Ajker Patrika

সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন দুদকের শরীফ উদ্দিন

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৯
সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন দুদকের শরীফ উদ্দিন

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কারণেই চাকরি হারিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহাকারী পরিচালন মো. শরীফ উদ্দিন। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। যদিও দুদক স্পষ্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের কথা বলছে না। তবে জানা যাচ্ছে, এসবের বাইরে সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন শরীফ উদ্দিন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি দুর্নীতিবিরোধী সভায় যান দুদকের তৎকালীন সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। সেখানে সপরিবারে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলে দুই রাত কাটিয়ে লক্ষাধিক টাকা বিল করেছিলেন। তাঁর যাবতীয় বিল পরিশোধ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দুদকের অধস্তনেরা। এই বিল নিয়ে শুরুতেই আপত্তি জানিয়েছিলেন সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি তখন সচিবের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন।

সচিবের ওই ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে শরীফের মনোমালিন্য তৈরি হয়। এর পরই গত বছরের ১৬ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।

অনেকে ধারণা করছেন, দুদক কর্মকর্তার হঠাৎ বদলির পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে সচিবের বিল পরিশোধ না করাও একটি। আজ শুক্রবার শরীফ উদ্দিনও একই ধারণার কথা আজকের পত্রিকাকে জানান।

দুদকের তৎকালীন সচিবের ওই সফর নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, দুদক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সফরসংশ্লিষ্ট অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সফরে এসে সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার কক্সবাজারের দুটি হোটেলে ছিলেন। প্রথমে ছিলেন সৈকত এলাকার পাঁচ তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টে। পরে ওঠেন হোটেল সেন্ট মার্টিন রিসোর্টে। সচিব সেখানে সপরিবারে ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে সচিবের প্রটোকলের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন এনডিসি সহকারী কমিশনার মাখন চন্দ্র সূত্রধর। অন্যদিকে রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দুই কর্মকর্তার হাত দিয়ে সচিবের বিলের টাকা পরিশোধ করা হয়। আর দুদকের পক্ষ থেকে বিলের একটি অংশ পরিশোধ করেন শরীফ উদ্দিন। দুদক সচিবের হোটেল দুটিতে থাকা এবং বাইরে খাওয়া বাবদ সব বিলই কক্সবাজার ডিসির নামে করা হয়।

জানা যায়, সচিবের হোটেল সেন্টমার্টিন রিসোর্টে থাকা বাবদ ৩৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করেন দুদকের কর্মকর্তা শরীফ। এ ছাড়া হোটেল সায়মন রিসোর্টে একটি ভ্যাটের চালানে দেখা যায়, হোটেলটির ৭৩ হাজার ৯৬১ টাকার বিল পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নামে পরিশোধ হয়। সফরকালে দুদক সচিবের খাবারের বিল বাবদ ৩৮ হাজার ৩৬০ টাকাও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নামে হয়েছিল।

জানা গেছে, এসব টাকা সচিবের ব্যক্তিগত খরচ হওয়ায় প্রথমে দুদকের প্রটোকল কর্মকর্তা বিলগুলো পরিশোধে আপত্তি জানান।

সফরসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, সচিবের সঙ্গে পরিবারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাও ছিলেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তৎকালীন রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি তখন ছিলাম না।’ ওই সফরের পর দুদক সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান জাফর সাদিক।

তৎকালীন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচিবের প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা মাখন চন্দ্র সূত্রধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিব মহোদয়ের থাকা বাবদ হোটেলগুলোর বিলের টাকা পুরোটাই জেলা প্রশাসন পরিশোধ করেনি, কিছু বিল পরিশোধ করেছে। আর কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এটা জেনে বলতে হবে। কারণ ওই ঘটনার পর আমি এসি (ল্যান্ড) হিসেবে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে এসেছি। আমি কক্সবাজারের বর্তমান এনডিসির নম্বরটা দিচ্ছি। ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বর্তমান এনডিসি ইমরান জাহিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সফরে আসা কোনো সচিব বা কর্মকর্তার হোটেলে থাকা বাবদ বিল আমার জানামতে ডিসি অফিস থেকে পরিশোধ করা হয় না। আমার চাকরিজীবনে কখনো এভাবে বিল পরিশোধ করতে দেখিনি।’

এনডিসি বলেন, ‘দুদক সচিবের সফরকালে আমার জায়গায় তখন অন্যজন দায়িত্বে ছিলেন। সেই বিল কীভাবে পরিশোধ হয়েছিল তা উনিই (তৎকালীন এনডিসি) বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুদক সচিবের দুটি হোটেলের বিল বাবদ ১ লাখ ১২ হাজার টাকার মতো পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। এসব টাকা ওনার ব্যক্তিগত খরচ ছিল। কিন্তু বিলটি পরিশোধের বিষয়ে আমি আপত্তি জানাই। ব্যক্তিগত খরচের টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে কেন পরিশোধ করা হবে? পরে সিনিয়রদের মধ্যস্থতায় আমরা একটি হোটেলের বিলের টাকা পরিশোধ করি। শুনেছি, বাকি বিল জেলা প্রশাসন থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।’

সচিব সফরের তিন মাসের মধ্যে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে দুদক সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদেক চৌধুরী। পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে মাখন চন্দ্র সূত্রধর নিজ বিভাগে সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে পদায়ন পান।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নগর সভাপতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতারুল কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সফরে আমলাদের জন্য সার্কিট হাউসগুলো বরাদ্দ থাকে। সার্কিট হাউসগুলো কোনো কারণে খালি না থাকলে সরকারি, আধা সরকারিসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রাজকীয় রেস্ট হাউস রয়েছে। কিন্তু সরকারি সফরে যাওয়া কোনো কর্মকর্তা বাংলাদেশের মধ্যে ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে থাকার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীন হলে তা ভিন্ন কথা।’

আখতারুল কবির বলেন, ‘এখানে নয়ছয় হয়েছে। আমলাতান্ত্রিকতার এমন চর্চার রাশ টেনে ধরা জরুরি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি দুদকের সচিব হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে এক বছরের মাথায় তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি হন।

এ বিষয়ে ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে ভারত এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে একদিনে সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কি আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এরকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, "তারেক সাহেব কখন আসবেন এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে, আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্রাফট নিয়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে। "

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। "

এছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সবক্ষেত্রে নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবারে রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত