Ajker Patrika

দল ছিল বাবা-ছেলের চাঁদাবাজি আর মনোনয়ন বাণিজ্যের চাবিকাঠি

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ৫১
দল ছিল বাবা-ছেলের চাঁদাবাজি আর মনোনয়ন বাণিজ্যের চাবিকাঠি

২০১২ সাল থেকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় এই নেতার নিয়ন্ত্রণেই ছিল এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ। তাঁর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক।

সরকার পতনের পর স্থানীয়রা, এমনকি আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরাই বলছেন, এই বাবা-ছেলের নিয়ন্ত্রণে ছিল এলাকার চাঁদাবাজি, দলের পদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্য। আর দলে পরিবারতন্ত্র কায়েম করে আওয়ামী লীগকেই পঙ্গু বানিয়েছেন। তাঁরা আত্মগোপনে গিয়ে আরাম-আয়েশে থাকতে পারলেও তৃণমূলের কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন।

মনোনয়ন ও পদ-বাণিজ্য
বরিশাল অঞ্চলে আ.লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাতেই ছিল দলীয় পদ এবং মনোনয়নের চাবিকাঠি। তিনি জেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে একচেটিয়া বাণিজ্য করতেন বলে অভিযোগ দলের নেতা-কর্মীদের। মনোনয়নপ্রতি নেওয়া হতো ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

তা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের পদ পেতেও হাসানাতকে উৎকোচ দিতে হতো বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতা। তাঁদের মতে, হাসানাতের বড় সহযোগী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস তালুকদার, বানারীপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক এবং গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ।

নেতারা জানান, কেউ হাসানাতের বিরুদ্ধাচরণ করলেই বহিষ্কার করা হতো। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদ-বাণিজ্যও চলত একই পন্থায়।

২০২১ সালের নির্বাচনে বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন নুরে আলম ব্যাপারী। বর্তমানে তিনি পলাতক। নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মাসুম মৃধা। তিনি বলেন, ‘দলের কাছে দুবার মনোনয়ন চাইলেও পাননি। অথচ অলৌকিক যোগ্যতার কারণে নুরে আলম ব্যাপারী মনোনয়ন পান। আসলে শতভাগ সত্য যে এখানে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এটাই বাস্তবতা। এটা যদি না হতো, তাহলে চাঁদপাশার বিএনপি-সমর্থিত দেলোয়ার রাঢ়ীও মনোনয়ন পেতেন না।’

ছাত্রলীগের একসময়ের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনে জেল খেটেছি, ১৯৭৫ সালে বরিশালে মিছিল করেছি। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু দুঃখ হলো হাসানাত সাহেব ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যেও আমাকে থাকতে দেননি।’

আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি থাকাকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পেলেও আমার মনোনয়ন কেড়ে নিয়ে জাতীয় পার্টির মইদুলকে দেন হাসানাত।’

এ বিষয়ে জানতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে ফোনে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস তালুকদারের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনসুর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশালে কর্মীরা দুরবস্থায় আছেন। এখন তাঁদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পদ-বাণিজ্য এবং মনোনয়ন-বাণিজ্য হয়েছে—এমন কী প্রমাণ আছে? সভাপতি-সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া এসব বিষয় মন্তব্য করব না।’

সাদিকের চাঁদাবাজি
বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ছয়জন ‘খলিফা’ দিয়ে গোটা নগরী পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরের সব হাটবাজার, লঞ্চঘাট, খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদিকের অন্যতম খলিফা নগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি ক্যাশিয়ার হিসেবে সাদিকের চাঁদাবাজির টাকা তুলতেন। টুটুল বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাস করানোর বিনিময়ে ঘুষ, কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে দলের কর্মীরাই বলছেন। সাদিকের এই খলিফারা এখন ভারতে পালিয়ে আছেন বলে জানা যায়। 
নগরের নথুল্লাবাদের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না সেখানকার “বাঙলা হোটেল” দখল করে বাণিজ্য করেছেন। বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করতেন। চাঁদা না দিলে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হতো।’ 

ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহার
২০০২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মঈন তুষার। এরপর আর দলে ঠাঁই হয়নি। তিনি বলেন, দুই যুগ ধরে যুবলীগের নেতৃত্ব নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগও দুই যুগ ধরে অচল। মহানগর আওয়ামী লীগ একতরফা গঠিত হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক নিজস্ব বলয় দিয়ে একতরফা দল চালাতেন। এই বরিশালে নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাননি, ব্যক্তিকে শক্তিশালী করে টাকা কামিয়েছেন।’

বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক হারুন বলেন, এখানে ব্যক্তি রাজনীতি হয়েছে। এটাকে শো করে ব্যবসা করেছে হাসানাত পরিবার। 
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নেতারা দল করেনি, ক্যাডার দিয়ে লুটপাট করছে। আসলে বেসরকারি নাইট কলেজের নেতা দিয়ে কি দল চালানো যায়?’

আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন বছর হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয়নি। কমিটিতে পদ পেয়ে কয়েকজন লুটপাট করছে। ভারতে আরামে থেকে মাঝে মাঝে ছবিও দেয় ফেসবুকে। অথচ এই নেতাদের জন্যই কর্মীরা আজ নির্যাতিত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত