Ajker Patrika

নিজ গ্রামে উপেক্ষিত সুরসম্রাট

সাইফুল মাসুম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফিরে
নিজ গ্রামে উপেক্ষিত সুরসম্রাট

ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের এক অনিবার্য নাম ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তিনি তাঁর দীর্ঘ সংগীতজীবনে তৈরি করেছেন হাজার হাজার শিষ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জন করেছেন অজস্র সম্মাননা, পুরস্কার, পদবি। ব্রিটিশ সরকার উপাধি দিয়েছিলেন ‘খাঁ সাহেব’ আর রানি এলিজাবেথের দেওয়া খেতাব ছিল ‘সুরসম্রাট’। দেশে দেশে তাঁর ভক্তরা তাঁকে ‘বাবা’ বলেই সম্বোধন করেন। এই শাস্ত্রীয় সংগীত সাধক বিশ্বজোড়া খ্যাতির শিখরে গেলেও, নিজ গ্রামে তিনি রয়ে গেছেন উপেক্ষিত।

আলাউদ্দিন খাঁর জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তিনি এই গ্রামে ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর সংগীত সাধনার বড় অংশ কাটে ভারতের মধ্য প্রদেশের মাইহারে। ওস্তাদ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করলে, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

গত সপ্তাহে (৩০ আগস্ট) শিবপুরে আলাউদ্দিন খাঁর বসত বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় খুবই জীর্ণ শীর্ণ দশা। বাড়ির কোথাও এই বিশ্ব বরেণ্য সংগীত সাধকের স্মৃতি চিহ্নের কোন লেশমাত্র নেই। ওই বাড়িতে আলাউদ্দিন খাঁর সন্তানেরা কেউ বসবাস করেন না। তবে ওখানে এখন বসবাস করছেন আলাউদ্দিন খাঁর বংশীয় আত্মীয় ইদ্রিস খানের (৬৪) পরিবার। ইদ্রিস খান নিজের পরিচয় দিলেন আলাউদ্দিন খাঁনের বড় ভাই আফতাব উদ্দিন খাঁর মেয়ের ছেলের ছেলে। তাঁর ভাষায় তিনি, ‘ওস্তাদের ভাইয়ের নাতির ঘরের পুতি’।

ইদ্রিস খান বাড়ির পুকুরের পাড় দেখিয়ে জানালেন, এই পুকুর পাড়েই ছিল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর দুই তলা কাঠের বসত ঘর। এখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব কৈশোরের বড় একটি অংশ। সেই বসত ভিটার অস্তিত্ব এখন আর নেই। মুক্তিযুদ্ধের পরে এক ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটি ভেঙে পড়লে, ওস্তাদের ভাই ছমির উদ্দিন খাঁর নাতি লাউ খান ঘরের কাঠ, টিন সব নিয়ে যায়। এখন ভিটার অর্ধেকটা ভেঙে পড়েছে পুকুরে, বাকি অর্ধেকে রান্না ঘর করছেন শামসুউদ্দিন ও শামীমা দম্পতি। ঝোপঝাড় পরিপূর্ণ স্থানটিকে দূর থেকে দেখলে যে কারও কাছে পরিত্যক্ত জায়গা মনে হতে পারে। শামীমা বেগম জানালেন, কোথাও জায়গা না থাকায় আশ্রিতা হিসেবে ২২ বছর ধরে এই জায়গাতে বসবাস করছেন তাঁরা। তিনি আলাউদ্দিন খাঁর নাম শুনেছেন। তবে ওস্তাদ আলাউদ্দিন কি কারণে বিখ্যাত সেটা তিনি জানেন না। অথচ এই বসত ভিটা দেখতে জার্মান, ভারত, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়াসহ নানা দেশ থেকে ওস্তাদের ভক্তরা শিবপুর গ্রামে আসে।

ওস্তাদ নিজ গ্রামে অবহেলিত এ বিষয়ে আক্ষেপ জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উদীচীর সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন বলেন, ‘তিনি যে মাপের সংগীতজ্ঞ। এত বড় মাপের প্রতিভাকে ওনার গ্রামে কেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়ও ধারণ করার মতো তেমন মানুষ নেই। যারা সাংস্কৃতিক সচেতন তাদের মধ্যেও ভাবনার জায়গা ওভাবে তৈরি হয়নি।’ 

সুরসম্রাটের স্মৃতি রক্ষার্থে শিবপুরে গড়ে উঠেছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদ। সংগঠনের সভাপতি রানা শামীম রতন বলেন, ‘১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যখন খাঁ সাহেব মারা যান, তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। দেশি বিদেশি মিডিয়া এটা অনেক গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। সুর সাধনায় তিনি যে খ্যাতি অর্জন করছেন তা বিস্ময়কর।’ 

ভারতের মধ্য প্রদেশের মাইহারে ওস্তাদের সমাধি দেখতে গিয়েছিলেন স্মৃতি সংসদের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওস্তাদ উপমহাদেশে গৌরব বয়ে এনেছে। তাঁর সমাধিতে দেখতে ১৯৯৭ সালে মাইহার শহরে গিয়েছি। ওখানে একটা জাদুঘর রয়েছে। তাতে রাখা আছে ওস্তাদের সুরের যন্ত্রপাতি। ওস্তাদের অনুসারীরা আমাকে ‘বাবার বাড়ির লোক’ বলে সম্বোধন করেছে। তাঁদের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি দেখে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তাঁরা আবদার করেছিলেন বাবার বসত বাড়ির মাটি যেন তাদের জন্য পাঠাই। পরে পাঠিয়েছিলাম।’ 

নিজ গ্রামে ওস্তাদের উপেক্ষিত হওয়ার কারণ হিসেবে শামীম রতন জানান, ওস্তাদ পরিবারে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। তাঁর উত্তরসূরি কেউ নেই। এখানে তাঁর ভাতিজা ঘরের নাতিপুতি ওস্তাদের জমি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলাউদ্দিন খাঁর বসত ভিটার ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। সময়ের বিবর্তনে ওই ভিটা অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। জমি নিয়ে স্বজনদের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকায় তাঁর জন্মস্থান শিবপুরে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। সুরসম্রাটের জন্ম ভিটা সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। আমরা শিগগিরই ওই বাড়িতে পরিদর্শনে যাবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।'

এদিকে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতি রক্ষার্থে সম্প্রতি এক বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ প্রকল্পের আওতায় আলাউদ্দিন খাঁর নামে তাঁর গ্রামে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র করার কথা রয়েছে। তবে শিল্পকলা একাডেমির প্রকৌশলী সুখ দেব চন্দ্র দাস বলেছেন, 'ওস্তাদের গ্রাম শিবপুরে গিয়ে জমি না পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল লাঞ্চঘাট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল লাঞ্চঘাট। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে তীব্র কুয়াশার কারণে দুই দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকাগামী পাঁচটি বিলাসবহুল লঞ্চ বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করেছে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় বরিশাল নৌবন্দর থেকে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কুয়াশার কারণে বরিশালের সড়ক ও নদীপথ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গত রোববার ও গতকাল সোমবার ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথ বন্ধ থাকলেও আজ আবার চলাচল শুরু হয়। তবে কুয়াশার কারণে আট ঘণ্টার যাত্রা ১২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার উদ্দেশে যেতে বরিশাল থেকে লঞ্চে ওঠা যাত্রী আ. রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে লঞ্চে উঠেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরাপদে ঢাকা পৌঁছাতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে বাস চললেও কুয়াশার কারণে গতিসীমা কম। কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে বরিশাল বাসমালিক গ্রুপ বাসচালকদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে।

ঘন কুয়াশার কারণে গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বরিশাল নৌবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকাগামী চারটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ যাত্রী নামিয়ে বাতিল করা হয় বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে। এরপর গতকালও বরিশাল নদীপথে লঞ্চ চলাচল সম্ভব হয়নি। আজ পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে বরিশাল নৌবন্দর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের সরাসরি চারটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের বাস চলাচল বন্ধ না হলেও অতিরিক্ত সাবধানতার সঙ্গে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে সড়কপথে চার ঘণ্টার যাত্রায় সময় লাগছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ঘন কুয়াশার কারণে গত চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। এ সময় বরিশালে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আজ রাত থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

­যশোর প্রতিনিধি
তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব। ছবি: সংগৃহীত
তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব। ছবি: সংগৃহীত

ঋণখেলাপি হওয়ায় যশোর-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তালহা শাহরিয়ার আইয়ূবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক হাসানের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।

ঢাকা ব্যাংকের রাজধানীর ধানমন্ডি শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম রাইসুল ইসলাম নাহিদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে টি এস আইয়ূবকে ‘ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে।

টি এস আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আসনটিতে টি এস আইয়ূব ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার ফারাজী। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন টি এস আইয়ূবের ছেলে ফারহান সাজিদ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে ঋণ নেন তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ঋণখেলাপি; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত (Willful) ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণখেলাপি (Bad & Loss)।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, টি এস আইয়ূব তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন এবং বৈদেশিক রপ্তানিপ্রক্রিয়া-সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেন। যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাশিত হিসেবে রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয় এবং চার্জশিট দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন। পরে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা করে, যা বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে। উক্ত মামলা ছাড়াও ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার-সংক্রান্ত সিআর মামলা করেছে, যা বর্তমানে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

উপরিউক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ূবের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায় ব্যাংকটি।

সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এই প্রার্থী সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত চার ব্যাংকে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের নামে ২০১৭ সালে ১৪টি ভুয়া এলসির বিপরীতে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

২০১৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করে ব্যাংক। সুদসহ বর্তমানে তাঁর কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে টি এস আইয়ূব ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। এরই মধ্যে তাঁকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছে ঢাকা ব্যাংক।

সূত্রে আরও জানা গেছে, টি এস আইয়ূবের সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৭০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। ঋণটি পুনঃতফসিল করতে তাঁকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট জমার শর্ত দিয়েছে ব্যাংক। তিনি মাত্র ৬৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ায় তা নিয়মিত হয়নি।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি। এর বাইরে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠানের অগ্রণী ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে।

তবে খেলাপি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে টি এস আইয়ূব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণখেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন নেই। তারপরেও যদি ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে। আমি এখন ঋণখেলাপি নেই।’

এ বিষয়ে যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, টি এস আইয়ূবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই–বাছাইকালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে অবৈধ বালু উত্তোলনকালে ৫৭ ড্রেজার জব্দ, আটক ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের হিজলায় মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে ৫৭টি ড্রেজার ও একটি স্টিল বডি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ২০ জনকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড। সোমবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেঘনায় অভিযান চালানো হয়। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বেলা ১১টা হতে গভীর রাত পর্যন্ত কোস্ট গার্ড ইলিশা, কালীগঞ্জ ও হিজলা থানাধীন সওড়া সৈয়দখালী এলাকাসংলগ্ন মেঘনা নদীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে ওই এলাকা হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে ৫৭টি ড্রেজার ও একটি স্টিল বডি ট্রলার জব্দ করা হয়। জব্দকৃত স্টিল বডি ট্রলার তল্লাশি করে চারটি দেশীয় অস্ত্রসহ ২০ জনকে আটক করা হয়।

জব্দকৃত স্টিল বডি ট্রলার ও আটককৃত দুষ্কৃতকারীদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হিজলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে হিজলা থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, বালুখেকোদের হাত থেকে ফসলি জমি এবং আবাসস্থল রক্ষায় কোস্ট গার্ড অভিযান অব্যাহত রাখবে।

হিজলা থানার এসআই মো. শামিম বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে কোস্ট গার্ডের পেটি অফিসান কাজল দাস মামলা করেছেন। এ মামলায় ২০ জন নামধারী এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আটককৃত ২০ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদারীপুরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া: ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে দুই পক্ষের লোকজন তেড়ে আসে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে দুই পক্ষের লোকজন তেড়ে আসে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরদার ও হাওলাদার বংশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষ অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহত পাঁচজনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। এতে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তফাপুর এলাকায় সরদার ও হাওলাদার বংশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। সর্বশেষ গত আগস্টে সরদার বংশের সামচু সরদারকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাড়ে তিন মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এর পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

আজ দুপুরের পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। একপর্যায়ে সরদার বংশের সামচু সরদার ও হাওলাদার বংশের হাবিব হাওলাদারের নেতৃত্বে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুরও করা হয়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ্য করেও দুই পক্ষের লোকজন তেড়ে আসেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে দুই পক্ষের লোকজন তেড়ে আসে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে দুই পক্ষের লোকজন তেড়ে আসে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিহা রফিক ভাবনা বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে থানা-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় উভয় পক্ষের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত