Ajker Patrika

‘পদ-বাণিজ্য’: বরগুনা বিএনপির ৪ নেতার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ 

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮: ২৩
‘পদ-বাণিজ্য’: বরগুনা বিএনপির ৪ নেতার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ 

বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ জেলার শীর্ষস্থানীয় চার নেতার বিরুদ্ধে পদ পাইয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার ব্যবসায়ী স্থানীয় এক বিএনপি নেতা এই অভিযোগের সমর্থনে লেনদেনের তথ্যও সরবরাহ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসব টাকা লেনদেন হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়। এর মধ্যে ৩ ইউনিটের কমিটির বিপরীতে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ মিললেও ১০ ইউনিটে কোটি টাকার পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। 

গত বছর বরগুনা-২ আসনের বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুর পর বরগুনার বামনা উপজেলা বিএনপির ৩ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন খান নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ী ওই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ঢাকার আশকোনা এলাকায় বসবাস করেন এবং রাজধানীতে সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। নিজের অনুসারীদের বরগুনা-২ আসনের আওতাধীন বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী উপজেলা ও পৌর ইউনিটে পদ পাইয়ে দিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, সদস্যসচিব প্রয়াত (৭ জানুয়ারি ২০২৩) তারিকুজ্জামান টিটু, দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক ও তালিমুল ইসলাম পলাশকে ‘ম্যানেজ’ করতে ১০ লাখ টাকা দেন তিনি।

চার নেতার নামে ইস্যু করা চেক। ছবি: আজকের পত্রিকাজাকির খানের হয়ে বিএনপি নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করেন পাথরঘাটা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আউয়াল। টাকা নিয়ে জাকির খানের অনুসারী বেতাগী উপজেলায় রিয়াদ খানকে সদস্যসচিব, পৌর শাখায় মিজান খানকে সদস্যসচিব, উপজেলায় মো. দুলাল হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, অধ্যাপক শাহীনকে বেতাগী উপজেলায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, বামনা উপজেলার মোরশেদ খন্দকারকে সদস্যসচিব, পাথরঘাটায় কামরুল ইসলামকে সদস্যসচিব, একই উপজেলায় মো. সোয়েনকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। 

ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকার দক্ষিণ খানের আশকোনা শাখা থেকে ২০২২ সালের ৩ জুলাই চার নেতার নামে আট লাখ টাকা দেওয়া হয়। একই বছরের ৪ জুলাই ২৯১৬৫৯৩ নম্বর চেকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা তুলে নেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলম ফারুক মোল্লা। ২৯১৬৫৯৫ নম্বর চেকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা তোলেন সদস্যসচিব তারিকুজ্জামান টিটু।

সালেহ ফারুক ও তালিমুল ইসলাম পলাশের নামে ইস্যু করা চেক। ছবি: আজকের পত্রিকা২৯১৬৫৯৬ নম্বর চেকে ৫০ হাজার টাকা নেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ ফারুক এবং ২৯১৬৫৯৪ নম্বর চেকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেন যুগ্ম আহ্বায়ক তালমিল ইসলাম পলাশ। পদ-বাণিজ্যে জড়ানো বিএনপি নেতাদের ২৪টি ফোনালাপের অডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। যেখানে বিকাশের মাধ্যমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক মোল্লাসহ কয়েক নেতাকে লাখ লাখ টাকা ও স্মার্টফোন উপহার দেওয়ার তথ্য রয়েছে।

বরগুনা জেলা বিএনপির শীর্ষ পদের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক মোল্লার ভাতিজা। তিনি কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভীকে “ম্যানেজ” করে গত বছরের ১৫ এপ্রিল আগের কমিটি (নজরুল-হালিম) ভেঙে রাতের আঁধারে ফারুক মোল্লাকে আহ্বায়ক করে কমিটি এনেছেন।’

সেই নেতা আরও বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গত ১৮ জুন বিএনপির বরগুনা জেলার উপজেলা পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এর উদ্দেশ্য ছিল নতুন ইউনিট গঠনের নামে পদ-বাণিজ্য। আর সেটাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি করেছে। টাকা নিয়েই জেলার ইউনিট কমিটিগুলো করা হয়েছে। এই ১০টি ইউনিট কমিটি গঠনে প্রায় এক কোটি টাকার পদ-বাণিজ্য হয়েছে। বিষয়টি গত বছরের অক্টোবরে লিখিতভাবে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে ১০৮ পৃষ্ঠার তথ্য-উপাত্তও দেওয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন হাসান শাহীন এবং কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজের কাছে ইউনিট কমিটি থেকে বাণিজ্যের অভিযোগ এলে তাঁরা তথ্য-উপাত্তসহ কেন্দ্রে লিখিতভাবে সরবরাহ করেছেন।

বরগুনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব তারিকুজ্জামান টিটু গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চেকের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি মাদ্রাসার কাজের জন্য আমি জাকির খানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। এখানে পদ দেওয়ার কোনো বিষয় নেই।’

ব্যাংক স্টেটমেন্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে একটি মাদ্রাসার জন্য ওই টাকা নেওয়া হয়েছে।’ পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, ‘পদ-বাণিজ্য হলে জাকির খানকেই বামনার আহ্বায়ক করা হতো। সেটা তো করা হয়নি।’

জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমি যদি চেক বা টাকা নিয়ে থাকি, প্রমাণ করতে পারলে সাংগঠনিক ও সামাজিক যে শাস্তি হয় মেনে নেব—এটা ষড়যন্ত্র।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন খানের সঙ্গেও। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘অডিও ক্লিপ, চেক ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছি। ইতিমধ্যে তৃণমূল বিএনপি নেতারা কেন্দ্রকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর কিছু অনুসারীকে দলের পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল বিএনপি থেকে আগেই পেয়েছিলাম। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ শুনেছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা তৃণমূলের অভিযোগ ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করছি। সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু শামীম (১০) মারা গেছে। উদ্ধারের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মামা সাব্বির হোসেন ও সখীপুর থানা-পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শামীম উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ও স্থানীয় কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির আশপাশের বনাঞ্চলে অনুসন্ধান চালান। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি বন থেকে শামীমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

নিহত শামীমের মামা সাব্বির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম শিয়ালের আক্রমণে এমন হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি শেয়াল-কুকুরের আক্রমণের চিহ্ন নয়, শিশুটির মাথা ও শরীরের আঘাত করা হয়েছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহত শামীমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে অটো-টমটম সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে অটোরিকশা ও সিমেন্টবাহী টমটমের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লেবুখালী-বাউফল মহাসড়কের রাজাখালী (স্থানীয় নাম পিছাখালী ব্রিজ) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগা থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বছরের রবিউল নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুমন সরদার (২৫) ও আব্দুল কাদেরকে (৫০) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত আব্দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমনের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের বাড়ি বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা ও টমটমটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক পুশ ইনের চেষ্টা: ব্যর্থ হয়ে ১৪ জনকে ফেরত নিল বিএসএফ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। শূন্য লাইন থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। শূন্য লাইন থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি চলছে, ঠিক সেই সময় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইনের চেষ্টা চালিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তৎপরতায় ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ১৪ ভারতীয় নাগরিককে জিরো লাইন থেকে ফেরত নিয়ে যায় বিএসএফ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর বিওপির সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হয়।

বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফের আহ্বানে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) অধীন মহিষকুন্ডি বিওপিতে কর্মরত সুবেদার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিজিবি প্রতিনিধিদল এবং ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের নিউ উদয় কোম্পানি কমান্ডার এসি অনিল কুমারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিএসএফ প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সীমান্তের মেইন পিলার ১৫৪/০৭ এস-সংলগ্ন ভারতের অভ্যন্তরে চাইডোবা মাঠে এই পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিক পুশ ইনের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাদের ফেরত নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

পরে শূন্য লাইনে অবস্থানরত ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করে তারা সবাই ভারতের ওডিশা প্রদেশের জগতসিংপুর সদর উপজেলার তারিকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। যাচাই শেষে বিএসএফ তাদেরকে ভারতের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

পুশ ইনের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মৃত হারুন শেখের ছেলে শেখ জব্বার (৭০), তাঁর চার ছেলে শেখ হাকিম (৪৫), শেখ ওকিল (৪০), শেখ রাজা (৩০) ও শেখ বান্টি (২৮); শেখ ওকিলের স্ত্রী শাবেরা বিবি (৩০); শেখ হাকিমের স্ত্রী শমশেরি বিবি (৪০); শেখ রাজার স্ত্রী মাইনু বিবি (২৫); শেখ জব্বারের স্ত্রী আলকনি বিবি (৬০); মৃত শেখ হোসেনের স্ত্রী গুলশান বিবি (৯০); শিশুদের মধ্যে রয়েছে শাকিলা খাতুন (১১), নাছরিন আক্তার (১২), শেখ তাওহিদ (১১) ও আড়াই বছর বয়সী শেখ রহিত।

এই ঘটনায় সীমান্তবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন স্পর্শকাতর সময়ে ভারতের এমন পুশ ইন চেষ্টাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় নানা আলোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে কোনোভাবেই অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ ইন মেনে নেওয়া হবে না। সীমান্ত নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মালবাহী দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের চালক ও হেলপার গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গবাদিপশুর খাবার (ভুসি) বহনকারী একটি ট্রাকের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই আরেকটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে এবং অপরটি মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পর রেকার দিয়ে ট্রাক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহত চালক ও হেলপারের পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত