Ajker Patrika

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৫৯
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

বগুড়ার সুপরিচিত ও বৃহৎ সরকারি কলেজ আজিজুল হক কলেজ। উত্তরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি থেকেই যাওয়া-আসা করেন। এক বছর আগে পরিবহনসেবা সীমিত করায় নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা । ফলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে কলেজের বাসগুলো শিক্ষার্থীদের শুধু নিয়ে আসছে, কিন্তু ক্লাস শেষে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীরাও গণপরিবহনে যাতায়াত করায় অনিরাপদ বোধ করেন। এর ফলে একদিকে পরিবহনে তাঁদের দেওয়া ফি যেমন আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তার ওপর বাড়তি গাড়িভাড়াও দিতে হচ্ছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে ভাড়ার টাকা জোগানোর সামর্থ্য না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী কলেজেই আসছেন না।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর পরিবহন ফি বাবদ আদায় করা হয় মাথাপিছু ২৭৫ টাকা। ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২৭৫ টাকা করে নিলে বছরে কলেজের কোষাগারে জমা হয় ৭১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন পরিবহন সীমিত করে কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বাদ দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। 

কলেজ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছেন মোট ২৬ হাজার। এদের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হলে থাকেন ৬০০ জন। ব্যক্তিগত খরচে মেসে থাকেন আনুমানিক ১১ হাজার জন। বাকি প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসা করেন। 

কলেজের পরিবহন পুলের মোট সাতটি বাসে ৩১০টি আসন আছে। একটি বাস জেলা সদরের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য বরাদ্দ। বাকি ছয়টি বাস যায় সোনাতলা উপজেলার সদর রেলঘুণ্টি, সারিয়াকান্দির উপজেলা বাজার, নন্দীগ্রামের সদর বাজার, শেরপুর-ধুনট মোড়, দুঁপচাচিয়ার জে কে কলেজের সামনে ও শিবগঞ্জের পীরবে। 

এসব বাসস্টপে সকাল ৮টায় গিয়ে বাস থামে; শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজে পৌঁছায়। কিন্তু বিকেলে ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসা হয় না। সকালে কলেজ বাসে এলেও শিক্ষার্থীদের ফিরতে হয় নিজ খরচে, নিজ দায়িত্বে। এই অবস্থা চলছে গত বছরের (২০২১) ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। 

এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা; দৈনিক ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ হচ্ছে তাঁদের। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর পরিবহনসেবা না থাকার কারণে কমেছে ক্লাসে তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি বিভাগের প্রথম বর্ষের ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও এ বছর তা কমে ৩০-৫০ জনে ঠেকেছে। 

আজ সোমবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে ৩০ জন উপস্থিত আছেন। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ জন। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে উপস্থিত আছেন ৬৫ জন শিক্ষার্থী। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩২৫ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমার ক্লাসে শুরুর দিকে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।’

দুপচাঁচিয়া থেকে কলেজে আসেন হিসাববিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লক্ষ্মণ চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, ‘দুপচাঁচিয়ায় যেতে আমার ৬৫ টাকা ভাড়া লাগে। সপ্তাহে চার দিন কলেজে এলে খরচ দাঁড়ায় ২৮০ টাকা। মাসে খরচ হয় ১ হাজার ১২০ টাকা। আমার কৃষক পরিবার। আমি এত টাকা জোগাতে পারি না। তাই কলেজেই আসা কমিয়ে দিয়েছি।’

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘দূর থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করি। কলেজের বাসে নিশ্চিন্তে আসা যায়। কিন্তু অন্যান্য যানবাহনে এলে অনিরাপদ বোধ হয়। মা কলেজে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কলেজ থেকে সোনাতলা বাসস্টপের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার, সারিয়াকান্দির ২২ কিলোমিটার, নন্দীগ্রাম ২০ কিলোমিটার, শেরপুর-ধুনট মোড় ২২ কিলোমিটার এবং শিবগঞ্জ ১৭ কিলোমিটার। দূরত্ব অনুযায়ী ছয়টি উপজেলায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবার যাওয়া-আসা করতে জ্বালানি প্রয়োজন হয় ২০৬ লিটার।

প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ১০৯ টাকা করে হলে দৈনিক ব্যয় ২২ হাজার ৪৫৪ টাকা। সপ্তাহে ৫ দিন কলেজ খোলা থাকে। সে হিসাবে এক বছরে (২৪০ দিন) এই খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এক বেলা আসা-যাওয়ায় জ্বালানি খরচ হয় এর অর্ধেক অর্থাৎ ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাৎসরিক পরিবহন ফি থেকে এই খরচ বাদ দিলে দেখা যায়, এক বছরে লুট হচ্ছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫২০ টাকা।

আজিজুল হক কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবাসিক-অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম পরিবহনসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এই অনিয়ম শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।

‘এমনিতেই কলেজের ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। তার পরও শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া বন্ধ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে আজ সোমবার বিকেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং করার জন্য ঢাকায় এসেছি। আপনি পরে ফোন করেন।’

উনি সন্ধ্যায় কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন দেওয়া হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে কলেজের পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা আরবি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রশিদের কাছে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাস বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন জ্বালানির দাম বেশি, আমাদের ওপর ব্যয় সংকোচন এবং অপচয় রোধ করার তাগিদ রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত আয়শার চিকিৎসা বন্ধ, অর্থাভাবে মানবেতর জীবন

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
শিশু আয়শাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশু আয়শাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের আশেক আলী ও সুমি বেগম দম্পতির আট বছর বয়সী মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম দুর্ভোগের জীবন কাটাচ্ছে। জন্মের পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে তার মাথা। দারিদ্র্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আয়শার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে দরিদ্র এই পরিবারের সবটুকু সম্বল ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে অর্থের অভাবে বর্তমানে শিশুটির চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে অস্বাভাবিক বড় মাথা ও তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে ছোট্ট আয়শা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ওই দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আয়শা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। মাথার ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সে নিজে নড়াচড়া করতে পারে না। প্রস্রাব-পায়খানা করাতে হলে দুজন তাকে ধরতে হয়।

আয়শার মা সুমি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের মাথার ওজন এতটাই বেড়ে গেছে যে একা ধরে রাখা যায় না। নাকে মাংস বেড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো শ্বাসও নিতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসক অপারেশনের কথা বলেছেন। অপারেশনে খরচ হবে প্রায় ৭ লাখ টাকা, অন্যান্য খরচসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। তাই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে।’

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে (নয়া দিগন্ত) আয়শার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দুজন প্রবাসী ব্যক্তি ৩৫ হাজার টাকা সহায়তা করেছিলেন। সেই অর্থে কিছুদিন চিকিৎসা চললেও পরে আর তা সম্ভব হয়নি।

আয়শার বাবা আশেক আলী ও মা সুমি বেগম বলেন, ‘দেশের কোনো বিত্তবান কিংবা প্রবাসী মানবিক মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাহলে আমাদের অবুঝ শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতাম।’

এলাকাবাসীও আয়শার চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিদের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবজি গ্রামে শীতকালীন চাষে ব্যস্ত গোপালগঞ্জের কৃষকেরা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জের ‘সবজি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, সিলনা ও গুয়াধানা এবং টুঙ্গীপাড়া উপজেলার রুপাহাটি, গোপালপুর, মিত্রডাঙ্গা ও বন্যাবাড়ি গ্রামের কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমভেদে সারা বছরই এসব গ্রামের কৃষকেরা নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ করে থাকেন।

চলতি শীত মৌসুমে জমি ও মাছের ঘেরপাড়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, ব্রকলিসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন কৃষকেরা। নিজেদের কষ্টার্জিত বিষমুক্ত ও বালাইমুক্ত নিরাপদ সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে ভালো আয় করছেন তাঁরা। উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকদের সংসারে ফিরছে সচ্ছলতা।

এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। রঘুনাথপুর, সিলনা, গুয়াধানা, গোপালপুর ও মিত্রডাঙ্গা গ্রামের মাঠজুড়ে সারি সারি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, মুলা, পালংশাকসহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি শোভা পাচ্ছে। শুধু জমিতে নয়, মাছের ঘেরপাড়েও লাউ, করলা, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে।

কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে চারা রোপণ, সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্ষেতখামারে। এসব গ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হলো সবজি চাষ। শাকসবজির ফলনেই নির্ভর করে হাজারো কৃষকের জীবন-জীবিকা।

এ বছর এসব গ্রামে সবজির ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলা থেকেও ব্যাপারীরা এসে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারি বাজারে মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং লাউ ২০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিলনা গ্রামের কৃষক প্রমথ ওঝা বলেন, ‘আমরা মৌসুম অনুযায়ী সবজি চাষ করি। শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো ও শাকসবজি চাষ করে সংসারের খরচ ও সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় মেটাই। এই ফসলের ওপরই আমাদের জীবন।’

সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই গ্রামের শিলা ওঝা বলেন, ‘১৫ কাঠা জমিতে সবজি চাষ করেছি। ফসল ভালো হয়েছে, লাভও ভালো হবে। এই চাষ করেই আমরা ভালো আছি।’

সিলনা গ্রামের কিষানি রিতা কীর্তনিয়া বলেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে সবজি চাষ করছি। ভাসমান বেডেও নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করি। এতে ভালো লাভ হচ্ছে। গোপালগঞ্জসহ বাইরের জেলার ব্যাপারীরা এসেও আমাদের কাছ থেকে সবজি কিনে নেয়।’

সিংগারকুল গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘেরপাড়ে টমেটো ও শসা চাষ করেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। টমেটো প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং শসা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের উপপরিচালক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘জেলার প্রায় ৪০ শতক জমি নিচু হওয়ায় কৃষকেরা সারা বছর ঘেরপাড়ে সবজি চাষ করেন। রবি মৌসুমে জমিতে ব্যাপকভাবে সবজি আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের চেয়ে ভালো ফলনের আশা করছি। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেব: ঝিনাইদহে অ্যাটর্নি জেনারেল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ বাজারে কথা বলছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ বাজারে কথা বলছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা ধানের শীষে ভোট করব। ২৮ ডিসেম্বর আমাদের মনোনয়ন জমা দেব। আমি সেই মনোনয়ন জমা দিতে যাব আপনাদের সঙ্গে নিয়ে, আপনাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে। দল ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আমি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে এসে আপনাদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা আগামী দিনগুলোতে সময় কাটাব, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজ যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, অনেকের সঙ্গে হয়তোবা হাত মেলানো হবে না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, ২৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আমি ২৪ ঘণ্টা আপনাদের মাঝে থাকব, পাশে থাকব, সবার সঙ্গে আমি হাত মেলাব, পাশে দাঁড়াব, বুক মেলাব, কথা বলব, কেউ বঞ্চিত হবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য আপনারা কিছু কথা ভোটারদের কানে কানে পৌঁছে দেবেন। সন্ত্রাসকবলিত শৈলকুপাকে গত ১৬ মাসে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত করেছি। আপনারা যাঁরা ভোট চাইতে যাবেন। প্রত্যেক মা-বোনদের বলবেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক পরিবারের মহিলাদের জন্য একটি করে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করা হবে। প্রত্যেক কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আমরা বরাদ্দ করব। যত দিন তিনি জীবিত থাকবেন তত দিন তিনি পাবেন। আমাদের আরেকটি অঙ্গীকার থাকবে কৃষক কার্ড।’

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল আমরা শুনতে পাচ্ছি তাদের মহিলা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেহেশতের টিকিট বিক্রি করছেন। আপনারা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন, এটা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। এটা কোরআনের বাণীর বিপরীতের কথা। যদি এখন বেহেশতের টিকিট দেওয়া হয়, তাহলে রোজ কিয়ামতের দিন কী হবে। এই জিনিসটা আপনারা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার জন্য আপনাদের ভোট চাওয়ার দরকার নেই। আপনি খালি নিশ্চিত করবেন প্রতিটা ভোটার যাতে তার ভোট প্রয়োগ করতে পারে। আমি ভোট চুরির এমপি হতে চাই না। আমি দুর্নীতি করার জন্য এমপি হতে চাইনি। আমি আলিশান বাড়ি, প্রাডো গাড়ি কেনার জন্য এমপি হতে চাইনি। আল্লাহ আমাকে বাড়ি-গাড়ি দিয়েছেন। আমার সন্তান দিয়েছেন। আমি এমপি হতে চেয়েছি এই সমাজকে পরিবর্তন করার অঙ্গীকার নিয়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত