Ajker Patrika

`পত্রিকায় লেখালেখি করায় অকথ্য নির্যাতন করেছেন প্রদীপ'

কক্সবাজার প্রতিনিধি
`পত্রিকায় লেখালেখি করায় অকথ্য নির্যাতন করেছেন প্রদীপ'

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আজ বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে এ সময় তাঁরা টেকনাফ থানায় কর্মরত থাকাকালীন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। 

আদালতকে নির্যাতিত স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বলেন, `ওসি প্রদীপের অনিয়ম, নির্যাতন ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার কারণে আমাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল। ঢাকার মিরপুরে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রদীপ আমাকে গ্রেপ্তার করে টেকনাফে নিয়ে আসেন। থানায় এনে অকথ্য নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমি পানি পান করতে চাইলে প্রদীপ প্যান্টের চেইন খুলে আমার মুখে প্রস্রাব করে দেয় এবং চোখে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দেয়।' 

ফরিদুল মোস্তফা খান জবানবন্দিতে আরও বলেন, `এমন নির্যাতন চালানোর পর ওসি প্রদীপ ইয়াবা, অস্ত্র ও মদের বোতল উদ্ধার দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। প্রায় ১১ মাস জেল খাটার পর সিনহা হত্যার পর আমি ছাড়া পাই।' 

এ ছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকার বেবী বেগম ও সালেহ আহমদ একইভাবে ওসি প্রদীপের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামি হাজির ছিলেন। 

গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার ১৭ নম্বর সাক্ষী হামজালালকে আসামিপক্ষের জেরার মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়। পরে আদালত আগামী ১০,১১ ও ১২ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, এ মামলায় সাক্ষীরা গত দুদিন ওসি প্রদীপ টেকনাফে কর্মরত থাকাকালীন যেসব অন্যায়, নির্যাতন ও দুর্নীতি করেছেন তার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। এ পর্যন্ত চার দফায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়ার শামলাপুর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মামলার ১৫ আসামি কারাগারে রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ গ্রেপ্তার ৫

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনায় দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার ভোরে নগরীর লবণচরা থানার মতিয়াখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তাঁরা পুলিশি হেফাজতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লবণচরা থানার মতিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশারের ছেলে ইমন শরীফ, একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুলের ছেলে সবুজ সাহা, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা হাবিব হাওলাদারের ছেলে ফারুখ হোসেন, পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার কাউখালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে শাহরিয়ার এবং জয়কুল এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদের ছেলে সজল খান।

জানতে চাইলে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিনুজ্জামান বলেন, মেজর মাসুকের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী শিপইয়ার্ড এলাকার মতিয়াখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে উল্লিখিত আসমিদের আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে শর্টগানের ৬টি গুলি, ২টি বিদেশি মদের বোতল, ২টি ধারলো ছুরি এবং ১১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করে। আসামিরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাঁদেরকে পুলিশি হেফাজতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে আবারও প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরায় ডিএনসিসি আয়োজন করে ‘হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান’।

অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে দেখিয়ে দিয়েছি যে চাইলেই ঢাকার ভেতরে ওয়াটারওয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কনাই নদ উদ্ধার করে নৌচলাচল উপযোগী ৯ কিলোমিটার নদে প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে ফিল্ড স্টাডি ও পরে উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

উত্তরাবাসীর পক্ষে বক্তব্যে কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস ডিএনসিসির প্রশাসকের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে হারিয়ে যাওয়া কনাই নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

পাউবোর বোর্ড সদস্য আমিনুর রসুল বলেন, নতুন করে ৯ কিলোমিটার নৌপথ যুক্ত হলো। এখন এটি রক্ষার দায়িত্ব এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডে ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে যাই, অথচ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে এর চেয়েও সুন্দর পর্যটন এলাকা তৈরি করা সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম শামসুল আলমসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ঢাকা গ্যাজেটিয়ার এবং ১৯৬০ সালের ঢাকা ম্যাপে রাজধানীর ভেতরে কনাই, নড়াই, দেবদোলাই, জিরানি প্রভৃতি নদ-নদীর অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এসব নদী হারিয়ে যায়। ডিএনসিসির উদ্যোগে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নদ খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কনাই নদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে নদটি ‘খিদির খাল’ নামে পরিচিত। কনাই নদ আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে গড়ান চটবাড়ি হয়ে দ্বিগুণ খাল অতিক্রম করে তুরাগ নদে মিলিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির পানছড়ি: নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশায় তীব্র যানজট, ভোগান্তি

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির পানছড়ির বাজারে ঢুকলেই থেমে যায় যানবাহনের গতি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে সড়ক। অনুমোদনহীন যান, প্রশিক্ষণহীন চালক আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে সীমান্তঘেঁষা এই মফস্বল শহরের বাজার এলাকা এখন স্থায়ী যানজটের ফাঁদে বন্দী। এতে শিক্ষার্থী থেকে রোগী, ব্যবসায়ী থেকে কর্মজীবী—সবাই ভোগান্তির শিকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানছড়ি উপজেলায় এক হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে চারটি অটোরিকশা সমিতির আওতায় নিবন্ধিত রয়েছে সাত শতাধিক যান। বাকি অটোরিকশাগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে রাস্তায় চলাচল করায় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অটোরিকশাচালকদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কাজ না থাকায় ইজিবাইক চালাতে বাধ্য হয়েছি। প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকেই নিয়ম না জেনে গাড়ি চালান।’

আরেক চালক তাজুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স, নিবন্ধন ও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থাকলে চালকদেরও সুবিধা হতো। সরকার যদি সহজভাবে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাজারের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, দোকানে পণ্য আনা-নেওয়ায় মারাত্মক সমস্যা হয়। হাটের দিনগুলোতে বাজার এলাকায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পানছড়ি বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমল বিকাশ চাকমা জানায়, মাত্র ১০ মিনিটের পথ অটোরিকশার ভিড়ে অনেক সময় আধা ঘণ্টা লেগে যায়। হাটের দিনে বাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর।

স্থানীয়দের দাবি, অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, নিবন্ধন কার্যকর করা এবং বাজার এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অধিকাংশ চালকেরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং সড়ক আইন সম্পর্কে ধারণাও সীমিত। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই তাঁরা মানেন না। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনুতোষ চাকমা বলেন, পানছড়িতে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। কখনো কখনো জরুরি রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যানজটে আটকে থাকে, অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।

এ বিষয়ে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার এলাকায় পুলিশ বক্স থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্ধারণ এবং অটোরিকশা সমিতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন: তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা

  • রাউজানে গিয়াস উদ্দিন কাদের ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে মনোনয়ন।
  • চন্দনাইশে আ.লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এগুলোর মধ্যে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দীর্ঘদিনের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার—দুজনকেই বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তকে দলীয় কৌশল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন আহমেদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে থাকারও অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে জসিম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী। এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

আসন তিনটিতে এই পাঁচজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে নির্বাচন ঘিরে দলীয় অন্তর্কোন্দলের শঙ্কা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের বর্তমান দৃশ্য দেখে মনে হয়, ফুটন্ত উনুন থেকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে পড়েছি আমরা। বিপ্লবের পরও আগের একই চেহারা দেখা যাচ্ছে প্রার্থী মনোনয়নে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মাসে রাউজান উপজেলায় ১৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ১৩টি। যাঁরা খুন হয়েছেন, তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অথবা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার এবং বালুমহাল ও পাহাড় কাটার মাটি নিয়ে দ্বন্দ্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া গত ১৬ মাসে গুলিবিনিময়ের ৩২টি ঘটনায় অর্ধশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আসনটিতে প্রথম দফায় বিএনপির কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকেও।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা আমাকে বাদ দেওয়াসংক্রান্ত দলীয় নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি। আমার জানামতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাউজানে দুজনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে রেখে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’

এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রার্থী লেয়াকত আলী বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলাম। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ ভোটার আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমার ছবি থাকতেই পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত