Ajker Patrika

‘স্বামীর লাশটা আইনা দেও, কবর দিমু’

রুদ্র রুহান, বরগুনা
‘স্বামীর লাশটা আইনা দেও, কবর দিমু’

‘মোর স্বামীর লাশটা তোমরা আইন্যা দেও। মোর ঘরের লগে কবর দিমু। মুই আর কিছু চাই না, লাশটা চাই। সুস্থ হওয়ার লইগ্যা ঢাকা নিছিলাম। স্বামী মোর জনমের মতোন সুস্থ হইয়া গেছে। আল্লাহ তুমি মোর স্বামীর লাশটা ফিরাইয়া দেও। ’

ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চ ট্র্যাজিডিতে নিখোঁজ বরগুনার বামনা উপজেলার বৃদ্ধ হামিদ হাওলাদারের স্ত্রী মইফুল বেগম গত ছয়দিন ধরে এভাবেই বিলাপ করছেন। 

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি তাঁর স্বামীর। তিনিও ও তাঁর মেয়ে জামাইসহ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসছেন সেই বিভীষিকাময় মৃত্যুকূপ থেকে।  

 মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা নিখোঁজ হামিদ হাওলাদারের স্ত্রী মইফুল বেগম (৬০) জানান, স্বামী হামিদ হাওলাদারের চিকিৎসা শেষে তিনি ও তাঁর মেয়ে-জামাইসহ ৪ জন অভিযান ১০ লঞ্চে বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চটির প্রথম তলায় ডেকে ইঞ্জিন রুমের পাশেই তাঁরা বিছানা করে ছিলেন। রাতে ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সবাই একসঙ্গে জড়ো হন। 

কিছু সময়ের মধ্যে সমগ্র লঞ্চটির লাইট বন্ধ হয়ে গেলে তারা ছোটাছুটি করতে থাকেন। অন্ধকারে একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সবাই। ধোঁয়া ও আগুন সমগ্র লঞ্চে ছড়িয়ে পড়লে তারা যে যার মতো করে ঝাঁপ দেন নদীতে। বৃদ্ধ মইফুল বেগমের বোরকায় আগুন লেগে গেলে তিনিও ঝাঁপিয়ে পরে প্রাণে বাঁচেন। নিরাপদে তীরে ওঠার পরে স্বামীকে খুঁজে পাননি তিনি। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে মেয়ে ও জামাইকে পান। 

মইফুল বলেন, ‘আমার স্বামীর অসুখ অইছিল। ডাক্তার দেহাইতে ঢাকা লইয়া গেছেলাম। আল্লাহ হ্যারে কই লইয়া গ্যালো। লাশটাও যদি পাইতাম তয় মোর ঘরের পাশে মাডি দেতে পারতাম।’ 

নিখোঁজ হামিদ হাওলাদারের মেয়ে হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা ঢাকা-বরিশাল-ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন হাসপাতালে বাবাকে খুঁজেছি কোথাও তাকে পাইনি। এখনো কোনো মরদেহের সন্ধান পাওয়ার খবর পেলে সেখানে ছুটে যাই। কিন্তু বাবাকে পাই না। বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে ডিএনএ দিয়েছি। জানি না আদৌ বাবার খোঁজ পাব কি-না। বাবাকে জীবিত না হোক তার লাশটা পেলেও আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’ 

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ হামিদ হাওলাদারের পরিবারকে তহবিল আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেনীতে খালেদা জিয়ার আসনে বিএনপির ৩ নেতার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

ফেনী প্রতিনিধি
বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী-১ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া দলের আরও তিন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ফেনী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হাবীবুর রহমান নান্টু ও তাঁর ছেলে মজুমদার আরিফুর রহমান। তবে আরিফুর রহমান নিজেকে বিএনপি নেতা বলে দাবি করলেও তাঁর দলীয় পদ-পদবি জানা যায়নি।

রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, সাধারণত কোনো দলের প্রধানের নিজ আসনে দলীয় প্রার্থী তাঁকে ঘিরেই চূড়ান্ত হয়ে যায়। সেখানে বিএনপি থেকে একই আসনে আরও তিনজন মনোনয়ন সংগ্রহকে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ ও নেতৃত্বের মর্যাদা পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত বহন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনী-১ (ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম) আসনে ভোটের প্রচার-প্রচারণায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ধানের শীষ প্রতীকের ভোট চাইতে দেখা গেছে রফিকুল আলম মজনুকে। তিনি ওই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর সমন্বয়ক।

এ ছাড়া মজুমদার আরিফুর রহমানও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি আগে গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন, নিজে নির্বাচন করবেন না, শুধু খালেদা জিয়ার জন্য ভোট চাইবেন। হঠাৎ করে তিনি ও তাঁর বাবা (হাবীবুর রহমান নান্টু) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মজুমদার আরিফুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সভায় ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে কল করতে বলেন। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হোসেন বলেন, ‘এই আসনে আমাদের প্রার্থী খালেদা জিয়া। যদি কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের পছন্দ রফিকুল আলম মজনু। অন্য কেউ প্রার্থী হলে লাভ হবে না।’

এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারা মনোনয়ন নিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে যেখানে ম্যাডাম নিজে মনোনয়ন নিয়েছেন, সেখানে অন্যদের মনোনয়ন নেওয়ার দুঃসাহস তাঁরা কেন দেখাচ্ছেন, সেটা বুঝে ওঠা কঠিন। আগামীকাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তখন বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার হবে। কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অবশ্যই দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় ধানের শীষের বিপক্ষে লড়বেন খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস মতিন

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
কুমিল্লা­-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে আজ রোববার সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লা­-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে আজ রোববার সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন খান।

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিনের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে একই দিন বিকেলে হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব মতিন খান কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু আসনটিতে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার মতিন খান বলেন, ‘এই আসন থেকে কখনোই বহিরাগত কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, বিএনপি থেকে হোমনা-তিতাস উপজেলার মধ্য থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার। কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষা করে আসনের বাইরের একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ফলে জনগণ ও দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাপেই আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে।’

মতিন খান আরও বলেন, ‘জনগণ যদি আমাকে সেবা করার সুযোগ দেয়, আমি তাদের একজন সেবক হিসেবে কাজ করব। প্রয়াত এম কে আনোয়ারের (সাবেক মন্ত্রী) অসমাপ্ত উন্নয়নকাজগুলো বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে: বদিউল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ রোববার গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ রোববার গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক হতে হবে। এসবের জন্য সুদূরপ্রসারী সংস্কার দরকার।’

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। সুজনের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর কমিটি এই বৈঠকের আয়োজন করে।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে কতগুলো বাধা আছে, সেসব বাধা দূর করা দরকার। দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক অঙ্গন, দুর্বৃত্তায়িত নির্বাচনী অঙ্গন, টাকার খেলা, সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে এ ক্ষেত্রে সোচ্চার ভূমিকা পালন করা কিংবা তাদের ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া, সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টিনের চাল থেকে বিড়াল নামাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশুর মৃত্যু

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় টিনের চাল থেকে বিড়াল নামাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি শিশু মারা গেছে। তার নাম যুথি খাতুন (১২)।

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

যুথি ওই এলাকার জহুরুল ইসলামের মেয়ে। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে শিশুটির লেখাপড়া বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়েজ উদ্দিন জানান, বিকেলে শিশুটি তার শখের বিড়াল নিয়ে খেলা করছিল। এ সময় বিড়ালটি দৌড়ে সিঁড়িঘরের টিনের চালের ওপর উঠে যায়। পরে যুথি বিড়ালটিকে নামাতে সেখানে উঠলে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মেইন লাইনের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত