Ajker Patrika

বাহিনী নির্মূলে প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধা করব না: সিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৩
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসাব আজিজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসাব আজিজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও অতিরিক্ত আইজিপি হাসিব আজিজ বলেছেন, ‘নানা রকমের বাহিনী আছে। আমার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ বাহিনী ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী থাকতে পারবে না। সাজ্জাদ বাহিনী, লাল্টু বাহিনী, পল্টু বাহিনী—এই সমস্ত বাহিনীকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল মানে নির্মূল। প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করব না।’

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কর্ণফুলী হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।

হাসিব আজিজ বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সাঁড়াশি অভিযান কিন্তু চলমান। এই অভিযানটা আমরা আরও তিন-চার মাস আগেই শুরু করেছি। নির্বাচন-সংক্রান্ত নানা রকমের চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু এখন মোটামুটি দৃশ্যমান। আমরা বুঝতে পারছি, কোন কোন জায়গা থেকে কী কী ধরনের ঝুঁকি আমাদের ওপর আসতে পারে। ঝুঁকির বিষয়টি ঢাকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে দেখলাম, খুলনায় দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে “পতিত স্বৈরাচার”, এখন আরেকটা আসছে “বিতাড়িত স্বৈরাচার”। এই বিতাড়িত স্বৈরাচারের যারা কুচক্রী এবং দুর্বৃত্ত, যারা দোসর এবং তাদের যে বিদেশি প্রভু, তারা চেষ্টা করছে কিন্তু এখানে অনেক রকমের সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে যে নির্বাচনটা হতে না দেওয়া এবং একটা পর্যায়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। বিতাড়িত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি প্রভু যারা আছে, তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমাদের নস্যাৎ করতে হবে। অবশ্যই নস্যাৎ করতে হবে।’

পুলিশ কমিশনার বলেন, যেকোনো রাষ্ট্র তিনটা পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে। একটি নির্বাহী বিভাগ, একটি বিচার বিভাগ আরেকটি হচ্ছে সার্বভৌম সংসদ। যেখানে সাধারণ নাগরিকদের, সাধারণ মানুষের, জনগণের সার্বভৌমত্ব, সেটা হচ্ছে সংসদ। এই তিনটা বিভাগের মধ্যে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান তৈরি করে এবং এই ভারসাম্যমূলক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে। পরবর্তীকালে বলা হলো, এর বাইরেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, সেটা হচ্ছে মিডিয়া।

তিনি বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলো আছে, এগুলো যদি একটা অ্যালাইনমেন্টে থাকে, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে এক হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থার যে কতখানি বিপর্যয় হয়—সেটা কিন্তু গত ১৭ বছরে দেখেছি। সাধারণ প্রশাসন, বিচারালয়, পুলিশ, সাংবাদিক—সব একটা অ্যালাইনমেন্টে চলে আসছিল। একটা অ্যালাইনমেন্টে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, রুলিং পার্টি নিয়ে এসেছিল, আওয়ামী লীগ। তার ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থাটা একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়ল। আওয়ামীপন্থী প্রশাসন, আওয়ামীপন্থী বিচারক, আওয়ামীপন্থী পুলিশ, আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক—সব এক অ্যালাইনমেন্টে। কী হলো? শেষমেশ একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলো।’

পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার জানান, লুণ্ঠিত অস্ত্রের ৮০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ অস্ত্র পাহাড়ি এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের হাতে চলে গেছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

মতবিনিময় সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত, দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ‘জনগণের একটা ভীতি থাকে, এই যে পুলিশ ভীতি যেটা, সেটাকে আমাদের মন থেকে দূর করে আমরা যাতে তাদের কাছে গিয়ে সমাজকে কিছু দিতে পারি। ভীতিটা দূর করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে সমস্ত অপকর্ম হচ্ছে, সেগুলোর ইনফরমেশনটা দিতে পারি। ইনফরমেশনটা দিলেই কিন্তু পুলিশ গিয়ে সেখানে দেখবে এবং সেখানে তার প্রতিকার করার যে ব্যবস্থা সেটা ওনারা করতে পারেন। কারণ, সব জায়গায় গিয়ে, পুরো শহরে আসলে ওনাদের পক্ষে গিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আমার মনে হয় এইদিকে আমাদের আরেকটু মনোযোগী হওয়া উচিত।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. আরিফ। চ্যানেল ওয়ানের ব্যুরোপ্রধান মো. শাহনেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. হুমায়ুন কবির প্ৰমুখ ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আবাসিক হোটেল থেকে জাপা নেতার মরদেহ উদ্ধার

বাগেরহাট প্রতিনিধি
হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু। ছবি: সংগৃহীত
হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলুর (৬৮) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে দুপুরের দিকে রাজধানীর পল্টন এলাকার বিজয়নগর আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার ৩২৪ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে তিনি ওই হোটেলে উঠেছিলেন।

হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা সদরের মৃত আকবর আলী হাজরার ছেলে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান জানান, হাজরা শহিদুল ইসলাম হোটেল কক্ষের বাথরুমে পড়ে ছিলেন। বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজরা শহিদুল ইসলাম এর আগে একবার হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

হাজরা শহিদুল ইসলামের নিকটাত্মীয় মো. শাহিন জানান, বুধবার দুপুরে পার্টি অফিসে মিটিং শেষ করে ওই হোটেলে যান শহিদুল ইসলাম। রাত ৮টার পর থেকে আর কেউ তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার সকালেও যোগাযোগ করতে না পেরে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় যাওয়া অন্য জাতীয় পার্টির নেতাদের জানানো হয়। তাঁরা হোটেলে গিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কক্ষ খুলে তাঁর মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। তাঁর মরদেহ কচুয়ায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে। আজ জুমার নামাজ শেষে তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে শহিদুল ইসলাম বাবলুর মৃত্যুতে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরুল হুদা নুরসহ জেলা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হান্নান মাসউদকে ফেসবুকে হুমকি

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
ফেসবুকে হুমকি দেওয়া পোস্ট। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ফেসবুকে হুমকি দেওয়া পোস্ট। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে শাপলা কলি প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ‘রুপক নন্দী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টে দেখা যায়, রুপক নন্দী সরাসরি হান্নান মাসউদকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘হান্নান, আগুন নিয়ে খেলা করো না। পরে পস্তাতে হবে—বলে দিলাম।” পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদ (পিচ্চি আজাদ)কে যারা ভালোবাসেন, তারা হান্নান মাসউদকে ছাড় দেবেন না। এমনকি হালিম আজাদকে গ্রেপ্তার করা হলে হান্নান মাসউদকে হাতিয়ায় নিষিদ্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

এদিকে একই সময়ে আব্দুল হালিম আজাদের ছেলে ইসরাত রায়হান অমি এনসিপির জনৈক কর্মীকে মেসেঞ্জারে চরম উসকানিমূলক বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় তিনি লেখেন, আব্দুল হালিম আজাদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে হান্নান মাসউদ ও তানভীরসহ অন্যান্য নেতাদের হাতিয়ার উত্তর অঞ্চলে চলাচল ‘হারাম’ করে দেওয়া হবে। বার্তায় আরও বলা হয়, “ডাইরেক্ট গিলে খেয়ে ফেলবে আমাদের নেতা-কর্মীরা।”

স্থানীয়রা জানান, হাতিয়ার রাজনীতিতে আব্দুল হালিম আজাদ সরকার গঠনে সম্ভাবনাময় একটি দলের পক্ষে সম্প্রতি অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। এ নিয়ে এনসিপি প্রার্থী হান্নান মাসউদের সমর্থকদের সঙ্গে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি আব্দুল হালিম আজাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার গুঞ্জন শুরু হলে তার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এর দায় হান্নান মাসউদের ওপর চাপিয়ে এ ধরনের হুমকি দিতে শুরু করে।

এই ঘটনায় হাতিয়ার সাধারণ ভোটার ও এনসিপি সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, নির্বাচনের আগে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

এ বিষয়ে আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “আমি এসব হুমকিতে মোটেও শঙ্কিত নই। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার গুলির মুখে আমরা ভয় পাইনি, সেখানে এসব সন্ত্রাসীদের তোয়াক্কা করি না। প্রশাসন যদি শুরু থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নিত, তাহলে তারা এত বড় সাহস পেত না। আজ হাদি’র মতো জুলাই অভ্যুত্থানের একজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যারা পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতীতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪১
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাব দীর্ঘদিনের। নদী পারাপারে ভরসা ২৫০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। সেতুর অভাবে প্রতিদিনের যাতায়াতের মতো কৃষকের ন্যায্যমূল্যও আটকে আছে ইছামতীর তীরে। অন্যদিকে দীর্ঘ পথ ঘুরতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ।

জানা গেছে, এই সাঁকো দিয়েই উপজেলার সাতনালা ও আলোকডিহি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই তো স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে আজও বাঁশের সাঁকোর ভরসায় দুই ইউনিয়নের মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাঁকো ব্যবহার করে এলাকার মানুষ বেকিপুল বাজার, কিষ্টহরি বাজার, চাম্পাতলী বাজার, বিন্যাকুড়ির হাট, তারকশাহার হাট, ইছামতী ডিগ্রি কলেজ, ইছামতী ফাজিল মাদ্রাসা, মডেল স্কুল এবং রানীরবন্দর সুইয়ারী বাজারে যাতায়াত করেন। ব্যাংক লেনদেন, শিক্ষা কার্যক্রম, হাটবাজারে যাওয়াসহ প্রায় সব কাজে নদী পার হতে হয় এই সাঁকো দিয়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটি সবজি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। সাঁকোর ওপর দিয়ে ভ্যান বা অন্য কোনো যান চলাচল সম্ভব নয়। ফলে কৃষিপণ্য বহনের জন্য অনেককে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জোত সাতনালা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, নদীর ওপারে তাঁর বেশির ভাগ জমি। ধান কেটে সাঁকোর কারণে ভ্যানে করে বাড়ি আনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে দূরের পথ ঘুরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসে বলেন, ভোট দিলে এখানে সেতু হবে। কত নির্বাচন চলে গেল, কিন্তু আজও সেতু হলো না।’

জানতে চাইলে সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক শাহ বলেন, সাঁকোটির দুই পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার থাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইছামতী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসুন্দার তীর থেকে ৪ শতাধিক গ্রিল উধাও

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা চার শতাধিক রডের গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। এত গ্রিল উধাও হয়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাচারিবাজার ব্রিজ থেকে বড়বাজার মাছমহল ব্রিজ পর্যন্ত দেখা যায়, নদের দুই পাশের বাউন্ডারির চার শতাধিক গ্রিল উধাও হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ ছিল।

অন্যদিকে নরসুন্দা নদের পাড়ের ওয়াকওয়েতে অধিকাংশ সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে দেখা যায় ভুতুড়ে অন্ধকার। আলো না থাকার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাদকের আখড়া হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে স্থানটি। সন্ধ্যার পর লোকজন ভয়ে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পৌরবাসী আজিজুল রিয়াদ ও সাকিবসহ কয়েকজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পৌর কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সরকারি সম্পদ উধাও হয়ে গেছে।’ তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় একটি সিন্ডিকেট নির্ভয়ে এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এসব গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবগত করেনি।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কোনো কিছু জানি না।’

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।’

কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবির বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল বাস্তবায়ন করে দেওয়ার, আমরা তা করেছি। এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত