Ajker Patrika

সম্পদে সাক্কু ও মামলায় কায়সার এগিয়ে, নৌকার রিফাতের নেই নগদ টাকা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১৪: ১২
সম্পদে সাক্কু ও মামলায় কায়সার এগিয়ে, নৌকার রিফাতের নেই নগদ টাকা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। প্রার্থীদের মধ্যে ফৌজদারি মামলায় শীর্ষে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সার। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক জানিয়েছেন পেশায় ঠিকাদার হলেও তাঁর কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আসন্ন কুসিক নির্বাচনের ছয় মেয়র পদপ্রার্থী হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন—বিএনপিপন্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার, আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ; জন্ম ১৯৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ২০০১ সালের একটি হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় তিনি বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত নন। পেশায় ঠিকাদার হলেও তাঁর কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। নিজের আয়ের উৎস হিসেবে তিনি কৃষি খাত, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসাকে দেখান। এই খাতগুলো থেকে তাঁর মোট বার্ষিক আয় ২২ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকা দেখানো হয়েছে।

হলফনামায় রিফাত পরিবারের সদস্য ও অন্য উৎস থেকে বার্ষিক ৭ লাখ টাকার বেশি আয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং স্ত্রীর স্বর্ণালংকার, পোস্টাল ও বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে ৭৮ লাখ টাকার বেশি জমা থাকা এবং একটি কোটি টাকার জিপ গাড়িসহ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ঢাকা ও কুমিল্লায় একটি করে দুটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করলেও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনো নগদ অর্থ নেই।

মনিরুল হক সাক্কু কুসিকের দুবারের মেয়র। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ ডিসেম্বর। তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে দুদক ও আয়কর আইনের দুটি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে থাকা হত্যাসহ ফৌজদারি ও অন্যান্য আইনে করা ১০টি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।

বিএনপিপন্থী এ মেয়র পদপ্রার্থীর সম্পদ গত পাঁচ বছরে অনেকটা বেড়েছে। হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যমতে, ২০১৭ সালে হলফনামায় সাক্কুর নিজ নামে নগদ ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩০৬ টাকার কথা বলা ছিল। এবার নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকায়। স্ত্রীর নামে ২০১৭ সালে ছিল ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ টাকা, যা এবার হয়েছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা। এ বছরের তথ্যে তার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য খাতে আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ খাতে নির্ভরশীলদের কাছ থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যবসা খাতে নির্ভরশীলদের আয় বছরে ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। তিনি মেয়র হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কোম্পানিতে নিজের ও স্ত্রীর নামে জমার পরিমাণ ১ কোটি টাকার বেশি। যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের নামে একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ ও স্ত্রীর নামে একটি জিপ গাড়ি।

এ ছাড়া ২০ একর কৃষি জমি ও ১৪৬ শতকের একটি পুকুর, নাল জমি ১০৪ শতক, স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ২৩ একর জমি, নিজের নামে রাজধানী ঢাকায় পৃথক পাঁচটিসহ কুমিল্লার বজ্রপুর এলাকায় মোটি ৪১ শতক জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে স্থাবর সম্পত্তির তালিকায়। স্ত্রীর নামে কুমিল্লা ও রাজধানীতে থাকা ফ্ল্যাট ও দোকান এবং ভবন মিলিয়ে যে সম্পদের হিসাব তিনি দিয়েছেন, তাতে এবারের কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সম্পদশালী।

সাক্কু সম্পদে এগিয়ে থাকলে আরেক বিএনপিপন্থী প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার এগিয়ে আছেন মামলা সংখ্যায়। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হয়েছেন। নিজাম উদ্দিন কায়সারের জন্ম ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা রয়েছে আটটি। আর খালাস পেয়েছেন চারটি মামলা থেকে। দ্রুতবিচার আইনের একটি মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। বার্ষিক আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে, চাকরি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য উৎস থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ৬২৭ টাকা। নগদ আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণ ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আয় ৪০ হাজার টাকা। নিজের ৩০ তোলা ও স্ত্রীর ২০ তোলা স্বর্ণ আছে।

এবারের নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএসএস পাসের কথা উল্লেখ করেছেন। হলফনামা অনুসারে, তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ ও ২০১৯ সালের পৃথক দুটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। তিনি অতীতে দুটি ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এ ছাড়া একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সাজার আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত আছে। কৃষি, ব্যবসা ও অন্যান্য খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি। আর তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫৮ টাকা। স্ত্রী নামে নগদ ও ব্যাংকে আছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের একটি জিপ, স্ত্রীর একটি ব্যক্তিগত গাড়ি।

কুসিক নির্বাচন সম্পর্কিত খবর জানতে - এখানে ক্লিক করুন

অন্য দুই প্রার্থীর মধ্যে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার, আর ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৪২৮ টাকা। অকৃষি জমি আছে ৮ দশমিক ২৫ শতক। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল জানিয়েছেন, ১৯৫৮ সালের ২১ জুন জন্ম নেওয়া বাবুলের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ৫০ হাজার। আর ব্যাংকে আছে ৫ হাজার টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে।

কুসিক নির্বাচন ২০২২ সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নকলায় ৭ অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সাতটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় ভাটামালিকদের মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ইটভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মালিকপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশের ক্ষতি রোধ ও সরকারি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাবিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ডিনদের পদত্যাগ ইস্যুতে ছাত্রদল

রাবি প্রতিনিধি 
রাবিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ডিনদের পদত্যাগ ইস্যুতে ছাত্রদল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে শাখা ছাত্রদল। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করছে।

বিবৃতিতে ছাত্রদল নেতারা বলেন, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের দেওয়া হুমকিমূলক বক্তব্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি অশোভন এবং অছাত্রসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। একজন ছাত্রনেতার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ জ্ঞানচর্চার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে বারবার মারমুখী ও অশালীন আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত “তালা ঝোলানো” সংস্কৃতি ফ্যাসিবাদী মানসিকতারই প্রতিফলন। এর আগেও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ একজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, যা সারা দেশের শিক্ষক সমাজের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।’

ডিনদের পদত্যাগের বিষয়টি কেন্দ্র করে তারা বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মব-সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। সালাহউদ্দিন আম্মারের মতো কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা চালালে ছাত্রদলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।’

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা। তবে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া অহেতুক ট্যাগিং ও অপপ্রচারের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।

এদিকে ছাত্রদলের বিবৃতি প্রসঙ্গে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউট ছাত্রদল যেহেতু আমাকে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সেহেতু আমি সঠিক পথেই আছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের নেতা-কর্মী নাকি আমাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘মনোনয়নপত্র নেওয়ার দিন মনে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের না, রাজশাহীর সর্বস্তরের কর্মী নিয়েও লাভ হয় নাই। সালাহউদ্দিন আম্মার একা দাঁড়াইয়া ছিল, ওই দিনও সব নেতা-কর্মীর স্লোগান, হুমকি-ধমকি দিয়ে একটা চুলও ছিঁড়তে পারে নাই। ডিনদের পদত্যাগ করাইলাম বাকি কাজও করে যাব।’

একই দিন রাতে জিএস আম্মারের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘একজন নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে রাকসুর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বশীলতা, সংযম ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বক্তব্যে তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘অনুষদ অধিকর্তাদের নির্বাচিত মেয়াদ সমাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তাঁদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভেতরে আলোচনা, আবেদন কিংবা প্রতিবাদের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই পথ অনুসরণ না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য, কুরুচিপূর্ণ ভাষা প্রয়োগ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি প্রদান আইনশৃঙ্খলা, শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।’

উল্লেখ্য, গতকাল সকাল থেকে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ দাবিতে আম্মারের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এতে ডিনদের চেম্বারে তালা ঝোলানোর পাশাপাশি প্রশাসনের সকল দপ্তরে তালা দেন তাঁরা। পরে এদিন রাতে এক সভায় ছয় ডিন তাঁদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রিমান্ডে নেওয়ার সময় কাশিমপুর কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর প্রতিনিধি
ওয়াসিকুর রহমান বাবু। ছবি: সংগৃহীত
ওয়াসিকুর রহমান বাবু। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রিমান্ডে নেওয়ার সময় হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। কারাগারের অফিস কক্ষে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মারা যাওয়া নেতার নাম ওয়াসিকুর রহমান বাবু (৪৩)। তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের এনায়েতুর রহমানের ছেলে। বাবু রাজধানীর বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সুপার আল মামুন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন ওয়াসিকুর রহমান বাবু। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ওই মামলায় আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশের একটি দল তাকে হেফাজতে নিতে কারাগারে আসে। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলাকালে তাকে অফিস কক্ষের (ভর্তি শাখা) একটি চেয়ারে বসানো হয়। এ সময় তিনি হঠাৎ চেয়ার থেকে ঢলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ঘটনায় পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনার ৩৬ আসন: বেশি ঝুঁকিতে ৮৪২ কেন্দ্র

  • সন্ত্রাসকবলিত এলাকা বিবেচনায় তিন ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে।
  • বিভাগে মোট ৫ হাজার ১৩৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
  • মহানগরীর ৭৯টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৯
ভোট
ভোট

খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনে মোট ৫ হাজার ১৩৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪২টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি জেলার ৩৪টি আসনে ৭৬৩টি এবং খুলনা মহানগরীর দুটি আসনে ৭৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) রয়েছে ১ হাজার ৮৫১টি ভোটকেন্দ্র।

প্রতিটি থানা থেকে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিভাগের ১০ জেলায় ৩৪টি আসনে ৪ হাজার ৮২৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৭৬৩টি। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ১ হাজার ৭২৩টি কেন্দ্র এবং সাধারণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৩৩৮টি।

সূত্র আরও জানায়, খুলনা জেলায় ১৩৫টি ভোটকেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। যশোরে ১৮৬টি, বাগেরহাটে ১৮৬টি, সাতক্ষীরায় ৫৯টি, যশোরে ৭১টি, ঝিনাইদহে ৩৩টি, মাগুরায় ৫৫টি, নড়াইলে ৪২টি, কুষ্টিয়ায় ৯৯টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫৭টি এবং মেহেরপুরে ২৭টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি (অপারেশনস) শেখ জয়নুদ্দিন বলেন, তিন ক্যাটাগরিতে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় থানা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকল্পে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ কাজ করবে। এ লক্ষ্যে পুলিশের ২৮টি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০টি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, বাকি ৮টি প্রশিক্ষণ হবে।

খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে দুটি আসন। খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) এবং খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী-আড়ংঘাটা) আসন। আসন দুটিতে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩০৯টি। এর মধ্যে ৭৯টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৮টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ দুটি আসনে ৬৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে পুলিশ।

এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার আগেভাগেই মহানগরীর ভোটকেন্দ্রগুলো যাচাই করেছে পুলিশ। এতে ৩০৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৮টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, খুলনা জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৮৪০টি। এর মধ্যে মহানগরীর ভেতরে রয়েছে ৩০৯টি কেন্দ্র। খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসনের সব ভোটকেন্দ্রই মহানগরীর ভেতরে। এর বাইরে খুলনা-১ আসনের ১৫টি এবং খুলনা-৫ আসনের ২২ কেন্দ্র পড়েছে নগরীর সীমানায়। এসব এলাকার সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধু মহানগরীর কেন্দ্রগুলোর ঝুঁকি আগে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে মহানগরীর ভেতরের ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে ঝুঁকি বিবেচনার জন্য থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। মহানগর পুলিশের আটটি থানার ওসি গত মাসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান জানান, আগে ওই কেন্দ্রে কখনো গোলযোগ হয়েছে কি না, কোনো কারণে অতীতে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়েছে কি না, কেন্দ্রটি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির আশপাশে কি না, ভোটকেন্দ্রটি দুর্গম এলাকায় কি না, কেন্দ্রের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর অথবা নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে কি না, অপরাধ করে দ্রুত সটকে পড়ার আশঙ্কা কেমন–এসব বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ তালিকা করা হয়।

খুলনা-৩ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, ভোটকেন্দ্র ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এবার ভোটকেন্দ্রে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন, কয়েক মাস আগে থেকেই তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এখনো প্রশিক্ষণ চলছে। ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ যেন না হয়, সে জন্য করণীয়, গোলযোগ হলে কী করতে হবে—এসব বিষয়ে বিশদভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, খুলনার ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৪১টিতে নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। নির্বাচনের আগে বাকিগুলোতে ক্যামেরা সংযোজন করা হবে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কাছেও ক্যামেরা থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত