Ajker Patrika

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্রের খোঁজ মেলেনি আজও

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, ২৩: ৫৭
ওমর ওরফে বেলাল হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
ওমর ওরফে বেলাল হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তেরো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলামে ভর্তি হয়েছিলেন বরগুনার ওমর ওরফে বেলাল হোসাইন। পরিবারের স্বপ্ন ছিল, বেলাল একদিন আলেম হয়ে সমাজে আলো ছড়াবেন। কিন্তু সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কারণ, প্রায় এক বছর ধরে বেলাল মাদ্রাসা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। তিনি কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত, তা তাঁর পরিবার বা মাদ্রাসার শিক্ষক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেলাল বরগুনার বামনা উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। ২০১৮ সাল থেকে মাদ্রাসাটিতে পড়তে থাকা এই শিক্ষার্থী নিখোঁজের আগে মাস্টার্স শেষ করে দুই বছরের ক্বিরাত কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন।

পরিবারের ভাষ্য, মাদ্রাসায় পড়ার সময় বেলালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রায়ই তাঁর পরিবারের যোগাযোগ হতো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৫ জুলাই তাঁর বাবার সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল বেলালের। এরপর আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসায় গিয়েও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বেলালের পরিবার জানায়, সরকার পতনের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে তাঁর বড় ভাই সুমনের ফোনে একাধিক খুদেবার্তা আসে। এমন বার্তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এসেছিল। তাতে বেলাল বিপদে রয়েছেন দাবি করে উদ্ধারের আকুতি জানায়। বার্তাটি ছিল—‘আমার শরীর ভালো না, আমাকে উদ্ধার না করলে মারা যাব।’ পরে ১ সেপ্টেম্বর আরও একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে বেলালের সঙ্গে তাঁর বড় ভাইয়ের সরাসরি কথা হয়েছিল।

বেলালের বড় ভাই সুমন জানান, সর্বশেষ যখন বেলালের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তখন তিনি কোথায় আছেন—জানতে চাইলে জায়গাটা চেনেন না বলে জানান। এরপর এক বছর হয়ে গেল বেলালের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি সুমনের।

অজ্ঞাত নম্বর থেকে পাঠানো বার্তাগুলোর স্ক্রিনশট ও কথোপকথনের রেকর্ড আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে; যার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।

বেলাল নিখোঁজের বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বলছে, বেলাল হয়তো মাদ্রাসা থেকে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে পরিবারের দাবি, বেলাল যদি আত্মগোপনে যেতেন, তাহলে কেন তিনি সাহায্য চাইবেন?

বেলালের বড় ভাই সুমন বলেন, ‘নিখোঁজের পর আমরা মাদ্রাসার অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। “সিফাত” নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বেলালের ঝামেলা ছিল, সে তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। আমার ভাই অপহৃত হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনায় জিডি, মামলা করলেও তদন্তের একটি পর্যায়ে এসে অগ্রগতি দেখছি না।’

গত বছরের ৩১ আগস্ট হাটহাজারী থানায় জিডি করে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর পরিবার। একই বছর ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতে অপহরণের মামলা করে তারা। মামলায় মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী ও বেলালের সহপাঠী রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহ এবং দুই শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও মো. কাসেমকে আসামি করা হয়। ওই দিন আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের ভার দেওয়া হয় র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামকে।

জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ক্বিরাত বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় সে (বেলাল) আমার অধীনে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে থাকত। গত বছরের মে মাসে বেলাল কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে বের হয়, পরে মাসখানেক ফেরেনি। নিয়ম অনুযায়ী তার সিট তখন বাতিল করা হয়। পরে সে মাদ্রাসায় এসেছিল, কিন্তু সিট না থাকায় চলে গিয়ে বাইরে আশপাশে থাকা শুরু করে। আমি এতটুকুই জানি। কিন্তু নিখোঁজের পেছনে তার পরিবার আমাকে দোষারোপ করছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ ওই শিক্ষক আরও বলেন, ‘শুনেছি, সে (বেলাল) চাকরির খোঁজ করছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আত্মগোপনে গেছে।’

ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় আরেক অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

হাটহাজারী থানায় করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, বেলালের মোবাইল থেকে পাওয়া বার্তার সূত্র ধরে ট্র্যাক করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টে সেটি টেকনাফের মহেশখালী নোয়াপাড়ায় সক্রিয় ছিল। সেখানে অভিযান চালানো হলেও বেলালকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, মোবাইলটির স্থান একবারই শনাক্ত করা গেছে, পরে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিখোঁজের প্রায় দেড় মাস পর জিডি করায় সিসিটিভি ফুটেজও আর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাষায়, বেলাল সম্ভবত স্বেচ্ছায় মাদ্রাসা ত্যাগ করেছেন।

আদালতে করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, ‘মামলাটি পাওয়ার পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল উভয়ভাবে অনুসন্ধান চলছে। ঊর্ধ্বতন অফিসারেরাও এই মামলার বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। টেকনাফ-উখিয়ায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিকটিমকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি। তবে একটা ভালো কিছু আশা করছি। সময় হলে জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ওপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালে। সে সময় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেতু থেকে নাসিম ওসমানের নাম মুছে ফেলা হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ওসমান হাদির নামে সেতুটির নামকরণ করেছেন বন্দর এলাকার ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকেলে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বন্দর রেললাইন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মদনগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা।

নতুন নামকরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ছাত্র-জনতার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আয়োজকদের দাবি, ওসমান হাদিকে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাঁর হত্যার বিচার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের একজন রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর নাম স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর নামকরণ করব। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী নাসিম ওসমানের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে দেশের একজন মহানায়ক হাদি ভাইয়ের নাম স্থাপন করা হলো। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নাম স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত