Ajker Patrika

চাঁদাবাজদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন ব্যবসায়ী দম্পতি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৩৮
চাঁদাবাজদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন ব্যবসায়ী দম্পতি

গতকাল বুধবার (৩১ জানুয়ারি) শীতের বিকেল। কুয়াশায় ঢাকা পড়ে সূর্যের আলো তখন প্রায় নিভে গেছে। চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে অসুস্থ স্বামীর পরিচর্যা করছিলেন লতিফুন্নেসা। তাঁর মাথায় ভর করেছে নানা দুশ্চিন্তা। কারণ, সব মায়া ত্যাগ করে কয়েক দিন পরই এই বাড়ি ছাড়বেন তিনি। বিক্রি করে দিয়েছেন জমানো টাকায় তৈরি করা বাড়িটি।

গেটের ভেতরে গিয়ে এই প্রতিবেদক বাড়ি ছাড়ার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে আলাপচারিতায় উঠে আসে স্থানীয় চাঁদাবাজদের একটি চক্রের পাল্লায় পড়ে ভিটে ছেড়ে যাওয়ার গল্প। লতিফুন্নেসার বাড়িটি পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকায়। বাড়িটি ১০ কাঠার ওপর।

স্বামী সফিক উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরী অনেক দিন ধরে অসুস্থ। লাঠিতে ভর করে চলতে হয় তাঁকে। তাঁকে নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে লড়াইটা একাই চালিয়ে যাচ্ছেন লতিফুন্নেসা। লড়াইয়ের মধ্যেই যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে চেহারায়। কিন্তু দমে যাননি তিনি। চাঁদাবাজেরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছে একাধিক। এসব মামলা থেকে নিজেকে খালাস করিয়েছেন। নিজেও মামলা করেছেন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে।

সেই মামলা তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট। সংস্থাটির পরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী এনায়েত কবীরের তদন্তে উঠে আসে দুই আসামির নেতৃত্বে চাঁদাবাজির সত্যতা। তদন্তকালে চাঁদাবাজির প্রমাণ-সংক্রান্ত মোবাইলে ফোনের কথোপকথনও হাতে আসে পিবিআইয়ের। সম্প্রতি সংস্থাটি মামলার প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে আসামি করা হয় মো. মাঈন উদ্দিন রিপন ও মো. বাবলু নামের দুজনকে। আদালত থেকে জারি হওয়া পরোয়ানার ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি মাঈন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পাহাড়তলী থানা-পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে কারাগারে রয়েছেন মাঈন উদ্দিন।

পিবিআইয়ের তদন্ত ও প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লতিফুন্নেসার স্বামী সফিক উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীর বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। তিনি প্রথমে চাকরি করতেন। পরে সিমেন্টের ব্যবসা করেন। নব্বইয়ের দশকে ব্যবসার সুবাদে চট্টগ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মাঈন উদ্দিন নিজেও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন।

ব্যবসায় সফলতা পেলে মাঈন উদ্দিনের পরামর্শে ১৯৯৭ সালে পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন সফিক। ২০১২ সালে সেই জমিতে বাড়ির কাজ শুরু করেন। জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে ধীরে ধীরে নির্মিত হতে থাকে বাড়িটি। তবে নির্মাণকাজ শুরুর দুই বছর পর থেকে মাঈন উদ্দিন সেখান থেকে জায়গা দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেন।

২০১৬ সাল থেকে সফিক আহাম্মদ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা মামলা শুরু করেন মাঈন উদ্দিন। শ্লীলতাহানি থেকে চাঁদাবাজি কোনো মামলাই বাদ যায়নি। যদিও এসব মামলায় পুলিশ ঘটনার সত্যতা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শুধু মামলা নয়, নানা সময়ে সফিক দম্পতিকে হুমকি-ধমকি দিত মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র।

ব্যবসায়ীর বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়ার শেষ দিকের তিনতলা বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। ছয়তলা পর্যন্ত করার কথা থাকলেও এখন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সফিক ও তাঁর স্ত্রী লতিফুন্নেসা বলেন, চাঁদাবাজদের চক্রে পড়ে এখন বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রায় সাত কোটি টাকা দামের হলেও চাঁদাবাজদের বাধার কারণে মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে জমিসহ বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। বায়না বাবদ ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। বাকি লেনদেন সম্পন্ন হলে শিগগিরই এই বাড়ি ছাড়বেন তাঁরা।

একই এলাকায় আরও অন্তত চারটি পরিবার এই চক্রের খপ্পরে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সবার ক্ষেত্রে কৌশল একই। বাইরের কোনো লোক এই জায়গায় জমি কিনলে তাতে সহযোগিতা করেন তাঁরা। জমিটি নেওয়ার পর বিপত্তি বাধে যখন কেউ বাড়ি করতে যান। বাড়ির কাজ শুরু করলেই জায়গা পাবেন বলে অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। টাকা দিলে মামলা মীমাংসা; না দিলে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়, হয়রানি করা হয়।

লতিফুন্নেসার বাড়ির পাশের এক বাসিন্দা (নাম প্রকাশ করেনি) ১৯৯৭ সালে এখানে জমি কেনেন। ২০১৪ সালে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যে এই চক্রের সদস্যরা জায়গা পাওয়ার অজুহাত তুলে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ওই বছরই মামলা করা হয়। অসহায় পরিবারটি বাধ্য হয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঝামেলা মীমাংসা করে।

সফিকের স্ত্রী লতিফুন্নেসা বলেন, ‘বর্তমানে আমার স্বামী অসুস্থ। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। বাড়িতে আমার এক কন্যা রয়েছে। বলতে গেলে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমি একাই সংগ্রাম করছি। তাদের অত্যাচারে এই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। বায়নার টাকা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে হজ করেছি। শিগগিরই বাড়ি ছেড়ে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে যাব।’

বৃদ্ধ সফিক আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক শখ করে বাড়িটি করেছিলাম স্থায়ীভাবে বসবাস করতে। বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে, কখনো কল্পনা করিনি। কিন্তু এখন একবুক কষ্ট নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম ছাড়তে হচ্ছে।’

সম্প্রতি চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর লেখেন, মামলার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অন্তত ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন। সার্বিকভাবে তাঁর তদন্তে উঠে আসে আসামি মাঈন উদ্দিন ও তাঁর সহযোগী সফিক দম্পতির কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত করে যা পেয়েছি, মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’

২৪ জানুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন অভিযুক্ত মাঈন উদ্দিন। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, জমি কিনলে বা নতুন বাড়ি তুললে চাঁদাবাজদের একটি চক্র ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার ঘটনা চট্টগ্রামে বেড়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপর হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আ স ম মাহতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন ঘর ছেড়ে যাবে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। কেউ অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণা, নেতৃত্বে রিয়াজ-সজল

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমান সজল। ছবি: সংগৃহীত
আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমান সজল। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে ২১৬ সদস্যবিশিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে উন্মুক্ত কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব করা হয়েছে আনিসুর রহমান সজলকে। কমিটিতে বাদ পড়েছেন সাবেক সদস্যসচিব সোহেল রানা। কাজী রিয়াজ আগের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া আনিসুর রহমান সজল আগের কমিটির মুখ্য সংগঠক ছিলেন।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, আহ্বায়ক রিফাত রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। আগামী ছয় মাসের জন্য এই কমিটির মেয়াদ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আজ সোমবার সকালে নতুন কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেন আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ।

২১৬ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল চৌধুরী, মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব সাজ্জাদ হোসেন, মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ সোহেল ইসলাম ও সিনিয়র সংগঠক শাহীন বাশার। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন ৪০ জন, যুগ্ম সদস্যসচিব ৩৭, সহমুখপাত্র ৩২, সংগঠক ৪০ এবং সদস্য রয়েছেন ৬০ জন।

নতুন করে সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমান সজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই কমিটির সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ফরিদপুরে জুলাইয়ের চেতনাকে টিকিয়ে রাখা। জুলাই যোদ্ধাদের আবেগ, অনুভূতি, চাওয়া ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাব আমরা। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফরিদপুর জেলাকে বৈষম্য মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া আমাদের প্রত্যয়।’

কমিটির অগ্রযাত্রা নিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে কাজী রিয়াজ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম অনেক শহীদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি এবং এর দায়বদ্ধতা অনেক। কমিটিতে যারা আসছে, তারা ইনশা আল্লাহ সুন্দর এবং জবাবদিহিমূলক এক বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাবে। এই প্ল্যাটফর্ম অরাজনৈতিক, কিন্তু বৈপ্লবিক ঘরানার কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখবে। কমিটিতে যাদের নাম আসছে বা আসে নাই, তাদের সকলের সহযোগিতা চাই।’

উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ছয় মাসের জন্য ৬০৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব ছিলেন সোহেল রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল, অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক স মিলমালিকের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে সাহেবেরহাট সড়কের রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে আকুল বালার মালিকানাধীন স মিলের পূর্ব পাশে একটি সরকারি খালের মধ্যে প্রায় ১০০ হাত দীর্ঘ দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে।

এরপর রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারীকে সরেজমিন পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় দোকানঘর নির্মাণ না করার মর্মে স মিলমালিকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেওয়া হয়। তবে কিছুদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর আবারও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন আকুল বালা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণ করা হলে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানখেতে পানি সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত আকুল বালা বলেন, ‘খালের মধ্যে ব্যবসার জন্য দোকান ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অফিস থেকে দোকান ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। তাই আমি বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছি।’

স্থানীয় হরেন বালা, হরশিদ রায় জানান, খালের মধ্যে ১০০ হাত লম্বা একটি ঘর দুই মাস আগে নির্মাণ শুরু করেছিলেন আকুল বালা। প্রশাসন ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় পরেও তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে আকুল বালা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারী বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণের কাজ আগে একবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার কাজ হলে সরেজমিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজীদ সরদার জানান, বন্ধ করে দেওয়া দোকানঘর পুনরায় নির্মাণ করা হলে সরেজমিন পরিদর্শন করে তা ভেঙে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা ওয়াসার দুর্নীতি: ঘুষে বন্ধ বকেয়া বিলের চাপ

  • ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি
  • সংস্থাটির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা
  • কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা ওয়াসার ৪৪ হাজার ১১ জন গ্রাহক। এর মধ্যে ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব মিলিয়ে সংস্থাটির বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘুষ নিয়ে ফিরে আসেন। ফলে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। এ সময় বিল পরিশোধে গ্রাহকদের সতর্ক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বকেয়া আদায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। এ সুযোগটি নিচ্ছেন সাধারণ কর্মচারীরা। তাঁরা কর্মকর্তাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ ফাঁকি দেওয়াসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশও মানছেন না।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, কিছু গ্রাহক বিল কিস্তি করে নিয়ে গেলেও সেই কিস্তি পরিশোধ করেন না। অনেকের নাম-ঠিকানা ভুয়া থাকায় তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রাহকসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই বিল পরিশোধ করেন না। অনাদায়ি গ্রাহকের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত। এ ছাড়া বয়রা মহিলা হোস্টেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া রয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের গঠিত আদায়কারী টিমের সদস্য ও বিল প্রদানকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় লাখ থেকে ২ লাখের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠানো হলেও তারা আদায়কারীদের ৩-৪ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি গ্রাহকের বাসাবাড়িতে মিটার রিডিং এবং বিল পৌঁছে দেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অথচ এরা ঠিকমতো বিল পৌঁছান না। আবার তিন-চার মাসের বিল একসঙ্গে পাঠিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য করেন, এই অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আমির সুলতান’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘আগে দুর্নীতি হতো কি না জানি না। তবে এখন ডিজিটাল হওয়ায় সেই সুযোগ নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি গ্রাহকের মিটারের ছবি তুলে অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়া এবং প্রতি মাসে পানির বিল গ্রাহকদের হাতে পৌঁছানো। আর এ কাজের জন্য চারজন সুপারভাইজারসহ ৩৪ জন কর্মী কাজ করছে।’

প্রকল্প কর্মকর্তা স্বীকার করে বলেন, ‘অনেক সময় অফিস থেকে আদায়কারীরা গেলে গ্রাহকেরা মাঝেমধ্যে আমাদের ফোন দেন। এটা কোনো অন্যায় নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিল আদায় করে না, কাজেই আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ওয়াসার বাণিজ্য ব্যবস্থাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘বকেয়া আদায়ে নিয়মিত মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নোটিশ প্রদান এবং বাড়ি বাড়ি লোক পাঠানো হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার দু-একটি অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা প্রমাণিত হয়নি।’

খাদেমুল আরও বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ বকেয়া ২ লাখের বেশি নয়। বকেয়া অনাদায়ির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে গ্রাহকেরা গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াসার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না। গভীর নলকূপে মাসে খরচ হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা। আর ওয়াসাকে দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। সে কারণে কিছু গ্রাহক এখন অনুমোদন ছাড়াই গভীর নলকূপ বসাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওয়াসা।’

ওয়াসার পরিচালক শেখ দিদারুল আলম বলেন, ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওয়াসার বোর্ড সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছিল। সেখানে আউটসোর্সিং ঠিকাদার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অনেকেই পানির বিল দেয় না। বিল পরিশোধের জন্য সতর্ক করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত