পতেঙ্গায় সি বিচ ও আনোয়ারায় অবস্থিত পারকি বিচ এলাকায় অবস্থান করা যাবে না।

একই সময় মহানগর এলাকায় সব বার ও মদের দোকান বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সকল প্রকার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা, লাঠি ও বিস্ফোরকদ্রব্য বহন নিষিদ্ধ থাকবে।

একই সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি বা মোটরবাইক চালানো, উচ্চশব্দে হর্ন বাজানো, মাদকাসক্ত অবস্থায় চলাফেরা, নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড, নারীদের প্রতি হয়রানি বা ইভ টিজিং এবং যেকোনো ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানায় সিএমপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: শোকে স্তব্ধ বগুড়াবাসী

বগুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৬
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ায় নেমে এসেছে গভীর শোক। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের কান্নার রোল দেখা গেছে। শহরের অলিগলি, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে নীরবতা। কোথাও নেই স্লোগান বা রাজনৈতিক আলোচনা—শুধু স্মৃতিচারণা, দীর্ঘশ্বাস আর স্তব্ধতা।

যে শহর বারবার ভোটের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, সেই বগুড়াই আজ হারাল তার বধূকে, তার নেত্রীকে, তার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনিবার্য অধ্যায়কে।

খালেদা জিয়ার শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। সময়ের সঙ্গে এই সম্পর্ক কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, হয়ে উঠেছিল আবেগের জায়গা। বগুড়ার মানুষ তাঁকে দেখেছে ঘরের বধূ হিসেবে, আবার দেখেছে দেশের নেতৃত্বে থাকা এক দৃঢ়চেতা রাজনীতিক হিসেবে।

তিনি বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে একাধিকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে রেকর্ড ভোটে জয়লাভ করেন। প্রতিবারই ভোটের ব্যবধান ছিল উল্লেখযোগ্য। নির্বাচনী রাজনীতিতে এমন ধারাবাহিক সাফল্য খুব কম নেতার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর একসময় নিভৃতচারী গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে নিতে হয় একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা। সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন, রাজপথের সংগ্রাম ও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কঠিন দায়িত্ব সামলে তিনি হয়ে ওঠেন শক্তিশালী এক রাজনৈতিক প্রতীক। আপসহীন অবস্থানের কারণেই তিনি পরিচিত হন ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে। দীর্ঘ এই পথচলায় বগুড়া ছিল তাঁর নির্ভরতার জায়গা, একটি নিরাপদ ভোটব্যাংক।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়ায় বিএনপির সব কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কোরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, এটি শুধু একজন নেত্রীর বিদায় নয়, এটি একটি যুগের সমাপ্তি। তবে শোক শুধু দলীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই; রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন—এমন অনেক মানুষও এই মৃত্যুতে আবেগাপ্লুত।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অনেকের স্মৃতিতে ভেসে উঠছে নির্বাচনী দিনের চিত্র। ভোটের আগে মিছিল, সভা আর মানুষের ঢল। খালেদা জিয়া যখন নির্বাচনী প্রচারে বগুড়ায় আসতেন, শহরের চেহারাই বদলে যেত। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকত লাখো মানুষ, এক ঝলক দেখার আশায়।

রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক, সংঘাত ও মামলার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে তাঁকে। ক্ষমতায় থাকা ও না থাকার দুই সময়েই কারাবরণ, অবরুদ্ধ জীবন ও যোগাযোগহীনতা ছিল তাঁর বাস্তবতা। তবু বগুড়ার মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সেই নারী, যিনি সব প্রতিকূলতার মধ্যেও মাথা নত করেননি।

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।

রেজাউল করিম বাদশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবল আমাদের নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন মায়ের মতো। বগুড়ার মানুষের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর মৃত্যুতে আমরা সত্যিকার অর্থেই এতিম হয়ে গেলাম।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থাতেও ম্যাডাম দলের ও দেশের মানুষের খোঁজ নিতেন। এই ক্ষতি কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়।’

মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের নওয়াববাড়ি রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। জেলা বিএনপির উদ্যোগে মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত